ইসলামের দৃষ্টিতে ট্রান্সজেন্ডার
সমকালীন এক ভয়ংকর ফিতনার নাম হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডার, এর প্রবর্তকেরা পৃথিবীবাসিকে এমন এক পথের দিকে আহবান করছে, যেখানে শরীরের গঠন নয়, বরং মনই ব্যক্তির আসল লিঙ্গ- পরিচয়। অর্থাৎ একজন পুরুষের মন যদি বলে সে নারী, তবে সে নারী। আবার একজন নারীর মন যদি বলে সে পুরুষ, তবে সে পুরুষ।
বিবিসি বাংলার ভাষায় ট্রান্সজেন্ডার হলো, মানুষ জন্মগতভাবে বা জৈবিক ভাবে যে লিঙ্গ পেয়ে থাকে, যখন কোন ব্যক্তি নিজেকে সেই লিঙ্গের মনে করেন না বা সেই লিঙ্গ ধারণ করেন না, তখন তাকে ট্রান্স বা ট্রান্সজেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হয়।ট্রান্স নারী হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি জৈবিক বা দৈহিক ভাবে পুরুষ কিন্তু লিঙ্গ পরিচয়ে নারী। আর ট্রান্স পুরুষ হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি জৈবিক ভাবে নারী, কিন্তু লিঙ্গ পরিচয়ে পুরুষ।
ট্রান্সজেন্ডার মতবাদের সামাজিক ক্ষতিসমূহ
প্রথমতঃ ট্রান্সজেন্ডারের কারণে পৃথীবির সূচনালগ্ন থেকে চলে আসা মানবজাতির লিঙ্গ ভিত্তিক পরিচয়ের এই ধারা ওলট-পালট হয়ে যাবে। সমাজে মারাত্মক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।
দ্বিতীয়তঃ এর মাধ্যমে ইসলামের বিয়ে, তালাক, বংশ পরিচয়, পর্দা ও মিরাস-উত্তরাধিকারসহ নারী-পুরুষ সংক্রান্ত কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামের সব বিধানের পরিবর্তন ও বিকৃতি ঘটবে। আর সমকামিতা ও ব্যভিচারের মতো ঘৃণ্য ও মহাপাপগুলো আইনি বৈধতা পাবে। যার ফলশ্রুতিতে একদিকে যেমন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে তেমনি আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি ও শরিয়তের মধ্যে বিকৃতি ও পরিবর্তনের মতো গুনায় লিপ্ত হওয়ার দরুন তারা আল্লাহর গজব ও লানতেরও শিকার হবে।
ট্রান্সজেন্ডার আর হিজড়া কি এক?
ট্রান্সজেন্ডার মতাবলম্বীরা দুটোকে এক হিসেবে উপস্থাপন করে শব্দের মারপ্যাঁছে
সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সমকামিতার এজেন্ডা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবিকভাবে হিজড়া আর ট্রান্সজেন্ডার এক নয়।
হিজড়া বলতে বোঝানো হয় এমন মানুষকে, জন্মগতভাবে যার মধ্যে পুরুষ ও নারী উভয়ের চিহ্ন বিদ্যমান থাকে। পক্ষান্তরে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি হলো, জন্মগতভাবে সে পুরুষ কিংবা নারী। কিন্তু কোনো কারণে সে নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের মনে করে। যেমন- কোনো পুরুষ নিজেকে নারী মনে করল অথবা কোনো নারী নিজেকে পুরুষ মনে করল; আর এর ভিত্তিতেই তাকে ভিন্ন লিঙ্গের ঘোষণা করা ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি।
ইসলামী শরীয়তে ট্রান্সজেন্ডারের বিধান
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘আমি (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে’। (সুরা ত্বিন, আয়াত- ৪)।
মহান আল্লাহ মানুষকে যে স্বাভাবিক দেহাবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সেটাই তার জন্য উৎকৃষ্ট নিয়ামত। ইসলামী বিধি-বিধানের বাইরে গিয়ে একে পরিবর্তন-পরিবর্ধনের অধিকার কারোর নেই।
পুরুষের নারীর বেশ ধারণ এবং নারীর পুরুষের বেশ ধারণ স্বভাববিরুদ্ধ কাজ। এর ফলে অশান্তির দুয়ার খুলে যায় এবং সমাজে উচ্ছৃংখলতা ও বেহায়াপনা ছড়িয়ে পড়ে। শরীয়তে এ জাতীয় কাজকে হারাম গণ্য করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনের অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির পরিবর্তন-পরিবর্ধনকে শয়তানের কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে (শয়তান) বলে, আমি অবশ্যই তোমার (আল্লাহর) বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেব। আমি তাদের পথভ্রষ্ট করবোই; তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করবো। আমি তাদের নিশ্চয়ই নির্দেশ দেবো, আর তারা পশুর কর্ণোচ্ছেদ করবেই এবং তাদের নিশ্চয়ই নির্দেশ দেব, আর তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। (আল্লাহ বলেন) আল্লাহর পরিবর্তে কেউ শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করলে সে স্পষ্টভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। (সূরা নিসাঃ আয়াত -১১৯)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) নারীর বেশধারী পুরুষদের এবং পুরুষের বেশধারী নারীদের অভিসম্পত করেছেন’। (তিরমিযী, হাদিস- ২৭৮৫)।
অতএব আল্লাহর সৃষ্ট অবয়বে নিজের বিকৃত রুচি ও অসুস্থ চিন্তা-ভাবনার কারণে পরিবর্তন ঘটানো মহান রবের সঙ্গে নাফরমানি ও ধৃষ্টতা দেখানোর নামান্তর।
মহান আল্লাহ দেশ ও জাতিকে এই ভয়ংকর ফেতনা থেকে হেফাজত করুন।(আমিন)
লেখকঃ রাশেদুল ইসলাম ফতুয়া বিভাগ, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা, (আকবর কমপ্লেক্স) মিরপুর ১
এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0