ঘরে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সুন্নাত
১.। বিসমিল্লাহ বলে ঘরে প্রবেশ ও বের হওয়া
ইমাম আন নববী রহ. বলেন, বিসমিল্লাহ বলার মাধ্যমে মানুষের অন্তরে আল্লাহর স্মরণ বৃদ্ধি পায় এবং মানুষকে মহৎ করে তোলে।
২। ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহকে স্মরণ করা সুন্নাত
এ প্রসঙ্গে হাদীসে এসেছে عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ” إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ، فَذَكَرَ اللهَ عِنْدَ دُخُولِهِ وَعِنْدَ طَعَامِهِ ، قَالَ الشَّيْطَانُ : لَا مَبيتَ لَكُمْ ، وَلَا عَشَاءَ .
“হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি: যখন একজন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ করে এবং প্রবেশ করার সময় এবং খাদ্য গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম নেয়, শয়তান বলে (অন্য শয়তানকে) তোমাদের জন্য কোনো বাসস্থানও নেই এবং কোনো খাবারও নেই। (মুসলিম, হাদীস নং: ২০১৮।)
৩। ঘরে প্রবেশের সময় এ দু’আ পাঠ করা সুন্নাত
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. এর বাণী : عَن أبي مَالِكِ الْأَشْعَرِي، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِذَا وَلَجَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ، فَلْيَقُلْ :
“হযরত আবু মালিক আশআরী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করে তখন সে যেন বলে: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلَجِ، وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ، بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنا
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সর্বোত্তম প্রবেশ এবং সর্বোত্তম বের হওয়া কামনা করি। আল্লাহর নামেই আমরা প্রবেশ করি এবং আল্লাহর নামেই আমরা বের হই এবং আমাদের রবের প্রতি আমরা তাওয়াক্কাল করি ।” (আবু দাউদ, হাদীস নং: ৫০৯৬)
৪। ঘরে প্রবেশ করে মিসওয়াক করা সুন্নাত
৫। ঘরে প্রবেশ করে ঘরের বাসিন্দাদের সালাম দেয়া সুন্নাত
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন: فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً
“অতঃপর যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করো, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে । এটা আল্লাহ্ কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দু’আ।”(কুর’আন, সূরা আন নূর ২৪:৬১।) আর এখানে সালামকেই আল্লাহর প্রশংসা বলা হয়েছে।
৬। এই দু’আ পাঠ করে ঘর থেকে বের হওয়া সুন্নাত
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীস: عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ النَّبِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” إِذَا خَرَ الرّجُلُ مِنْ بَيْتِهِ فَقَالَ
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি ঘর থেকে বের হয় তখন সে যেন বলে: ্بسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ আল্লাহর নাম নিয়ে তাঁরই উপর ভরসা করে বের হলাম । আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতিত প্রকৃতপক্ষে কোনো শক্তি সামর্থ্য নেই অসৎ কাজ থেকে বাঁচার এবং সৎ কাজ করার।”
যে এটা বলে তাকে বলা হয় । يُقَالُ حِينَئِذٍ : هُدِيتَ ، وَكُفِيتَ، وَوُقِيتَ، فَتَتَنَعَى لَهُ الشَّيَاطِينُ .
তোমার জন্য যথেষ্ট হবে এবং তুমি নিরাপত্তা পার্বে এবং শয়তান পশ্চাদপসারণ হবে।”আৰু দাউদ, হাদীস নং: ৫০৯৬ এবং আত তিরমিযী, হাদীস নং: ৩৪২৬। বি.দ্র.মুসলমানদেরকে দিন ও রাতে বহুবার মসজিদ, ঘর-বাড়ি, কাজ-কর্ম ইত্যাদির উদ্দেশে প্রবেশ ও বের হতে হয় । সুতরাং যখন সে প্রবেশ ও বের হবার সময় উক্ত সুন্নাতসমূহ পালন করে, তবে সে দুনিয়াবি উপকারিতার পাশাপাশি পরকালেও পুরস্কৃত হবে।
উক্ত সুন্নাহসমূহ পালনের উপকারিতা ও ফযিলত
১. বান্দা, এর দ্বারা বিশ্বজনীন ও ধর্মীয় সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়মানুসারে করতে পারবে।
২. বান্দা, এর দ্বারা সকল পাপ কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।
৩. বান্দা, এর দ্বারা আল্লাহর অভিভাবকত্ব পাবে।
অন্যের ঘরে প্রবেশের সুন্নাত নিয়ম
১। অনুমতি নিয়ে অন্যের ঘরে প্রবেশ করা সুন্নাত
২। সালামের মাধ্যমে ঘরে প্রবেশের অনুমতি নেয়া সুন্নাত
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণী- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّىٰ تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
“হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে অনুমতি না নেওয়া পর্যন্ত প্রবেশ করো না, এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম কর। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।(আল কুর’আন; সূরা আর নূর ২৪ : আয়াত নং:২৭ )
৩। কারো ঘরে প্রবেশের সময় নিজের পূর্ণ পরিচয় দেয়া সুন্নাত
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীস بنَ عَبْدِ اللَّهِ رضى اللهُ عَنْهُمَا، يَقُولُ: أَتَيْتُ النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي دَيْنِ كَانَ عَلَى أَبي فَدَقَقْتُ البَابَ فَقَالَ: «مَنْ ذَا» فَقُلْتُ: أَنَا، فَقَالَ: «أَنَا أَنَا» كَأَنَّهُ كَرهَهَا.
“হযরত যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বাবার ঋণের ব্যাপারে আলোচনার জন্য নবী করীম সা. এর কাছে আসলাম । তারপর দরজায় কড়া নাড়লাম। অতঃপর তিনি বললেন; দরজায় কে? আমি বললাম, আমি, তারপর রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, আমি আমি কী যেন তিনি তা অপছন্দ করলেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ৬২৫০ )
৪। সালাম ব্যতীত ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলে, প্রবেশের অনুমতি না দেয়া
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীস: عَنْ جَابِرٍ إِنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا نأذَنُوا لِمَنْ لَمْ يَبْداً بالسَّلَامِ .
“হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যে ব্যক্তি সালাম না দিয়ে কারো ঘরে প্রবেশের অনুমতি চায়, তোমরা তাকে প্রবেশের অনুমতি দিও না ।”(মুসনাদে আবু ইয়ালা; হাদীস নং:১৮০৯)
৫। কোনো বিবাহিত মহিলার ঘরে একাকী প্রবেশ করা নিষিদ্ধ
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীস: عَنْ عَمْرِو بْنِ الْحَارِثِ … قَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ: لَا يَدْخُلَنَّ رَجُلٌ، بَعْدَ يَوْمِي هَذَا، عَلَى مُغِيبَةٍ، إِلَّا وَمَعَهُ رَجُلٌ أو اثْنَانِ.
“হযরত ওমর বিন হারিস রা. থেকে বর্ণিত, . . . রাসূলুল্লাহ সা. মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বললেন: আজকের পরে কোনো ব্যক্তি যেন স্বামী অনুপস্থিত এমন বিবাহিত নারীর ঘরে প্রবেশ না করে। তবে তার সাথে আরো একজন অথবা দু’জন পুরুষ থাকলে কোনো অসুবিধা নেই ৷”(মুসলিম শরীফ; হাদীস নং: ২১৭৩)
৬। কারো ঘরে উঁকি দেওয়া নিষিদ্ধ
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَوْ أَنَّ رَجُلًا اطَّلَعَ عَلَيْكَ بِغَيْرِ إِذْنٍ، فَخَذَفْتَهُ بِحَصَاةٍ، فَفَقَأْتَ عَيْنَهُ مَا كَانَ عَلَيْكَ مِنْ جُنَاحٌ.
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন: যদি কেউ অনুমতি ছাড়া তোমার ঘরে উঁকি মারে, তবে তুমি পাথর মেরে তার চোখ নষ্ট করে দিলে এতে তোমার কোনো গুনাহ হবে না। (মুসলিম শরীফ; হাদীস নং:২১৫৬)
তথ্যসূত্র :
বই: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ১০০০ সুন্নাত
লেখক: শাইখ খালীল আল হোসেনান
অনুবাদক: মাওলানা ডক্টর শাহ্ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম