ইবাদত

ঈদ উদযাপন : সালাফের কিছু অবস্থা ও অনুভূতি

মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন


মেহেরবান আল্লাহ আমাদের দুটি ঈদ দান করেছেন। ঈদ হল খুশির দিনআনন্দের মৌসুম। ঈদে আমরা খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করব এবং দরিদ্র ও অসহায়দের সুখ ও আনন্দদানের চেষ্টা করব। তবে স্মরণ রাখতে হবেমুসলিমের আনন্দউদ্যাপন আর অমুসলিমের আনন্দউদ্যাপন এক হতে পারে না। মুমিনের আনন্দউদ্যাপন হয় আল্লাহর পছন্দনীয় আমলের মাধ্যমে আর অমুসলিমের আনন্দউদ্যাপন হয় তাঁর নাফরমানির মাধ্যমে। মুসলিমের জীবন ও চিন্তা আখেরাতকেন্দ্রিক আর কাফেরের সবকিছু দুনিয়াকেন্দ্রিক। আল্লাহ তাআলা বলেন

وَ فَرِحُوْا بِالْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ مَا الْحَیٰوةُ الدُّنْیَا فِی الْاٰخِرَةِ اِلَّا مَتَاعٌ.

তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ) পার্থিব জীবনেই উল্লসিতঅথচ আখেরাতের তুলনায় পার্থিব জীবন তো মামুলি ভোগমাত্র। সূরা রাদ (১৩) : ২৬

আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উদ্দেশে বলেন

قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَ بِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْیَفْرَحُوْا  هُوَ خَیْرٌ مِّمَّا یَجْمَعُوْنَ.

(হে নবী!) বলুনএসব আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমতেই হয়েছে। সুতরাং এতেই তাদের আনন্দিত হওয়া উচিত। তারা যাকিছু পুঞ্জীভূত করেতা অপেক্ষা এটা শ্রেয়! সূরা ইউনুস (১০) : ৫৮

ঈদের হাকীকত

আনাস রা. বলেননবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করেন তখন দেখেনমদীনাবাসী বছরে দুই দিন উৎসব করে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনতোমরা এই দুই দিন আনন্দফুর্তি কর কেনতারা বললজাহেলী যুগে এ দুইটি দিন আমরা উৎসবআনন্দ করতাম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন

إِنّ اللهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَايَوْمَ الْأَضْحَى، وَيَوْمَ الْفِطْرِ.

আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে এ দুই দিনের বদলে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। ঈদুল আযহা ও ঈদুর ফিতর। সুনানে আবু দাউদহাদীস ১১৩৪সুনানে নাসাঈহাদীস ১৫৫৬

হাদীসটি থেকে স্পষ্ট যেঅমুসলিমদের পর্বউৎসব বর্জন করার জন্যই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দুটি ঈদ দান করেছেন। সুতরাং আমরা আমাদের ঈদ উদ্যাপন করবঅমুসলিমদের পর্বউৎসব থেকে বিরত থাকব। সাথে সাথে আমাদের ঈদ যেন অমুসলিমদের পর্বউৎসবের মত নিছক পার্থিব আমোদপ্রমোদের ক্ষেত্র না হয়সেদিকেও খুব খেয়াল রাখব। হাসান বসরী রাহ.এর বক্তব্য অনুযায়ী আমাদের ঈদ তো হল

أما يوم الفطر فصلاة وصدقة وأما يوم الأضحى فصلاة ونسك.

ঈদুল ফিতর হলঈদের নামায পড়া ও সদাকাতুল ফিতর আদায় করা এবং ঈদুল আযহা হচ্ছে ঈদের নামায পড়া ও কুরবানী করা। ফাযাইলুল আওকাতবায়হাকীপৃ. ৩০৩৩০৪ (১৪৪)শুআবুল ঈমানবায়হাকী ৫/৩৮৬ (৩৪৩৭)

ইবনে রজব হাম্বলী রাহ.এর ভাষ্যমতে আমাদের ঈদ হল

وإنما كان يوم الفطر من رمضان عيدا لجميع الأمة، لأنه تعتق فيه أهل الكبائر من الصائمين من النار، فيلتحق فيه المذنبون بالأبرار، كما أن يوم النحر هو العيد الأكبر، لأن قبله يوم عرفة وهو اليوم الذي لا يرى في يوم من الدنيا أكثر عتقا من النار منه، فمن أعتق من النار في اليومين فله يوم عيد، ومن فاته العتق في اليومين فله يوم وعيد.

ঈদুল ফিতরের দিন সমস্ত উম্মতের জন্য ঈদ ও আনন্দের দিন হওয়ার কারণ হল– ঐ দিন আল্লাহ তাআলা রোযাদারদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। ফলে যারা গোনাহগার তারাও নেককারদের দলে শামিল হয়ে যায়। আর ঈদুল আযহার দিন বড় ঈদ হওয়ার কারণ হচ্ছে– এর আগের দিন হল আরাফার দিনযেদিন এত বিপুল পরিমাণ লোকদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়সারা বছরের আর কোনো দিন এত লোককে মুক্তি দেওয়া হয় না।

সুতরাং ঈদের দিন যাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় তার জন্য সেদিন ঈদ ও খুশির দিন আর ঐ দিন যে মুক্তি পায়নি তার জন্য সেদিন কান্না ও বিলাপের দিন। লাতাইফুল মাআরিফপৃ. ২৩৭২৩৮

এই হল ঈদের হাকীকত। পুরো এক মাস রোযা রাখা ও তারাবী পড়ার পর ঈদের দিন আল্লাহ রোযাদারদেরকে তাদের মেহনতের সওয়াব ও পুরস্কার দান করবেন। জাহান্নামীদের তালিকা থেকে তাদের নাম মুছে দেবেন। তাই রোযাদাররা খুশি হয়ে শুকরিয়া স্বরূপ দানসদকা করবে এবং ঈদের নামায আদায় করবে।

আরাফার দিন (কুরবানী ঈদের আগের দিন) হাজ্বীগণ উকুফে আরাফা করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেন। ঈদের দিন সামর্থ্যবানরা কুরবানী করেসকল মুসলমান এক ময়দানে একত্র হয়ে ঈদের নামায আদায় করে। এভাবে হজ¦, কুরবানী ও নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের গোনাহ মাফ করেন এবং আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের মেহমানদারি করেন। ফলে ঈদের আনন্দ গুনাহ মাফ হওয়ার আনন্দজাহান্নাম থেকে মুক্তির আনন্দমহান আল্লাহ তাআলার মেহমানদারি কবুল করার আনন্দসবোর্পরি আল্লাহ প্রদত্ত নিআমতের শুকরিয়া প্রকাশের আনন্দ। বান্দা এসবের জন্য খুশি প্রকাশ করবে,  ঈদের দিনগুলো অনন্দে অতিবাহিত করবে। এই হল ঈদের স্বরূপ। এটাই হল একজন মুসলিমের ঈদ ও আনন্দ। 

মোটকথামুমিনের সুখশান্তি ও হাসিআনন্দ হল দ্বীন ও আখেরাত কেন্দ্রিক। সুতরাং মুমিনের ঈদ ও আনন্দ অমুসলিমের উৎসববিনোদনেরআমোদফুর্তির মত হবে না। মুমিন তার ঈদ উদ্যাপনে আল্লাহর নাম ভুলবে নাশরীয়তের সীমা অতিক্রম করবে না এবং বিজাতির উৎসব ও আমোদপ্রমোদের অনুসরণ করবে নাগুনাহে লিপ্ত হবে না। মুসলিম অন্যান্য সকল বিষয়ে যেমন নবীজীর সুন্নাহর অনুসরণ করে এবং সালাফে সালেহীন তথা মহান পূর্বসূরিদের আদর্শের অনুসরণ করেঈদের আনন্দ উদ্যাপনেও তাঁদেরই অনুকরণ করবে। আসুনজেনে নিই আমাদের মহান পূর্বসূরিগণ কীভাবে ঈদ উদ্যাপন করতেন।

সালাফে সালেহীনের ঈদ উদযাপন

মুমিন ঈদের দিন আল্লাহর নিআমতের উপর খুশি প্রকাশ করবে এবং মাগফিরাত লাভের আনন্দে আনন্দিত হবে। আল্লাহপ্রদত্ত এ খুশির দিনকে বৈধ বিনোদনের মাধ্যমে উদ্যাপন করবে। কিন্তু এতে সে দ্বীনশরীয়ত পাশ কাটিয়ে উন্মাদ হয়ে পড়বে নাআল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হবে না। এমনই ছিল  সালাফে সালেহীনের ঈদ। এখানে তাঁদের  কিছু ঘটনা ও বাণী উল্লেখ করছি। এতেই স্পষ্ট হয়ে যাবেকীভাবে তাঁরা উদ্যাপন করতেন ঈদ ও ঈদের খুশি।

তাঁদের দৃষ্টিতে ক্ষমা ও পুরস্কার লাভই ঈদের আসল আনন্দ

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ঈদের দিন বলতেন

من هذا المقبول منا فنهنيه، ومن هذا المحروم منا فنعزيه، أيها المقبول هنيئا لك، أيها المردود جبر الله مصيبتك.

জানি নাআমাদের মধ্যে কে পুরস্কৃততাকে আমরা শাবাশি দিতাম! আর কে বঞ্চিততার জন্য আমরা শোক প্রকাশ করতাম! হে পুরস্কৃত! তোমাকে অভিনন্দন। হে বঞ্চিত! আল্লাহ তোমার ক্ষতিপূরণ করুন। লাতাইফুল মাআরিফপৃ. ২৩৫

এর চেয়ে সত্য ও বাস্তব কথা আর কী হতে পারে?

এক বুযুর্গকে দেখা গেল ঈদের দিন তিনি খুব চিন্তিত। তাঁকে প্রশ্ন করা হলআজ তো খুশি ও আনন্দের দিন। আপনার অবস্থা এমন কেনতিনি উত্তর দিয়েছেন

صدقتم ولكني عبد أمرني مولاي أن أعمل له عملا فلا أدري أيقبله مني أم لا؟

আপনাদের কথা সত্য। আসলে আমি হলাম এক গোলামআমার মাওলা আমাকে তাঁর জন্য একটা আমল করার (রোযা রাখার) নির্দেশ দিয়েছিলেন। (আমি তা করেছি। কিন্তু) জানি নাতিনি আমার এ আমল কবুল করেছেন কি না। লাতাইফুল মাআরিফপৃ. ২৩৫

হায়আমরাও যদি এভাবে চিন্তা করতে পারতাম!

ইবনুল জাওযী রাহ. বলেন

إخوانيليس العيد ثوبا يجر الخيلاء جره، ولا تناول مطعم بكف شره لا يؤمن شره، إنما العيد لبس توبة عاص تائب يسر بقدوم قلب غائب.

বন্ধুগণ! জমকালো জামা পরাযা অহংকার সৃষ্টি করে এবং আড়ম্বরপূর্ণ খাবার খাওয়াযার অনিষ্ট থেকে বাঁচা যাবে না– এর নাম ঈদ নয়ঈদ হল আল্লাহভোলা কলব তাওবার জামা পরিধান করাযা অদৃশ্যের (আল্লাহর) সঙ্গে মিলনের আনন্দে আন্দোলিত থাকে। আততাবসিরাহ ২/১১৪

হে আল্লাহ! আমাদেরকে এমন স্বচ্ছ হৃদয় দান করুনযা প্রকৃত ঈদ ও আনন্দ অনুভব করতে পারে– আমীন। 

আবু মানছুর শীরাজী রাহ. বলেন

ليس العيد لمن غرف له إنما العيد لمن غفر له.

যাকে অঞ্জলি ভরে দান করা হলঈদ তো তার জন্য নয়। ঈদ তো হল ঐ ব্যক্তির জন্যযার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হল। মুজামুস সাফারআবু তাহের সিলাফীপৃ. ৩০২ (১০০৮)

হায়! আমাদেরও যদি ঈদআনন্দে অনুভূতিটা এমন হত!

এসব বর্ণনা ও ঘটনা থেকে স্পষ্ট যেসালাফে সালেহীনের আনন্দ ছিল আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভের মাঝে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাঝে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের মাঝে।

এভাবে সর্বদা এমনকি ঈদ ও খুশির মুহূর্তেও আল্লাহর মাগফিরাত ও জান্নাত লাভের আশায় এবং আল্লাহর ক্রোধ ও জাহান্নাম থেকে বাঁচার চিন্তায় ব্যাকুল থাকতেন সালাফে সালেহীন।

একদা ঈদুল ফিতরের দিন ওয়াহাব ইবনে ওয়ারদ রাহ. দেখলেনকিছু লোক আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছে। এ দেখে তিনি বললেন

إن كان هؤلاء يقبل منهم صيامهم فما هذا فعل الشاكرين، وإن كان هؤلاء لم يقبل منهم صيامهم فما هذا فعل الخائفين.

আল্লাহ তাআলা যদি তাদের রোযা কবুল করে থাকেন (তাহলে তো তাদের শোকর করা উচিত।) শোকরগুযার বান্দারা তো এভাবে ফুর্তিতে মত্ত হতে পারে না। আর যদি আল্লাহ তাদের রোযা কবুল না করেন (তাহলে তো তাদের ভীতশঙ্কিত হওয়া উচিত।) ভীতশঙ্কিত লোকেরা তো হাশিতামাশা করতে পারে না। ফাযাইলুল আওকাতবায়হাকীপৃ. ৩২২ (১৫৮১৫৭)

ঈদের দিন আল্লাহ তাআলা তার বেশুমার বান্দার গুনাহখাতা মাফ করেন। এই দিনেও যারা মাগফিরাত লাভ করতে পারে না তারা বাস্তবেই হতভাগা। ঈদের দিন যারা এসব চিন্তা না করে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় তাদের প্রতি লক্ষ করে হাসান বসরী রাহ. বলেন

العجب من اللاعب الضاحك في اليوم الذي يفوز فيه المحسنون ويخسر فيه المبطلون.

আজ নেককার বান্দারা সফল হবে এবং বদকার লোকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেএমন দিনেও লোকেরা খেলতামাশায় মত্ত! খুবই আশ্চর্যের বিষয়! লাতাইফুল মাআরিফপৃ. ২৩৫

বস্তুত ঈদের দিন হচ্ছে গোটা রমযানের ইবাদতবন্দেগির পুরস্কার লাভের দিন। এদিন সেই কৃতকার্য হলযার ইবাদত কবুল হলগুনাহ মাফ হল। যার গুনাহ মাফ হল নাইবাদত কবুল হল নাতারচে হতভাগা আর কে হতে পারে! এমন ব্যক্তির জন্য রাসূলও ধিক জানিয়েছেন।

(দ্র. আলআদাবুল মুফরাদবুখারীহাদীস ৬৪৪)

বাস্তব কথা হলআমাদের পূর্বসূরিগণ এভাবেই মুহাসাবা ও আত্মসমালোচনার দৃষ্টিতে নিজের দিকে তাকাতেন। মুহাসাবা বিহীন নিছক আনন্দে গা ভাসিয়ে  দেওয়াআরো আফসোসের বিষয় হলগুনাহের মাধ্যমে আনন্দ উদ্যাপন করা কখনই মুমিনের শান নয়।

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। কিন্তু কার জন্যকী জন্যএগুলো নিয়েও আত্মবিশ্লেষণ করা দরকার। পাশাপাশি এও চিন্তা করা দরকারএ আনন্দ কীভাবে উদ্যাপন করব?

তাঁরা ঈদের খুশি প্রকাশ করতে গিয়ে গোনাহে লিপ্ত হতেন না

ঈদের খুশি উদ্যাপন করতে গিয়ে অনেক মানুষ গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়েন। নযরের গুনাহ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের নাফরমানিতে জড়িয়ে পড়েন। সালাফ এ বিষয়ে সজাগসচেতন ছিলেন।

ওয়াকী ইবনুল জার্রাহ রাহ. বলেনঈদের দিন সুফিয়ান সাউরী রাহ.এর সাথে বের হলাম। তিনি বললেন

إن أول ما نبدأ به في يومنا غض أبصارنا.

আজকের দিন যে কাজের মাধ্যমে আমরা ঈদের সূচনা করব তা হল দৃষ্টির হেফাযত। আলওয়ারা‘, ইবনে আবিদ দুনিয়াপৃ. ৬৩ (৬৬)

আবু হাকীম রাহ. বলেনহাস্সান ইবনে আবু সিনান রাহ. ঈদের নামাযে বের হলেন। নামায থেকে ফিরে এলে তার স্ত্রী দৃষ্টির গুনাহ থেকে বেঁচেছেন কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন

ويحك ما نظرت إلا في إبهامي منذ خرجت من عندك حتى رجعت إليك.

কী বলছ! ঘর হতে বের হওয়া থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত দৃষ্টি কেবল পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির প্রতি নিবদ্ধ ছিল। হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/১১৫আলইল্মইবনে আবিদ দুনিয়াপৃ. ৩২ (৬৮)আলওয়ারা‘, ইবনে আবিদ দুনিয়াপৃ. ৬৪ (৬৮)সিফাতুস সফওয়া ৩/৩৩৬৩৩৭

তাঁরা ঈদের দিন দানসদকা ও ইসতিগফারের প্রতি উৎসাহিত করতেন

খলীফাতুল মুসলিমীন উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. তাঁর গভর্নরদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন

ঈদের নামাযের আগে সাধ্যানুযায়ী দানসদকা করবে। যাদের দান করার সামর্থ্য নেই তারা যেন ঈদের পরে রোযা রাখে।

এরপর তিনি বলেনঈদের দিন তোমরা বেশি বেশি বলতে থাকবেযেমন বলেছিলেন আমাদের পিতা আদম আলাইহিস সালাম

رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا وَ اِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَ تَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ.

হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজ সত্তার উপর জুলুম করে ফেলেছি। আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন ও আমাদের প্রতি রহম না করেনতবে আমরা অবশ্যই অকৃতকার্যদের অন্তভুর্ক্ত হয়ে যাব। [সূরা আরাফ (৭) ২৩]

আরো বলতে থাকবেযেমন বলেছিলেন নূহ আলাইহিস সালাম

وَاِلَّا تَغْفِرْ لِیْ وَ تَرْحَمْنِیْۤ اَكُنْ مِّنَ الْخٰسِرِیْنَ.

আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন ও আমার প্রতি দয়া না করেনতবে আমিও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তভুর্ক্ত হয়ে যাব। [সূরা হুদ (১১) : ৪৭]

ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মতো দুআ করতে থাকবে

وَ الَّذِیْۤ اَطْمَعُ اَنْ یَّغْفِرَ لِیْ خَطِیْٓـَٔتِیْ یَوْمَ الدِّیْنِ.

এবং যার কাছে আমি আশা রাখিহিসাবনিকাশের দিন তিনি আমার অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। [সূরা শুআরা (২৬) : ৮২]

মূসা আলাইহিস সালামের মতো ইস্তিগফার করতে থাকবে

رَبِّ اِنِّیْ ظَلَمْتُ نَفْسِیْ فَاغْفِرْ لِیْ فَغَفَرَ لَهٗ اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ.

হে আমার প্রতিপালক! আমি নিজ সত্তার প্রতি জুলুম করেছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। সুতরাং আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীলপরম দয়ালু। [সূরা কাসাস (২৮) : ১৬]

তদ্রƒযুন্নূন (ইউনুস) আলাইহিস সালাম যেভাবে দুআ ইউনুস পড়েছিলেন সেভাবে পড়তে থাকবে

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحٰنَكَ  اِنِّیْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِیْنَ.

(হে আল্লাহ!) তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তুমি সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অপরাধী। [সূরা আম্বিয়া (২১) : ৮৭]  ফাযাইলুল আওকাতবায়হাকীপৃ. ৩০৬৩০৭ (১৪৬)

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়

মুসলিম পরস্পরে সাক্ষাৎ হলে একেঅপরকে সালাম দেবে– এটাই তো উত্তম আদর্শ। এরচেয়ে উত্তম আর কোনো অভিবাদন হতে পারে না। সালামের অর্থের দিকে তাকালেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। সালামের মাধ্যমে পরস্পরের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণের দুআ করা হয়।

السلام عليكم ورحمة الله وبركاته.

আপনাদের প্রতি বর্ষিত হোক সালাম ও শান্তি এবং বর্ষিত হোক আল্লাহর রহমত ও বরকত।

তাছাড়া সালামের রয়েছে আরো অনেক ফযীলত। যেমনহাদীস শরীফে এসেছেসালামের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে মিলমহব্বত পয়দা হয়ঈমানের পূর্ণতা লাভ হয় এবং জান্নাতে দাখেল হওয়ার পথ সুগম হয়। (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিমহাদীস ৫৪সুনানে আবু দাউদহাদীস ৫১৯৩)

অতএব আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠতম শুভেচ্ছা ও আদর্শ অভিনন্দন হল সালাম। এটাকে আমরা আঁকড়ে ধরব। সালামের বেশি বেশি প্রচলন ঘটাববিশেষ করে ঈদ ও অন্যান্য আনন্দের মুহূর্তগুলোতে।

সালামের পর আমরা একেঅপরের জন্য দুআ করতে পারি। ঈদের দিন সাক্ষাৎ হলে রাসূলের সাহাবীগণ যে শব্দবাক্যের মাধ্যমে একেঅপরের জন্য দুআ করতেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও শিক্ষণীয়। এতেই নিহীত আছে– মুসলিমের প্রকৃত ঈদ ও খুশি কী এবং কীসের মাধ্যমে ঈদআনন্দ পূর্ণতা লাভ করে এবং কীসে সফলতা ও কল্যাণ। আর তা হলআল্লাহর কবুলিয়াততাঁর দরবারে আমাদের আমল কবুল হওয়া এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভ হওয়া। তাই তো সাহাবীগণ সবাই সবার জন্য এই কবুলিয়াতের দুআই করতেন। সাঈদ ইবনে জুবায়ের রাহ. বলেন

كان أصحاب رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم إذا التقوا يوم العيد يقول بعضهم لبعض : تَقَبّلَ اللهُ مِنّا وَمِنْكُمْ.

ঈদের দিন সাহাবায়ে কেরাম মিলিত হলে একেঅপরের উদ্দেশে বলতেন

تَقَبّلَ اللهُ مِنّا وَمِنْكُمْ.

আল্লাহ কবুল করুন আমাদের থেকে এবং আপনাদের থেকে (সকল আমল)। ফাতহুল বারী ২/৪৪৯আলজাওহারুন্নাকী ৩/৩২০

 

 

তথ্য সূত্রঃ

মাসিক আলকাওসার – https://www.alkawsar.com/bn/article/2925/

 

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *