ঈদের রাতের ফজিলত ও আমল
ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। টানা একমাস সংযমে থেকে পরিশুদ্ধ হৃদয়ে কলুষমুক্ত জীবন, পরিবার ও সমাজ গঠনের অঙ্গীকারে একে অপরকে পরমাবেগে বুকে জড়িয়ে ধরার নামই হলো ঈদ। রমজানের বরকত লাভের জন্য ত্যাগ, কষ্ট-ক্লেশ ও আয়াস সাধ্য-সাধনার পর বহুল প্রতীক্ষিত ঈদ আমাদের জীবনে বয়ে আনে অনাবিল আনন্দ ও সুখসমৃদ্ধি।
এ আনন্দ পরকালীন জীবনের জন্যে শান্তি ও মুক্তি লাভের এক অনন্য আধ্যাত্মিক অনুভূতির। তাই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহিমাময় রমজান শেষে আকাশে শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখামাত্রই খুশির জোয়ার বয়ে যায় প্রতিটি রোজাদারের দেহ মনে। এ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে ধনী-গরিব, ছোট-বড়, যুবক-বৃদ্ধ- সবার মাঝে। প্রতিটি প্রাণে দোলা দেয় ঈদের আনন্দ।
ঈদের রাতটি মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। এ রাতে জেগে থেকে ইবাদতের ফলে মুমিনের জন্য জান্নাত ওয়াজিব হওয়ার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। ঈদের রাত শুধু আনন্দ উৎসবের রাত নয়। বরং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও সেতুবন্ধনের রাত এটি। ঈদের রাতের ইবাদাত বন্দেগির ফজিলত, গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক। এ ব্যাপারে হাদিসের অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।
সুতরাং এ রাতটিকে অবহেলায়, গান বাজনায়, মেহেদি উৎসব ও সাজ-সজ্জায় ব্যস্ত না রেখে কুরআন তিলাওয়াত ও নামাজে কাটানো মুসলিম উম্মাহর ঈমানের দাবি।
ঈদের আগের রাতের বিশেষ কিছু আমল
০১. ঈদের রাতে নফল ইবাদত করা
ঈদ আমাদের মাঝে আনন্দের বার্তা যেমন নিয়ে আসে, তেমনি নিয়ে আসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মহাসুযোগ। বিশেষত ঈদের রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতমণ্ডিত। হাদিসে ঈদের রাতে ইবাদতের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে,
✏ ০১. হযরত আবূ উমামা আল বাহেলী (রা.) এর হাদীস-
হযরত আবূ উমামা (রা.) রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন। যে ব্যক্তি ঈদুল ফিত্বর এবং ঈদুল আযহার রাতে (সাওয়াবের নিয়তে, ইবাদতের উদ্দেশ্যে) জাগ্রত থাকবে, সে ব্যক্তির হৃদয় ঐ দিন মৃত্যুবরণ করবে না যেদিন অন্য হৃদয়গুলো মৃত্যুবরণ করবে। (অর্থাৎ কিয়ামতের দিবসে তার কোন ভয় থাকবে না)। ইবনে মাজাহ, ২/৬৫৮, হাদীস-১৭৮২।
✏ ০২. হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) এর হাদীস-
হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত (ইবাদতের উদ্দেশ্যে) জাগ্রত থাকবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। তারবিয়ার রাত (জিলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখের রাত), আরাফার রাত, কুরবানী দিবসের রাত এবং ঈদুল ফিত্বরের রাত ও শবে বরাতের রাত। আত তারগীব ওয়াত তারহীব লিল আসবাহানী- ১/২৪৮, লিল মুনজেরী-২/৯৮, হাদীস-১৬৫৬।
✏ ০৩. হযরত উবাদা ইবনুস সামেত (রা.) এর হাদীস-হযরত উবাদা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈদুল ফিত্বর এবং ঈদুল আযহার রাত্রি নামায রত থাকবে, সে ব্যক্তির হৃদয় ঐদিন মৃত্যুবরণ করবে না যেদিন অন্য হৃদয়গুলো মৃত্যুবরণ করবে। আল মুজামুল আওসাত-১/৫৭, হাদীস-১৫৯।
০২. বেশী বেশী দোয়া করা
হাদীসে বর্ণিত আছে ঈদের রাতে কৃত দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি জুমার রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, অর্ধ শাবানের রাত এবং দুই ঈদের রাতসহ এ পাঁচ রাতে কোনো দোয়া করে; সে রাতে তার কোনো আবেদনই ফিরিয়ে দেয়া হয় না। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৯২৭)
০৩. ঈদের আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা
পবিত্র রমজানের ইবাদতের মধ্যে সদকাতুল ফিতর আদায় করা অন্যতম একটি ইবাদত। রমজানের রোজার ভুলত্রুটি পরিপূর্ণতার জন্যই এটি আবশ্যক করা হয়েছে। সদকাতুল ফিতর হলো নামাজের সিজদায়ে সাহুর মতো।
অর্থাৎ নামাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে সিজদায়ে সাহু যেমন এটার পূর্ণতা দেয়, তেমনি রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে সদকাতুল ফিতর দ্ব্বারা এর প্রতিকার লাভ হয়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজা পালনকারীর জন্য সদকাতুল ফিতর আদায় অপরিহার্য করে দিয়েছেন, যা রোজা পালনকারীর অনর্থক, অশ্লীল কথা-কাজ পরিশুদ্ধকারী ও অভাবী মানুষের জন্য আহারের ব্যবস্থা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯)
০৪. নতুন চাঁদ দেখা ও দোয়া পড়া
মহিমাময় পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ তথা নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) নতুন চাঁদ দেখলে এই দোয়াটি পাঠ করতেন—
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম; রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।(তিরমিজি, হাদিস: ৩৫২৬)
তাই বরকতময় এই রাত বা চাঁদরাতে অযথা কথা-কাজে লিপ্ত হওয়া, আতশ-বাজি ফুটানো, বাজারে-মার্কেটে ঘোরাঘুরি করার পরিবর্তে এশা এবং ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা চাই। সেইসঙ্গে অন্যান্য নেক আমল যেমন সাধ্যানুযায়ী নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, ইস্তেগফার ও দোয়া-মুনাজাতে মশগুল থাকা বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন(আমিন)