কাউকে কাফের ফাতওয়া প্রদানে সতর্কতা অবলম্বন
কোনো ব্যক্তিকে কুফরীর ফাতওয়া প্রদানে ইমাম আবু হানীফা রহ. চূড়ান্ত পর্যায়ের সতর্কতা অবলম্বন করতেন। এ ব্যাপারে তিনি বলতেন, যদি কারো ব্যাপারে কাফের বলার নিরানব্বইটি কারণ পাওয়া যায় আর মুমিন বলার মাত্র একটি কারণ বাকী থাকে, তাহলে তাকে মুমিনই বলা হবে।
এ ব্যাপারে তাঁর একটি ঘটনা
ইমাম আহমদ বিন ইউনুস, যায়িদা থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মজলিসে এসে বললো, হে আমাদের ইমাম! সেই ব্যক্তির সম্পর্কে আপনার ফাতওয়া কী? ১. যে নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে, কিন্তু সে জান্নাতের আশা রাখে না। ২. জাহান্নামের ভয় করে না । ৩. নিঃসংকোচে মৃতপ্রাণী খায় ৷ ৪. নামায পড়ে কিন্তু রুকু-সিজদা করে না । ৫. না দেখেই সাক্ষ্য প্রদান করে । ৬. ফিতনা-ফাসাদ পছন্দ করে । ৭. হক তার নিকট অপছন্দনীয়। ৮. আল্লাহর রহমত থেকে পালিয়ে বেড়ায় । ৯. ইয়াহুদী-নাসারাদের কথা বিশ্বাস করে।
বাহ্যিকভাবে উপরোক্ত কারণগুলো কাফের হওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা রহ. তাকে কাফের ফাতওয়া দিলেন না। তিনি জানতেন, ওই ব্যক্তির সাথে প্রশ্নকারীর শত্রুতা আছে। তিনি বললেন, ভাই তুমি আমাকে তার সম্পর্কে প্রশ্ন করছো, অথচ তুমি তার ব্যাপারে সম্যক অবগত আছো।
লোকটি বললো, না, আমি তার চাইতে নিকৃষ্ট ব্যক্তি আর কাউকে দেখি না। ইমাম আযম রহ. তাঁর ছাত্রদের বললেন, তোমরা তার ব্যাপারে কী ফাতওয়া দেবে? তারা বললো, সে তো খুবই খারাপ লোক, তার মধ্যে যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো তো কাফেরের গুণ।
ইমাম আবু হানীফা রহ. বললেন, আল্লাহর কসম, সে একজন আল্লাহর ওলী। প্রশ্নকারীকে বললেন, দেখো ভাই! আল্লাহর বান্দাদের সবসময় যথাসাধ্য মুমিন রাখার চেষ্টা করতে হবে। তার কার্যক্রম ও কথাবার্তাকে ভালো অর্থে প্রয়োগ করতে হবে। তাই আমার মতে সে ব্যক্তি মুমিন। আর উল্লিখিত বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা হচ্ছে,
১. আল্লাহকে পাওয়ার আশা তার প্রবল। আর আল্লাহকে পাওয়ার আশা যার প্রবল, সে কেন জান্নাতের তামান্না করবে?
২. সে ভয় করে আগুনের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে। তাই সে জাহান্নামের আগুনকে ভয় করে না ৷
৩. মৃতপ্রাণী খায়, মানে সে মাছ খায় ৷
৪. ‘নামায পড়ে কিন্তু রুকু-সিজদা করে না’ এর অর্থ হচ্ছে, সে জানাযার নামায পড়ে ৷
৫. ‘না দেখেই সাক্ষ্য প্রদান করে’ এর মানে হচ্ছে, সে তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করে। অথচ সে আল্লাহ এবং তার রাসূলকে দেখেনি।
৬. তার কথা ‘ফিতনা পছন্দ করে’ এর মধ্যে ফিতনা মানে হচ্ছে সন্তান ও সম্পদ। পবিত্র কুরআন এগুলোকে ফিতনা বলা হয়েছে ।
৭. ‘হক তার নিকট অপছন্দনীয়।’ মৃত্যু হচ্ছে হক । ইবাদতের প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে ৷
৮. ‘আল্লাহর রহমত থেকে পালিয়ে বেড়ায়।’ বৃষ্টি হচ্ছে আল্লাহর রহমত, সেই রহমত থেকেই সে পালিয়ে বেড়ায় ৷
৯. ‘ইয়াহুদী-নাসারাদের কথায় বিশ্বাস করে । তাদের সে কথা হচ্ছে কুরআনের বাণী— وَقَالَتِ الْيَهُودُ لَيْسَتِ النَّصَارَى عَلَى شَيْءٍ وَقَالَتِ النَّصَارَى لَيْسَتِ الْيَهُودُ عَلَى شَيْءٍ.
‘ইয়াহুদীরা বলে, নাসারারা কোনো ভিত্তির উপর নেই এবং নাসারারা বলে, ইয়াহুদীরা কোনো ভিত্তির উপর নেই তাদের এই কথাকেই সে বিশ্বাস করে। আর এরূপ বিশ্বাস করাটাই প্রকৃত ঈমান। প্রশ্নকারী এবং উপস্থিত লোকজন ইমাম আবু হানীফা রহ. এর জবাব শুনে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলো ।
তথ্যসূত্র:
বই : ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. এর ঈমানদীপ্ত গল্প
লেখক : মুফতি মাহফুজ মোসলেহ