কাজী ইবনে আবি লায়লার সাথে বিতর্ক
আব্বাসী খলীফা মানসুর ইলমপ্রিয় মানুষ ছিলেন। মাঝেমধ্যে তার দরবারে বিভিন্ন ইলমী বিষয়ে মুনাযারা হতো। ঐতিহাসিকগণ বর্ণনা করেন, একবার খলীফার আহ্বানে কাজী ইবনে আবী লায়লা রাজদরবারে উপস্থিত হলেন। ইমাম আবু হানীফা রহ.-কেও ডাকা হলো। সকলের উপস্থিতিতে একটি মাসআলা উত্থাপন করা হলো ।
মাসআলাটি হচ্ছে, যদি বিক্রেতা ক্রেতাকে বলে, তুমি আমার নিকট থেকে যে পণ্য ক্রয় করেছো, তার সকল দোষ-ত্রুটি এবং দায়- দায়িত্ব থেকে আমি মুক্ত। এখন ইচ্ছা হলে নিতে পারো, ইচ্ছা না হলে, নাও নিতে পারো। এ কথার উপর ক্রয়-বিক্রয় হওয়ার পর ক্রেতা যদি কোনো ত্রুটি পায়, তাহলে কি সে পণ্য ফেরত দিতে পারবে?
ইমাম আবু হানীফা রহ. বললেন, বিক্রেতার পক্ষ থেকে এই ঘোষণার পর ক্রেতার আর ফেরত দেয়ার অধিকার থাকবে ন ।
কিন্তু কাজী ইবনে আবী লায়লা রহ. বললেন, পণ্যের ত্রুটিযুক্ত স্থানগুলোতে হাত রেখে নির্দিষ্ট করে দেখিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় শুধু মুখে বলার দ্বারা বিক্রেতা দায়মুক্ত হবে না। শুরু হলো ইলমী বিতর্ক। প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতের পক্ষে দলীল পেশ করছিলেন। খলীফা মানসুর এবং রাজদরবারের অন্য সকলে অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে এই বিতর্ক শুনছিলেন।
কাজী ইবনে আবী লায়লা রহ. যখন কিছুতেই ইমাম আবু হানীফা রহ. এর অভিমত সমর্থন করছিলেন না তখন ইমাম আবু হানীফা রহ. বললেন, আচ্ছা বলুন তো, কোনো সম্ভ্রান্ত মহিলা তার এমন গোলাম বিক্রি করতে চাচ্ছে, যার লিঙ্গে কুষ্ঠরোগ রয়েছে, এমতাবস্থায় আপনি কি এই ভদ্র মহিলাকে এই নির্দেশ দেবেন যে, সে গোলমের ত্রুটিযুক্ত স্থানে হাত রেখে ক্রেতাকে দেখিয়ে দিতে হবে?
কাজী ইবনে আবী লায়লা রহ. বিতর্কের ঝোঁকে সাথে সাথে বলে ফেললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই । ত্রুটিযুক্ত স্থানে হাত রেখে অবশ্যই ক্রেতাকে দেখিয়ে দিতে হবে।
কাজী ইবনে আবী লায়লা রহ. এর এই কথা শুনে উপস্থিত সকলে হেসে উঠলেন। ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন, খলীফা মানসুর এ ফাতওয়ায় কাজী ইবনে আবী লায়লা রহ. এর উপর অনেক রাগ করেছিলেন।
তথ্যসূত্র:
বই : ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. এর ঈমানদীপ্ত গল্প
লেখক : মুফতি মাহফুজ মোসলেহ