ইবাদত

কিভাবে আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব?

কৃতজ্ঞতা আল্লাহ তাআলার মহান এক নিয়ামত। কোরআনে আল্লাহ তাআলা কৃতজ্ঞ বান্দাদের অনেক ফজিলত বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর বান্দাদের দুই ভাগে ভাগ করেছেন, কেউ কৃতজ্ঞ বান্দা আর কেউ অকৃতজ্ঞ বান্দা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাকে পথ দেখিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে অথবা হবে অকৃতজ্ঞ। (সুরা : ইনসান, আয়াত : ৩)

কৃতজ্ঞতা নিয়ামত বৃদ্ধি করে

কৃতজ্ঞতা নিয়ামত বৃদ্ধি করে। কৃতজ্ঞ বান্দাদের আল্লাহ তাআলা সুন্দর জীবন ও চিন্তামুক্ত জীবন দান করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং সেই সময়টাও স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেছিলেন, তোমরা সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আমি তোমাদের আরো বেশি দেব, আর যদি অকৃতজ্ঞতা করো, তবে জেনে রেখো আমার শাস্তি অতি কঠিন।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)

আল্লাহর প্রকৃত বান্দারাই কৃতজ্ঞতা আদায় করে

ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের রিজিক হিসেবে যে হালাল, পবিত্র বস্তু দিয়েছেন, তা খাও এবং আল্লাহর নিয়ামতগুলোর শোকর আদায় করো যদি তোমরা সত্যিই তাঁর ইবাদত করে থাকো।(সুরা : নাহল, আয়াত : ১১৪)

আলোচ্য আয়াতে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে যে যদি তাঁর ইবাদত করো তাহলে আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করো।

শয়তান কৃতজ্ঞতা আদায়ের অন্তরায়

শয়তান এটা ভালো করেই জানে যে কৃতজ্ঞতা আদায় করা অনেক উঁচু স্তরের। এর মাধ্যমে বান্দার অনেক কিছুর প্রাপ্তি ঘটে। সে জন্য তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকে মুমিন বান্দাদের কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য বাধা প্রদান করা। মনে নানা ধরনের ধারণা ঢুকিয়ে কৃতজ্ঞতা আদায়ে প্রতিবন্ধক করে দেওয়া।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সে বলল, তুমি যেহেতু আমাকে পথভ্রষ্ট করেছ, তাই আমিও শপথ করছি যে আমি তাদের (অর্থাৎ মানুষের) জন্য তোমার সরল পথে ওত পেতে বসে থাকব। তারপর আমি (চারদিক থেকে) তাদের ওপর হামলা করব, তাদের সম্মুখ থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে এবং তাদের বাম দিক থেকেও। আর তুমি তাদের বেশির ভাগকে কৃতজ্ঞ পাবে না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৬, ১৭)

খুব কম মানুষ কৃতজ্ঞতা আদায় করে

কৃতজ্ঞতা যেহেতু অনেক বড় মর্যাদা লাভের মাধ্যম; এ জন্য বাস্তবে দেখা যায় খুব কম মানুষ এই স্তরে উন্নীত হতে পারে।

কোরআনে এসেছে, ‘হে দাউদের বংশধর! তোমরা (ইবাদত-আনুগত্যের) কাজ করো কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনার্থে। আমার বান্দাদের মধ্যে শোকরগুজার লোক অল্পই।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ১৩)

শোকরের আদেশ দানের পর এই বাস্তব সত্যও তুলে ধরা হয়েছে যে কৃতজ্ঞ বান্দাদের সংখ্যা অল্পই হবে। এতেও মুমিনদের শোকরে উৎসাহিত করা হয়েছে।

কৃতজ্ঞতা আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম

তোমরা কুফর অবলম্বন করলে নিশ্চিত জেনে রেখো আল্লাহ তোমাদের কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি নিজ বান্দাদের জন্য কুফর পছন্দ করেন না। আর তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে, তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করবেন।… (সুরা : জুমার, আয়াত : ৭)

বিচক্ষণ মানুষ কৃতজ্ঞতা আদায় করে

মানুষ যখন পরিণত বয়সে উপনীত হয়, সব কিছু ভালোভাবে বুঝতে শুরু করে, তখন সে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায়ে লুটিয়ে পড়ে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা এমনটি ইরশাদ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে তার মাত-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার হুকুম দিয়েছি। তার মা তাকে অতি কষ্টের সঙ্গে (গর্ভে) ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তাকে (গর্ভে) ধারণ ও দুধ ছাড়ানোর মেয়াদ হয় ৩০ মাস। অবশেষে সে যখন তার পূর্ণ সক্ষমতায় পৌঁছে এবং ৪০ বছর বয়সে উপনীত হয়, তখন বলে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাওফিক দান করুন, যেন আপনি আমাকে ও আমার মাতা-পিতাকে যে নিয়ামত দিয়েছেন তার শোকর আদায় করতে পারি এবং এমন সৎকর্ম করতে পারি, যাতে আপনি খুশী হন এবং আমার জন্য আমার সন্তানদেরকেও (সেই) যোগ্যতা দান করুন। আমি আপনার কাছে তাওবা করছি এবং আমি আনুগত্য প্রকাশকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা : আহকাফ, আয়াত : ১৭, ১৮)

কৃতজ্ঞতা আদায়ে অসিয়ত

প্রিয় নবী (সা.) তাঁর এক প্রিয় সাহাবিকে কৃতজ্ঞতা আদায়ের ব্যাপারে অসিয়ত করেছেন।এ থেকেও কৃতজ্ঞতা আদায়ের গুরুত্ব ফুটে ওঠে। মুআয ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর হাত ধরে বলেন, হে মুআজ! আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে ভালোবাসি। অতঃপর তিনি বলেন, আমি তোমাকে কিছু অসিয়ত করতে চাই; তুমি নামাজ পাঠের পর এই দোয়াগুলো পড়া ত্যাগ করবে না। তা হলো ‘আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।’ অতঃপর মুআজ (রা.) আল-সানাবিহীকে এরূপ অসিয়ত করেন এবং আল-সানাবিহী আবু আব্দুর রহমানকে এরূপ অসিয়ত করেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২২)

কৃতজ্ঞতা আদায়ের পদ্ধতি

কৃতজ্ঞতার স্তরে উন্নীত হওয়ার জন্য প্রিয় নবীর প্রচেষ্টা। হাদিসে এসেছে রাসুল (সা.) এত পরিমাণে রাত জেগে নামাজ আদায় করতেন যে তাঁর কদম মোবারক ফুলে যেত। মুগিরা (রা.) বলেন, নবী (সা.) রাত জাগরণ করতেন অথবা রাবি বলেছেন, নামাজ আদায় করতেন; এমনকি তাঁর পদযুগল অথবা তাঁর দুই পায়ের গোছা ফুলে যেত। তখন এ ব্যাপারে তাঁকে বলা হলো, এত কষ্ট কেন করছেন? তিনি বলতেন, তাই বলে আমি কি একজন শোকরগুজার বান্দা হব না? (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০৬৩)

নবী (সা.) এত বেশি ইবাদত-বন্দেগি কেন করেন, তার জবাবে জানান যে আমি কি আল্লাহর শোকরগুজার বান্দা হতে পছন্দ করব না? এর দ্বারা জানা গেল, ইবাদত শুধু পাপ মার্জনার উদ্দেশ্যেই করা হয় না, বরং আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করাও ইবাদতের একটি কারণ হতে পারে। সে হিসেবে যার প্রতি আল্লাহর যত বেশি অনুগ্রহ হয়েছে এবং যে ব্যক্তি তাঁর যত বেশি নিয়ামত লাভ করেছে, তার তত বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে যত্নবান হওয়া কর্তব্য হয়ে যায়।

তাই ইবাদত করাও শোকর আদায়ের একটি পন্থা। মানুষ সাধারণত মুখে কৃতজ্ঞতা জানানো ও আলহামদুলিল্লাহ পড়াকেই শোকর মনে করে থাকে। এটাও শোকর বটে, কিন্তু শোকর এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। শোকর আদায় করতে হয় মন দ্বারাও। মনের শোকর হচ্ছে নিয়ামতকে আল্লাহর দান বলে বিশ্বাস করা এবং তাঁর মূল্য অনুভব করা। আরেক প্রকারের শোকর হচ্ছে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল। তা নামাজ, রোজা, দান-সদাকা সবই হতে পারে।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *