আত্মীয়রা দুর্ব্যবহার করার পরও তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা
কেউ কেউ মনে করেন, আত্মীয়-স্বজনরা তার সাথে দুর্ব্যবহার করলে তাদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা জায়েয। মূলত ব্যাপারটি তেমন নয়। বরং আত্মীয়রা আপনার সাথে দুর্ব্যবহার করার পরও আপনি যদি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার দেখান তখনই আপনি তাদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করেছেন বলে প্রমাণিত হবে।
সুতরাং, মনে রাখতে হবে, কোনও আত্মীয় দুর্ব্যবহার করলেও তার সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। কেউ আপনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে, আপনি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। কোনোভাবেই কোনও আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করা যাবে না। অন্যথায় আপনি গুনাহগার হবেন।
আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: الرَّحِمُ مُعَلَّقَةُ بِالْعَرْشِ وَلَيْسَ الْوَاصِلُ بِالْمُكَافِي، وَلَكِنَّ الْوَاصِلَ مَنْ إِذَا انْقَطَعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا» “আত্মীয়তার সম্পর্কের বিষয়টি আল্লাহর আরশের সাথে সম্পৃক্ত। সে ব্যক্তি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী হিসেবে গণ্য হবে না, যে কেউ তার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলেই সে তার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে। বরং আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী সে ব্যক্তি যে কেউ তার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করলেও সে তার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে”।(বুখারী, হাদীস: ৫৯৯১; আবু দাউদ, হাদীস: ১৬৯৭; তিরমিযী, হাদীস: ১৯০৮; বায়হাক্বী, হাদীস: ১২৯৯৮)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمَنُ ارْحَمُوا أَهْلَ الْأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ أَهْلُ السَّمَاءِ الرَّحِمُ شُجْنَةٌ مِنَ الرَّحْمَنِ فَمَنْ وَصَلَهَا وَصَلَهُ، وَمَنْ قَطَعَهَا قَطَعَهُ اللَّهُ» قَالَ سُفْيَانُ: الشُّجْنَةُ الشَّيْءُ الْمُلْتَزِقُ
আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দয়ালুদের আল্লাহ তা’আলাহ দয়া করেন, তোমরা যমীনবাসীদের প্রতি দয়া কর, আসমানবাসী তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। আত্মীয়তার বন্ধন রহমানের সাথে সম্পৃক্ত। যে ব্যক্তি তার সাথে সু-সম্পর্ক রাখে, তিনিও তার সাথে সু-সম্পর্ক রাখেন, আর যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ তা’আলাও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন”।(আহমদ, হাদিস: ৬৪৯৪)
শত্রু ভাবাপন্ন কোনও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সর্বদা ভালো ব্যবহার দেখালেই আপনি তখন তাদের ব্যাপারে সরাসরি আল্লাহ তা’আলার সাহায্যপ্রাপ্ত হবেন। তখন তারা কখনোই একমাত্র আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা ছাড়া আপনার এতটুকুও ক্ষতি করতে পারবে না। প্রমাণ- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي قَرَابَةٌ أَصِلُهُمْ وَيَقْطَعُونِي، وَأُحْسِنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إِلَيَّ، وَأَحْلُمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ، فَقَالَ: «لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ، فَكَأَنَّمَا تُسِقُهُمُ الْمَلَّ وَلَا يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার এমন কিছু আত্মীয়-স্বজন রয়েছে যাদের সাথে আমি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করি; অথচ তারা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করি; অথচ তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদের সাথে সহিষ্ণুতার পরিচয় দেই; অথচ তারা আমার সাথে মূর্খতামূলক আচরণ (কঠোরতা) দেখায়। অতএব তাদের সাথে এখন আমার করণীয় কি?
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি যদি সত্যি কথাই বলে থাক, তা হলে তুমি যেন তাদেরকে উত্তপ্ত ছাই খাইয়ে দিচ্ছ। আর তুমি যতদিন পর্যন্ত তাদের সাথে এমন ব্যবহার করতে থাকবে, ততদিন আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তাদের উপর তোমার জন্য একজন সাহায্যকারী নিযুক্ত থাকবে”। (মুসলিম, হাদীস: ২৫৫৮; আহমদ, হাদিস: ৯৩৪৩)
প্রতিবেশীরা হল, মানুষের পরম আত্মীয়। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, তাদের হক আদায় করা, তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া খুবই জরুরী কাজ। ইসলাম প্রতিবেশীদের হক ও তাদের খোঁজ- খবর নেওয়া এবং বিপদ-আপদে তাদের সহযোগিতা করার ব্যাপারে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ، حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرَتُهُ “জিবরিল আলাইসিসালাম আমাকে প্রতিবেশীদের প্রতি এত বেশি সতর্ক করতেন, মনে হয়েছিল যে, আমার প্রতিবেশীদেরকে আমার উত্তরসূরি করে দেওয়া হবে”।
সুতরাং, প্রতিবেশীদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা ও তাদের অধিকার আদায় প্রতিটি ঈমানদারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন।