ইসলাম

হিংসার সংজ্ঞা,স্তর,কারণ

মানুষের অন্যতম একটি খারাপ গুণ হলো হিংসা। ইসলামে হিংসা বা বিদ্বেষ পোষণকারীকে খুবই নিকৃষ্ট চোখে দেখা হয়েছে।

হিংসা মানুষকে শুধু প্রতিপন্নই করে না বরং হিংসুকের জীবন কখনই সুখের হয় না। কেননা হিংসুক ব্যক্তি সবসময় সব জিনিসের অধিকারী হতে চায়। তার সর্বদা এই চেষ্টাই থাকে যে, অন্যের কাছে যা আছে তারচেয়ে তার জিনিসটা ভালো হওয়া চাই। আর এই হিংসুক ব্যক্তি সমাজের অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্বকে হেয় করার চেষ্টা করে। কেননা তার দৃষ্টিতে সে একাই সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি, বাকিরা সবাই তার চেয়ে নগন্য। এজন্য বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তির পরিনাম সম্পর্কে আপনারা একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন যে, তারা না আল্লাহতায়ালার দৃষ্টিতে ভালো আর না মানুষের দৃষ্টিতে।

হিংসুককে কেউ ভালো দৃষ্টিতে দেখে না। সবার মাঝে তার প্রতি খারাপ ধারনা জন্ম নেয়, তার কর্মকাণ্ডের কারণে। সমাজের আর অন্য সবার সাথে বসবাস করলেও হিংসুক ব্যক্তি মানুষের মনে কোনো স্থান করে নিতে পারে না।

হিংসার সংজ্ঞা

আরবি ভাষায় হিংসার প্রতিশব্দ হলো হাসাদ। ইসলামি পরিভাষায় অন্যের সুখ-সম্পদ, শান্তি-সাফল্য, ধ্বংস হওয়া ও নিজে এর মালিক হওয়ার কামনা করাকে হিংসা বলা হয়।

অর্থাৎ একজন আরেকজনকে দেখল যে, তার কোন নেয়ামত লাভ হয়েছে। চাই সে নেয়ামত দুনিয়ার হোক বা দ্বীনের । এই নেয়ামত দেখে তার অন্তরে জ্বালা যন্ত্রণা বা কষ্ট সৃষ্টি হল যে, সে এই নেয়ামত কেন পেল? আর মনের মধ্যে এই কুবাসনা জাগ্রত হল যে, এই নেয়ামত তার থেকে ছিনিয়ে নেয়া হোক।

হাসাদ বা হিংসার উদাহরণ:

এর দৃষ্টান্ত এই যে, আমার একজন সহপাঠী আছে। সে পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে। এতে আমার মনটা জ্বলতে লাগল এবং আমি ভাবতে লাগলাম যে, সে কেন বেশি নাম্বার পেল? কেন সে আমার চেয়ে অগ্রসর হয়ে গেল? এরপর কামনা করতে লাগলাম, তার পরীক্ষা খারাপ হোক, নম্বর কম পাক, আগামী পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার না করুক, আমি প্রথম হতে পারি কী না পারি, সে যেন প্রথম না হয়। এই যে অকল্যাণ কামনা এটাই হাসাদ।

কিংবা একব্যক্তি খুব সম্পদশালী। তার উন্নতি দেখে আপনার অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি হলো এবং আপনি কামনা করতে লাগলেন, তার সম্পদ শেষ হয়ে যাক। উপার্জন কমে যাক। মনের এই মন্দ আকাঙক্ষাই হাসাদ।

কিংবা ধরুন, সমাজে কারো সুনাম রয়েছে। লোকেরা তাকে সম্মান করে এবং পরামর্শ সহযোগিতা ইত্যাদির জন্য তার শরণাপন্ন হয়। এখন কারো অন্তরে মর্মজ্বালা উপস্থিত হলো যে, কেন লোকেরা তার কাছে যায়, কেন তাকে ভালোবাসে, এরপর এই আকাঙক্ষা ও জাগল যে, তার মান সম্মান নষ্ট হয়ে যাক। এটা হাসাদ।

আর ঐ ব্যক্তির মনের বিপরীত কোন অবস্থা সামনে আসলে সে খুশী হয় এবং তার উন্নতি বা সাফল্য সামনে আসলে অন্তরে ব্যথা ও কষ্ট অনুভূত হয় যে, সে কেন আগে বেড়ে গেল? এটার নামই হিংসা ।

এখন হিংসার এই বাস্তবতা কে সামনে রেখে চিন্তা-ভাবনা করলে বুঝে আসবে যে, হিংসুক ব্যক্তি মূলত মহান আল্লাহর তাকদীরের উপর আপত্তি উত্থাপন করে যে, আল্লাহ তাআলা এই নেয়ামত তাকে কেন দিলেন? আমাকে কেন দিলেন না? এটা তো মহান আল্লাহর ফয়সালা ও সিদ্ধান্তের উপর আপত্তি! নিজ অনুগ্রহকারী মহান দাতার উপর আপত্তি!! আবার সাথে সাথে এ আকাঙ্খাও করছে যেন কোনভাবে এই নেয়ামত তার থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ কারণেই এর ভয়াবহতা অনেক বেশি ।

হিংসার তিনটি স্তর

প্রথম স্তর হল অন্তরে এমন চাহিদার উদ্রেক হওয়া যে, আমারও এমন নেয়ামত হাসিল হোক। এখন যদি অন্যজনের কাছে থাকা অবস্থায় হাসিল হয়, তাহলে তো খুব ভাল । নতুবা তার থেকে যেন ছিনিয়ে নেয়া হয় এবং সেটা আমার হয়ে যায় । এটা হল হিংসার প্রথম স্তর। এখানে প্রথম পদক্ষেপে আকাংখা হল সেটা ছিনিয়ে নেয়া হোক।

আর দ্বিতীয় পদক্ষেপে আকাংখা হল যেন সেটা আমি পেয়ে যাই। এটা হিংসার দ্বিতীয় স্তর।

হিংসার তৃতীয় স্তর হল অন্তরে এমন বাসনা জাগ্রত হল যে, এই নেয়ামত যে কোনভাবে তার থেকে ছিনিয়ে নেয়া হোক। এবং এ নেয়ামতের কারণে তার যে সম্মান ও মর্যাদা লাভ হয়েছে, সেটা থেকে সে বঞ্চিত হয়ে যাক। পরবর্তীতে সেই নেয়ামত আমার হাসিল হোক বা না হোক। এটা হিংসার সব থেকে নিকৃষ্টতম ও জঘন্যতম স্তর। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এসব থেকে হেফাযত রাখুন। আমীন ।

হিংসার কারণ দুটি

এই হিংসা ব্যাধির কারণ কি? আর এই ব্যাধি অন্তরে কেন সৃষ্টি হয়? এর কারণ দু’টি। এর একটি কারণ হল দুনিয়ার মাল দৌলতের ভালবাসা। পদের মোহ। এজন্য মানুষ সব সময় কামনা করে যেন আমার এত বড় মর্যাদা হাসিল হয়। আমি যেন উঁচু থাকতে পারি। এখন যদি অন্য কেউ আগে বেড়ে যায় তখন এ তাকে নিচে নামানোর ষড়যন্ত্র আরম্ভ করে দেয়।

এই ব্যাধির দ্বিতীয় কারণ হল “ঘৃণা” ও “বিদ্বেষ”। উদাহরণস্বরূপ কারো ব্যাপারে অন্তরে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়ে গেল, আর ঐ বিদ্বেষের ফলে তার আরাম দেখলে কষ্ট লাগে । সুখ দেখলে দুঃখ লাগে । অন্তরে এ দু’টি জিনিস থাকলে অনিবার্য ফলস্বরূপ হিংসা পয়দা হবে।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *