হাদিসে বর্ণিত মুমিনের বৈশিষ্ট্যসমূহ
রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর হাদিসে প্রকৃত মুমিনের বহু বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে, যা একজন বিশ্বাসীর ব্যক্তিত্ব, আচরণ ও নৈতিকতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে। নিম্নে সহিহ ও হাসান হাদিস থেকে মুমিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো—
১. আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন,“তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে আমাকে তার পিতা, সন্তান এবং সকল মানুষের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।”(সহিহ বুখারি: ১৫, সহিহ মুসলিম: ৪৪)
২. আমানতদার ও বিশ্বস্ততা বজায় রাখা
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “মুমিন হতে পারে না সে ব্যক্তি, যে আমানতের খেয়ানত করে।”(মুসনাদ আহমদ: ১২৫৭৪)
তিনি আরও বলেন, “যার মধ্যে আমানতদারিত্ব নেই, তার মধ্যে ঈমান নেই।” (সুনান আন-নাসাঈ: ৪৬৬৭)
৩. সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততা
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “একজন মুমিন সব কিছু করতে পারে, কিন্তু কখনো মিথ্যা বলতে পারে না।”
(মুসনাদ আহমদ: ৯৪৪৫)
তিনি আরও বলেন, “তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাকো, কারণ মিথ্যা অধর্মের দিকে নিয়ে যায়, আর অধর্ম জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।” (সহিহ মুসলিম: ২৬০৭)
৪. উত্তম চরিত্র ও সদাচার
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “মুমিনদের মধ্যে সর্বোত্তম হলো সে, যার চরিত্র সর্বোত্তম।” (সুনান আত-তিরমিজি: ১১৬২)
তিনি আরও বলেন, “মুমিন ব্যক্তি নম্র ও বিনয়ী হয়, যেমন খেজুর গাছের নরম শাখা বাতাসে নড়াচড়া করে কিন্তু ভেঙে পড়ে না।” (মুসনাদ আহমদ: ২১৪৫৭)
৫. ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “মুমিনের অবস্থা আশ্চর্যজনক! তার জন্য সবকিছু কল্যাণকর। সুখ পেলে কৃতজ্ঞ হয়, কষ্ট পেলে ধৈর্য ধারণ করে।” (সহিহ মুসলিম: ২৯৯৯)
৬. অন্য মুসলমানের জন্য কল্যাণকামী হওয়া
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তা-ই তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য পছন্দ করে।” (সহিহ বুখারি: ১৩, সহিহ মুসলিম: ৪৫)
তিনি আরও বলেন, “মুমিনরা একে অপরের সাথে একটি দেহের মতো। যখন দেহের একটি অঙ্গ ব্যথিত হয়, তখন সমস্ত দেহ তার জন্য অস্থির হয়।” (সহিহ মুসলিম: ২৫৮৬)
৭. দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ও আখিরাতমুখিতা
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত ও পরকালের প্রতি আগ্রহী হয়, আল্লাহ তার অন্তরে স্বচ্ছলতা দান করেন এবং তার কাজকে সুবিন্যস্ত করে দেন। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়, আল্লাহ তার দারিদ্র্যকে সামনে রেখে দেন এবং তার কাজকে বিশৃঙ্খল করে দেন।”(সুনান আত-তিরমিজি: ২৪৬৫)
৮. নম্রতা ও বিনয়ী আচরণ
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে নম্র ও বিনয়ী করে দেন।”
(মুসনাদ আহমদ: ৭৩৫৭)
তিনি আরও বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন।” (সহিহ মুসলিম: ২৫৮৮)
৯. হালাল জীবিকা অর্জন করা
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “একজন মুমিনের দেহে যে গোশত হারাম থেকে গঠিত হয়, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (মুসনাদ আহমদ: ১৪০৫৫)
১০. আত্মসমালোচনা ও তাওবা করা
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “সকল মানুষ ভুল করে, আর উত্তম ভুলকারী হল সেই ব্যক্তি, যে তওবা করে।”
(সুনান আত-তিরমিজি: ২৪৯৯)
১১. অন্যদের থেকে নিরাপদ রাখা
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “মুমিন হলো সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্যরা নিরাপদ থাকে।”
(সহিহ বুখারি: ১০)
১২. গীবত ও পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ প্রকাশ করে না, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষ গোপন করবেন।” (সুনান ইবন মাজাহ: ২৫৪৬)
১৩. রাগ নিয়ন্ত্রণ করা
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “শক্তিশালী সেই ব্যক্তি নয়, যে কুস্তিতে পরাজিত করতে পারে, বরং প্রকৃত শক্তিশালী সেই ব্যক্তি, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।” (সহিহ বুখারি: ৬১১৪)
১৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “যে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন। আর যে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ তার রহমত থেকে বঞ্চিত করেন।” (সহিহ বুখারি: ৫৯৮৮)
সংকলক:
মুফতি রাশেদুল ইসলাম
ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স