ইবাদত

রমজানের শেষ দশকের আমল

হযরত আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রমাযানের শেষ দশক আসত তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্র জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।

(মুসলিম ১৪/৩, হাঃ ১১৭৪)  (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৯৪)

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে এত পরিমাণ আমল করতেন যা তিনি অন্য কোনো মাসে করতেন না।

(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭৫)

তাঁর আমলসমূহের মধ্যে অন্যতম আম হলো:

শেষ দশকে ইতেকাফ করা

শেষ দশকের ইতেকাফ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত আমল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ দশকে ইতেকাফের আমল দিয়েছেন। গুরুত্বের সঙ্গে অন্যকেও আমল করে শিখিয়েছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন।’

(বুখারি ২০২৫)

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। আর বলতেন, তোমরা এ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।’

(বুখারি ২০২০)

তিনি আরও বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইন্তেকাল পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন, তারপর তার স্ত্রীগণও ইতেকাফ করেছেন।’

(বুখারি ২০২৬)

রাত্রি জাগরণ

তাঁর আমলসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল রাত জাগরণ।

রাত্রি জাগরণের আরেক অর্থ হতে পারে রাতের অধিকাংশ সময় জেগে ইবাদত করতেন। এক বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি অর্ধরাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করল সে যেন পুরো রাত জেগে ইবাদত করল।

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কেউ জামা‘আতের সাথে ইশার সালাত আদায় ****করে ফজরের সালাত৷ জামা‘আতের সাথে আদায় করার দৃঢ় ইচ্ছা থাকলে তার সারারাত জাগরণের সাওয়াব অর্জিত হবে।

ইমাম শাফে‘ঈ রহ. বলেন, কেউ ইশা ও ফজরের সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হলে সে লাইলাতুল কদরের অংশ প্রাপ্ত হবে। ইবনে মুসাইয়্যেব থেকে ইমাম মালিকের থেকেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইশার সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করবে সে লাইলাতুল কদর প্রাপ্ত হবে।(ইতহাফুল মাহারা, ইবন হাজার আসকালানী, ১৫/৪১৪।)0

পরিবারের লোকদেরকে জাগানো

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে তাঁর পরিবার-পরিজনকে সালাতের জন্য জাগাতেন, যা তিনি অন্য মাসে করতেন না। আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, হাদীসে এসেছে, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেইশ, পঁচিশ ও সাতাশ রমযান তার পরিবারকে সালাতের জন্য জাগাতেন। আরও বর্ণিত আছে যে, তিনি বিশেষ করে সাতাশ রমযান তাঁর পরিবার-পরিজনকে সালাতের জন্য আহ্বান করতেন। এটি প্রমাণ করে যে, যে সময় লাইলাতুল কদর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তিনি সেসময় তাদেরকে জাগিয়ে দিতেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশ দিন তার পরিবারের লোকদেরকে জাগাতেন”।(তিরমিযী, হাদীস নং ৭৯৫, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন; আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

সুফইয়ান সাওরী রহ. বলেন, আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় কাজ হলো রমযানের শেষ দশ দিন আসলে রাতে বেশি পরিমাণ তাহাজ্জুদ পড়া, এতে কঠোর অধ্যাবসয়ী হওয়া, পরিবার-পরিজন ও সন্তানদেরকে সম্ভব হলে জাগিয়ে দেওয়া। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার দরজায় কড়া নাড়তেন এবং বলতেন, তোমরা কি উঠেছ ও সালাত আদায় করেছ? (মাশীখাতু ইবন বুখারী, জামালুদ্দীন ইবনুয যাহিরী আল-হানাফী, ১/৫৭২, তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন) তিনি রাতের বেলায় তাহাজ্জুদ সালাত শেষে বিতরের সালাত আদায় করার সময় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জাগাতেন। তারগীবে বর্ণিত আছে, তিনি তাঁর এক স্ত্রীকে সালাতের জন্য জাগিয়েছেন এবং তার চেহারায় পানির ছিটা দিয়েছেন।

শক্ত করো কোমর বাঁধা

তিনি রমযানের শেষ দশকে লুঙ্গি শক্ত করে বাঁধতেন (অর্থাৎ খুব বেশি ইবাদত করতেন) এবং স্ত্রীদের থেকে আলাদা থাকতেন (অর্থাৎ তাদের বিছানায়া যেতেন না), এভাবে রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত করতেন।

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশদিন যেহেতু ই‘তিকাফ করতেন তাই ই‘তিকাফ অবস্থায় স্ত্রীদের নিকটবর্তী হওয়া তাদের সাথে মেলামেশা করা কুরআন, হাদীস ও ইজমা‘ দ্বারা যেহেতু নিষিদ্ধ তাই তিনি সে সময় স্ত্রীদের কাছে যেতেন না।

শবে কদর তালাশ করা ও দোয়া পড়া

শেষ দশকের ইবাদতের অন্যতম হলো, শবে কদর তালাশ করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কদর রাতের সন্ধান পেতে চায়, সে যেন রমজানের শেষ দশকে খুঁজে নেয়।’

(বুখারি ১১৫৮)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’

(বুখারি ২০১৭)

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, যদি আমি শবে কদর পেয়ে যাই, তাহলে কী দোয়া করব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাআফু আন্নি।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাকারী, ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব, আমায় ক্ষমা করুন।’

(তিরমিজি ৩৫১৩)

সদকাতুল ফিতর আদায় করা

শেষ দশকের অন্যতম আরেকটি আমল হলো, সদকাতুল ফিতর আদায় করা। সামর্থ্যবান প্রতিজন নারী-পুরুষ ছোট-বড় সবার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা আবশ্যক করেছেন। সেই সঙ্গে নির্দেশ করেছেন, যেন তা ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই আদায় করা হয়। (বুখারি ১৫০৩)

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করেছেন; যাতে এটা রোজাদারের রোজার বিচ্যুতি তথা অনর্থক কথা-কাজ ও অশালীন আচরণের ক্ষতিপূরণ হয়। আর অসহায় মানুষের খাবারের সুন্দর ব্যবস্থা হয়।’

(আবু দাউদ ১৬০৯)

আল্লাহ আমাদের সকলকে রমজানের শেষ দশককে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের তাওফিক দান করুক(আমিন)

তথ্যসূত্রঃ. 
লেখকঃ মুফতি রাশেদুল ইসলাম 
ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা মিরপুর -১ (মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স)

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
2
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *