ইসলাম

নামাযের ৫১টি সুন্নাত

দাঁড়ানোর মধ্যে ১১টি, কিরাআতে ৭টি, রুকূতে ৮টি, সিজদায় ১২টি, বৈঠকে ১৩টি।

দাঁড়ানো অবস্থার সুন্নাত ১১টি

১. তাকবীরে তাহরীমার সময় সোজা হয়ে দাঁড়ানো। অর্থাৎ মাথা না ঝুঁকানো। -শামী, ত্বাহতাবী

২. পায়ের আঙ্গুলগুলো কেবলার দিকে রাখা, দুই পায়ের মাঝখানে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁকা রাখা মুস্তাহাব। -মারাকিল ফালাহ ২৬২, নাসাঈ, হাদীস নং- ৮৯২, আলমগীরি ১/৭৩

৩. তাকবীরে তাহরীমা বলার পূর্বে পুরুষদের উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানো এবং মহিলাদের উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো সুন্নাত। ওযরের অপরাগতার অবস্থায় পুরুষরাও কাঁধ পর্যন্ত উঠালে কোনো অসুবিধা নেই। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৩০৪, বেহেশতী জেওর ২/৯৪

৪. মুক্তাদির তাকবীরে তাহরীমা ইমামের তাকবীরে তাহরীমার পরক্ষণেই হওয়া। -বুখারী, হাদীস নং- ৭৩৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৪১৪-৪১৫, মারাকিল ফালাহ ২৫৭

৫. তাকবীরে তাহরীমার সময় হাতের তালু কেবলার দিকে রাখা। -শামী

৬. হাতের আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় খোলা রাখা। -শামী ১/৩৫৬

৭. ডান হাতের তালু বাম হাতের তালুর পিঠের উপর রাখা। তাহতাবী ১৪০

৮. ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ও কনিষ্ঠ আঙ্গুল দ্বারা বাম হাতের কব্জি পেঁচিয়ে ধরা। -তাহতাবী ১৪১

৯. মধ্যের তিন আঙ্গুল বাম হাতের কব্জির উপর বিছিয়ে রাখা। -তাহতাবী

১০. নাভির নিচে হাত বাঁধা। -আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭৫৬, আলমগীরি, ১/৭৩

১১. ছানা পড়া। -সহীহ মুসলিম ১/১৭২; ই’লাউস সুনান ২/১৭৪ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَه غَيْرُكَ

ইসলাহ : নামাযে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে ঘাড় ঝুঁকিয়ে থুতনিকে বুকের সঙ্গে লাগিয়ে রাখে যা মাকরূহ। বিনা কারণে সিনা ঝুঁকিয়ে দাঁড়ানো দুরস্ত নয়। তাকবীরে তাহরীমা বলা ফরয। আর এই তাকবীর বলার পূর্বে কান পর্যন্ত হাত উঠানো ভিন্ন একটি সুন্নাত। সঠিক নিয়ম হচ্ছে,হাত উত্তোলনের এই কাজটি তাকবীর বলার পূর্বেই সম্পন্ন করা। অর্থাৎ কানের লতি বরাবর হাত উত্তোলন ও তাকবীর উভয়টি আদায় করা সুন্নাত। কিন্তু অনেককে দেখা যায় তাকবীরে তাহরীমা বলার মাঝে বা পরে হাত উঠায়, আবার অনেকে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর হাত সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে তারপর বাঁধে। এ-রকম করা সম্পূর্ণরূপে ভূল ।

কিরা’আতের সুন্নাত ৭টি

১. তা’আওউয, অর্থাৎ “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতোয়ানির রজিম” পড়া। -তাহতাবী ১৪১

২. তাসমিয়া অর্থাৎ “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” এটা পড়া। -নাসাঈ, হাদীস নং- ৯০৫

৩. সূরা ফাতেহা পড়ার পর আস্তে ‘আমীন’ বলা। -বুখারী, হাদীস নং- ৭৮০

৪. ফজর ও যোহরে তিওয়ালে মুফাসসাল অর্থাৎ সূরা হুজরাত থেকে সূরা বুরূজ পর্যন্ত। আসর ও ইশায়

৫. আওসাতে মুফাসসাল অর্থাৎ সূরা ত্বারিক থেকে সূরা লাম-ইয়াকুন পর্যন্ত এবং মাগরিবে কিসারে মুফাসসাল অর্থাৎ সূরা যিলযাল থেকে সূরা নাস পর্যন্ত সূরাসমূহ থেকে কোনো সূরা পড়া। তবে যোহরের নামাযে আওসাতে মুফাসসাল পড়ারও অনুমতি আছে। -মারাকিল ফালাহ ২৬৩

৬. ফজরের প্রথম রাকা’আতকে দ্বিতীয় রাকা’আত অপেক্ষা লম্বা করা। -ত্বাহতাবী ১৬৪

৭. কিরাআত অতি ধীরে অথবা অতি দ্রুত গতিতে না পড়া; বরং মধ্যম গতিতে পড়া। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৭৩৩

৮. ফরয নামাযের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাআতে সূরা ফাতিহা পড়া। –ত্বাহতাবী

কিরাআত আস্তে ও জোরে পড়ার বিধান

নামাযে কিরা’আত আস্তে পড়ার ক্ষেত্রেও এতটুকু আওয়াজে পড়া জরুরী যেন নিজ কানে শুনতে পাওয়া যায়; অন্যথায় তা কিরাআত হিসেবে গণ্য হবে না। আর জোরে কিরাআতের পরিমাণ হলো- কমপক্ষে এমন আওয়াজে পড়া যেন পাশে কোনো ব্যক্তি থাকলে সে শুনতে পায়। -আল-বিনায়া ২/৩৫২

বি.দ্র.: তবে মুসল্লীদের অবস্থা বা পরিস্থিতির কারণে কোনো কোনো সময় সংক্ষিপ্ত করা বা অন্য কোনো সূরাও পড়া যেতে পারে।

রুকুর সুন্নাত ৮টি

১. রুকূতে যাওয়ার সময় বা বলা। -বুখারী, হাদীস নং – ৭৮৯

২. রুকূতে উভয় হাত দ্বারা হাঁটুকে শক্ত করে ধরা। -বুখারী, হাদীস নং- ৭৯০

৩. হাঁটু ধরতে হাতের আঙ্গুলগুলো পরস্পর ফাঁক রেখে ধরা । -আবু দাউদ, হাদীস নং- ৭৯০

৪. পায়ের গোছা সোজা রাখা। -আবু দাউদ, হাদীস নং- ৮৬৩

৫. উভয় হাত সম্পূর্ণ সোজা রাখা, কনুই বাঁকা না করা। রুকূ অবস্থায় পিঠ বিছিয়ে বরাবর করে রাখা। তা’লীমুস সুন্নাহ • ১৬৯

৬. মাথা, পিঠ ও কোমর এক বরাবর করে রাখা। -বুখারী, হাদীস নং- ৮২৮

৭. রুকুর মধ্যে কমপক্ষে তিনবার “সুববহানা রব্বিয়াল আযিম” বলা

৮. রুকূ থেকে মাথা উঠানোর সময় ইমাম উচ্চস্বরে سمع الله لمن حمده বলবে। মুক্তাদী নিম্নস্বরে ربنا لك الحمد বলবে।এবং একা নামায আদায়কারী উভয়টি নিম্ন সরে বলবে। রুকুর পর ভালোভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াবে ( ফতোয়ায়ে শামী: ২/২০১)

সিজদার সুন্নাত ১২টি

১ . তাকবীর বলতে বলতে সিজদায় যাওয়া। -বুখারী, হাদীস নং- ৮০৩

২. সিজদায় যাওয়ার সময় জমিনের উপর প্রথমে দুই হাঁটু রাখা । -নাসাঈ, হাদীস নং- ১০৮৯

৩. অতঃপর উভয় হাত রাখা । -মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ১৮৮৮২

  1. অতঃপর নাক বৃদ্ধাঙ্গুল বরাবর রাখা। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ১৮৮৮০

৫. অতঃপর কপাল রাখা। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ১৮৮৮০

৬. দুই হাতের মাঝখানে সিজদা করা। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৪০১

৭. সিজদা অবস্থায় রান থেকে পেট পৃথক রাখা। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ২৩৬৬২

৮. বাজু বগল থেকে আলাদা রাখা। -বুখারী, হাদীস নং- ৮০৭

৯. উভয় হাত কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত জমিনের উপর বিছিয়ে না রাখা ।

১০. সিজদার মধ্যে কমপক্ষে তিনবার سبحان ربي الاعلى বলা ।-বুখারী, হাদীস নং- ৮২২ —ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ৮৮৮

১১. সিজদা থেকে উঠার সময় তাকবীর বলা। (শামী: ২/২০৩)

১২. সিজদা থেকে উঠার সময় প্রথমে কপাল এরপর নাযক এরপর হাত এরপর হাটু উঠানো। (শামী: ২/২০৩)

টীকা : সিজদা অবস্থায় কপাল, নাক এই পরিমাণ দূরে রাখবে যাতে ঊরু সোজা থাকে, সামনে বা আপিছনে হেলে না যায়। তা’লীমুস সুন্নাহ • ১৭০

বসা অবস্থায় ১৩টি সুন্নাত :

১. ডান পায়ের পাতা খাড়া রেখে, বাম পায়ের পাতা বিছিয়ে তার উপর বসা। (মারাকিউল ফালাহ: ১/৩৬৬)

২. উভয় হাত উভয় উরুর উপর রাখা। (মারাকিউল ফালাহ : ১/৩৬৬)

৩. তাশাহহুদে اشهد ان لا اله বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুল উপরের দিকে উঠানো এবং الا الله বলার সময় ঝুঁকানো। (মারাকিউল ফালাহ: ১/৩৬৭)

৪. শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফ পড়া। (মারাকিউল ফালাহ : ১/৩৬৯)

৫. এরপর কুরআন-হাদীসে বর্ণিত যে কোন দোয়া পড়া।

৬. ডানে-বামে উভয় দিকে সালাম ফিরানো। (তাহতাবী আলাল মারাকী : ১/৩৭৩)

৭. ডান দিক থেকে সালাম শুরু করা। (মারাকিউল ফালাহ : ১/৩৭৩)

৮. ইমাম সাহেব সালাম দেয়ার সময় ফেরেশতা নেককার জ্বিন এবং উভয় দিকের মুক্তাদিদের সালাম দেয়ার নিয়ত করা । (মারাকিউল ফালাহ: ১/৩৭৩-৭৪)

৯. মুক্তাদীগণ সালাম ফেরানোর সময় ফেরেশতা, নেককার জ্বিন এবং ইমাম সাহেবকে সালাম দেয়ার নিয়ত করা । (তাহতাবী আলাল মারাকী : ১/৩৭৪)

১০. মুনফারিদ (একাকী নামায আদায়কারী) শুধু ফেরেশতাদেরকে সালামের নিয়ত করবে। (তাহতাবী আলাল মারাকী : ১/৩৭৫)

১১. মুক্তাদী ইমামের সাথে সাথে সালাম ফেরাবে। (মারাকিউল ফালাহ: ১/৩৭৫)

১২. দ্বিতীয় সালাম প্রথম সালামের তুলনায় নিচু আওয়াজে বলা। (মারাকিউল ফালাহ : ১/৩৭৫)

১৩. মাসবুক ইমামের নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। (মারাকিউল ফালাহ : ১/৩৭৫)

তথ্যসূত্র :

বই: নামায পড়ি বেহেশতের পথে চলি

লিখক: মাওলানা মুমিনুল হক জাদিদ

মুহতামিম: ফেনী জামিয়া ইসলামিয়া

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *