ইবাদত

বহু অপরাধের মূলে দুনিয়ার মোহ-মায়া

জুবায়ের বিন মামুন

জীবন নদীর ভেলায় মানুষ সুখ-শান্তির আশায় কত কিছুই না করে! কেউ সৎকর্ম করে জীবন পার করে আর কেউ অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। দুনিয়ার চাকচিক্যের প্রতি ধোঁকা খেয়ে হালাল-হারামের তোয়াক্কা না করেই অবাধে সীমা লঙ্ঘন করতে থাকে। এক পর্যায়ে সে অন্ধকার কবর সম্পর্কেও গাফেল হয়ে পড়ে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এসব অপকর্ম ও সীমা লঙ্ঘনের মূল কারণ হিসেবে ইরশাদ করেন, ‘দুনিয়ার মোহ সব পাপের মূল।(শুআবুল ঈমান, হাদিস : ১০৫০১)

দুনিয়াদার শুধু দুনিয়াই পেয়ে থাকে। দুনিয়ার চাকচিক্যময় মোহ-মায়া, লোভ-লালসা ও জাঁকজমকপূর্ণ বিলাসিতা আমাদের ভুলিয়ে রাখে পরম সত্য আখিরাত থেকে, যে আখিরাত আমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। আমাদের আসল আবাসস্থল। আল্লাহ তাআলার বাণী দেখুন—‘হে মানব সম্প্রদায়! নিশ্চয়ই আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য।

সুতরাং দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদের কোনোভাবেই প্রতারিত না করে। আর বড় প্রতারক শয়তান যেন তোমাদের আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারণা না করে। শয়তান তোমাদের শত্রু, সুতরাং তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ করো। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামি হয়। (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৫-৬)

আল্লাহ তাআলার বিশেষ বান্দারা দুনিয়াবিমুখ হয়। তাদের কাছে সব সময় দুনিয়া নগণ্য হিসেবে পদচুম্বন খেয়ে ধরা দেয়, কিন্তু তারা দুনিয়াকে গ্রহণ করে না। পক্ষান্তরে দুনিয়াদাররা দুনিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে, কিন্তু দুনিয়া তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। এসব দুনিয়াদারকে আল্লাহ তাআলা অভাবে রাখেন। তাদের অভাব কখনো দূর হয় না।

পার্থিব জীবনে তারা সফল হয় না।

লোভ-লালসা মানুষকে দারিদ্র্যে নিপতিত করে

মহান আল্লাহ এ বিশ্বকে নানা রকমের নিয়ামত, ভোগ্যপণ্য ও বিলাসিতার উপকরণ দিয়ে সুশোভিত করে সৃষ্টি করেছেন। এসব চিত্তাকর্ষণীয় জিনিসের প্রতি মানুষের রয়েছে বেশি আগ্রহ ও মোহনীয় উদ্রেক। আর দুনিয়াদাররা সম্পদে শান্তির সুঘ্রাণ পায়। তারা প্রতিনিয়ত বিশাল বিশাল অট্টালিকার স্বপ্ন বুনতে থাকে। অবৈধ পন্থায় হলেও স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্যাকুল হয়ে থাকে। মানসিক স্বস্তির জন্য মদ, জুয়া, নারী নিয়েই সর্বদা মত্ত থাকে। কিন্তু এর পরও দুশ্চিন্তা ও মানসিক যন্ত্রণা তাদের পিছু ছাড়ে না। আকস্মিক  বিপদগ্রস্ত হয়ে তাদের সমুদয় সম্পদ নিমেষেই ক্ষয়ে যায়। দুনিয়ার কোনো শক্তি তাদের ক্ষতি পূরণ করতে পারে না।

এই মর্মে আল্লাহ তাআলার বাণী—‘মানবকুলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশীকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, গবাদিপশু ও ক্ষেতখামারের মতো আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্যবস্তু। আল্লাহর কাছেই হলো উত্তম আশ্রয়স্থল।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ১৪)

যখন কেউ হালাল-হারামের তোয়াক্কা না করেই ননাবিধ অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে; অবাধে সীমা লঙ্ঘন করতে থাকে,  স্বীয় স্ত্রী-সন্তানসহ সব আত্মীয়-স্বজনের কাছে সম্মানের পাত্র হিসেবে থাকে। কিন্তু একসময়ের সম্পদশালী পরিবারে যদি হঠাৎ করে অভাবের লালবাতি জ্বলতে উঠে, দারিদ্র্য তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে, তখন এই দুনিয়ামুখীরাই সম্পদহারা হয়ে স্বীয় স্ত্রী-সন্তানসহ সব আত্মীয়-স্বজনের কাছে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়। এই পরিণামের একমাত্র কারণ হলো আখিরাতবিহীন দুনিয়ার মোহ। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য অন্তরকে খালি করে নাও। আমি তোমার অন্তরকে অভাব মুক্তি দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমাদের দারিদ্র্যের পথ বন্ধ করে দেব। আর যদি তা না করো, তবে আমি তোমার হাতকে দুনিয়ার ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেব  এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৪৬)

দুনিয়ার মোহে বিভোর হয়ে মানুষ অন্যের প্রতি জুলুম-অত্যাচার, প্রতারণা, জালিয়াতি, খাদ্যে ভেজাল মেশানো, চোরাকারবারি, অর্থ কেলেঙ্কারি, নারী কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি, খুন-গুম, সুদ-ঘুষ, শিশু হত্যা, মানব হত্যা, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে। অথচ আল্লাহ তাআলার বাণী—‘তোমরা জেনে রাখো যে দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহংকার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হলো বৃষ্টির মতো, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদের আনন্দ দেয়; তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখিরাতে আছে কঠিন আজাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হিদায়াত দান করুন। দুনিয়ার মরীচিকার মোহ ত্যাগ করে পরকালকে প্রাধান্য দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *