ইসলাম

বিচারকার্যে ভুল শুধরিয়ে দেয়া

একবার এক ব্যক্তি জনৈক মহিলার সাথে ঝগড়া করছিলো। মহিলা লোকটিকে ‘হারামীর সন্তান’ বলে গালি দিলো। লোকটি মহিলার সাথে ঝগড়া না বাড়িয়ে কূফার বিচারক কাজী ইবনে আবী লাইলার নিকট অভিযোগ করলো ।

কাজী ইবনে আবী লাইলা মহিলাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলেন 1মহিলাকে কূফার জামে মসজিদে উপস্থিত করা হলো। যেখানে কাজী ইবনে আবী লাইলা বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। ঘটনাক্রমে সেদিন সেখানে ইমাম আবু হানীফা রহ. উপস্থিত ছিলেন। বিচারক আসামী মহিলাকে মসজিদে দাঁড় করিয়ে ‘হদ্দে কযফ’ তথা অপবাদের শাস্তিস্বরূপ দুটি হদ তথা একশত ষাটটি বেত্রাঘাত করার নির্দেশ দিলেন। (হারামীদের সন্তান বলার দরুণ সে দুটি অপবাদ তার পিতা এবং মাতার উপর আরোপ করেছে)

ইমাম আবু হানীফা রহ. ঘটনা দেখে বললেন, হে ইবনে আবী লাইলা! আপনি এই বিচারে ছয়টি ভুল করেছেন। ১. দিশেহারা এক মহিলার উপর আপনি হদ প্রয়োগ করেছেন। অথচ হ্রদ সচেতন ব্যক্তির উপর প্রয়োগ করতে হয়।

২. আপনি মসজিদের মধ্যে হদ প্রয়োগ করেছেন। অথচ মসজিদে হদ কার্যকর করা নিষেধ।

৩. মহিলাকে আপনি দাঁড় করিয়ে হদ আরোপ করেছেন। অথচ মহিলাদেরকে বসিয়ে হ্রদ প্রয়োগ করতে হয়।

৪. তার উপর আপনি দুইটি হদ আরোপ করেছেন । অথচ সে অপবাদ আরোপ করেছে একটি শব্দ দ্বারা। আর একটি শব্দ দ্বারা যদি একটি সম্প্রদায়কেও অপবাদ আরোপ করা হয়, তথাপি শাস্তিস্বরূপ মাত্র একটি হদ প্রয়োগ করতে হয় ।

৫. আপনি নিজে বেত্রাঘাত করেছেন। অথচ বেত্রাঘাত করার অধিকার ছিলো তার পিতা-মাতার। আর তারা দুজন অনুপস্থিত।

৬. আপনি দুটি হদ একসাথে প্রয়োগ করেছেন। অথচ কারো উপর যদি দুটি হদ আরোপিত হয়, তাহলে একসাথে দুটি হদ লাগানো যায় না। বরং প্রথম হদের আলামত মুছে গেলে দ্বিতীয় হদ লাগাতে হয় ।

ইমাম আবু হানীফা রহ. এর বক্তব্য শুনে কাজী ইবনে আবী লাইলা রাগান্বিত হলেন এবং গভর্নরের নিকট ইমাম আবু হানীফা রহ. এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন। গভর্নর ইমাম আবু হানীফা রহ.-কে ফাতওয়া দিতে নিষেধ করলেন।

পরবর্তীতে এক কঠিন মাসআলায় গভর্নর ইসা ইবনে মুসা নিজে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর দ্বারস্থ হলেন এবং ফাতওয়া প্রদানের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেন।

তথ্যসূত্র:

বই : ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. এর ঈমানদীপ্ত গল্প

লেখক : মুফতি মাহফুজ মোসলেহ

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *