গীবতের বিভিন্ন রূপ
দৈহিক কাঠামোর গীবত
কোন ব্যক্তিকে খাটো বা হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তার দৈহিক ত্রুটির উল্লেখ করে গীবত করা হারাম। যেমন এভাবে বলা যে, অমুক ব্যক্তি খুবই স্থূলদেহী বা বেঁটে, তার নাক লম্বা, চোখ খুবই ছোট অথবা খুবই কুৎসিত, কানে শোনে না, চোখে দেখে না, তাহার নাক কাটা। এভাবে কারো দৈহিক ত্রুটি বর্ণনা করা তাকে অপমান করার জন্য গীবতের অন্তর্ভুক্ত।
ياَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا يَسْخَرُ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاء مِنْ نِسَاءٍ عَسَى أَنْ يُكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ
হে ঈমানদারগণ! না পুরুষ লোকেরা অপর পুরুষ লোকদের বিদ্রূপ করবে। হতে পারে যে, তারা এদের তুলনায় ভালো। আর না মহিলারা অপর মহিলাদের বিদ্রূপ করবে। হতে পারে যে, তারা এদের তুলনায় ভালো
(সূরা হুজুরাত আয়াত: ১১)
মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রঃ) এক ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বলে ফেলেন যে, সে খুবই কালো। অতঃপর তিনি বলেন, আমি তার গীবত করে ফেলেছি, তাই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি (মোল্লা আলী কারীর শারহু আইনিল ইলম)
একদা হযরত আয়েশা (রা) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি সাফিয়্যার বেঁটে হওয়াটা অপছন্দ করেন না? তিনি বলেন : হে আয়েশা! তুমি এমন একটি কথা বললে যা নদীর পানির সাথে মিশিয়ে দিলে তার উপরও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে (আবু দাউদ, বাবুল গীবাত)। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী উম্মু সালামা (রা:) বেঁটে:ছিলেন। তাঁর অপরাপর স্ত্রী এজন্য হাসিঠাট্টা শুরু করে দেন। এই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা নাযিল করেন :
ياَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا يَسْخَرُ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ وَلَا نِسَاء مِنْ نِسَاءٍ عَسَى أَنْ يُكُنَّ خَيْرًا مِنْهُنَّ
হে ঈমানদারগণ! না পুরুষ লোকেরা অপর পুরুষ লোকদের বিদ্রূপ করবে। হতে পারে যে, তারা এদের তুলনায় ভালো। আর না মহিলারা অপর মহিলাদের বিদ্রূপ করবে। হতে পারে যে, তারা এদের তুলনায় ভালো
(সূরা হুজুরাত আয়াত: ১১)
মুআবিয়া ইবনে কারইয়া বলেন, যদি তোমার সামনে দিয়ে কোন হাতকাটা লোক অতিক্রম করে এবং তুমি বলো, তার হাত কাটা, তবে এটাও গীবত হয়ে যাবে (সুয়ূতীর দুররুল মানছুর, আব্দ ইবনে হুমাইদের বর্ণনা)।
একদা ইবরাহীম ইবনে আদহাম (রঃ) এক ব্যক্তির বাড়িতে দাওয়াত খেতে যান। খাবার গ্রহণের জন্য বসে গেলে এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির নাম উল্লেখপূর্বক বললো, সে এখনও এসে পৌঁছেনি। এক ব্যক্তি বললো, সে স্থূলদেহী,তাই আসতে বিলম্ব করছে। ইবরাহীম ইবনে আদহাম (র) এই গীবত শুনে উঠে চলে গেলেন এবং নিজ দেহকে লক্ষ্য করে বলেন, তোর কারণেই আমাকে গীবত শুনতে হলো। কারণ তোর ক্ষুতপিপাসা না থাকলে আমার দাওয়াত খেতে যাওয়ার ও গীবত শোনার দুর্ভাগ্য হতো না। অতঃপর তিনি একাধারে তিন দিন পানাহার করেননি।
তামবীহুল গাফিলীন গ্রন্থে গীবত অধ্যায়ে ফকীহ আবুল লাইছ উক্ত ঘটনা উল্লেখ করেছেন। ইবরাহীম ইবনে আদহাম (রঃ) আহারের মজলিস থেকে এজন্য চলে গেলেন যে, যে মজলিসে গীবতচর্চা হয় সেখানে আহার গ্রহণ নিষিদ্ধ। যেমন কোন মজলিসে নাচগান হলে সেখানে যাওয়া নিষিদ্ধ।
তাতারখানিয়া গ্রন্থে এই মাসআলা বর্ণিত হয়েছে এবং রদ্দুল মুহতার গ্রন্থের পানাহার শীর্ষক অধ্যায়ে তা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। কোথাও দাওয়াতে যাওয়ার পূর্বে যদি জানা যায় যে, সেখানে গীবতচর্চা হবে তবে সেখানে যাওয়া জায়েয নয়। অবশ্য যদি কোন ব্যক্তি মনে করে যে, সে তথায় গেলে গীবত চর্চা বন্ধ হবে তাহলে অবশ্যই তার সেখানে যাওয়া উচিত কেউ কোন মজলিসে গিয়ে গীবতচর্চা হতে দেখলে লোকদের তা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা তার কর্তব্য। এতে কোন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সে মজলিস ত্যাগ করবে, তাও সম্ভব না হলে নিজে গীবতচর্চায় অংশগ্রহণ করবে না।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে জানা গেল যে, কারো দেহের কোন ত্রুটি বর্ণনা করা গীবত এবং হারাম। প্রতিটি দৈহিক কাঠামো আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন ।
পোশাকের গীবত
যেমন বলা, অমুক ব্যক্তি অত্যন্ত কৃপণ, তাই কৃপণের পোশাক পরিধান করে। অমুক ব্যক্তি হারাম পোশাক পরে, সে বদমায়েশদের মত পোশাক পরে, তার জামা পায়ের গোছার নিচে পর্যন্ত লম্বা, অমুক নারী এমনভাবে ওড়না পরিধান করে যে, তার আভরণীয় অংশ খোলা থাকে, অমুক নারী আভরণীয় অঙ্গ বের করে মানুষের মাঝে চলাফেরা করে ইত্যাদি।
একদা আয়েশা (রা) বলেন, অমুক স্ত্রীলোকের আচল খুব লম্বা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা শুনে বলেন : হে আয়েশা! তুমি তার গীবত করলে। তোমার থুথু ফেলা কর্তব্য। আয়েশা (রা) বলেন, আমি থুথু ফেললে মুখ থেকে গোশতের একটি টুকরা বের হয়ে আসে (মুনযিরীর কিতাবুত তারগীব ওয়াত তারহীব)।
পূর্বকালের কোন কোন বিশেষজ্ঞ আলেম বলেন, ‘তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের উদ্দেশ্যে তুমি যদি বলো, অমুক ব্যক্তির পরিধেয় বস্ত্র খুবই সংকীর্ণ অথবা খুবই লম্বা তাহলে এটাও তার গীবত হবে” (ফকীহ আবুল লাইসের গ্রন্থের গীবত অনুচ্ছেদ)।
বংশের গীবত
তুচ্ছ ও হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে যদি কেউ বলে, অমুক ব্যক্তির বংশ, অমুক গোত্র বা অমুক শহরের বাসিন্দাদের বংশ ভালো নয়। কারণ তাদের পূর্বপুরুষরা ছিল নীচ ও ইতর অথবা তাদের বংশতালিকা অজ্ঞাত, তবে এটাও গীবত হবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ঃ لَيْسَ لِأَحَدٍ فَضْلَّ عَلَى أَحَدٍ إِلا بِالدِّينِ أَوْ عَمَلَ صَالِحٍ “দীনদারী ও সৎকর্ম ব্যতীত কোন ব্যক্তির অপর ব্যক্তির উপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই” (আবদুর রহমান আশ-শারানী, কাশফুল গুম্মাহ আন আহওয়ালিল উম্মাহ, বাব তাহরীম ইহতিকারিন নাস)।
অতএব নিজেকে শরীফ বলে জাহির করা এবং অপরের বংশের ত্রুটি নির্দেশ করা বৈধ নয় ।
অভ্যাস ও আচার-আচরণের গীবতঃ
কোন ব্যক্তির অভ্যাসের গীবত করা, যেমন সে কাপুরুষ, অত্যন্ত ভীরু, দুর্বল, অলস, পেটুক, কর্মবিমুখ, উঠাবসা ও চলাফেরায় ভদ্রতার পরিচয় দেয় না, পরিণাম ফলের কথা চিন্তা করে না, একেবারে নির্বোধ, স্ত্রীর কথায় উঠে বসে, মানুষকে কষ্ট দেয় ইত্যাদি।
আরবদের মধ্যে পরস্পরের খেদমত করার একটি উত্তম রীতি প্রচলিত ছিল। এক সফরে হযরত আবু বাকর ও উমার (রা) এর সাথে এক দরিদ্র খাদেম ছিল, সে সব সময় তাদের খেদমত করতো। গন্তব্যে পৌছে তাঁরা উভয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন এবং কিছুক্ষণ পর সেও ঘুমিয়ে পড়লো তাদের উভয়ের জন্য খাবার তৈরি না করে। তাঁরা উভয়ে জাগ্রত হয়ে বলতে লাগলেন, এই ব্যাটা খুব ঘুমায়। তাঁরা তাকে ঘুম থেকে তুলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পাঠালেন। সে তাঁর নিকট আবেদন করলো, হে আল্লাহ্র রাসূল! আবু বাকর ও উমার (রা) আপনাকে সালাম পাঠিয়েছেন এবং কিছু খাবার চেয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তারা উভয়ে আহার করেছে এবং তৃপ্ত হয়েছে। তাঁরা উভয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আজ কি খেয়েছি? তিনি বলেন : তোমরা আজ ঐ খাদেমের গোশত খেয়েছ এবং আমি তোমাদের দাঁতে গোশতের রং দেখতে পাচ্ছি। তাঁরা উভয়ে এ কথা শুনে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের ত্রুটি মাফ করুন এবং আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আল্লাহর ক্ষমাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবে না, খাদেম যেন তোমাদের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে (দিয়া আল-মুকাদ্দাসীর বরাতে আদ-দুররুল মানছুরে)
কোন সাহাবী এক ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন, সে খুব দুর্বল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তুমি তার গীবত করেছো এবং তার গোশত খেয়েছ (গীবতের শাস্তি সম্পর্কিত আলোচনায় হাদীসটি সবিস্তারে আলোচিত হবে)।
একদা কোন এক সাহাবী জনৈক ব্যক্তির উল্লেখপূর্বক বলেন, সে এক আজব লোক। কেউ তাকে খাদ্য দিলে সব খেয়ে ফেলে। কেউ বাহন দিলে তাতে চড়ে বেড়ায়, কিন্তু নিজে পরিশ্রম করে আয়-উপার্জন করে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি তোমার ভাইয়ের গীবত করলে। সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কারো ত্রুটি তুলে ধরাও কি গীবত? তিনি উত্তর দিলেনঃ বাস্তবিকপক্ষে কারো ত্রুটি নির্দেশ করা গীবতের জন্য যথেষ্ট। (আত-তারগীব ওয়াত তারহীব)। এক সফরে আবু বাকর ও উমার (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী ছিলেন। তাঁরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গোশত খেতে চাইলে তিনি বলে পাঠান : তোমরা কি তোমাদের মুসলিম ভাইদের গোশত তৃপ্তি সহকারে আহার করোনি? তাঁরা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আজ আমাদের ভাগ্যে গোশত জুটেনি। তিনি বলেন : তোমরা অমুক ব্যক্তির গীবত করেছ, আর কারো গীবত করা তার দেহের গোশত খাওয়ার সমতুল্য। তাঁরা উভয়ে বলেন, আমরা তো শুধু এতটুকু বলেছি যে, লোকটি দুর্বল, আমাদের খেদমত করতে পারে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : এটাও বলো না, কারো ক্ষুদ্র ত্রুটিও বর্ণনা করো না (তিরমিযীর নাওয়াদিরুল উসূল এবং সুয়ূতীর আদ-দুররুল মানছুর)।
একদা সালমান ফারসী (রাঃ) আহার করে শুয়ে পড়েন। দুই ব্যক্তি তাঁর খাওয়া ও শোয়ার সমালোচনা করলে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয় : وَلَا يَغْتَب بَعْضُكُمْ بَعْضًا “তোমরা পরস্পরের গীবত করো না ।” অত্র আয়াতে গীবত হারাম ঘোষণা করা হয়েছে (ইবনে জুরাইহ-এর সূত্রে দুররুল মানছুরে)।
ইবাদতের গীবত
ইবাদতের ত্রুটি-বিচ্যুতির উল্লেখপূর্বক সমালোচনা করাও গীবতের অন্তর্ভুক্ত। যেমন অমুক ব্যক্তি উত্তমরূপে নামায পড়ে না অথবা রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে না অথবা নফল নামায পড়ে না অথবা রমযানের সবগুলো রোযা রাখে না অথবা মাকরূহ ওয়াক্তে নামায পড়ে। তাহাজ্জুদের ওয়াক্তে কতক লোক ঘুমিয়ে থাকলে শেখ সাদী (রঃ) তাদের সমালোচনা করেন এবং বলেন, এই লোকগুলো যদি তাহাজ্জুদ পড়তো তবে কতই না ভালো হত। শেখ সাদীর পিতা একথা শুনে বলেন, কতই না ভালো হত যদি তুমি তাহাজ্জুদ না পড়ে এদের মত ঘুমিয়ে থাকতে। তাহলে এদের গীবত করার পাপ তোমার ঘাড়ে চাপত না। এক ব্যক্তি কারো গীবত করলো এবং বললো, আমি আল্লাহর জন্য অমুক ব্যক্তির প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি একথা জানতে পেরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাযির হয়ে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আমার সমালোচনা করেছে এবং আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণের খবর দিয়েছে। আপনি তাকে ডাকুন” এবং আমার প্রতি ইনসাফ করুন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন : তুমি কেন তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করো? সে বললো, আমি তার প্রতিবেশী। সে পাঁচ ওয়াক্তের নামায ব্যতীত অন্য কোন নামায পড়ে না, রমযানের রোযা ব্যতীত অন্য কোন রোযা রাখে না এবং যাকাত ব্যতীত অতিরিক্ত দান-খয়রাত করে না। তাই আমি তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করি। তার বক্তব্য শেষ হলে অপর ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রসূল! তাকে জিজ্ঞেস করুন, আমি কি ফরয দায়িত্ব আদায় করতে কোনরূপ ত্রুটি করি? তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বললো, না সে ফরয দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করে না এবং তা যথারীতি পালন করে। কিন্তু যেহেতু সে নফল ইবাদতসমূহ করে না, তাই তার প্রতি আমার মন বিরক্ত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন : খুব সম্ভব পরিশেষে সে তোমার তুলনায় ভাগ্যবান হবে। অতএব তার গীবত করা এবং তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা তোমার জন্য সমীচীন নয় (ইয়া উলূমিদ-দীন)।
গুনাহের গীবত
যেমন বলা : অমুক ব্যক্তি যেনা করেছে, গীবত করেছে অথবা তার অন্তর বিদ্বেষে পরিপূর্ণ, তার মিথ্যা বলার বহুল বদঅভ্যাস আছে, সে তার পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়, সে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, অমুক ব্যক্তি মদপানে অভ্যস্ত, সে চোর ইত্যাদি । শেখ সাদী (র) একবার তাঁর শিক্ষককে বলেন, অমুক ব্যক্তি আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। শিক্ষক বলেন, হে সাদী! তোমার মতে বিদ্বেষ পোষণ হারাম, আর গীবত কি হালাল? তুমি আমার নিকট অমুক ব্যক্তির গীবত করছো তার বিদ্বেষের উল্লেখ করে৷ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতে নবী-রাসূলগণ ব্যতীত আর কোন মানুষই নিষ্পাপ নয়। প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে কিছু না কিছু দোষত্রুটি অবশ্যই রয়েছে। কোন ব্যক্তির মধ্যে বিদ্বেষ থাকলে অপরের মধ্যে ঘৃণা করার অভ্যাস আছে। কেউ গীবত করে এবং কেউ গীবত শোনে। কেউ পরোক্ষো নিন্দা করে বেড়ায়, কেউ মিথ্যা কথা বলে। কেউ চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত থাকলে অপরে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের কাজে লিপ্ত আছে। একজন যেনায় লিপ্ত থাকলে অপরজন অন্যরূপ দুষ্কর্মে লিপ্ত আছে ৷
মোটকথা কোন ব্যক্তিই দোষ থেকে মুক্ত নয়। অতএব যে কোন লোকের মধ্যকার যে কোন ধরনের ত্রুটির চর্চা করা বাতুলতা মাত্র। কারণ ত্রুটি চর্চাকারীও তো ত্রুটি থেকে মুক্ত নয়। তাই কোন ব্যক্তিকে গুনাহের কাজে লিপ্ত দেখলে তার জন্য আল্লাহর নিকট সৎপথ কামনা করা উচিত, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা অনুচিত। এতে সে হয়তো তওবা করবে, অনুতপ্ত হবে অথবা যখন ভুল ভাঙ্গবে তখন তওবা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। কারো দোষের কথা মনে এলে নিজের দোষগুলো স্মরণ করবে। তাহলে এই পাপকাজ থেকে বিরত থাকা সম্ভব হবে। হযরত উমার ফারুক (রা) বলেন : “মুমিন ব্যক্তির পথভ্রষ্ট হওয়ার জন্য তিনটি জিনিসই যথেষ্ট।
(১) নিজে যে অপকর্মে লিপ্ত আছে অপরকে সেই অপকর্মে লিপ্ত দেখলে তার সমালোচনা করে । (২) অন্যের দোষ দেখে বেড়ায়, অথচ নিজের মধ্যকার দোষ সম্পর্কে অন্ধ।
(৩) নিজের প্রতিবেশী বা সহচরকে অযথা কষ্ট দেয়, হয়রানী করে”(আবুল লাইস আস-সামারকান্দী বাবুল গীবত-এ উদ্ধৃত করেছেন)
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম বলতেন : “আল্লাহর স্মরণশূন্য কথা বেশি বলো না, অন্যথায় তোমাদের অন্তর শক্ত হয়ে যাবে। আর কঠিন হৃদয় তোমাদের অজান্তে আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায়। তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না যেমনি মনিব তার গোলামদের তদারক করে। বরং তোমরা নিজ নিজ দোষত্রুটির প্রতি লক্ষ্য করো এমনভাবে যে, তোমরা আল্লাহর গোলাম।
মানুষ দুই ধরনের। কিছু লোক গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে, আর কিছু লোক গুনাহ থেকে নিরাপদ থাকার চেষ্টা করে। তোমরা কাউকে গুনাহের কাজে লিপ্ত দেখলে তার প্রতি দয়াপরবশ হও এবং তার কল্যাণের জন্য দোয়া করো এবং নিজের গুনাহ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করো এবং গুনাহগার কে অপমান করো না”(মুওয়াত্তা ইমাম মালেক) কোন ব্যক্তিকে তার গুনাহের কারণে অপদস্ত করা এবং তাকে জাহান্নামী মনে করা আল্লাহ তাআলার মর্জি বিরুদ্ধ কাজ। বরং যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে অপমান করে আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন এবং তাকে অপমান করেন, অন্যদিকে যাকে অপমান করা হলো তার গুনাহ মাফ করে দেন।
বনী ইসরাঈলের দুই ব্যক্তির ঘটনা এভাবে উল্লেখিত হয়েছে যে, তাদের একজন সর্বদা ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থাকতো এবং অপরজন পাপাচারে লিপ্তবথাকতো। ইবাদতে লিপ্ত ব্যক্তি সব সময় পাপাচারীকে হেয় প্রতিপন্ন করতো। একদিন সে চটে গিয়ে বললো, আল্লাহর শপথ! তুমি জাহান্নামে যাবে। কথাটি আল্লাহ পাকের অপছন্দ হলো এবং ইবাদতে লিপ্ত ব্যক্তিকে জাহান্নামী এবং পাপীকে জান্নাতী বানিয়ে দিলেন (আবু দাউদ, কিতাবুল বিররি ওয়াস-সিলাহ)।
হযরত আদম (আ) জান্নাতে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খেয়ে ভুল করলে তাঁর দেহ কৃষ্ণবর্ণ হয়ে যায় এবং তাঁকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয় । আল্লাহ তাআলা তাঁকে নির্দেশ দেন, তুমি বায়তুল্লাহ শরীফ নির্মাণ করো, অতঃপর তা তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) করো, তাহলে তোমার গুনাহ মাফ করে দিব এবং তোমার তওবা কবুল করবো। আদম (আ) কাবার নির্মাণ কাজ শেষ করলে জিবরীল (আ) বেহেশত থেকে হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) নিয়ে আসেন। তখন এর রং ছিল অত্যন্ত সাদা এবং তা থেকে আলোকচ্ছটা ঠিকরে পড়তো। পাথরটি দেখে আদম (আ)-এর বেহেশতের সুখশান্তির কথা স্মরণ হলো, মনটা অস্থির হয়ে পড়লো এবং চোখে অশ্রু নদী প্রবাহিত হলো। সাদা পাথর বললো, হে আদম! তুমি আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে। পাথরের কথায় তাঁর মনে কষ্ট হলো এবং অস্থির হয়ে আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন, হে আল্লাহ! আমার অপরাধের জন্য প্রতিটি জিনিস,এমনকি বেহেশতী পাথর পর্যন্ত আমার নিন্দা করছে। এ কথায় আদম (আ)-এর প্রতি আল্লাহ তাআলা দয়াপরবশ হলেন এবং তাঁর দেহের কৃষ্ণবর্ণ উক্ত পাথরের মধ্যে অপসারণ করলেন, ফলে তা কালো হয়ে গেল এবং পাথরের শুভ্রবর্ণ আদম (আ)-কে দান করলেন, ফলে তাঁর দেহ আলোক-উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো (সারীর নুযহাতুল মাজালিস মুনতাখাবুন নাফাইস, বাব আয়্যামিল-বীদ) ।
সরাসরি বা অভিনয়ের মাধ্যমে গীবত
সুস্পষ্ট বাক্যে সরাসরি গীবত হতে পারে এবং অভিনয়ের মাধ্যমেও গীবতের অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। সরাসরি ঃ যেমন কোন ব্যক্তির নাম উল্লেখপূর্বক তার দোষত্রুটি বর্ণনা করা। অভিনয়ের মাধ্যমে : যেমন অন্ধ, খঞ্জ, বোবা ইত্যাদি সেজে অভিনয় করে তাদের দোষত্রুটির প্রতি ইংগিত করা অথবা সমালোচনার উদ্দেশে কারো চালচলন, কথন, পোশাক পরিধান ইত্যাদি নকল করে অভিনয় করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : مَا أُحِبُّ أَنِّي حَكَيْتُ أَحَدًا وَإِنْ لِيْ كَذَا وَكَذَا “আমি পরানুকরণ পছন্দ করি না, এত এত সম্পদের বিনিময়েও না” (তিরমিযী)।
একদা হযরত আয়েশা (রা) কোন মহিলাকে অনুকরণ করে দেখালে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “কাউকে নকল করা আমার কাছে মোটেই পছন্দনীয় নয়, অনেক সম্পদের বিনিময়েও নয়” (ইহয়া উলূমিদ দীন, বাবুল গীবাত)।
ইশারা-ইংগিতে গীবত
সরাসরি নামোল্লেখ না করে এমন কিছু ইংগিতবহ উপমা ব্যবহার করে কারো দোষ বর্ণনা করা যে, লোকেরা উপমার দ্বারা বুঝে নিতে পারে যে, অমুক ব্যক্তির গীবত করা হচ্ছে। যেমন কেউ বললো : আজ আমাদের নিকট এক লোক এসেছিল যে এরূপ। এতে লোকেরা বুঝে নিতে পারে যে, আজ তার নিকট অমুক ব্যক্তি এসেছিল। এটা তার গীবত করা হলো। অথবা কেউ বললো, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর অনুগত হয়ে চলে এবং নিজের মাতাপিতার কথা শুনে না। এতে শ্রবণকারী বুঝতে পারলো যে, সে অমুক ব্যক্তির গীবত করছে।
মুখের গীবত
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় লোককে বললেন : তোমরা খিলাল করে নিজেদের দাঁতের ফাঁক থেকে গোশত নির্গত করে ফেলে দাও। তারা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আজ আমরা তো গোশত খাইনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আমি তোমাদের দাঁতের ফাঁকে গোশতের লাল টুকরা দেখতে পাচ্ছি। নিশ্চয় তোমরা কারো গীবত করেছ। আর বাস্তবিকপক্ষে তারা এক ব্যক্তির গীবত চর্চা করেছিল (তাফসীরে দুররুল মানছুর)।
এক ব্যক্তি মহানবী, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবার থেকে চলে যাওয়ার পর অপর ব্যক্তি তার গীবত করে এবং তার দোষ ত্রুটি বর্ণনা করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : হে লোক! তুমি দাঁত খিলাল করো। সে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আজ আমি গোশত খাইনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তুমি এইমাত্র এক মুসলিম ব্যক্তির গোশত খেলে (তাবারানী; মুনযিরীর কিতাবুত তারগীব ওয়াত তারহীব)।
কানের গীবত
কারো গীবত শোনা এবং তাতে বাধা না দেয়া কানের গীবত । কারণ করা ও বাধা না দিয়ে নীরব থাকাও এক প্রকারের গীবত।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : إِذَا وَقَعَ فِي الرَّجُلِ وَأَنتَ فِي مَلَا فَكُنْ لِلرَّجُلِ نَاصِراً وَلِلْقَومٍ زَاجِراً ثُمَّ قم عنهم “কারো গীবত করা হলে এবং তুমি সেখানে উপস্থিত থাকলে তার এভাবে সাহায্য করো যে, তুমি তার প্রশংসা শুরু করে দাও যাতে লোকেরা তার গীবত করা থেকে বিরত থাকে। গীবতকারীদেরও বাধা প্রদান করো, অতঃপর স্থান ত্যাগ করো” (ইবনে আবিদ দুনয়া থেকে দুররুল মানছুর-এ)।
অন্তরের গীবত
কোন ব্যক্তির প্রতি বিদ্বেষবশত মনে মনে কুধারণা পোষণ করা এবং কোন খোদাভীরু সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি সম্পর্কে কোনরূপ তথ্য-প্রমাণ ও কারণ ছাড়াই মনের মধ্যে খারাপ ধারণা বদ্ধমূল করে নেয়া। এই বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গীবত
নিজের হাত, পা, চোখ ইত্যাদির ইশারায় অন্য লোকের নিকট কোন ব্যক্তির দোষ বর্ণনা করা হলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা কৃত গীবত। যেমন কোন ব্যক্তি কোন মজলিস থেকে উঠে চলে যাওয়ার পর তার প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
খর্বাকৃতির এক মহিলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করলো। তার চলে যাওয়ার পর আয়েশা (রা) তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে হাতের দ্বারা তার প্রতি ইংগিত করেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : হে আয়েশা! তুমি তার গীবত করলে (বায়হাকীর বরাতে তাফসীরে দুররুল মানছূরে)। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : لا يَحِلُّ لِمُسْلِم أَنْ يُشِيْرَ إِلى أَخِيهِ بِنَظَرَةٍ تُؤذيه . “কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য তার ভাইয়ের প্রতি চোখের ইশারায় এমনভাবে ইংগিত করা বৈধ নয় যাতে সে মর্মাহত হয়” (ইমাম গাযালীর হুকূকুল মুসলিম গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত) । মহান আল্লাহ বলেন : وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ أُمَزَةٍ . “প্রত্যেক হুমাযাহ ও লুমাযার প্রতি অভিশাপ” (সূরা হুমাযা : ১)। ‘হুমাযাহ’ ও ‘লুমাযাহ’ শব্দদ্বয়ের ব্যাখ্যায় কুরআনের ভাষ্যকারগণের মধ্যে মতভেদ আছে। ইমাম বায়হাকী (রঃ) ইবনে জুরাইজ (রঃ)-এর সূত্রে উল্লেখ করেছেন, যে ব্যক্তি চোখ বা হাতের দ্বারা লোকদের কষ্ট দেয় তাকে বলে ‘হুমাযাহ’ এবং যে ব্যক্তি মুখের দ্বারা লোকদের কষ্ট দেয় তাকে বলে ‘লুমাযাহ’।
ইমাম সুয়ূতী (র) দুররে মানছুর-এ উপরোক্ত রিওয়ায়াত নকল করেছেন। ইমাম বাগাবী (রঃ) সুফিয়ান সাওরী (র)-এর নিম্নোক্ত অর্থ নকল করেছেন ঃ যে ব্যক্তি মুখের কথার দ্বারা মানুষকে তিরস্কার করে সে হচ্ছে ‘হুমাযাহ’ এবং যে ব্যক্তি চোখের ইশারায় তিরস্কার করে সে হচ্ছে ‘লুমাযাহ’। সুলায়মান জামাল তাফসীরে জালালাইন-এর টীকায় ইবনে কায়সানের সূত্রে উল্লেখ করেছেন : যে ব্যক্তি তার সহযোগীদেরকে মুখের দ্বারা কষ্ট দেয় সে হচ্ছে হুমাযাহ এবং যে ব্যক্তি চোখের ইশারায় কটাক্ষ করে সে হচ্ছে লুমাযাহ
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজে গিয়ে একটি আজব ঘটনা দেখতে পেলেন যে, কিছু সংখ্যক নারী ও পুরুষকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন : আমি জিবরাঈল (আ)-এর নিকট তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন : “এরা সেইসব লোক যারা চোখ ও হাতের ইশারায় মানুষের বদনামী করতো এবং এভাবে তাদের কষ্ট দিতো”।
উপরোক্ত হাদীস আল্লামা মুনযিরী (র) তাঁর আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব গ্রন্থে নকল করেছেন ।
লেখনীর মাধ্যমে গীবত
যেমন কোন ব্যক্তিকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তার দোষের কথা বর্ণনা করে অপরের নিকট চিঠিপত্র লেখা অথবা সংবাদপত্রে প্রকাশ করা অথবা নিজের বই-পুস্তকে লিপিবদ্ধ করা ইত্যাদি। কোন ব্যক্তি অপরের গীবতকারীকে যদি বলে, তুমি গীবত করো না, তবে সে বলে, এটা গীবত নয়। কোন ব্যক্তি জ্ঞাতসারে ও সজ্ঞানে গীবত করাকে বৈধ মনে করলে সে কাফের হয়ে যায় এবং অজ্ঞাতসারে বললে তাযীরের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধী সাব্যস্ত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, আজ যারা গীবত পরিহার করতে বলেন, উল্টো তারাই শাস্তি ও তিরস্কারের সম্মুখীন হন।
সূত্রঃ বই- গীবত
লিখক :ইমাম গাজালী (রঃ)