ইবাদত

তাক্বওয়ার অন্তর্ভূক্ত কার্যাবলী

তাক্বওয়ার অন্তর্ভূক্ত কার্যাবলী ব্যক্তি ও সমাজের প্রতি একটি ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। এগুলো ইসলামিক জীবন ব্যবস্থার এমন দিকগুলোর প্রতি মনোযোগ প্রদান করে, যা একজন মুসলমানকে তার আধ্যাত্মিক এবং দুনিয়াবি জীবনে সঠিক পথে পরিচালিত করে। আপনি যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিম্নে প্রদান করা হলো:

১.পরকালের চিন্তা-ভাবনা:

এটি হল মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। একজন মুসলমানের উচিত তার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে পরকাল, কবর, পুনরুত্থান, হাশর, পুলসিরাত, আমলনামা এবং অন্য যে সকল বিষয় পরকালীন জীবনের সাথে সম্পর্কিত তা মনে রেখে চলা। যখন একজন মুসলমান এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করে, তখন তার দুনিয়াবি চিন্তা আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে মিথস্ক্রিয়া হয়, যা তাক্বওয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

উপরের হাদীসে (যেখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন যে, তাঁকে বৃদ্ধ বানিয়েছে সূরা হুদ ও এর মত সূরাগুলোর আলোচনা) রাসূলুল্লাহ ﷺ এই বিষয়গুলোর গুরুত্ব বোঝাচ্ছেন, যা পরকালের ব্যাপারে চিন্তাকে গভীর করে তোলে।

২. জাহান্নামের শাস্তির ভয়:

দুনিয়াতে সর্বাধিক ভয় পাবার বিষয় হল আল্লাহর শাস্তি। যে ব্যক্তি জাহান্নামের শাস্তি মনে করে তার প্রতিটি কাজের মধ্যে সতর্কতা, দয়া এবং সুবিচার আসে। হাদীসে আছে যে, যখন একজন মুসলমান জাহান্নামের শাস্তি এবং তার ভয়াবহতা স্মরণ করে, সে তখন অশ্রুপাত করতে বাধ্য হয়। আয়িশা (রাঃ) যখন জাহান্নামের শাস্তির কথা স্মরণ করে কাঁদছিলেন, তখন নবী ﷺ তাকে প্রশ্ন করেছিলেন এবং তিনি তার কাঁদার কারণ হিসেবে জাহান্নামের ভয় উল্লেখ করেছিলেন। এটি দেখায় যে, পরকাল ও জাহান্নামের শাস্তি নিয়ে চিন্তা করা একটি গভীর তাক্বওয়া।

৩. আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ভয়:

এটি হল, পরকাল এবং শেষ বিচার দিবসের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। একজন মুসলমানকে সবসময় মনে রাখতে হবে যে, একদিন তাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে তার সমস্ত আমল সম্পর্কে হিসাব দিতে হবে। সুতরাং, তার কাজগুলো তখনো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে এবং তা খালি আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে হতে হবে। সূরা নাযিয়াতের আয়াতগুলিতে বলা হয়েছে যে, যারা আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ভয় থেকে তাদের নফসকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, তারা জান্নাতে যাবে। এটি তাক্বওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. ভ্রাতৃত্ব সংরক্ষণ:

তাক্বওয়ার আরেকটি দিক হল মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক বজায় রাখা। মুসলিম সমাজে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থাকতে হবে। এটি কেবল সামাজিক বন্ধন গড়াই না, বরং আল্লাহর রাস্তায় একে অপরকে সহায়তা করতে সহায়ক। একটি সমাজে যে মুসলমানরা একে অপরকে সাহায্য করে, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য থাকে।

৫. সুন্নতের অনুসরণ:

রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জীবনদৃষ্টি এবং তার সুন্নত অনুসরণ করা ইসলামি জীবনের মূল স্তম্ভ। সুন্নত অনুসরণের মাধ্যমে একজন মুসলমান তার জীবনে ইসলামের আদর্শ বাস্তবায়ন করে এবং এটি তার তাক্বওয়ার গভীরতার প্রতিফলন। ইসলামের প্রতিটি ছোট-বড় বিষয়ের মধ্যে সুন্নতের ওপর চলার গুরুত্ব রয়েছে।

৬. পরকালীন জীবনের জন্য আমল:

তাক্বওয়া একটি পরকালীন জীবনের জন্য প্রস্তুতির প্রতীক। একজন মুসলমানের উচিত তার আমল বা কাজকে শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্য নয়, বরং পরকালীন জীবনের জন্যও করতে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা প্রতিটি আমল পরকালে স্বীকৃতি পাবে।

৭. গীবত পরিহার:

গীবত, অর্থাৎ অন্যের পেছনে খারাপ কথা বলা, তাক্বওয়ার পরিপন্থী। একজন মুসলমানকে তার ভাষা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং অন্যের প্রতি মন্দ কথাবার্তা পরিহার করতে হবে। এটি সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে এবং আল্লাহর নিকট সন্তুষ্টি অর্জন করতে সহায়তা করে।

৮. প্রতিশ্রুতি পালন:

তাক্বওয়ার একটি বৈশিষ্ট্য হল, একজন মুসলমানের উচিত তার প্রতিশ্রুতি পালন করা। আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতির প্রতি অঙ্গীকারকে গুরুত্ব দিয়েছেন, এবং একজন মুসলমানের উচিত কখনো কোনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না করা। এভাবে আল্লাহর কাছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।

৯. মন্দ কর্ম পরিহার:

তাক্বওয়া বা আল্লাহ-ভীতি একটি বিশেষ মনোভাব তৈরি করে, যাতে মন্দ কাজ বা গোনাহ থেকে দূরে থাকতে হয়। যদি একজন মুসলমান তার দৈনন্দিন জীবনে খারাপ বা নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকে, তা তাকে তাক্বওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।

১০. হালাল ভক্ষণ:

হালাল ও হারাম খাদ্য গ্রহণে সঠিকতা একটি মুসলমানের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে, এটি ইসলামের বিধি অনুসরণ করার অন্যতম প্রমাণ, অন্যদিকে এটি আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য সহায়ক। তাক্বওয়া অর্জনের জন্য একজন মুসলমানকে সর্বদা হালাল খাবার খেতে হবে এবং হারাম থেকে বিরত থাকতে হবে।

এই সকল কার্যাবলী সম্মিলিতভাবে একজন মুসলমানের জীবনকে তাক্বওয়ার আদর্শে গড়ে তোলে। এগুলোর মাধ্যমে একজন মুসলমান শুধুমাত্র তার দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিত করে, বরং সমাজে সঠিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করে।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *