ইবাদত

সাধারণ মুসলমানদের হকসমূহ

সাধারণ মুসলমানদের হকসমূহ – Doislah

সাধারণ মুসলমানদের হকসমূহ

  1. মুসলমান ভাইয়ের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবে।
  2. সে কাঁদলে তার প্রতি দয়া করবে।

তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবে। ইসলাহের জন্য বলতে হলে গোপনে বলবে।

  1. তার ওজর-আপত্তি মেনে নিবে।
  2. তার কষ্ট লাঘব করবে।
  3. সব সময় তার কল্যাণ কামনা করবে।
  4. তার দেখাশোনা করবে ও তাকে ভালোবাসবে।
  5. তার দায়িত্বের ক্ষেত্রে ছাড় দিবে।
  6. অসুস্থ হলে সেবা-শুশ্রূষা করবে।
  7. মৃত্যুবরণ করলে জানাযায় অংশ নিবে।
  8. তার দা’ওয়াত কবুল করবে। কোন বিষয়ে সাহায্য চাইলে তাউফীক থাকলে সাহায্য করবে।
  9. ওজর না থাকলে তার হাদিয়া কবুল করবে।
  10. তার সদাচরণের প্রতিদান দিবে।
  11. তার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে।
  12. প্রয়োজন হলে তাকে সাহায্য করবে।
  13. তার পরিবার-পরিজনের হেফাযত করবে।
  14. তার অভাব মোচন করবে।
  15. তার ভালো আবেদন পূরণ করবে।
  16. তার বৈধ সুপারিশ গ্রহণ করবে।
  17. তার বৈধ আশা পূরণ করবে।
  18. সে হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে।
  19. তার হারানো জিনিস পেলে তার কাছে পৌঁছে দিবে।
  20. তার সালামের উত্তর তাকে শুনিয়ে দিবে।
  21. নম্রতার সাথে ও হাসিমুখে তার সাথে কথা বলবে।
  22. তার প্রতি সদাচরণ করবে।
  23. তোমার উপর ভরসা করে কসম খেলে তা পূরণ করবে।
  24. তার উপর কেউ জুলুম করলে তাকে সাহায্য করবে। সে কারো উপর জুলুম করলে তাকে বাধা দিবে।
  25. তার প্রতি ভালোবাসা পোষণ করবে। শত্রুতা করবে না।
  26. তাকে লাঞ্ছিত করবে না। যে জিনিস নিজের জন্য পছন্দ করো, তা তার জন্যও পছন্দ করবে।
  27. সাক্ষাত হলে সালাম করবে, সম্ভব হলে মুসাফাহা করবে।
  28. ঘটনাচক্রে পরস্পরে মনোমালিন্য হলে তিন দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখবে না।
  29. তার প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করবে না।
  30. তার প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করবে না।
  31. সামর্থ্যানুযায়ী সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে।
  32. ছোটদের প্রতি স্নেহ ও বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করবে।
  33. দু’জন মুসলমানের মাঝে কলহ হলে তাদেরকে পরস্পরে মিলিয়ে দিবে।
  34. তার গীবত করবে না।
  35. তার ধন সম্পদ বা মান-সম্মানের কোন ক্ষতি করবে না।
  36. যদি বাহনে আরোহণ করতে না পারে বা বাহনের উপর সামানাপত্র উঠাতে না পারে, তাহলে তার সহায়তা করবে।
  37. তাকে তুলে দিয়ে তার স্থানে বসবে না।
  38. তৃতীয় ব্যক্তিকে একা ছেড়ে দু’জনে কথা বলবে না।

Resource – View

সাধারণ মুসলমানের অধিকার

১. কোন মুসলমান পীড়িত হলে তার শুশ্রুষা করা। এ প্রসংগে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ৫০৪ পৃষ্ঠা।

২. কোন মুসলমানের মৃত্যু হলে তার কাফন-দাফনে শরীক হওয়া । ৩. মহব্বত করে দাওয়াত দিলে তা গ্রহণ করা (যদি দাওয়াত গ্রহণে অন্য কোন বাধা না থাকে) । কোন মুসলমান ডাকলে তার ডাকে সাড়া দেয়া কৰ্তব্য । ৪. কোন হাদিয়া-তোহফা দিলে তা গ্রহণ করে তার মনস্তুষ্টি করা। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ৪৬৮ পৃষ্ঠা । ৫. হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বললে তার জওয়াব দেয়া । (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ৪৫৯ পৃষ্ঠা । ৬. কোন মুসলমানকে দেখলে সালাম দেয়া। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ৪৪৪-৪৪৫ পৃষ্ঠা। ৭. কোন মুসলমান কোন কাজে আঁটকে গেলে সকলে মিলে তার কাজ উদ্ধার করে দেয়া। ৮. মুসলমানদের বিবি এবং সন্তানাদির জীবন ও সম্মান রক্ষা করা। ৯. কোন মুসলমান যদি কোন বিষয়ে ন্যায্য কছম খেয়ে বসে, তাহলে তা পূর্ণ করা ও রক্ষা করার জন্য সকলে চেষ্টা করা । ১০.মজলূম মুসলমানের সাহায্যে এগিয়ে আসা এবং জালেমকে বাধা দেয়া । ১১.মুসলমানকে ভালবাসা । ১২.নিজের জন্য যা ভালবাসা হয় প্রত্যেক মুসলমানের ব্যাপারে অনুরূপ কামনা করা এবং তদ্রূপ ব্যবহার করা। ১৩.কোন কারণে কোন মুসলমানের সাথে দ্বন্দ্ব-কলহ হয়ে গেলে তিন দিনের বেশী তা টিকিয়ে না রাখা বরং আপোষ মীমাংসা করে ফেলা। ১৪.দুইজন মুসলমানের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহ হয়ে গেলে তা মিটিয়ে দেয়া সকলের উপর ওয়াজিব । ১৫.কোন মুসলমান কোন সুপারিশ করলে যথাসম্ভব তা গ্রহণ করা এবং কোন আশা করে এলে যথাসম্ভব তাকে নিরাশ বা বঞ্চিত না করা।

দুঃস্থ মানুষের জন্য করণীয়

এতীম, মিসকীন, বিধবা, অন্ধ, পঙ্গু, আতুর, চিররোগা, ভিক্ষুক, মুসাফির প্রভৃতি দুঃস্থ ও নিরাশ্রয়ী মানুষেরও অনেক অধিকার রয়েছে এবং তাদের জন্যেও অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। যেমনঃ ১. তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা। ২. টাকা-পয়সা বা খাদ্য পোশাক দিয়ে তাদের সাহায্য করা। তবে এমনভাবে সাহায্য করা ঠিক নয়, যাতে ভিক্ষাবৃত্তি প্রশ্রয় পায়। কেননা, ভিক্ষাবৃত্তিকে ইসলাম ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে। এ জন্যেই যার নিকট এক দিনের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে, তার পক্ষে খোরাকীর জন্য হাত পাতা জায়েয নেই এবং জেনে শুনে এরূপ ব্যক্তিকে দান করাও নিষেধ। এমনিভাবে অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন পরিমাণ থাকা সত্ত্বেও সওয়াল করা হারাম । (৫/এ উৎg 1) এ ছাড়া যে ব্যক্তি উপার্জন করে খাওয়ার ক্ষমতা রাখে তার জন্য হাত পাতা নিষেধ এবং এরূপ হাত পাতা ব্যক্তিকে দান করাও নিষেধ । ৩. তারা কাজ করতে অক্ষম হলে তাদের কাজ করে দেয়া ৷ ৪. কথা দ্বারা তাদেরকে সান্ত্বনা দেয়া এবং তাদের সাথে ভাল কথা বলা । ৫. যথাসাধ্য তাদের আকাংখা ও আবদার রক্ষা করা । ৬. তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করা, নম্র ব্যবহার করা এবং রূঢ় ব্যবহার না করা। বিঃ দ্রঃ সরকারেরও দায়িত্ব দুঃস্থ মানুষের ভরণ-পোষণ এবং যাবতীয় বিষয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করা ৷

শ্রমিকের অধিকার

১. শ্রমিকের যুক্তি সংগত মজুরী নির্ধারণ করা : এই মজুরী নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুঁজিবাদীদের যে নীতি- অর্থাৎ, চাহিদা বেশী হলে মজুরী বেশী হবে কিন্তু চাহিদার তুলনায় শ্রমিক বেশী পাওয়া গেলে মজুরী কমে যাবে, কিংবা সমাজতন্ত্রের যে নীতি- অর্থাৎ, প্রত্যেকেরই দক্ষতা অনুযায়ী তার থেকে কাজ নেয়া হবে কিন্তু মজুরী দেয়ার সময় শুধু তার প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে তাকে মজুরী দেয়া হবে, তার দক্ষতার মূল্যায়ন করা হবে না- এর কোনটাই গ্রহণযোগ্য নয় বরং ইসলামী নীতিতে এমন মজুরী দিতে হবে, যা দ্বারা পরিবেশ, চাহিদা ও জীবন যাত্রার স্বাভাবিক মান অনুযায়ী শ্রমিকের প্রয়োজন পূর্ণ হয়, সেই সাথে সাথে তার দক্ষতার মূল্যায়নও করতে হবে । ২. দ্রুত মজুরী পরিশোধ করা : ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রমিক কাজ করা মাত্রই পারিশ্রমিক দাবী করতে পারে। তবে অগ্রিম বা অন্য কোন রকম শর্ত থাকলে সে শর্তানুসারেই কাজ হবে। ৩. কাজের সময় নির্ধারিত থাকতে হবে : মালিক যতক্ষণ ইচ্ছা শ্রমিকদের দ্বারা খেয়াল খুশি মত কাজ করিয়ে নিতে পারবে না । ৪. কাজের প্রকৃতি নির্ধারণ করতে হবে ঃ যে কাজের জন্য কোন শ্রমিককে নিয়োগ করা হবে, তার সম্মতি ছাড়া তাকে অন্য কাজে নিয়োগ করা যাবে না । করতে হলে তার সম্মতি পূর্বশর্ত । ৫. অধিকতর সুবিধার জন্য অন্য স্থানে চলে যাওয়ার অধিকার থাকবে শ্রমিকের এবং শ্রম সম্পৰ্কীয় চুক্তি বিশেষ অসুবিধার জন্য সে বাতিল করতে পারবে। ৬. শ্রমিককে এমন স্থানে রাখা যাবে না, যাতে তার স্বাস্থ্যহানি ঘটবে । মালিককে শ্রমিকের স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। ৭. শ্রমিকের শিক্ষা-দীক্ষা লাভের অধিকার রয়েছে। তবে এর দায়িত্ব মালিকের নয় বরং ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শিক্ষা সাধারণতঃ অবৈতনিক এবং রাষ্ট্রই তার সকল ব্যয়ভার বহন করবে। ৮. ক্ষতির বোঝা শ্রমিকের ঘাড়ে চাপানো যাবে না। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে যে শ্রমিক নিয়োগ করা হয় উৎপাদনের ঘাটতির কারণে সে শ্রমিকের সম্মতি ব্যতীত তার মজুরীতে কোন প্রকার কমতি করা যাবে না । ৯. শ্রমিকের চাকুরীর নিরাপত্তা থাকতে হবে। কোন কারণে তার চাকুরী চলে গেলে তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে কি-না তা দেখে ন্যায় ভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ইসলাম প্রশাসকদেরকে নির্দেশ দিয়েছে। এরূপ ক্ষেত্রে শ্রমিক আইনের আশ্রয় গ্রহণ করার অধিকার রাখে।

১০.ইসলামী সরকার বৃদ্ধ, পঙ্গু, অসুস্থ নিঃসহায় প্রভৃতি দুঃস্থ শ্রেণীর লোকদের ভরণ-পোষন ও তাদের যাবতীয় দায়িত্বভার গ্রহণ করে থাকে। এভাবে ইসলামে শ্রমিকদের বৃদ্ধ বা অসুস্থকালীন ভাতা ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান করা হয়েছে । (৩য়ত, ইসলামী ফিকাহ ও ইসলামে শ্রমিকের অধিকার গ্রস্থসমূহ থেকে গৃহীত।

মালিকের অধিকার

১. শ্রমিক নির্ধারিত পূর্ণ সময় আমানতদারীর সাথে শ্রমে নিয়োগ করবে । অন্যথায় যতটুকু সময় সে ফাঁকি দিবে সেই পরিমাণ মজুরী গ্রহণ করা তার জন্য বৈধ হবে না । ২. দক্ষতার সাথে কাজ আঞ্জাম দিবে । ৩. কাজের এবং উৎপাদনের পরিবেশ বজায় রাখবে । ৪. ধর্মঘট করবে না । ৫. মালিক বা নিয়োগকারী মারাৱক অসুবিধায় পড়লে সে শ্রমিকের সঙ্গে কৃত চুক্তি বা অঙ্গীকার বাতিল করতে পারে; এটা শ্রমিককে মেনে নিতে হবে । অবশ্য সেটা ন্যায় ভিত্তিক হচ্ছে কি-না তা বিচারের জন্য প্রয়োজন বোধে শ্রমিক আইন ও প্রশাসনের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে। তেনেতে ইসলামী ফিকাহ ও ইসলামে শ্রমিকের অধিকার গ্রন্থসমূহ থেকে গৃহীত।

পশুপাখী ও জীবজন্তুর হক

১. অযথা কোন পশুপাখীকে কষ্ট দেয়া অন্যায়। যেমনঃ বাসা থেকে শাবকদের ধরে নিয়ে এসে তাদের মা-বাপকে কষ্ট দেয়া। এটা নিষ্ঠুরতার শামিল । ২. যে সব পশুপাখী দ্বারা মানুষের কোন কাজ হয় না, তাদেরকে আবদ্ধ করে রেখে তাদের জন্মগত স্বাধীনতাকে নষ্ট করা বৈধ নয়। ৩. যে সব পশুপাখী খাওয়ার উপযুক্ত নয়, তাদেরকে শুধু মনের আনন্দের জন্য বা হাতের নিশানা ঠিক করার জন্য বধ করা নিষেধ। ৪. গৃহপালিত পশু পাখীদের থাকা খাওয়ার সুবন্দোবস্ত করে রাখা কর্তব্য- পানাহার ও থাকায় কষ্ট দেয়া উচিত নয় । ৫. যে সব পশুর দ্বারা কাজ নেয়া হয়, তাদের শক্তির চেয়ে অতিরিক্ত কাজ তাদের দ্বারা না নেয়া ।

৬. নিষ্ঠুরভাবে জীব জন্তুকে প্রহার না করা। জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতা নয় বরং আল্লাহ্র মাখলূক হিসেবে তাদের প্রতিও ভালবাসা থাকা চাই । ৭. যে সব জীবজন্তু খাওয়ার জন্য জবেহ করা হয় বা মানুষের কষ্টদায়ক হওয়ার কারণে বধ করে ফেলা হয়, তাদেরকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা কাজ সম্পন্ন করা উচিত । ভোঁতা অস্ত্র দ্বারা কষ্ট দেয়া নিষেধ । ৮. জীব-জন্তুকেও গালি-গালাজ করা নিষেধ । ৯. নাপাক খাদ্য-খাবার জীব জন্তুকে খাওয়ানো নিষেধ।

চাকর-নওকরদের সাথে করণীয়

১. নিজেরা যা খাবে চাকর-নওকরকে অনুরূপ খাওয়াবে । ২. নিজেরা যা পরিধান করবে চাকর-নওকরকে সেরূপ পোশাক দিবে । ৩. তাদের দ্বারা সাধ্যাতীত কাজ নিবেনা । ৪. কোন কাজ তাদের কষ্টসাধ্য হলে ঐ কাজে তাদের সহয়তা করবে। ৫. তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে অর্থাৎ, কঠোর ব্যবহার ও কঠোর বাক্য প্রয়োগ করবেনা । ৬. তারা রোগাক্রান্ত হলে কিংবা কোন কষ্টে পড়লে তাদেরকে সমবেদনা জানাবে। ৭. তাদেরকে দ্বীন ও শরী’আত মোতাবেক চালাতে হবে। কেননা অধীনস্তকে দ্বীনের উপর চালানো কর্তব্য । বিঃ দ্রঃ শ্রমিকদের অধিকার অধ্যায়ে বর্ণিত বিষয়গুলোর অনেকটা চাকর নওকরদের বেলায়ও প্রযোজ্য ।

ব্যবসায়ী/বিক্রেতার করণীয় তথা ক্রেতার অধিকার

১. মাপ, ওজন, পরিমাণ ও সংখ্যায় ইনসাফ রক্ষা করা অর্থাৎ, যতটুকু ক্রেতার প্রাপ্য অন্ততঃ ততটুকু অবশ্যই দিয়ে দেয়া- তার চেয়ে কম না করা বরং তার চেয়ে একটু বেশী দিয়ে দেয়া উত্তম। ২. প্রতারণা না করা; যেমন ভেজাল ও নকল মালকে আসল বলে, নিম্নমানের মালকে উন্নতমানের বলে কিংবা ভাল মালের সাথে খারাপটাকে মিশ্রিত করে দিয়ে বা যে কোনভাবে যে কোন রকমে ক্রেতাকে প্রতারিত না করা ।

৩. দ্রব্যের দোষ-ত্রুটি থাকলে ক্রেতাকে সে সম্পর্কে অবহিত করা। ক্রেতাকে বুঝতে না দিয়ে মাল চালিয়ে না দেয়া। যেমন অন্ধকারে খারাপ মাল বিক্রি করা হল বা ছেঁড়া ফাটা ও ত্রুটিপূর্ণ অংশ ভাঁজের মধ্যে বা তলে রেখে চালিয়ে দেয়া হল ইত্যাদি। এগুলো প্রতারণার শামিল এবং অন্যায় ৷ ৪. দ্রব্যের অতিরঞ্জিত বা অবাস্তব প্রশংসা না করা। ৫. প্রয়োজনীয় দ্রব্য গুদামজাত না করা। অবশ্য কারও গুদামজাত করণের ফলে যদি শহরে/দেশে দ্রব্যমূল্যের উপর কোন প্রভাব না পড়ে, তার গুদামজাত করণ দেশে/শহরে দুর্ভিক্ষের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তার গুদামজাত করণে কোন পাপ হবে না । ৬. অঙ্গীকার রক্ষা করা । ৭. বাজার দরের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য না নেয়া, যদিও ক্রেতা সম্মত হলে যে কোন মূল্যে তার নিকট দ্রব্য বিক্রি করা যায়। কিন্তু ক্রেতা অজ্ঞ বা সে ঠেকায় পড়েছে, যে কোন মূল্যে সে নিতে বাধ্য- এরূপ অবস্থায় বিক্রেতার নৈতিক কর্তব্য হলো স্বাভাবিক বাজার দরের চেয়ে অতিরিক্ত না নেয়া ৷

ক্রেতার করণীয় তথা ব্যবসায়ী/বিক্রেতার অধিকার

১. ত্রুটিপূর্ণ বা অচল মুদ্রা না দেয়া। ফোকাহায়ে কেরাম বলেছেন একটা অচল টাকা চালানো চল্লিশ টাকা চুরি করার চেয়ে জঘন্য অপরাধ । ২. দ্রব্য পাওয়ার পর নগদে ক্রয় হয়ে থাকলে সাথে সাথে বা বাকীতে ক্রয় করে থাকলে নির্ধারিত সময়ে মূল্য পরিশোধ করা। কোনরূপ টাল-বাহানা বা গড়িমসি না করা— ৩. বাকীতে ক্রয় করলে মূল্য পরিশোধের সময় নির্ধারিত করা জরুরী। ৪. দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করা নিয়ে বা দ্রব্যের অন্য কোন বিষয় নিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে অহেতুক কথা বাড়াবাড়ি না করা । ৫. ঠেকা ও অনন্যোপায় অবস্থায় পেয়ে কোন ব্যবসায়ী/বিক্রেতাকে তার দ্রব্যের মূল্য বাজার দরের চেয়ে কম না দেয়া। নৈতিক ভাবে এটা অন্যায়। ৬. মূল্য নির্ধারণ হওয়ার পর তার চেয়ে কম না দেয়া ।

আদব, শিষ্টাচার ও সংস্কৃতি সাক্ষাত ও মুলাকাতের সুন্নাত এবং আদব সমূহসাক্ষাৎ প্রার্থীর করণীয় :

  • কারও নিকট সাক্ষাতের জন্য এমন সময় যাবে না, যখন গেলে তার ঘুম, ওজীফা কিংবা বিশেষ কোন কাজ বা আমলের ব্যাঘাত ঘটবে ।
  • কারও কাছে পূর্বে ইত্তেলা (Information) দেয়া ব্যতীত নাস্তা বা খাওয়ার ওয়াক্তে যাবে না। গেলে খেয়ে যাবে এবং গিয়েই সে খেয়ে এসেছে- একথা জানিয়ে দিবে। এ সম্পর্কে “মেহমানের করণীয় বিশেষ আমলসমূহ” শীর্ষক পরিচ্ছেদ পৃষ্ঠা নং ৪৬৫ দেখুন ।
  • অনুমতি প্রার্থনা করবে। অনুমতি চাওয়ার তরীকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ৪৮৭ পৃষ্ঠা ।
  • অনুমতি না হলে বা বিশেষ কোন কাজে তিনি লিপ্ত রয়েছেন, ফলে এ মুহূর্তে সাক্ষাৎ প্রদান করতে গেলে তার কষ্ট বা ক্ষতি হবে- এরূপ অবস্থা হলে চলে আসা বাঞ্ছনীয় কিংবা এমন স্থানে বসে তার অপেক্ষা করতে থাকবে যেন তিনি জানতে না পারেন। অতঃপর স্বাধীনভাবে যখন তিনি কাজ থেকে ফারেগ হবেন, তখন সাক্ষাৎ, প্রার্থনা করবে। এমন স্থানে অপেক্ষায় থাকবে না যেন তিনি বুঝতে পারেন এবং ব্যস্ততার কারণে সাক্ষাৎ প্রদান করতে না পেরে বা সময় দিতে না পেরে লজ্জিত হন ।
  • দেখা হওয়ার পর সালাম দিবে। (সালাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ৪৪৪-৪৪৫ পৃষ্ঠা।) আর মুসাফাহা ও মুআনাকার জন্য অগ্রসর হওয়া অপর পক্ষের কাজ, সে স্বেচ্ছায় অগ্রসর না হলে বা কোন বিশেষ কাজে লিপ্ত থাকলে মুসাফাহা মু’আনাকা করতে গিয়ে তাকে বিব্রত করবে না বা তার ব্যাঘাত ঘটাবে না । (টke of kis)
  • যদি তার সাথে পরিচয় অনেক পুরাতন হয় কিংবা এত হালকা পরিচয় হয় যে, তার ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে নিজের পরিচয় বলে দিয়ে তার দ্বিধা দূর করবে। এ কথা বলে তাকে লজ্জা দিবে না যে, আমাকে চিনতে পারেননি ? …. ইত্যাদি ।
  • দীর্ঘ কথা বলতে হলে তার এত কথা শোনার সময় হবে কি-না তা জেনে নিতে হবে। তার ইচ্ছার বাইরে দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে বা দীর্ঘ কথা বলে তাকে বিব্রত করবে না ।
  • মুরব্বী ও গুরুজনদের নিকট সাক্ষাতের জন্য যেতে হলে যদি তাদের সাক্ষাতের জন্য সময় নির্ধারিত থাকে তাহলে সেই নির্ধারিত সময়ে যাবে। অন্য সময়ে যাবেনা। যেতে হলে অনুমতি নিয়ে যাবে ।
  • সাক্ষাৎ হওয়ার পর মজলিসের সুন্নাত, আদব ও কথা বলার সুন্নাত, আদব-এর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। এর জন্য দেখুন ৪৫০-৪৫২ পৃষ্ঠা।

যার সাক্ষাৎ প্রার্থনা করা হয় তার কর্তব্য :

  • কোন বিশেষ ওজর বা একান্ত অসুবিধা না থাকলে সাক্ষাৎ প্রদান করতে গড়িমসি না করা ।
  • বিশেষ সাক্ষাৎ প্রার্থী হলে পরিপাটি হয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ প্রদান করা উত্তম। (play list)
  • সাক্ষাৎ প্রার্থীর জন্য বসা বা স্থান গ্রহণের জায়গা করে দিবে বা মজলিসে স্থান না থাকলে অন্ততঃ একটু নড়ে চড়ে বসে তার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করবে, এতে সাক্ষাৎ প্রার্থী প্রীত হবে। অন্যথায় সে মনে করবে তাকে অবহেলা করা হচ্ছে।
  • সাক্ষাৎ প্রার্থী অপরিচিত হলে তার পরিচয় ও আগমনের উদ্দেশ্য জানতে চেয়ে তার দ্বিধা সংকোচকে দূর করবে । টেলিফোনে কথা বলার সুন্নাত ও আদব সমূহ সাক্ষাৎ মুলাকাতের সুন্নাত ও আদব সমূহে যা যা উল্লেখ করা হয়েছে,

কারও সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ ও কথা-বার্তার ক্ষেত্রেও সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে । অর্থাৎ-

১. এমন সময় কারও কাছে টেলিফোন করবে না যখন তার ঘুম, ওজীফা কিংবা বিশেষ কোন কাজ বা আমলের ব্যাঘাত ঘটবে। ২. টেলিফোন করার সময় নির্ধারিত থাকলে তখনই করবে। ৩. টেলিফোন রিসিভ করার পর প্রথমেই সালাম দিতে হবে। সালাম যে কোন কথা বলার পূর্বেই হওয়া নিয়ম । ৪. তার সাথে পরিচয় না থাকলে কিংবা আওয়াজে সে টের না পেলে বা অনেক পুরাতন বা এত হালকা পরিচয় যে, তার ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা- এরূপ ক্ষেত্রে নিজের পরিচয় বলে দিয়ে তার দ্বিধা দূর করবে। এ কথা বলে তাকে লজ্জা দিবে না যে, আমাকে চিনতে পারেননি? দেখেনতো চিনতে পারেন কি-না, ইত্যাদি ইত্যাদি। ৫. দীর্ঘ কথা বলতে হলে তার এত কথা শোনার সময় আছে কি-না জেনে নিতে হবে, তার সম্মতির বাইরে দীর্ঘ কথা বলে তাকে বিব্রত করবে না ৷ ৬. কথা বলার সময় কথা বলার সুন্নাত ও আদব সমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ৪৫২ পৃষ্ঠা।)


তথ্য সূত্রঃ –

কিতাবঃ আহকামে যিন্দেগী

লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দিন

শায়খুল হাদিস, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, তাঁতিবাজার, ঢাকা – ১১০০।

মুহাদ্দিছ, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া, ৩৩২, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা ১২৩৬।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *