দ্রুত ইফতার করার গুরুত্ব ও ফজিলত
রমজানের অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাত হলো ইফতার। সূর্য অস্ত যাওয়া মাত্রই ইফতার করা সুন্নত। অতি সাবধানতার নামে ইফতারে বিলম্ব করা উচিত না।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে (তিরমিজি, আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬০, পৃষ্ঠা: ১৩১)।’
নবীজি (সা.) বলেন, ‘যখন রাত সেদিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন রোজাদার ইফতার করবে
(বুখারি, সাওম অধ্যায়, হাদিস: ১৮৩০)
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘মানুষ যতদিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে, ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে।
সহিহ বোখারি, হাদিস: ১৯৫৭, সহিহ মুসলিম হাদিস: ১০৯৮
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন দ্বীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে।কেননা, ইহুদি ও নাসারাদের অভ্যাস হলো দেরিতে ইফতার করা।
সুনানে আবু দাঊদ, হাদিস: ২৩৫৩
আরেক হাদিসে এসেছে,
তিনটি বিষয় নবী চরিত্রের অংশ।(১) সময় হওয়া মাত্র ইফতার করা, (২)সাহরি শেষ ওয়াক্তে খাওয়া (৩) নামাজে ডান হাত বাম হাতের ওপর রাখা।
তাবারানি, মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদিস: ২৬১১
হজরত আমর ইবনে মাইমুন (রহ.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবিগণ সকলের আগে তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং সকলের চেয়ে দেরিতে সাহরি খেতেন।
মুসান্নাফে আবদুর রাজাজাক, হাদিস: ৭৫৯১
ইফতারের সময় দোয়া করা
ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়ে থাকে।
হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন,
ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া নিশ্চয়ই ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৭৫৩)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,
তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না (বরং কবুল করা হয়); পিতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া।
(বায়হাকি, হাদিস: ৩/৩৪৫)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রোজাদারের দোয়া আল্লাহর কাছে এতই প্রিয় যে আল্লাহ তাআলা রমজানের সময় ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন, ‘রমজানে তোমাদের পূর্বের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তা হলো আমার রোজাদার বান্দারা যখন কোনো দোয়া মোনাজাত করবে, তখন তোমরা আমিন! আমিন!! বলতে থাকবে (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)।’
ইফতারের মুহূর্তটি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়ার সময়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
ইফতারের সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর এ মুক্তি দানের পালা রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে। সে সময় রোজাদার প্রত্যেক বান্দার দোয়া কবুল হয়।
মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২২২০২
ইফতারের দোয়া
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-
اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোজা রেখেছি, আর তোমারই রিজিক দ্বারা ইফতার করছি। ’ –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৩৫৮
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইফতারের সময় নিম্নের দোয়াটিও পাঠ করতেন-
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ
উচ্চারণ: যাহাবায জামাউ ওয়াবতাল্লাতিল উরুকু, ওয়া ছাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।
অর্থ: ‘পিপাসা নিবারিত হলো, শিরা-উপশিরা সিক্ত হলো এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরষ্কারও নির্ধারিত হলো। ’ –সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৩৫৭
খেজুর বা পানি দ্বারা ইফতার করা
হজরত আনাস (রা.) বলেন, হরজত রাসূলুল্লাহ (সা.) (মাগরিবের) সালাতের পূর্বে তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর পাওয়া না যেত তবে শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। আর যদি শুকনা খেজুর পাওয়া না যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১২৬৭৬
তবে পেট ভর্তি করে খাওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। হরজত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
যে ব্যক্তি পেট ভর্তি করে খানা খায়, তার ওই পেট (আল্লাহর কাছে) একটি নিকৃষ্ট পাত্র।
সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০
সুন্নত হলো, পেটের তিন ভাগের একভাগ খাবার খাবে, আর তিন ভাগের একভাগ পানি পান করবে। বাকী এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রেখে দেবে।
সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০
তথ্যসূত্রঃ. লেখকঃ মুফতি রাশেদুল ইসলাম ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা মিরপুর -১ (মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স)