মূর্খের প্রশ্নের জবাব
খলীফা মানসুরের একটি গোলাম ছিলো, যাকে তিনি খুবই গুরুত্ব দিতেন। তার সাথে খলীফার খুবই সখ্যতা ছিলো। সে গোলাম ইমাম আবু হানীফা রহ. এর সমালোচনা করতো এবং তাঁর গীবত করে বেড়াতো। খলীফা যদি কখনো ইমাম আবু হানীফা রহ. এর প্রশংসা করতো, তার সহ্য হতো না। উপস্থিত ইমাম আবু হানীফা রহ. এর বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা বানিয়ে একটি দোষ বলে দিতো ।
একবারের ঘটনা, সে গোলাম খলীফা মানসুরকে বললো, জাঁহাপনা ! আপনাকে দেখি, ইমাম আবু হানীফা রহ. এর খুব প্রশংসা করেন, বাস্তবেই যদি সে বড় আলেম হয়ে থাকে, তাহলে আমি তাকে তিনটি প্রশ্ন করবো, দেখি সে প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারে কি না?
খলীফা মানসুর বললেন, ঠিক আছে। যদি ইমাম আবু হানীফা রহ. তোমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারেন, তাহলে তুমি রক্ষা পাবে না।
এ ঘটনার পর কোনো প্রয়োজনে ইমাম আবু হানীফা রহ. খলীফার দরবারে গেলেন। গোলাম খলীফার অনুমতি নিয়ে ইমাম আবু হানীফা রহ.-কে বললো, জনাব! আপনি তো সকল মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন। এবার আমার কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিন তো দেখি!
ইমাম আবু হানীফা রহ. বললেন, বলো, তোমার কী প্রশ্ন?
গোলাম বললো, জনাব! বলুন তো দুনিয়ার ঠিক মধ্যখান কোনটি?
এমন মূর্খতাপূর্ণ প্রশ্নের কী জবাব দেবে ইমাম আযম! তাই তিনি বললেন, দুনিয়ার ঠিক মধ্যখান হচ্ছে সে জায়গা, যেখানে তুমি বসে আছো ৷ ইমাম আবু হানীফা রহ. এর এ জবাব তো সে প্রথ্যাখ্যান করতে পারবে না। কেননা, এ বিষয় তো স্পষ্ট যে, পৃথিবী হচ্ছে গোলাকার, তাই তার যেকোনো স্থানই মধ্যখান হতে পারে ।
গোলামটি দ্বিতীয় প্রশ্ন করলো, পৃথিবীর যতো সৃষ্টি আছে, তার মধ্যে মাথা বিশিষ্ট সৃষ্টি বেশি না পা বিশিষ্ট?
ইমাম আবু হানীফা রহ. আগের মতোই অবলীলায় বললেন, পা বিশিষ্ট সৃষ্টির সংখ্যা বেশি।
লোকটির তৃতীয় প্রশ্ন, পৃথিবীতে নারীর সংখ্যা বেশি ছিলো, না পুরুষের সংখ্যা?
ইমাম আবু হানীফা রহ. বললেন, পুরুষও অনেক, নারীও কম নয়। কিন্তু বলো দেখি, তুমি পুরুষ না নারী? যেহেতু সে ছিলো খাসী হওয়া গোলাম, তাই সে খুবই লজ্জিত হলো। খলীফা তাকে ধমক দিয়ে বললেন, ভবিষ্যতে আর ইমাম আবু হানীফা সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করবে না।
তথ্যসূত্র:
বই : ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. এর ঈমানদীপ্ত গল্প
লেখক : মুফতি মাহফুজ মোসলেহ