ইসলাম

যুগশ্রেষ্ঠ ওলীরাও অহংকারের পরিণতি ভোগ করেছিলেন

হযরত আবূ আবদুল্লাহ উন্দুলুসী (রঃ) এর ঘটনা

শায়খুল-হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া (রঃ) তাঁহার উম্মুল-আমরায গ্রন্থেলিখেন ঃ শায়েখ্ আবূ আবদুল্লাহ উন্দুলুসী (রঃ)-)-এর হৃদয়বিদারক এ ঘটনা আমার অন্তরে কাঁটার মত এমনিভাবে গাঁথিয়া আছে যে, অনিচ্ছাকৃত ভাবেও তাহা যবানেও কলমে আসিয়া যায়। মন চায়, তরীকতের সহিত সম্পর্ক রাখে, এমন প্রতিটি মানুষের অন্তরেই যেন তাহা গ্রথিত-প্রোথিত হইয়া যায়।

হযরত আবূ আবদুল্লাহ উন্দুলুসী (রঃ) (স্পেনের অন্তর্গত) উন্দুলুসের একজন অতি উচ্চ স্থানীয় বুযুর্গ ছিলেন। অনেক বড়-বড় বুযুর্গানের তিনি শায়েখ্ ছিলেন। হাজার হাজার খানকাহ ও মাদ্রাসা তাঁহার দ্বারা আবাদ ছিল, তাঁহার রূহানী ফয়েয-বরকতে পরিচালিত হইতেছিল । তাঁহার হাজার হাজার শাগরেদ, হাজার হাজার মুরীদান ছিল । তাঁহার মুরীদানের সংখ্যা বারো হাজার ছিল বলিয়া উল্লেখিত আছে ( যাহাদের মধ্যে হযরত শিবলী (রঃ)-এর মত মহান বুযুর্গও রহিয়াছেন)। একবার তিনি সফরে বাহির হইলেন। তাঁহার সঙ্গে ছিল হাজার হাজার পীর-মাশায়েখ ও আলেম-ওলামার বিরাট কাফেলা । হযরত শিবলী এবং হযরত জুনাইদ বাগদাদীও তাঁহার সঙ্গে ছিলেন।

হযরত শিবলী (রঃ) বলেন, আমাদের কাফেলা বিরাট খায়ের-বরকতের সহিত অগ্রসর হইতেছিল। পথিমধ্যে আমরা খৃষ্টানদের একটি বস্তি অতিক্রম করিতেছিলাম। সেখানে কোথাও পানি পাওয়া যাইতে ছিল না। ফলে নামাজের সময় ক্রমশঃ সংকীর্ণ হইয়া উঠিল । কয়েকটি মেয়ে বস্তির বাহিরে একটি কূয়া হইতে পানি সংগ্রহ করিতেছিল। তন্মধ্যে একটি যুবতীর উপর হযরত শায়েখের দৃষ্টি পড়িয়া গেল। দৃষ্টি পড়িতেই শায়খের মধ্যে উহার প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হইতে লাগিল। হযরত শিবলী (রঃ) বলেন, উক্ত যুবতীর কথা তুলিয়া পরক্ষণেই তিনি মাথা ঝুকাইয়া বসিয়া পড়িলেন। এক এক করিয়া তিনটি দিন অতিক্রান্ত হইল ,শায়েখ না কোন পানাহার করিতেছেন, না কাহারও সঙ্গে কথা বলিতেছেন ।

হযরত শিবলী (রঃ) বলেন, এই অবস্থা দেখিয়া শায়খের সফরসঙ্গী সমস্ত খাদেমগণ অস্থির হইয়া গেলেন। তৃতীয় দিন আমি দুঃসাহসে আরয করিলাম, পরম শ্রদ্ধেয় মোর্শেদ, আপনার এ অবস্থা দেখিয়া আপনার হাজার হাজার মুরীদ-আশেকীন বেকারার হইয়া গিয়াছেন। শায়েখ্ তাঁহাদিগকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, হে আমার প্রিয় পাত্রগণ, আমার অবস্থা আমি তোমাদিগ হইতে আর কত কাল লুকাইয়া রাখিব।

ব্যাপার হইল, পরশু যে মেয়েটির উপর আমার নজর পড়িয়াছে, তাহার প্রতি অন্তরে মনই প্রবল প্রেমাসক্তি সৃষ্টি হইয়াছে যে, তাহা আমার হৃদয়-মনকে সম্পূর্ণ আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিয়াছে। তাহার প্রেমাসক্তি আপাদমস্তক আমাকে তড়পাইতেছে। অতএব, তাহার কারণে এই ভূখণ্ড ত্যাগ করা আমার পক্ষে কোন ক্রমেই আর সম্ভবপর নয় ৷

হযরত শিবলী (রঃ) বলেন, আমি বলিলাম, হে মহামান্য মোর্শেদ, আপনি ইরাকবাসীদের পীর ও মোর্শেদ। আপনার এলেম্‌, বুযুর্গী ও ইবাদতের বিশ্বজোড়া খ্যাতি। আপনার মুরীদানের সংখ্যা বারো হাজারেরও বেশি। পবিত্র কোরআনের দোহাই, আমাদেরকে এবং আপনার অসংখ্য ভক্তদিগকে আপনি লজ্জিত ও অপদস্থ করিবেন না ।

শায়েখ্ বলিলেন, আমার দোস্তগণ, ইহা তোমাদের ভাগ্যই বটে। শক্তিধর মালিকের আসমানী ফয়সালা, বেলায়েতের লেবাছ’ (ওলীআল্লাহীর মর্তবা) আমার হইতে কাড়িয়া লওয়া হইয়াছে। হেদায়াতের সমস্ত আলামতও উঠাইয়া নেওয়া হইয়াছে। এই বলিয়া শায়েখ কাঁদিতে লাগিলেন এবং বলিলেন, আমার বন্ধুগণ, এ আসমানী ফয়সালা অখণ্ডণীয়। আমার সম্মুখে কোন পথ, কোন উপায়ই বাকি নাই ।

হযরত শিবলী (রঃ) বলেন, হৃদয়বিদারক এই ঘটনায় আমরা বিস্ময়বিমূঢ় হইয়া গেলাম । দুঃখ-বেদনায় কাতর হইয়া আমরা সবাই কাঁদিতে লাগিলাম। আমাদের সাথে শ্রদ্ধেয় শায়েখ্ও কাঁদিতেছিলেন। এতগুলি মানুষের অশ্রুবন্যায় যমীন ভিজিয়া গেল। অবশেষে আমরা নিরাশ হইয়া স্বীয় বাসস্থান বাগদাদে ফিরিয়া গেলাম। বাগদাদে আসিয়া যখন এই সংবাদ শুনাইলাম,শায়খের মুরীদগণ বুক ফাটাইয়া চিৎকার করিতে লাগিল। ব্যথার ভার সহ্য করিতে না পারিয়া কিছু মুরীদান সঙ্গে-সঙ্গেই মৃত্যু বরণ করিল। অবশিষ্ট সকলে কাকুতি-মিনতির সহিত কাঁদিয়া কাঁদিয়া চির বে-নিয়ায মালিকের দরবারে ফরিয়াদ করিতে লাগিল যে, হে মুকাল্লিবুল কলূব (হৃদয়সমূহের পরিবর্তন সাধনকারী), আমাদের মোর্শেদকে হেদায়েত দান করুন, পুনরায় তাঁহাকে স্বীয় মর্তবায় সমাসীন করিয়া দিন ।

অতঃপর সমস্ত খানকাহ সমূহ বন্ধ হইয়া গেল। এক বৎসর পর্যন্ত মুরীদগণ শায়খের বিয়োগ ব্যথায় ছটফট করিতে থাকিল। সুদীর্ঘ এক বৎসর পর মুরীদগণ শায়খের খোঁজ-খবর লওয়ার মনস্থ করিল। সেমতে আমাদের একটি জামাত রওনা হইল। সেই গ্রামে পৌঁছিয়া লোকজনের নিকট শায়েখ্ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হইল। গ্রামবাসীরা জানাইল, তিনি জঙ্গলের মধ্যে শূয়র চরাইতেছেন। আমরা বলিলাম,খোদা পানাহ্! হায়, এমন কেন হইল ? গ্রামবাসীরা জানাইল যে, তিনি খৃষ্টান সর্দারের মেয়ের সঙ্গে বিবাহের প্রস্তাব দিয়াছিলেন। মেয়ের পিতা এই শর্তে তাহা মর্জি করিয়াছে যে, তিনি জঙ্গলের মধ্যে শূয়র চরানোর দায়িত্ব আঞ্জাম দিবেন। ইহা শুনিয়া আমরা হতভম্ব হইয়া গেলাম, দুঃখে আমাদের কলিজা ফাটিতে লাগিল। আমাদের চক্ষু হইতে অশ্রুর বন্যা ঢেউ মারিতে লাগিল। অতি কষ্টে মনকে সামলাইয়া নিয়া আমরা ঐ জঙ্গলে পৌঁছিলাম। গিয়া দেখি, হায়, শায়খের মাথায় খৃষ্টানদের টুপি, কোমরে খৃষ্টান পরিচায়ক পৈতা লাগানো এবং ঐ লাঠিখানার উপর ভর করিয়া শূয়র-পালের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছেন যাহার ওপর ভর রাখিয়া তিনি ওয়ায-নসীহত করিতেন, খোৎবা দিতেন। এই দৃশ্য আমাদের যখম্দার হৃদয়ে লবণ ছিটানোর কাজ করিল। আমাদিগকে নিজের দিকে অগ্রসরমান দেখিয়া শায়েখ মাথা ঝুকাইয়া দৃষ্টি অবনত করিয়া রহিলেন। আমরা নিকটে গিয়া বলিলাম, আচ্ছালামু আলাইকুম। শায়েখ্ খানিকটা চাপা কণ্ঠে বলিলেন, ওয়াআলাইকুমুছ-ছালাম ।

শিবলী (রঃ) বলিলেন, মাননীয় মোর্শেদ, এত বিরাট এলম্ ও ইয্যত এবং হাদীস-তাফসীরের এত বড় জ্ঞানভাণ্ডারের অধিকারী হইয়া আজ আপনার এ কি হাল ? শায়েখ্ বলিলেন, আমার ভাইগণ, আমি আমার নিজ ক্ষমতা ও কন্ট্রোলের মধ্যে নই।’ আমার আল্লাহ আমাকে যেমন ইচ্ছা তেমন করিয়া দিয়াছেন। এতটা মোকার্রাব (নৈকট্যপ্রাপ্ত) বানানোর পর যখন তিনি আমাকে আপন দুয়ার হইতে দূরে নিক্ষেপ করিতে চাহিলেন, তখন এমন কে আছে যে, তাহার ফয়সালাকে একটুও টলাইতে পারে ? প্রিয় দোস্তগণ, খোদা কাহারও কাছে ঠেকা নন, কিন্তু প্রত্যেকেই তাহার কাছে ঠেকা। সেই বে-নিয়ায মা’বূদের কহর-গযবকে ভয় কর। নিজের এলম্ ও জ্ঞান, ইয্যত ও সম্মানের উপর গর্ব করিও না। অহংকারে পড়িওনা। অতঃপর তিনি আসমানের দিকে দৃষ্টি তুলিয়া বলিলেন, হে আমার মাওলা! তোমার সম্পর্কে আমার ধারণা তো এমন ছিল না যে, তুমি আমাকে এমনিভাবে লাঞ্ছিত-অপদস্থ করিয়া তোমার দরজা হইতেই তাড়াইয়া দিবে। এই বলিয়া শায়েখ্ (রঃ) মিনতি ভরিয়া কাঁদিয়া উঠিলেন এবং সাহায্য প্রার্থনা করিতে লাগিলেন। অতঃপর বলিলেন, “ হে শিবলী! অন্যকে দেখিয়া নিজের জন্য শিক্ষা গ্রহণ কর ।”

হযরত শিবলী (রঃ) কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলিতে লাগিলেন, হে পরোয়াদেগার! একমাত্র আপনার কাছেই সাহায্য চাই। একমাত্র আপনার কাছেই মিনতি ও ফরিয়াদ জানাই। প্রত্যেক কাজে একমাত্র আপনিই আমাদের ভরসা। হে মাওলা, আমরা যে কঠিন মুসীবতে আছি, এই মুসীবতকে আপনি হটাইয়া দিন । কারণ, আপনি ব্যতীত মুসীবত দূরকারী আর কেউ নাই ।

হযরত শিবলীর কান্না দেখিয়া এবং তাঁহার বেদনাভারাক্রান্ত চীৎকার শুনিয়া শূকরগুলি দৌড়াইয়া গিয়া তাঁহার পাশে ভিড় জমাইল এবং তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে ঐ শূকরগুলিও চীৎকার দিয়া কাঁদিতে লাগিল। ঐ দিকে হযরত শায়েখ্ কাঁদিয়া খুন হইতেছিলেন।

হযরত শিবলী বলিলেন, হে মোর্শেদ, আপনি পবিত্র কোরআনের হাফেয ছিলেন, আপনি সাত ক্বেরাতের কারী ছিলেন, সাত কেরাতেই পবিত্র কোরআন পাঠ করিতেন। কোরআন শরীফের কোন আয়াত কি এখনও আপনার মুখস্ত আছে ? শায়েখ্ বলিলেন, প্রিয় শিবলী, না, কিছুই ইয়াদ নাই, সম্পূর্ণ ভুলিয়া গিয়াছি, স্রেফ দুইখানা আয়াত মুখস্ত আছে ।

তাহা হইল (১) : وَ مِن يهن اللهُ فَمَا لَهُ مِنْ مُّكْرِمٍ – إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ অর্থ : আল্লাহ্ যাকে লাঞ্ছিত-অপমানিত করেন কেহই তাহাকে সম্মান দিতে পারে না । নিশ্চয়ই আল্লাহ্ যাহা চান তাহাই করেন।

(২) وَ مَنْ يَتَبَدَّلِ الْكُفَرَ بِالإِيمَانِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيْلِঅর্থ ঃ ঈমানের স্থলে যে কুফর কবূল করিল, নিশ্চয় সে সরল পথ হারাইয়া গোমরাহ্ হইয়া গেল।

অতঃপর হযরত শিবলী বলিলেন, তিরিশ হাজার হাদীস সনদ সহকারে আপনার বিলকুল কণ্ঠস্থ ছিল। তন্মধ্যে কোন হাদীস এখনও কি মুখস্ত আছে ? শায়েখ্ বলিলেন, না, স্রেফ একটি হাদীস মুখস্ত আছে,

তাহা হইল—مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ অর্থ ঃ “যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করিয়া অন্য কোন ধর্ম অবলম্বন করে,তোমরা তাহাকে কতল করিয়া ফেল।”

হযরত শিবলী বলেন, এই মর্মন্তুদ অবস্থা দেখিয়া শায়েখকে এখানে রাখিয়া আমরা বাগদাদের উদ্দেশ্যে রওনা হইলাম। তখনও আমরা তিন মনযিল অতিক্রম করি নাই, ইতিমধ্যে তৃতীয় দিবসে আচমকা শায়েখকে আমাদের অগ্রে দেখিতে পাইলাম, তিনি একটি নহর হইতে গোসল করিয়া উঠিতেছেন এবং বুলন্দ আওয়াজে পড়িতেছেন : “আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ”। তখন যে আমরা কী সীমাহীন আনন্দিত হইয়াছিলাম তাহা একমাত্র ঐ ব্যক্তিই আন্দাজ করিতে পারিবে যে আমাদের বিগত দুঃখ সম্পর্কে আন্দাজ করিতে পারিয়াছে।

হযরত শিবলী বলেন, পরে এক সময় আমরা হযরত শায়েখকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম যে, আপনি যে কঠিন মুসীবতে পতিত হইয়াছিলেন, উহার কোন কারণ ছিল কি ? শায়েখ্ বলিলেন, হাঁ, ছিল । আমরা যখন ঐ গ্রামটিতে পৌঁছিলাম এবং সেখানকার মূর্তি-মন্দির ও গীর্জা সমূহের নিকট দিয়া যাইতেছিলাম, তখন অগ্নিপূজক ও সলীব পূজকদিগকে গায়রুল্লার উপাসনায় লিপ্ত দেখিয়া আমার অন্তরে এই খেয়াল করিয়া অহংকার ও বড়াই পয়দা হইল যে, আমরা তওহীদে বিশ্বাসীমোমেন, আর এই হতভাগাগুলি কি রকম জাহেল, কত বড় আহাম্মক যে, ইহারা এমন কতগুলি বস্তুর পূজা-উপাসনা করিতেছে যাহাদের মধ্যে না কোন বুঝ শক্তি আছে, না ইচ্ছা শক্তি বা অনুভূতিশক্তি বলিতে কিছু আছে। আর কি, ঠিক তখনই আমার প্রতি একটা গায়বী আওয়াজ আসিল যে, এই ঈমান ও তওহীদ তোমার কোন ব্যক্তিগত গুণ নয়, তোমার নিজস্ব অর্জনের ধন নয়। কারণ, এসব কিছুই আমার দান ও তওফীকের ফসল মাত্র। তুমি কি তোমার ঈমানকে নিজস্বএখতিয়ার ও ক্ষমতা ভুক্ত মনে কর ? যদি চাও, তবে এক্ষণই আমি দেখাইয়া দিতেছি। ঐ মুহূর্তেই আমি অনুভব করিলাম যে, একটি পাখী আমার কলবের মধ্য হইতে উড়িয়া গেল । আসলে তাহা ছিল ঈমান। উম্মুল-আমরাজ ২৫ হইতে ২৯পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

অতঃপর হযরত শায়খুল-হাদীছ (রঃ) লেখেন যে, অহংকার এমন মারাত্মক বালা যে, বড় বড় মাশায়েখের এই শায়েখকেও কোথা হইতে কোথায় নিয়া গেল,কী সর্বনাশ ঘটাইয়া দিল । আল্লাহ্পাক আমাদের সকলকে এই কঠিন বিপদ হইতে রক্ষা করুন । আমীন ।হযরত থানবী (রঃ)-এর আফাছে-ঈসা নামক কিতাবের ৬৫২ পৃষ্ঠায়ও এইঘটনা সংক্ষেপে উল্লেখিত আছে।

বড় পীর হযরত আবদুল কাদের জীলানী (রঃ)-এর ঘটনা

হযরত থানবী (রঃ) বলেন : হযরত জীলানী (রঃ) তাঁহার যৌবন বয়সে এক বুযুর্গের সহিত সাক্ষাত করার নিয়তে যাইতেছিলেন। তাঁহার সঙ্গে ছিলেন আরও দুই ব্যক্তি। পথিমধ্যে পরস্পরের মধ্যে যোগ-জিজ্ঞাসা হইতে লাগিল যে, ভাই, আপনি ঐ বুযুর্গের নিকট কোন্ উদ্দেশ্যে যাইতেছেন ? একজন বলিল, আমি যাইতেছি রিযিকের প্রশস্ততা-স্বচ্ছলতার দোআ চাওয়ার জন্য। একজনের নাম ছিল ইবনুছ-ছাক্কা। সে ছিল একজন আলেম। সে বলিল, আমি যাইতেছি তাঁহাকে পরীক্ষা করার জন্য যে, তিনি কি শুধুই বুযুর্গ, নাকি এলেম-কালামও কিছু আছে ? আমি এমন কিছু জটিল প্রশ্ন করিব যাহার উত্তর দিতে তিনি ব্যর্থ হইবেন।

অতঃপর উক্ত দুই ব্যক্তি যুবক হযরত আব্দুল-কাদের জিলানী (রঃ) কে জিজ্ঞাসা করিল যে,বাবা, তুমি যাইতেছ কোন্ উদ্দেশ্যে? তিনি বলিলেন, আমি যাইতেছি এই নিয়তে যে, তিনি একজন বুযুর্গ ব্যক্তি, আল্লাহর মকবূল বান্দা। তাঁহার যিয়ারতের বরকতে আমার নফসের এছ্‌লাহ্ হইয়া যাইতে পারে- এবং আমার জীবনের উপর আল্লাহ্পাকের বিশেষ মেহেরবানী ও রহমতের দৃষ্টি হইয়া যাইতে পারে।

ইবনুছ-ছাক্কাকে বলিলেন, তোমার অমুক প্রশ্নের জওয়াব এই,অমুক অমুক প্রশ্নের জওয়াব এই, উত্তর এই । এভাবে তাহার সকল প্রশ্নের যথাযথ জওয়াব দিয়া বলিলেন : তোমার চেহারায় আমি কুফরের আলামত সমূহ দেখিতে পাইতেছি। আমি দেখিতেছি, অচিরেই তুমি ইসলাম ত্যাগ করিয়া কাফের-মোরতাদ হইয়া যাইবে।

পরে ঠিক তাহাই ঘটিল। উক্ত পণ্ডিত তৎকালীন খলীফার দূত হইয়া খলীফার একটি বার্তা বহন করিয়া রোম-সম্রাটের নিকট গিয়াছিল। বড় জাঁদরেল আলেম ছিল। সেই সুবাদেই খলীফা তাহাকে নিজের ‘দূত’ পদে নিযুক্ত করিয়া রাখিয়াছিলেন। কিন্তু, অহংকার ও আত্ম-গরিমার ফলশ্রুতি স্বরূপ উক্ত বুযুর্গের সহিত গোস্তাখীর নিয়ত ও ফন্দি আঁটিয়াছিল। উহারই প্রায়শ্চিত্তে রোম সম্রাটের নিকট গিয়া তাহার এক মেয়ের প্রতি প্রেমাসক্ত হইয়া ইসলাম ত্যাগ করিয়া খৃষ্টান ও মোরতাদ হইয়া গেল এবং ঐ হালতেই মারা গেল। নাউযুবিল্লাহ্।

অতঃপর হযরত জীলানী (রঃ)-কে বলিলেন, আমি দেখিতেছি, (তুমি এত বড় ওলী হইবে যে) একদা তুমি বাগদাদের মিম্বরে বসিয়া এইরূপ ঘোষণা করিবে যে,‘সমস্ত ওলীআল্লাহর গর্দান আমার এই পদতলে’। এবং ইহাও দেখিতেছি যে, সমস্ত ওলীর গর্দান (ঐ ঘোষণা শুনিয়া) আদবে নুইয়া পড়িতেছে। হযরত জীলানী (রঃ) এই ভবিষ্যদ্বাণীর সময় নিছক এক নওজোয়ান ছিলেন। পরে ঠিক তাহাই হইল ।একদিন তিনি বাগদাদের মিম্বরে বসিয়া ওয়ায করিতেছিলেন। এক পর্যায়ে জোশ-জব্বার হালতে তিনি উক্ত ঘোষণাই দান করিলেন। কারামত স্বরূপ উক্তঘোষণা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর হজ্জের আহবানের মত তৎকালীন পৃথিবীরসমস্ত বুযুর্গগণই শুনিতে পাইয়াছিলেন এবং সকলেই গর্দান ঝুকাইয়া শ্ৰদ্ধা ওস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিয়াছিলেন ।উপদেশ

বই : অহংকার ও তার প্রতিকার

লিখক : হাকীম আখতার সাহেব (রহ,)

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *