ইসলাম

হাদীস সংকলকগণের মাযহাব

হাদীসগ্রন্থ প্রণেতা, ব্যাখ্যাকার ও হাদীসের বর্ণনাকারীদের জীবন চরিত্র গ্রন্থ ও হাদীসের মূলনীতি সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কিতাবাদি প্রণেতাগণ হয়ত স্বয়ং মুজতাহিদ ইমাম ছিলেন, অথবা কোন না কোন মাযাহাবের অনুসারী ছিলেন। কেউ লা-মাযহাবী বা মাযহাব বিদ্বেষী ছিলেন না। এখানে হাদীসের কয়েকটি বিশেষ বিশেষ কিতাবের সংকলকদের মাযহাবের উপর কিছু আলোচনার চেষ্টা করা হবে।

১. ইমাম আবূ আবদিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম ইবনুল মুগীরা ইবনে বারদিযবা আল জু’ফী আল বুখারী আল ইয়ামানী (রহ.), মৃত ২৫৬ হিজরী কে অনেকে মুজতাহিদ ইমামদের মধ্যে গণ্য করেছেন।তাওজীহুন নযর ১৮৫।

পক্ষান্তরে শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (রহ.), আল্লামা তাজুদ্দীন সুকী (রহ.) এবং গায়রে মুকাল্লিদ আলিম নবাব সিদ্দীক হাসান খান ভূপালী (রহ.) তাঁকে শাফিঈ মাযহাবের অনুসারী বলে গণ্য করেছেন।তাবাকাতুশ্ শাফেঈয়্যাতিল কুবরা ২/২-১৯, আল ইনসাফ ৬৭, আবজাদুল উলূম ২৮১।

২. ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ ইবনে মুসলিম কুশাইরী (রহ.) মৃত ২৬১ হিজরীও শাফেঈ মাযহাবের ছিলেন বলে নবাব সিদ্দীক হাসান খান (রহ.) উল্লেখ করেছেন। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীর (রহ.) (মৃত ১৩৫২ হিজরী) স্বীয়গ্রন্থ “ফায়ফুল বারীতে” ইমাম ইবনে তাইমিয়্যার উদ্ধৃতি দিয়ে ইমাম নাসাঈ ও ইমাম আবূ দাউদ (রহ.) কে হাম্বলী মাযহাব অবলম্বী বলেছেন। ফায়যুল বারী ১/৫৮ মুদ্রণ: মিশর, আল ইমাম ইবনে মাজাহ ওয়া কিতাবুহুস সুনান, কৃত: আল্লামা আবদুর রশীদ নোমানী ১২২-১৩১।

নবাব সিদ্দীক হাসান খান (রহ.) ও তাদেরকে এভাবেই আখ্যায়িত করেছেন। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) (মৃত ৭৫১ হিজরী) সুদৃঢ়ভাবে ইমাম আবূ দাউদকে হাম্বলী বলেছেন। ইমাম তাহাবী (রহ.) (মৃত ৩২১ হিজরী) তো হানাফী মাযহাবের বড় মাপের ব্যরিষ্টার হিসেবেই প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন ।

৩. ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা ইবনে সাওরা ইবনে মূসা ইবনে যাহ্হাক আস সুলামী আত তিরমিযী মৃত ২৭৯ হিজরী। তার সম্বন্ধে ইমামুল হিন্দ শাহ ওয়ালী উল্লাহ (রহ.) বলেছেন যে তিনি মুজতাহিদ ছিলেন। তবে তাকে হাম্বলী মাযহাবের প্রতি আকৃষ্ট এবং এক পর্যায়ে হানাফী বলেও উল্লেখ করেছেন। ইমাম ইবনে মাজাহকে আল্লামা কাশ্মীরী (রহ.) শাফিঈ বলে উল্লেখ করেছেন। ইমাম ইসহাক ইবনে রাহওয়াই (রহ.) কে ইমাম সুবকী (রহ.) হাম্বলী আর ইমাম কাশ্মীরী (রহ.) হানাফী বলেছেন ।

৪. ইমাম আবূ দাউদ সোলাইমান ইবনে আস আস ইবনে ইসহাক ইবনে বুশাইর ইবনে সাদ্দাদ ইবনে আমর আল আযদী আস সিজিস্তানী। তিনি ৭৩ বছর বয়সে ২৭৫ হিজরীতে ওফাত প্রাপ্ত হন। তাঁর মাযহাবের ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। তবে নবাব সিদ্দীক হাসান খান (রহ.) বলেছেন, তিনি শাফেঈ মাযহাবের ছিলেন। আল্লামা কাশ্মীরী রহ.) ইবনে তাইমিয়্যার উদ্ধৃতি দিয়ে হাম্বলী মাযহাবের বলেছেন।

৫. ইমাম আবূ আবদিল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ ইবনে মাজাহ আর রাবঈ আল কাযবীনী। তিনি ২৭৩ হিজরীতে ইনতিকাল করেন। তাঁর মাযহাবের ব্যাপারে ইমামুল হিন্দ শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলবী (রহ.) বলেন, হাম্বলী মাযহাবের প্রতি তার ঝোঁক ছিল । আল্লামা কাশ্মীরী বলেন, তিনি শাফেঈ মাযহাবের ছিলেন।

৬. ইমাম আবূ আবদির রহমান শু’আইব ইবনে আলী ইবনে বাহার ইননে সিনান ইবনে দীনার আন নাসাঈ। তিনি ১৩ই সফর ৩০৩ হিজরী সনে ইনতিকাল করেন। শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলবী, শাহ আবদুল আযীয দেহলবী ও নবাব সিদ্দীক হাসান খান (রহ.) বলেন, তিন শাফেঈ মাযহাবের ছিলেন ।

মোটকথা, তাঁদের সবাই হয়ত মুজতাহিদ তথা গবেষক অথবা কোন না কোন মাযহাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। যদিও কোন কোন মাসআলায় স্ব স্ব মাযহাবের খিলাফও করেছেন। যেমন ইমাম তাহাবী (রহ.) হানাফী হওয়া সত্ত্বেও কোন কোন মাসআলায় হানাফী মাযহাবের সঙ্গে ভিন্নমতও পোষণ করেছেন।

তথসূত্র:

তাকলীদ ও মাযহাব প্রসঙ্গ

মুফতি হিফজুর রহমান

প্রধান মুফতি,জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া,সাতমসজিদ,মুহাম্মদপুর,ঢাকা।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *