অসুস্থ ব্যক্তির রোযা সংক্রান্ত ১০ টি মাসআলা
রোযা রাখার পর অসুস্থ হয়ে যাওয়া
১. মাসআলা : যদি রোযা অবস্থায় মারাত্মক অসুস্থ হয় অথবা অসুস্থতা প্রবল আকার ধারণ করে এবং মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে, তাহলে রোযা ভাঙ্গা জায়েয আছে। শুধু কাযা ওয়াজিব হবে, কাফ্ফারা দিতে হবে না। যদি ইনজেকশনের দ্বারা চিকিৎসা করা হয়, তাহলে রোযা ভাঙ্গা জায়েয নেই।(আহসানুল ফাতাওয়া : 4/422)
সর্দি কাশির মধ্যে ঔষধের ঘ্রাণ নেওয়া
২. মাসআলা : সর্দি কাশি হলে, বর্তমানকালে ঔষধ খাওয়ার পরিবর্তে উইকস অর্থাৎ এক প্রকারের ঔষধ যার ঘ্রাণ নেওয়ার দ্বারা এর দগ্ধতা মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়, যার দ্বারা সর্দি কাশি ভালো হয়ে যায়, রোযা অবস্থায় এ উইকস এর ব্যবহার করা অনুচিৎ। যদি এতে অপাংক্তেয় কোনো কিছু না থাকে,তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না। যেমন আতর সুগন্ধি ইত্যাদি অথবা গোলাপ ফুলের ঘ্রাণ নেওয়ার দ্বারা ভাঙ্গবে না ।
মস্তিস্কে দুর্বলতার রোগ
৩. মাসআলা : মস্তিস্কের দুর্বলতার রোগে আক্রান্ত থাকার কারণে কখনো কখনো রোযা রাখতে অপারগতার শিকার হতে হয় আর রোযা রাখা অবস্থায় চাকরির কাজ পরিচালনা করা কষ্টকর। এমন অসুস্থ ব্যক্তির রোযা ভাঙ্গা ঐ সময় জায়েয, যখন রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে এবং কষ্ট বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। এ অবস্থায় রোযা ভাঙ্গা জায়েয আছে এবং পরে কাযা আদায় করা আবশ্যক । তার ফিদয়া দেওয়া জায়েয নেই । (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৮৭)
রোযা অবস্থায় পেশাব বন্ধ হয়ে যাওয়া
৪. মাসআলা : এক ব্যক্তির প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মূত্রথলীতে নল লাগিয়ে প্রস্রাব করে থাকে, এমন পরিস্থিতিতে রমযান মাস এসে গেল । এ কারণে রোযা নষ্ট হবে না। কেননা মূত্রথলী ও প্রস্রাবের রাস্তার সম্পর্ক পেটের সাথে নয় ।
অর্শ্বরোগ
৫. মাসআলা : এক ব্যক্তি রক্ত অর্শ্ব রোগে আক্রান্ত। যখনই রোযা রাখে, তখনই রক্ত আসতে থাকে। মলদ্বার ফুলে যায়। অনেক কষ্ট হয়। যদি রোযা না রাখে, তাহলে ভালো থাকে এ ধরনের রুগ্ন ব্যক্তির রমযানের রোযা ভাঙ্গার অনুমতি আছে। পরে যখন সুস্থ হয়ে রোযা রাখার উপযুক্ত হয়ে যায়, ঐ সময কাযা আদায় করবে। তার ফিদয়া দেওয়া যথেষ্ট নয়। কিন্তু যে ধরনের রুগ্ন ব্যক্তির রোগ সর্বদা হয়ে থাকে আর সুস্থ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে না, তার ফিদয়া দেওয়া জায়েয আছে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৮৪)
ডায়াবেটিস রোগ
৬. মাসআলা : কয়েক বৎসর থেকে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। যার ফলে দুর্বলতা ও অক্ষমতায় রোযা রাখা কষ্টকর, বিশেষ করে গরমের মৌসুমে। এ ধরনের অসুস্থ ব্যক্তি, যে দুর্বল ও অসুস্থতার কারণে রোযা রাখতে পারে না, তার জন্য রমযান শরীফে রোযা ভাঙ্গা জায়েয আছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত সুস্থতার আশা থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফিদয়া দেওয়া যথেষ্ট নয়; বরং সুস্থতার পরে কাযা আবশ্যক। পুনরায় যদি সুস্থতার আশা না থাকে এবং রোগ দূর না হয়, তাহলে ঐ রোযার ফিদয়া দিয়ে দিবে। আর প্রত্যেক রোযার ফিদয়া ছদকায়ে ফিতরের সমপরিমাণ দিয়ে দিবে ।(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৭৪)
অসুস্থতার পর দুর্বলতা থেকে যাওয়া
৭. মাসআলা : যদি রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করে, কিন্তু এখনও দুর্বলতা রয়ে গেছে আর প্রবল ধারণা জন্মে যে, যদি রোযা রাখে তাহলে পুনরায় রোগ বেড়ে যাবে, তাহলেও রোযা না রাখা জায়েয হবে । (রদ্দুল মুহতার : ১১/১৫৩)
রোযা অবস্থায় টিকা দেওয়া
৮. মাসআলা : যদি রোযা অবস্থায় বাহুতে অথবা শরীরের অন্য কোথাও টিকা দেওয়া হয়, এর দ্বারা রোযা আদায় হয়ে যাবে, নষ্ট হবে না । (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪০৭)
সুস্থতার পর সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার
৯. মাসআলা : দ্বীনদার ব্যক্তির রোযা অবস্থায় পেটের মধ্যে মারাত্মক ব্যথা হলো এবং ঔষধ খাওয়ার পর ভালো হলো, তাহলে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোযাদারের মত থাকা ওয়াজিব হবে, যেমনিভাবে মুসাফির,ঋতুবর্তী মহিলা ও নেফাসগ্রস্ত (অর্থাৎ সন্তান প্রসবের সময়) এবং পাগল ব্যক্তির পাগলামী ভালো হয়ে গেলে, সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে রোযাদারের মত থাকা ওয়াজিব। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৩৩)
কলেরা ও পেটের অসুস্থতা
১০.মাসআলা : হঠাৎ কলেরা রোগ ছড়িয়ে পড়ায় এক ব্যক্তির বমি এবং পাতলা পায়খানা শুরু হলো। সে ছিল রোযাদার। যখন বমি আসল, তখন এ ব্যক্তি ও তার আশপাশের লোকেরা মনে করল, হয়ত রোযা ভেঙ্গে গেছে। রোগী পানি চাইলে, অন্য লোকেরা পানি পান করিয়ে দিল। এখন তার কাযা করতে হবে, এমনিভাবে এক ব্যক্তির পেটের মধ্যে ব্যথা ছিল, তাকে ঔষধ খাইয়ে দিল। উভয়জনের দায়িত্বে শুধু কাযা ওয়াজিব, কাফ্ফারা নয় । (কেফায়াতুল মুফতী : ২/৩০)
তথ্যসূত্রঃ. লেখকঃ মুফতি রাশেদুল ইসলাম ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা মিরপুর -১ (মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স)