ইবাদত

পিতার চেয়ে মাতার হক বেশী

উপরে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও বহু সংখ্যক হাদীসের উল্লেখ করে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের হক বা দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণভাবে বাবা-মা উভয়ের প্রতিই সন্তানের দায়িত্ব- কর্তব্য রয়েছে এবং তা যথাযথভাবে পালন করা সন্তানের উচিত । কিন্তু তুলনামূলক বিচারে মায়ের হক পিতার চেয়ে অধিক। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার সুস্পষ্ট ঘোষণা :

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ احْسَنًا ، حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْها . وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلُثُوْنَ شَهْرًا ، حَتَّى إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ

“আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার সাথে সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সাথে এবং প্রসব করে কষ্টের সাথে, তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়াতে লাগে তিরিশ মাস, ক্রমে সে পূর্ণ শক্তি প্রাপ্ত হয়।”-সূরা আহকাফ : ১৫

এখানে লক্ষ্য করার বিষয় যে, আল্লাহ প্রথমে মা-বাবা উভয়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তারপর মায়ের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব, স্তন্যদান এবং তার শক্তি-সমর্থ হওয়া পর্যন্ত মাকে যে সীমাহীন কষ্ট ভোগ করে সন্তানকে লালন-পালন করতে হয় সে বিষয় উল্লেখ করে মায়ের মর্যাদা উচ্চে তুলে ধরা হয়েছে। সূরা লুকমানেও আল্লাহ অনুরূপ কথাই বলেছেন।

এরশাদ হয়েছে : حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْها ذ الاحقاف١٤

“তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করে ও কষ্ট সহকারে প্রসব করে।”-সূরা আহকাফ : ১৪

উপরে উদ্ধৃত বিভিন্ন আয়াতে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে পিতার চেয়ে মায়ের হক অধিক বলে কোথাও কোথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এটা খুবই যুক্তিসঙ্গত। কারণ সন্তানকে গৰ্ভে ধারণ, অসহ্য কষ্টের পর তাকে প্রসব করা এবং জন্মের পর দুই বছর পর্যন্ত স্তন্যপান করানো এবং পরম আদর ও যত্নে সন্তানকে লালন-পালন করে থাকেন মা। এজন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে : حثنا سعيد بن أبي بردة قَالَ سَمِعْتُ أبي يُحَدِّثُ أَنَّهُ شَهِدَ ابْنُ عُمَرَ ورَجُلٌ يَمَانِى يَطُوفُ بِالبَيْتِ حَمَلَ أُمَّهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ يَقُولُ إِنِّي لَهَا بع المظلُ إِنْ أَنْعَرَتْ رِكَابُهَا لَمْ أَنْعَرْ، قَالَ يَا ابْنُ عُمَرَ أَتَرَانِي أَنِّي جزيتها ؟ قال لا وَلَا بِزَفْرَةٍ وَاحِدَةٍ أَى مِنْ زَفَرَاتِ الطَّلْقِ عِنْدَ الوَلَدَةِ.

“ইমাম বুখারীর. স্বীয় কিতাব – আল-আদাবুল মুফরাদে’ আদমের বরাতে বর্ণনা করেছেন। তিনি শু’বা হতে আর শো’বা সাঈদ ইবনে আৰু বুরদা রা. হতে বর্ণনা করে বলেন, আমার পিতাকে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, ইবনু ওমর রা. এক ইয়েমেনী ব্যক্তিকে কা’বা (ঘর) তাওয়াফ করতে দেখলেন এ অবস্থায় যে, তিনি তার মাকে নিজের পিঠে বহন করছেন আর বলছেন, আমি (আমার মাতার) বাধ্য উট স্বরূপ। যদিও উট তার সওয়ারীকে ফেলে পলায়ন করে কিন্তু আমি ঐ রকম করব না। অতপর ঐ ব্যক্তি বললেন : হে ইবনে ওমর ! আপনি কি মনে করেন যে, আমি আমার মায়ের হক আদায় করেছি ? তদুত্তরে তিনি বললেন : তোমাকে প্রসব করার সময় তাঁর দীর্ঘ এক শ্বাসকষ্টের প্রদিতানও তাঁকে দাওনি। ” এ সম্পর্কে আরো কয়েকটি হাদীস : عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ اتَّى رَجُلَ النَّبِيَّ ﷺ فَقَالَ مَا تَأْمُرُنِي، قَالَ بِرَّ أَمَلكَ ثُمَّ عَبَادَ فَقَالَ بِرَّ اُمَكَ ثُمَّ عَادَ فَقَالَ بِرَ أُمَّكَ ثُمَّ عَادَ الرَّابِعَةَ فَقَالَ بِرَّ أَبَاكَ –

“হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ঃ এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ স.-এর নিকট হাযির হয়ে বললেন, আমাকে কি কোনো কাজের আদেশ করেন ? রাসূলুল্লাহ স. বললেন, তোমার মায়ের সাথে ভাল ব্যবহার কর । লোকটি আবার জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, তোমার মায়ের সাথে ভাল ব্যবহার কর। এরপর আবার জিজ্ঞেস করলে তিনি আবারও বললেন, তোমার মায়ের সাথে ভাল ব্যবহার কর। লোকটি চতুর্থ বার জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ স. বলেন, তোমার বাবার সাথে ভাল ব্যাবহার কর।”-উসূলে ফিকাহ

উক্ত হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম শরীফে ভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে ‘জামাকে কি কোনো কাজের আদেশ করেন’ এর স্থানে ‘কে আমার ভাল ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার’ শব্দগুলো আছে। হাদীসের ভাষা এরূপ : عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُولَ الله مَنْ أَحَقُّ بِحُسنِ صَحَابَتِي ؟ قَالَ أَمُّكَ، قَالَ ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ أَمُّكَ، قَالَ ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ أَمُّكَ، قَالَ ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ أَبُوكَ –

“হযরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেছেন যে, একদিন জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ স.-এর দরবারে হাযির হয়ে জিজ্ঞেস করলেন : হে আল্লাহর রাসূল! আমার নিকট সবচেয়ে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিকারী কে তিনি বললেন, তোমার মা। একই প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ স. পরপর তিনবার বলেন, তোমার মা । চতুর্থ বার অনুরূপ প্রশ্ন করলেন, তিনি জবাবে বলেন, তোমার পিতা ।”

উপরে উল্লিখিত হাদীসে মা-বাবার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা হারাম বা কবীরা গুনাহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে একটি হাদীসে বিশেষভাবে মায়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্পর্কে বলা হয়েছে :

إنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوقَ الْأُمَّهَاتِ – بخاری، مسلم

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা মায়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা, তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা ও তাদের হক নষ্ট করাকে চিরদিনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’-বুখারী ও মুসলিম

বই : মাতা-পিতা ও সন্তানের হক

অধ্যাপক মুহাম্মদ মতিউর রহমান

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *