কিয়ামতের ছোট আলামত ৭. আমানতের খেয়ানত করা
ইসলামে আমানতকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা হয়েছে, যা মানুষের নৈতিক দায়িত্ব এবং ঈমানের একটি অংশ। তবে কেয়ামতের অন্যতম আলামত হলো, মানুষের মধ্যে আমানতের গুরুত্ব হারিয়ে যাবে এবং তারা এতে খেয়ানত করতে শুরু করবে। কুরআন ও হাদিসে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কুরআন ও হাদিসে আমানতের গুরুত্ব
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন: إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেন যে, তোমরা আমানত তার উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দাও।” (সূরা নিসা: ৫৮)
কেয়ামতের আলামত হিসেবে আমানতের খেয়ানত
রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিসে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মানুষ আমানতের প্রতি খেয়ানত করবে এবং দায়িত্ব অযোগ্য ব্যক্তির হাতে অর্পণ করা হবে।
১. হাদিস:
حَدَّثَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: “إِذَا ضُيِّعَتِ الْأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ.” قَالَ: كَيْفَ إِضَاعَتُهَا؟ قَالَ: “إِذَا وُسِّدَ الْأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ.”
“যখন আমানত নষ্ট হবে, তখন কেয়ামতের অপেক্ষা করো।” জিজ্ঞাসা করা হলো: কীভাবে আমানত নষ্ট হবে? তিনি বললেন: ‘যখন দায়িত্ব অযোগ্য ব্যক্তির হাতে অর্পণ করা হবে, তখন কেয়ামতের অপেক্ষা করো।'” (সহিহ বুখারি: ৫৯)
২. হাদিস:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: “لَا إِيمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ، وَلَا دِينَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهُ.” “যার মধ্যে আমানত নেই, তার মধ্যে ঈমান নেই। যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার গুণ নেই, তার মধ্যে দ্বিনও নেই।” (মুসনাদ আহমাদ: ১২৪০৬)
৩. হাদিস:
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: “تُعْرَضُ الْأَمَانَةُ عَلَى قُلُوبِ الرِّجَالِ، فَيَنَامُ الرَّجُلُ النَّوْمَةَ فَتُقْبَضُ الْأَمَانَةُ مِنْ قَلْبِهِ…” “আমানত মানুষের হৃদয়ে উপস্থাপন করা হয়। এরপর একসময় এমন হবে, মানুষ ঘুমিয়ে থাকবে এবং তার হৃদয় থেকে আমানত তুলে নেওয়া হবে…” (সহিহ বুখারি: ৬৪৯৭, সহিহ মুসলিম: ১৪৩)
কেয়ামতের আলামত হিসেবে আমানতের খেয়ানতের লক্ষণ
১. অযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান: যখন দায়িত্ব তাদের হাতে যাবে যারা যোগ্য নয়, তখন আমানতের খেয়ানত নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি পাবে।
২. ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার বিস্তার: মানুষ নিজেদের স্বার্থে অন্যদের সাথে প্রতারণা ও ধোঁকা দিতে দ্বিধা করবে না।
৩. ন্যায়বিচারের অভাব: বিশ্বাস ও ন্যায়বিচার সমাজ থেকে উঠে যাবে।
৪. পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার: ক্ষমতা লাভের পর তা মানুষের সেবা করার পরিবর্তে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা হবে।
মুমিনদের করণীয়
১. আমানতের প্রতি গুরুত্বারোপ: কুরআন ও হাদিসে আমানতের গুরুত্ব বোঝা এবং তা রক্ষা করা প্রতিটি মুমিনের জন্য আবশ্যক।
২. সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন: সমাজের দায়িত্ব ও নেতৃত্ব এমন ব্যক্তিদের হাতে দেওয়া উচিত, যারা যোগ্য ও বিশ্বস্ত।
৩. নিজের আমানত রক্ষা করা: নিজেদের হাতে থাকা যে কোনো দায়িত্ব সততার সাথে পালন করতে হবে।
৪. দোয়া করা: আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে, যাতে তিনি আমাদের আমানতের খেয়ানত থেকে রক্ষা করেন এবং আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
সংকলক: মুফতি রাশেদুল ইসলাম
ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স
মুহাদ্দিস: মিরপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও জামিয়া মুহাম্মাদীয়া আরাবিয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স