ইবাদত

যেসব স্থানে প্রস্রাব-পায়খানা করা নিষেধ

হাদীসের ভাষ্যানুসারে যেসব স্থানে প্রস্রাব-পায়খানা করা নিষেধ, সেসব স্থান হলো:

ক। কিবলামুখী অথবা কিবলাকে পিছনে ফেলে ইস্তিনজা করা নিষেধ।

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. এর বাণী: عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا جَلَسَ أَحَدُكُمْ عَلَى حَاجَتِهِ، فَلَا يَسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ، وَلَا يَسْتَدبِرُهَا .

হযরত আবু হুরাইরা রা. নবী করীম সা. থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ইসতিনজা করতে বস, তবে সে যেন কাবাকে মুখ করে কিংবা পেছনে রেখে না বসে।”(মুসলিম; হাদীস ২৬৫)

অন্য হাদীস থেকে জানা যায়, عَنْ مَعْقِلِ بْنِ أَبِي مَعْقِلِ الْأَسَدِيِّ، قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَتَيْنِ بِبَوْلٍ أَوْ غَائِطٍ.

“হযরত মাকাল ইবনে আবী মাকাল আল-আসাদী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. উভয় কিবলামুখী হয়ে প্রস্রাব-পায়খানা করতে নিষেধ করেছেন ।(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১০)

খ. মানুষের চলাচলের রাস্তায়

গ. ফলদার গাছের নিচে

ঘ.ওযু-গোসলের স্থানে

ঙ. বিশ্রাম করার স্থানে

চ. আবদ্ধ পানিতে

ছ. প্রবাহমান নহরে

এতদসম্পর্কিত হাদীসের বাণী হলো,

১.হযরত আবূ হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, ‘দুটি লা’নত বা অভিসম্পাত (এর কাজ) হতে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখ। যে ব্যক্তি লোকের চলার পথে বা লোকের (বিশ্রাম করার) ছায়াতে পায়খানা করে (অর্থাৎ এরূপে লা’নতের উপযোগী কার্যাবলি হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখ)। (মুসলিম, হাদীস নং : ২৬৯)

(২) আবূ দাউদ শরীফের বর্ণনায়; মুয়ায রা. হতে বর্ণিত, পানিতে অবতরণের ‘ঘাটে والطواردশব্দটিও বর্ণনা করেছেন। আবু দাউদের শব্দগুলো নিম্নরূপ : ‘তিনটি লা’নতের ক্ষেত্রে ঘাটে (ওযু-গোসলের স্থান), সাধারণের চলার পথে ও ছায়ায় পায়খানা করা হতে।’

(৩) ইমাম আহমদ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণনা করেছেন, ‘পানি আবদ্ধ থাকে এমন ক্ষেত্রে (পায়খানা করা নিষেধ)। এ দুটি হাদীস দুর্বল সনদের।

(৪) এবং ইমাম তাবারানী ইবনে ওমর রা-এর বর্ণিত একটি দুর্বল সনদ যুক্ত হাদীসের উল্লেখ করছেন। তাতে আছে ‘ফলবান বৃক্ষের নিচে ওপ্রবাহমান নহরের পাড়ে পায়খানা করা নিষেধ।’

জ. গর্তের ভেতর

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَرْجِسَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى أَنْ يُبال في الجُحْرِ

“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সারজিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নবী করীম সা. গর্তের মধ্যে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং : ২৯)

ঝ. কবরস্থানে

ঞ। দাঁড়িয়ে বা হেঁটে হেঁটে :

দাঁড়িয়ে বা হেঁটে হেঁটে প্রস্রাব করা নিষেধ। এ প্রসঙ্গে হাদীসের বাণী, عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: «مَنْ حَدَّثَكُمْ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بال قَائِمًا فَلَا تُصَدِّقُوهُ؛ مَا كَانَ يَبُولُ إِلَّا جَالِسًا . “হযরত আয়িশা রা. বলেন, যদি কেউ তোমাদেরকে বলে যে, রাসূলুল্লাহ সা. দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতেন, তাহলে তোমরা তা সত্য বলে মানেব না। তিনি কখনো না বসে প্রস্রাব করতেন না । (নাসাঈ, হাদীস নং : ২৯। তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ। হাদীসটির সনদ হাসান।)

عَنْ عُمَرَ قَالَ: مَا بُلْتُ قَائِمًا مُنْذُ أَسْلَمْتُ

“হযরত ওমর রা. বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর থেকে আমি কখনেও দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করিনি ৷”(বাযযার, হাদীস নং : ১৪৯। সনদ নির্ভরযোগ্য)

তবে বিশেষ প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা জায়েয; এ প্রসঙ্গে হাদীসের বাণী ,عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ : أَتَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم سُبَاطَةٌ قَوْمٍ فَبَالَ قَائِماً

হযরত হুযায়ফা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এক এলাকার আবর্জনা ফেলার স্থানে গমন করেন । অতঃপর তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেন। (বুখারী, হাদীস নং : ২২৪। [গ্রন্থকার বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. সম্ভবত কোনো ওযরের কারণে এভাবে নাভিতে প্রস্রাব করেন। অথবা এভাবে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা যে মুবাহ তা দেখানোর জন্য তিনি দাঁড়িয়ে করেন। আল্লাহই সর্বোত্তম জ্ঞাতা।)

ট.ঘরে বা বিছানায়।

ঠ. মসজিদের আঙ্গিনায় বা ঈদগাহে ।

ড. শক্তস্থানে প্রস্রাব-পায়খানা না করা :

শক্ত স্থান অর্থাৎ এমন স্থানে প্রস্রাব-পায়খানা না করা যেখানে প্রস্রাব করার কারণে পোশাকে ও শরীরে প্রস্রাবের ছিটা লাগতে পারে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা.-এর বাণী, عن أبي هريرةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَنزِهُوا مِن البَولِ, فَإِنَّ عَاَمَةَ عَذَابِ القَبْرِ مِنْهُـ

“আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, প্রসাবের ছিটা হতে নিজেকে পবিত্র রাখ। কেননা, সাধারণত কবরের আযাব এরই ফলে হয়ে থাকে। দারাকুতনী,৭/১২৮

ولِلْحَاكِمِ : أَكثرُ عَذَابِ الْقَبْرِ مِنَ الْبُولِ وَهُوَ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ

মুসতাদরাক হাকেমের বর্ণনায় আছে, ‘কবরের অধিকাংশ আযাব প্রসাবের ছিটা লাগার জন্য হয়।’ হাদীসের এই অংশটির সনদ সহীহ।

তথ্যসূত্র :

বই: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ১০০০ সুন্নাত

লেখক: শাইখ খালীল আল হোসেনান

অনুবাদক: মাওলানা ডক্টর শাহ্‌ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *