ইসলাম

রাশি ও গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাব,রত্ন ও পাথরের প্রভাব, গণক, তাবীজ ও ঝাড় ফুঁক সম্বন্ধে আকীদা

রাশি বলা হয় সৌর জগতের কতকগুলো গ্রহ নক্ষত্রের প্রতীককে। এগুলো কল্পিত। এরূপ বারটি রাশি কল্পনা করা হয় যথাঃ মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ, ও মীন। এগুলোকে বিভিন্ন গ্রহ নক্ষত্রের প্রতীক সাব্যস্ত করা হয়েছে। জ্যোতিঃশাস্ত্র (অর্থাৎ, ফলিত জ্যোতিষ বা Astrology)-এর ধারণা অনুযায়ী এ সব গ্রহ নক্ষত্রের গতি, স্থিতি ও সঞ্চারের প্রভাবে ভবিষ্যত শুভ-অশুভ সংঘটিত হয়ে থাকে। নিউমারোলজি বা সংখ্যা জ্যোতিষের উপর ভিত্তি করে এই শুভ-অশুভ নির্ণয় তথা ভাগ্য বিচার করা হয়।

ইসলামী আকীদা অনুসারে গ্রহ নক্ষত্রের মধ্যে নিজস্ব কোন প্রভাব বা ক্ষমতা নেই। সুতরাং ভাগ্য তথা শুভ-অশুভ গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাবে ঘটে এই আকীদা রাখা শিরক। গ্রহ নক্ষত্রের মধ্যে আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ব এরূপ কোন প্রভাব থাকলে থাকতেও পারে কিন্তু তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। যা কিছু বলা হয় সবই কাল্পনিক। যদি প্রকৃতই এরূপ কোন প্রভাব থাকেও, তবুও তা আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ব গ্রহ নক্ষত্রের ক্ষমতা নয়। অতএব শুভ-অশুভ মৌলিকভাবে আল্লাহ্ই ইচ্ছাধীন ও তাঁরই নিয়ন্ত্রণে।

বর্তমান সুগে জ্যোতিষ শাস্ত্র বা Astrology-এর ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটা এবং এ ব্যাপারে বহু লোকের আকীদা ও আমলগত বিভ্রান্তি ঘটায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত একটি প্রবন্ধ পেশ করা হল।

গণক সম্বন্ধে আকীদা

গণকের ভবিষ্যৎ বাণীতে বিশ্বাস করা কুফুরী। কারণ নবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন : যে ব্যক্তি গণকের কাছে এল, অতঃপর সে যা বলে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করল, সে আল্লাহ কর্তৃক মুহাম্মাদের উপর নাযিলকৃত বিধি-বিধানের সাথে কুফুরী করল।

রত্ন ও পাথরের প্রভাব সম্বন্ধে আকীদা

মণি, মুক্তা, হিরা, চুনি, পান্না, আকীক প্রভৃতি পাথর ও রত্ন মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে, মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন ঘটাতে পারে- এরূপ বিশ্বাস রাখা মুশরিকদের কাজ, মুসলমানদের কাজ নয়। পূর্বেও বলা হয়েছে কোন পাথর (Stone) ভাগ্য বদলাতে পারে, কোন গ্রহকে খুশী করে তার অনুকূলে আনতে পারে-এরূপ বিশ্বাস করা শির্ক-এর পর্যায়ভুক্ত। তবে পাথরের কোন বিকিরণ ক্ষমতা (Radiative activity) যদি বৈজ্ঞানিক ভাবে শারীরিক উপকারে আসে বলে প্রমাণিত হয়, তবে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করায় কোন অসুবিধা নেই ।

তাবীজ ও ঝাড় ফুঁক সম্বন্ধে আকীদা

তাবীজ ও ঝাড়-ফুঁকে কাজ হওয়াটা নিশ্চিত নয়-হতেও পারে না হতেও পারে। যেমন দুআ করা হলে রোগ-ব্যাধি আরোগ্য হওয়াটা নিশ্চিত নয়-আল্লাহর ইচ্ছা হলে আরোগ্য হয় নতুবা হয় না। তদ্রূপ তাবীজ এবং ঝাড় ফুঁকও একটি দুআ এবং তাবীজের চেয়ে দুআ বেশী শক্তিশালী। তাবীজ এবং ঝাড় -ফুঁকে কাজ হলেও সেটা তাবীজ বা ঝাড় ফূকের নিজস্ব ক্ষমতা নয় বরং আল্লাহর ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়ে থাকে।

সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব তাবীজ ও ঝাড়-ফুঁকই এজতেহাদ এবং অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত, কুরআন ও হাদীছে যার ব্যাপারে স্পষ্ট বলা হয়নি যে, অমুক তাবীজ বা অমুক ঝাড়-ফুঁক দ্বারা অমুক কাজ হবে। অতএব কোন তাবীজ বা ঝাড়-ফুঁক দ্বারা কাঙ্খিত ফল লাভ না হলে কুরআন-হাদীছের সত্যতা নিয়ে কিছু বলার বা ভাবার অবকাশ নেই ৷

তাবীজ ও ঝাড়-ফুঁক কুরআন হাদীছের বাক্যাবলী এবং আল্লাহর আসমায়ে হুসনা দ্বারা বৈধ উদ্দেশ্যে করা হলে তা জায়েয। পক্ষান্তরে কোন কুফর শিরকের কথা থাকলে বা এরূপ কোন যাদু হলে তা দ্বারা তাবীজ ও ঝাড়-ফুঁক হারাম। এমনিভাবে কোন অবৈধ উদ্দেশ্য হাছিলের জন্য তাবীজ ও ঝাড়-ফুঁক করা হলে তা জায়েয নয়, যদিও কুরআন হাদীছের বাক্য দ্বারা তা করা হয়।

যেসব বাক্য বা শব্দ কিম্বা যেসব নকশার অর্থ জানা যায় না তা দ্বারা তাবীজ ও ঝাড়-ফুঁক করা বৈধ নয়।

কোন বিষয়ের তাবীজ বা ঝাড়-ফুঁকের জন্য কোন নির্দিষ্ট দিন বা সময় রয়েছে বা বিশেষ কোন শর্ত ইত্যাদি রয়েছে- এরূপ মনে করা ঠিক নয়।

তাবীজ বা ঝাড়-ফুঁকের জন্য কারও এজাযত প্রাপ্ত হওয়া জরুরী – এরূপ ধারণাও ভুল।

তাবীজ বা ঝাড়-ফুঁক দ্বারা ভাল আছর হলে সেটাকে তাবীজ দাতার বা আমলের বুযুর্গী মনে করা ঠিক নয়। যা কিছু হয় আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়।

তাবীজ ও ঝাড়-ফুঁক কুরআন হাদীছের বাক্যাবলী দ্বারা বৈধ উদ্দেশ্যে করা হলে তা জায়েয।

বর্তমান যুগের গায়রে মুকাল্লিদ ও সালাফীগণ তাবীজ কবজকে নিষিদ্ধ, এমনকি শিরক বলে আখ্যায়িত করেন। এ প্রসঙ্গে ২য় খণ্ডে ৪৩৮ – ৪৪৪ পৃষ্ঠায় আমাদের বিস্তারিত বক্তব্য ও দলীল-প্রমাণ এবং তাদের দলীল-প্রমাণ খণ্ডনসহ আলোচনা পেশ করা হয়েছে।

তথ্য সূত্রঃ

কিতাবঃ ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ

লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দিন শায়খুল হাদিস, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, তাঁতিবাজার, ঢাকা – ১১০০। মুহাদ্দিছ, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া, ৩৩২, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা ১২৩৬

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *