ইসলাম

জাহান্নামের অন্ধকার

হাদীস ঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান:

أوْقِدَ عَلَى النَّارِ اَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى أَبْيَضَتْ ثُمَّ أُوْقِدَ عَلَيْهَا أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى اِحْمَرَّتْ ثُمَّ أُوْقِدَ عَلَيْهَا أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى اِسْوَدَّتْ فَهِيَ سَوْدَاءُ كَاللَّيْلِ الْمُظْلِمِ .

জাহান্নামকে এক হাজার বছর যাবৎ দগ্ধ করা হয়েছে, ফলে তার আগুন সাদা হয়ে গিয়েছে। এরপর আবারও এক হাজার বছর জ্বালানো হয়েছে, ফলে তা লাল হয়ে গিয়েছে। এরপর আবারও এক হাজার বছর জ্বালানো হয়েছে, ফলে তা একেবারে গাঢ় কাল হয়ে গিয়েছে। অতএব, জাহান্নাম রাতের মতই অন্ধকার । —ইবনে মাজাহ্ ও তিরমিযী

হাদীস ঃ হযরত আবু বকর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান- জাহান্নামের আগুন তোমাদের দুনিয়ার আগুন অপেক্ষা সত্তরগুণ বেশি প্রখর হবে। —বাযযার

হাদীস ঃ হযরত আনাস (রাযিঃ) বলেন, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের আগুনের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন—

إِنَّهَا لَجُزْءُ مِنْ سَبْعِينَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ وَ مَا وَصَلَتْ إِلَيْكُمْ حَتَّى أَحْسَبَهُ قَالَ حَتَّى نُضِحَتْ بِالْمَاءِ مَرَّتَيْنِ لَتُضِيئَ لَكُمْ وَ نَارُ جَهَنَّمَ سَوْدَاءُ مُظْلِمَةٌ –

দুনিয়ার এ আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ । এ আগুন তোমাদের পর্যন্ত ততক্ষণ পর্যন্ত পৌঁছেনি, যতক্ষণ পর্যন্ত তাতে দুই বার পানি না ঢালা হয়েছে। পানি এ জন্য ঢালা হয়েছে যে, যাতে তা তোমাদের জন্য আলো দায়ক হয়। কারণ, জাহান্নামের আগুন তো খুবই কাল।

হাদীস ঃ হযরত উমর (রাযিঃ) হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, জাহান্নামের আগুনকে তিন হাজার বছর পর্যন্ত জ্বালানো হয়েছে। এখন তা এত বেশি কাল যে, তার কোন আঙ্গার বা কোন শিখা আলো দিতে পারে না। (অর্থাৎ, যদি তার দ্বারা অন্য কিছুতেই আগুন ধরানো হয়, তাহলে তাতেও কাল আগুনই ধরবে।) —ইবনে আবীদ্দুয়া

আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান— اَوْ كَظُلُمَاتٍ فِي بَحْرِ لُجَيَ يَغْشَاهُ مَوْجٌ مِنْ فَوْقِهِ مَوْجٌ مِنْ فَوْقِهِ سَحَابٌ ظُلُمَاتٌ بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ إِذَا أَخْرَجَ يَدَهُ لَمْ يَكْدَ يَرْبهَا وَ مَنْ لَّمْ يَجْعَلِ اللَّهُ لَهُ نُوْرًا فَمَا لَهُ مِنْ نُوْرٍ –

অথবা (তাদের কর্ম) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায় । যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ। যার উপর ঘোর কাল মেঘ রয়েছে। একের উপর এক অন্ধকার। এমনকি সে হাত বের করলে তা আদৌ দেখতে পাবে না। আল্লাহ্ তা’আলা যাকে জ্যোতি দেন না, তার কোন জ্যোতিই নেই।—সূরা নূর-৪০

কাফেররা পাঁচটি অন্ধকারে বসবাস করবে

হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাযিঃ) আলোচ্য আয়াত সম্পর্কে কাফেরদের উপমা দেয়ার পর বলেন, কাফেররা পাঁচটি অন্ধকারে বসবাস করবে। (১) তাদের কথোপকথন হবে অন্ধকারে। (২) তাদের কাজ-কর্ম হবে অন্ধকারে। (৩) তাদের প্রবেশ হবে অন্ধকারে। (৪) তাদের নির্গমনও হবে অন্ধকারে। (৫) তাদের অবস্থান হবে আগুনের অন্ধকারে।

রবী ইবনে আনাস (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা দুনিয়ার আগুনকে দুনিয়াবাসীদের জন্য আলো এবং প্রয়োজনীয় বস্তু হিসাবে তৈরী করেছেন। আর জাহান্নামের আগুন বানিয়েছেন কাল ও আলকাতরার ন্যায় করে ।

যাহ্হাক (রহঃ) বলেন, জাহান্নাম নিজেও কালো, তার পানিও কালো, তার গাছগুলোও কালো এবং তার সবকিছুই কালো হবে। আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ ফরমান— كَأَنَّمَا أُغْشِيَتْ وُجُوهُهُمْ قِطَعًا مِّنَ اللَّيْلِ مُظْلِمًا أُولبِكَ اَصْحَابُ النَّار هُمْ فِيْهَا خَالِدُونَ –

তাদের মুখমণ্ডলগুলোকে যেন ঢেকে দেয়া হয়েছে আধার রাতের টুকরো দিয়ে । এরা হল দোযখবাসী । তারা সেখানেই থাকবে অনন্তকাল। —সূরা ইউনুস-২৭

يَوْمَ تَبْيَضُ وُجُوْهُ وَ تَسْوَدُّ وُجُوْهُ فَلَمَّا الَّذِينَ اسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أكَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيْمَانِكُمْ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ

সেদিন কোন কোন মুখমণ্ডল হবে উজ্জ্বল এবং কোন মুখমণ্ডল হবে কালো। বস্তুত যাদের মুখ কালো হবে, তাদের বলা হবে তোমরা কি ঈমান আনার পর কাফের হয়ে গিয়েছিলে? এবার সেই কুফুরীর বিনিময়ে আযাবের স্বাদ আস্বাদন কর । —সূরা আলে ইমরান-১০৬

কোন কোন সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, নাফরমান মু’মিনদের উপরও যখন আগুন জ্বালানো হবে, তখন তারা কয়লার মত কালো হয়ে যাবে।

তথ্যসূত্র:

বই :জাহান্নামের বর্ণনা মূল :

আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ এমদাদুল্লাহ আনওয়ার

অনুবাদ :মাওলানা নাজমুল হুদা মিরপুরী

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *