কুরআন ও হাদিসের আলোকে শিরকের ভয়াবহ পরিণতি:

শিরক ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বড় গুনাহ এবং এটি এমন অপরাধ যা বিনা তাওবায় কখনো ক্ষমা করা হয় না। শিরকের ফলে মানুষ ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যায় এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামের উপযোগী হয়ে পড়ে। নিচে কুরআন ও হাদিসের আলোকে শিরকের ভয়াবহ পরিণতি বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:

১. শিরক কখনো ক্ষমা করা হবে না (তাওবা ছাড়া)

আল্লাহ তাআলা বলেন:

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ

অর্থ ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এ ব্যতীত অন্য সব, যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। (আন্ নিসা : ৪৮)।

এ আয়াত স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, যদি কেউ শিরকের ওপর মৃত্যু বরণ করে, তবে সে কখনো ক্ষমা পাবে না।

২. শিরকের কারণে সব আমল ধ্বংস হয়ে যায়

আল্লাহ বলেন:

وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

“নিশ্চয়ই তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তী নবীদের প্রতি ওহি নাজিল করা হয়েছে যে, যদি তুমি শিরক করো, তাহলে তোমার সব আমল ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”(সুরা আজ-জুমার: ৬৫)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, যদি নবী-রাসূলগণও শিরক করতেন, তবে তাদের আমলও ধ্বংস হয়ে যেত। তাহলে সাধারণ মানুষের আমল ধ্বংস হওয়া আরও নিশ্চিত!

৩. শিরকের কারণে জান্নাত হারাম হয়ে যায়

আল্লাহ তাআলা বলেন:

إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ

“নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর জালিমদের (মুশরিকদের) কোনো সাহায্যকারী নেই।”(সুরা আল-মায়িদা: ৭২)

এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, মুশরিকদের জন্য জান্নাতের দরজা চিরতরে বন্ধ!

৪. শিরকের কারণে মানুষ জাহান্নামে স্থায়ীভাবে থাকবে

আল্লাহ বলেন:

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ… وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে, সে মহাপাপ করেছে।”(সুরা আন-নিসা: ৪৮)

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ

“যে সব মুশরিক ও আহলে কিতাব কুফরি করেছে, তারা জাহান্নামে যাবে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে থাকবে।” (সুরা আল-বাইয়্যিনা: ৬)

শিরক করা মানে আল্লাহর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা, যার শাস্তি চিরস্থায়ী জাহান্নাম।

৫. শিরক আল্লাহর প্রতি সবচেয়ে বড় অবিচার

আল্লাহ বলেন: إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ

“নিশ্চয়ই শিরক হলো মহা অন্যায়।” (সুরা লুকমান: ১৩)

এখানে শিরককে সবচেয়ে বড় জুলুম বলা হয়েছে, কারণ শিরক আল্লাহর অধিকারকে হরণ করে।

৬. শিরকের কারণে কিয়ামতের দিন মুশরিকদের ভয়ংকর পরিণতি হবে

হাদিসে এসেছে: রাসূল (ﷺ) বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে মারা যাবে, সে জাহান্নামে যাবে।” (সহিহ মুসলিম: ৯৩)

অন্য এক হাদিসে নবী (ﷺ) বলেন:“যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করল, তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (সহিহ বুখারি: ৪৪৯৭)

এ থেকে বোঝা যায়, শিরককারী কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।

৭. শিরককারী ব্যক্তির জন্য কবরের আজাব নিশ্চিত

হাদিসে এসেছে:

“নিশ্চয়ই কবর হচ্ছে আখিরাতের প্রথম ধাপ। যদি কেউ এই ধাপে সফল হয়, তবে তার পরবর্তী ধাপগুলো সহজ হয়ে যাবে। আর যদি এখানে ব্যর্থ হয়, তবে তার পরবর্তী ধাপ আরও কঠিন হবে।”

(তিরমিজি: ২৪৬০)

আরেক হাদিসে এসেছে: “কবরের শাস্তি অধিকাংশ মানুষ শিরকের কারণে ভোগ করবে।”

(মুসনাদ আহমদ: ২৩৫৬৮)

৮. শিরকের কারণে দোয়া কবুল হয় না

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে, আল্লাহ তার কোনো দোয়া কবুল করেন না।”

(সহিহ মুসলিম: ২৭৩০)

শিরকের কারণে মানুষ দুনিয়াতে বিপদে পড়লেও আল্লাহ তার সাহায্য করেন না।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

মুহাদ্দিস: মিরপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও জামিয়া মুহাম্মাদীয়া আরাবিয়া মাদরাসা কমপ্লেক্স

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *