ইবাদত

খানা খাওয়ার সুন্নাত সমূহ

মুসলিম ব্যক্তি খাদ্য ও পানীয়কে অন্যান্য উপকরণের মতই মনে করে এবং তাকে আসলেই সে (জীবনের) চূড়ান্ত উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য মনে করে না; সুতরাং সে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্যেই খায় ও পান করে, যার দ্বারা সে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতে সক্ষম হয়; ঐ ইবাদত তাকে পরকালের সম্মান ও সৌভাগ্য অর্জনের জন্য যোগ্য করে তুলে; সুতরাং সে শুধু খাদ্য ও পানীয়ের মজা উপভোগ করার জন্য পানাহার করে না। তাই সে ক্ষুধার্ত না হলে খায় না এবং পিপাসার্ত না হলে পান করে না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

نحن قومٌ لا نأكُلُ حتى نَجُوعَ ، وإذا أكلنَا فلا نَشْبَعَ

“আমরা এমন এক জাতি— ক্ষুধা না লাগলে আমরা খাই না; আর যখন আমরা খাই, তখন পেট ভরে খাই না।”(উদ্ধৃত, আবূ বকর আল-জাযায়েরী, মিনহাজুল মুসলিম, পৃ. ১৬৪; তিনি বলেন: এ হাদিসটি কে বর্ণনা করেছেন তা আমার জানা নেই; সম্ভবত তা সাহাবী গণের আছারসমূহের মধ্য থেকে একটি ‘আছার’ এবং তা হাদিসে নববী নয়; আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।)

আর সেখান থেকে মুসলিম ব্যক্তি তার খাবার ও পানীয়ের ব্যাপারে কতগুলো শরী‘য়ত সম্মত বিশেষ আদব রক্ষা করাকে নিজ দায়িত্বরূপে গ্রহণ করে যেমন:

এই ব্লগের সূচীপত্রঃ

 ✅ খাওয়ার সুন্নাতসমূহ
 ✅ খাওয়ার পূর্বের আদবসমূহ
   খাওয়ার মধ্যকার সময়ের আদবসমূহ
   খাওয়ার পরের আদবসমূহ

খাওয়ার সুন্নাতসমূহ

<br>মহানবী (সা.) আমাদের উত্তম আদর্শ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উত্তম নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও উত্তম আদর্শ তিনি। নিচে রাসুল (সা.) কিভাবে খাবার খেতেন সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো―<br><br><strong>✅ খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা</strong><br>রাসুল (সা.) খাবারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন এবং অন্যদেরও বলতে উৎসাহিত করতেন।<br>রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে ও ডান হাত দ্বারা খানা খাও। এবং তোমার দিক হতে খাও।’ (বুখারি, হাদিস : ৫১৬৭, তিরমিজি, হাদিস : ১৯১৩) আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন তোমরা খানা খেতে শুরু করো তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো, ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওআখিরাহ।রিয়াজুস সালেহিন : ৭২৯)<br><br><strong>✅ দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়া</strong><br>রাসুল (সা.) খাওয়ার সময় দস্তরখানা বিছিয়ে খেতেন। তিনি এ ব্যাপারে অনেক যত্নশীল ছিলেন। আনাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) কখনো ‘সুকুর্‌জা’ অর্থাৎ ছোট ছোট পাত্রে আহার করেছেন, তার জন্য কখনো নরম রুটি বানানো হয়েছে কিংবা তিনি কখনো টেবিলের ওপর আহার করেছেন বলে আমি জানি না।<br>ক্বাতাদাহকে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে তাঁরা কিসের ওপর আহার করতেন। তিনি বললেন, দস্তরখানার ওপর। (বুখারি, হাদিস নম্বর : ৫৩৮৬)<br>ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার খালাম্মা একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে গুইসাপ, কাঁধের গোশত ও দুধ হাদিয়া পাঠালেন। তিনি গুইসাপকে দস্তরখানার ওপর রাখলেন। তিনি তা খাননি।<br>তিনি দুধ পান করলেন এবং ছাগলের গোশত খেলেন। এই হাদিস দ্বারা বুঝে আসে, রাসুল (সা.) দস্তরখানা বিছিয়ে খেতেন। অন্য এক হাদিসে আছে, তিনি খাবারগুলো দস্তরখানার ওপরে রাখলেন। (তুহফাতুল ক্বারি ১০/৩৫৬)<br><br><strong>✅ ডান হাত দিয়ে খাবার খাওয়া</strong><br>রাসুল (সা.) আজীবন ডান হাত দ্বারা খাবার খেয়েছেন। এবং বাম হাত দ্বারা খাবার খেতে মানুষকে নিষেধ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দ্বারা খাবার খেয়ো না ও পান কোরো না। কেন না শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১২)<br><br><strong>✅ হাত চেটে খাওয়া</strong><br>রাসুল (সা.) খাওয়ার সময় সর্বদা হাত চেটে খেতেন। না চাটা পর্যন্ত কখনো হাত মুছতেন না। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করবে, তখন হাত চাটা নাগাদ তোমরা হাতকে মুছবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৫২৪৫)<br>অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করো তখন আঙুল চেটে খাও। কেননা বরকত কোথায় রয়েছে তা তোমরা জানো না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯১৪)<br><br><strong>✅ পড়ে যাওয়া লুকমা তুলে খাওয়া</strong><br>খাবার গ্রহণের সময় দেখা যায় অনেকের থালাবাসন থেকে খাবারের লুকমা বা এক-দুই টুকরা ভাত, রুটি কিংবা অন্য সব খাবার পড়ে যায়। তাহলে তা তুলে খেতে হবে। রাসুল (সা.)-এর খাবারকালে যদি কোনো খাবার পড়ে যেত, তাহলে তিনি তুলে খেতেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের খাবার আহারকালে যদি লুকমা পড়ে যায়, তাহলে ময়লা ফেলে তা ভক্ষণ করো। শয়তানের জন্য ফেলে রেখো না।’ (তিরমিজি : ১৯১৫, ইবনে মাজাহ : ৩৪০৩)<br><br><strong>✅ হেলান দিয়ে না খাওয়া</strong><br>মহানবী (সা.) কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। আবু হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, আমি টেক লাগানো অবস্থায় কোনো কিছু ভক্ষণ করি না। (বুখারি, হাদিস ৫১৯০, তিরমিজি, হাদিস ১৯৮৬)<br><br><strong>✅ দোষ-ত্রুটি না ধরা</strong><br>আমাদের অনেককে দেখা যায় খাবারের মধ্যে নানা রূপ দোষ-ত্রুটি ধরতে। এ নিয়ে আমাদের পরিবারে ঝগড়াঝাঁটি হচ্ছে দেদার। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদের মতো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। অথচ রাসুল (সা.)-এর পূর্ণ জিন্দেগিতে কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষ-ত্রুটি ধরতেন না। তাঁর পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫১৯৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৮২)<br><br><strong>✅ খাবারে ফুঁ না দেওয়া</strong><br>খাবারের মধ্যে ফুঁক দেওয়া অনেক রোগ পয়দা হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাসুল (সা.) খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কখনো খাবারে ফুঁ দিতেন না। ফুঁ দিতেন না কোনো কিছু পানকালেও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৪১৩)<br><br><strong>✅ খাওয়া শেষে দোয়া পড়া</strong><br>খাবার খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা অপরিহার্য। রাসুল (সা.) খাওয়ার শেষে দোয়া পড়তেন। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) খাবার শেষ করে বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান ফিহি, গায়রা মাকফিইন, ওলা মুয়াদ্দায়িন ওলা মুসতাগনা আনহু রাব্বানা।’<br>তিনি কখনো এই দোয়া পড়তেন : ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াছাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪৫৮)<br><br><strong>✅ তিন শ্বাসে পানি পান করা</strong><br>রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা এক চুমুকে উটের মতো পানি পান কোরো না; বরং দুই-তিনবার (শ্বাস নিয়ে) পান কোরো। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৮৮৫)<br>তা ছাড়া পানির পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলাও অনুচিত। নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা (পান করার সময়) পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলো না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫৪)<br>আমরা যদি আমাদের জীবন চলার পথে রাসুল (সা.)-এর সুন্নাতগুলো পূর্ণতার সঙ্গে জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে আমাদের জীবন হবে সুন্দর থেকে সুন্দরতম। আমাদের শেষ পরিণাম হবে মধুময়। সুখ-শান্তির আভায় ভরপুর। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন!

খাওয়ার পূর্বের আদবসমূহ

<br>✅ মুমিন ব্যক্তি ****হালাল ও পবিত্র জিনিস থোকে তার খাবার ও পানীয়কে পছন্দ করবে, যা হারাম ও সন্দেহযুক্ত বস্তু থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:<br>يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُمۡ<br>“হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে আমরা যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি তা থেকে খাও।”(<em><strong>সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭২)</strong></em> আর পবিত্র মানে হালাল বস্তু, যা ময়লাযুক্ত, দূষিত ও অপবিত্র নয়।<br><br>✅ খাবার ও পানীয় গ্রহণ করার দ্বারা নিয়ত থাকবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার জন্য শক্তি অর্জন করা; যাতে সে যা খায় বা পান করে, তার জন্য সে সাওয়াব পেতে পারে; কেননা, অনেক সময় ভালো নিয়তের কারণে ‘মুবাহ’ (বৈধ) বিষয় আনুগত্যে পরিণত হয়, ফলে মুসলিম ব্যক্তিকে তার জন্য সাওয়াব দেয়া হয়।<br><br>✅ খাওয়ার আগে দুই হাত ধৌত করা, যদি তাতে ময়লা থাকে অথবা হাত দু’টির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়।<br><br>✅ যমীনের উপর কোনো পাত্রে খাবার রাখা, টেবিলের উপর নয়; কেননা, এটা বিনয়-নম্রতার একেবারেই কাছাকাছি পন্থা। কারণ, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:<br>« مَا أَكَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى خِوَانٍ ، وَلَا فِي سُكُرُّجَةٍ » . (رواه البخاري).<br>“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম টেবিলের উপর খাননি এবং কোনো থালা বা প্লেটে করেও খাননি।”(<em><strong>বুখারী, হাদিস নং- ৫০৯৯)</strong></em><br><br>✅ বিনয়ীভাবে দুই হাঁটু গেড়ে দুই পায়ের পাতার উপরে বসা, অথবা ডান পা দাঁড় করিয়ে দিয়ে বাম পায়ের উপরে বসা, যেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসতেন; তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:<br>« لَا آكُلُ مُتَّكِئًا ، إنما أنا عبدٌ ، آكُلُ كَمَا يَأْكُلُ الْعَبْدُ ، وَأَجْلِسُ كَمَا يَجْلِسُ الْعَبْدُ » . (رواه البخاري و البيهقي).<br>“আমি হেলান দিয়ে খাইনা। আমি তো গোলাম; আমি খাই, যেমনিভাবে গোলামে খায়; আর আমি বসি, যেমনিভাবে গোলামে বসে।(”<em><strong>বুখারী ও বায়হাকী।)</strong></em><br><br>✅ প্রস্তুত করা বিদ্যমান খাদ্যে সন্তুষ্ট থাকা এবং খাদ্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করা; যদি তার কাছে ভালো লাগে খাবে, আর ভালো না লাগলে বর্জন করবে; কেননা, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন:<br>« مَا عَابَ رسولُ الله صلى الله عليه وسلم طَعَامَاً قَطُّ ، إن اشْتَهَاهُ أكَلَهُ ، وَإنْ كَرِهَهُ تَرَكَهُ » . (رواه أبو داود)<br>“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও খাদ্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করতেন না; তাঁর রুচিসম্মত হলে খেতেন; আর রুচিসম্মত না হলে খেতেন না।(<em><strong>আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩৭৬৫)</strong></em><br><br>✅ একাকি না খেয়ে কোনো মেহমান, অথবা পরিবার, অথবা সন্তান, অথবা খাদেমকে সাথে নিয়ে খাওয়া; কেননা, হাদিসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:<br>« اجْتَمِعُوا عَلَى طَعَامِكُمْ ، وَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ ، يُبَارَكْ لَكُمْ فِيهِ » . (رواه أبو داود و ابن ماجه).<br>“তোমরা সম্মিলিতভাবে তোমাদের খাবার খাও এবং আল্লাহর নামে খাও, দেখবে তোমাদের খাদ্যে বরকত হবে।(<em><strong>আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩৭৬৬; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৩২৮৬ এবং আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।)</strong></em><br>

খাওয়ার মধ্যকার সময়ের আদবসমূহ

<br>✅ বিসমিল্লাহ’ (আল্লাহর নামে) বলে খাওয়া শুরু করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:<br>« إِذَا أكَلَ أحَدُكُمْ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللهِ تَعَالَى ، فإنْ نَسِيَ أنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللهِ تَعَالَى في أوَّلِهِ ، فَلْيَقُلْ: بسم اللهِ أوَّلَهُ وَآخِرَهُ » . (رواه أَبُو داود و الترمذي).<br>“তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, তখন সে যেন আল্লাহ তা‘আলার নাম নিয়ে নেয়; আর সে যদি শুরুতে আল্লাহ তা‘আলার নাম নিতে ভুলে যায়, তাহলে যেন বলে: « بسم اللهِ أوَّلَهُ وَآخِرَهُ » (প্রথমে ও শেষে আল্লাহর নামে)।”(<em><strong>আবূ দাউদ ও তিরমিযী এবং তিনি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।)</strong></em><br><br>✅ আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করার মাধ্যমে অর্থাৎ ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলে খাওয়া শেষ করা। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:<br>« مَنْ أكَلَ طَعَامَاً ، فَقال : الحَمْدُ للهِ الَّذِي أطْعَمَنِي هَذَا ، وَرَزَقنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ » . (رواه أَبُو داود و الترمذي).<br>“যে ব্যক্তি খাবার খেয়ে শেষ করার পর বলবে: « الحَمْدُ للهِ الَّذِي أطْعَمَنِي هَذَا ، وَرَزَقنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ » (অর্থাৎ সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে এ খাবার খাওয়ালেন এবং আমাকে রিযিক দিলেন আমার কোনরূপ চেষ্টা ও শক্তি ছাড়াই), তার পেছনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে**।”(<em>আবূ দাউদ ও তিরমিযী এবং তিনি হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।)</em>**<br><br>✅ ডান হাত দ্বারা খাবার গ্রহণ করা, ছোট ছোট লোকমা দেওয়া এবং ভালোভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া; আর পাত্রের মাঝখান থেকে না খেয়ে নিজের সামনে থেকে খাওয়া; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওমর ইবন আবি সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন:<br>« يَا غُلامُ ، سَمِّ اللهَ تَعَالَى ، وَكُلْ بِيَمينِكَ ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ » . (متفقٌ عَلَيْهِ).<br>“হে বেটা! আল্লাহ তা‘আলার নাম লও (অর্থাৎ ‘বিসমিল্লাহ’ বল); ডান হাতে খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও।”[ <em><strong>বুখারী ও মুসলিম।</strong></em> ] তিনি আরও বলেন:<br>« البَرَكَةُ تَنْزِلُ وَسَطَ الطعَامِ ؛ فَكُلُوا مِنْ حَافَتَيْهِ ، وَلاَ تَأكُلُوا مِنْ وَسَطِهِ » . (رواه أَبُو داود و الترمذي).<br>“বরকত খাবারের মধ্যখানে অবতীর্ণ হয়; কাজেই তোমরা তার পাশ থেকে খাও; তার মাঝখান থেকে খেয়ো না।”(<em><strong>আবূ দাউদ ও তিরমিযী এবং তিনি হাদিসটিকে ‘হাসান সহীহ’ বলেছেন।)</strong></em><br><br>✅ খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া; আর খাবারের পাত্র চেটে খাওয়া এবং রুমাল বা টিসু দিয়ে স্বীয় আঙুলসমূহ মুছে ফেলার পূর্বে বা পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলার পূর্বে সেগুলো চেটে খাওয়া। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:<br>« إِذَا أكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَاماً ، فَلاَ يَمْسَحْ أَصَابِعَهُ حَتَّى يَلْعَقَهَا أَوْ يُلْعِقَها » . (متفقٌ عَلَيْهِ).<br>“তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, তখন সে যেন তার আঙুলসমূহ মুছে না ফেলে, যতক্ষণ না সে তা চেটে খায় অথবা কাউকে দিয়ে চাটিয়ে নেয়।”<em><strong>বুখারী, হাদিস নং- ৫১৪০; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৪১৫</strong></em><br>তাছাড়া জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:<br>« إنَّ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِلَعْقِ الأَصَابِعِ وَالصَّحْفَةِ ، وقال : إنَّكُمْ لاَ تَدْرُونَ في أيِّ طَعَامِكُمُ البَرَكَةُ » . (رواه مسلم).<br>“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙুল ও খাওয়ার পাত্র চেটে খাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি বলেন: ‘তোমাদের জানা নেই, তোমাদের কোন্ খাবারের মধ্যে বরকত রয়েছে।(<em><strong>মুসলিম, হাদিস নং- ৫৪২০)</strong></em><br><br>✅ খাবার গ্রহণ করার সময় তার থেকে কিছু পড়ে গেলে তার থেকে ময়লা দূর করে তা খেয়ে ফেলবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:<br>« إِذَا سَقَطَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيَأخُذْهَا ، وَلْيُمِط عنها الأَذى وليَأكُلْها ، وَلاَ يَدَعْها لِلشَّيْطان » . (رواه مسلم).<br>“যখন তোমাদের কারও লোকমা পড়ে যায়, তখন সে যেন তা তুলে নেয়; আর তার থেকে ময়লা দূর করে নিয়ে যেন তা খেয়ে ফেলে এবং তা যেন শয়তানের জন্য রেখে না দেয়।(<em><strong>মুসলিম, হাদিস নং- ৫৪২১ ও ৫৪২৬)</strong></em><br><br>✅ গরম খাবারে (ঠাণ্ডা করার জন্য) ফুঁ না দেওয়া এবং তা ঠাণ্ডা না হওয়া পর্যন্ত না খাওয়া; আর পানি পান করা অবস্থায় পানির মধ্যে ফুঁ না দেওয়া এবং উচিৎ হলো পানপাত্রের বাইরে তিনবার শ্বাস নেয়া; কেননা, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন:<br>« إنَّ رسول الله صلى الله عليه وسلم كَانَ يَتَنَفَّسُ في الشَّرابِ ثَلاثاً » . (متفقٌ عَلَيْهِ)<br>“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি পান করতে তিনবার শ্বাস নিতেন।(<em><strong>বুখারী, হাদিস নং-৫৩০৮; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৪০৬)</strong></em> আর আবূ সা‘ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:<br>« إنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَن النَّفْخ في الشَّرَاب » . (رواه الترمذي)<br>“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানীয় বস্তুর মধ্যে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন।” (<em><strong>তিরমিযী এবং তিনি হাদিসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।)</strong></em><br>তাছাড়া আবদুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন:<br>« إنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم نَهَى أن يُتَنَفَّسَ في الإناءِ أَوْ يُنْفَخَ فِيهِ » . (رواه الترمذي)<br>“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির পাত্রে শ্বাস নিতে অথবা তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন।(<em><strong>তিরমিযী এবং তিনি হাদিসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।)</strong></em><br><br>✅ অতি ভোজন থেকে বিরত থাকা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:<br>« مَا مَلأَ آدَمِيٌّ وِعَاء شَرّاً مِنْ بَطْنٍ ، بِحَسْبِ ابنِ آدَمَ لُقَيْمَاتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ ، فإنْ لَمْ يَفْعَلْ فثُلُثٌ لِطَعَامِهِ ، وَثُلُثٌ لِشَرابِهِ ، وَثُلُثٌ لِنَفَسه » . (رواه أحمد و ابن ماجه و الترمذي و الحاكم).<br>**“**মানুষের ভরা পেটের চেয়ে খারাপ পাত্র আর নেই। আদম সন্তানের কোমর সোজা রাখার জন্য কয়েকটি লোকমাই তো যথেষ্ট; সুতরাং সে যদি তাতে তুষ্ট না হতে পারে, তাহলে (পেটকে তিন ভাগে ভাগ করে নেবে) এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং অপর এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ঠিক করে নেবে।”(<em><strong>আহমাদ, ইবনু মাজাহ, তিরমিযী ও হাকেম এবং হাদিসটি ‘হাসান’।)</strong></em><br><br>✅ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিকে প্রথমে খাবার বা পানীয় পরিবেশন করা; অতঃপর ডান দিক থেকে একজন একজন করে খাবার পরিবেশন করতে থাকা; আর খাবার বা পানীয় পরিবেশনকারী হবে কাওমের মাঝে সর্বশেষ খাবার বা পানীয় গ্রহণকারী ব্যক্তি। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « كَبِّرْ كَبِّرْ » অর্থাৎ উপবিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্য থেকে বয়োজ্যেষ্ঠকে দিয়ে শুরু কর; তাছাড়া “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা’র কাছে তার বাম পাশে বসা বয়োজ্যেষ্ঠদেরকে পানীয় পরিবেশনের ব্যাপারে অনুমতি নিয়েছেন, যখন আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা ছিলেন তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের) ডানপাশে এবং বয়স্ক ব্যক্তিগণ ছিলেন তাঁর বামপাশে। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তার কাছে অনুমতি চাওয়াই প্রমাণ করে যে, ডানপাশে বসা ব্যক্তিই প্রথমে পানীয় পাওয়ার ব্যাপারে বেশি হকদার।” (<em><strong>বুখারী (হাদিস নং- ২২২৪) ও মুসলিম।)</strong></em> ৷ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: « الأيمن فالأيمن » (অর্থাৎ ডানপাশ থেকে পরপর খাবার প্রদান কর)।(<em><strong>বুখারী (হাদিস নং- ২২২৫) ও মুসলিম।)</strong></em><br>রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:<br>« إنَّ سَاقِيَ الْقَوْمِ آخِرُهُمْ شُرْبًا » . (رواه مسلم و أبو داود و ابن ماجه).<br>“কাওমের মধ্যে যে সাকী (পানীয় সরবরাহকারী) হবে, পান করার দিক থেকে সে সবার শেষে থাকবে।”(<em><strong>মুসলিম, হাদিস নং- ১৫৯৪; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩৭২৭ ; ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৩৪৩৪ এবং আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।)</strong></em><br><br>✅ যে ****মাজলিসে বয়সের দিক থেকে বড়, অথবা মর্যাদার দিক থেকে তার চেয়ে উত্তম ব্যক্তি আছে, সেখানে প্রথমে খাবার বা পানীয় গ্রহণ না করা। কেননা, তা শিষ্টাচার পরিপন্থি এবং এমন ব্যক্তিকে নিন্দিত লোভী বলে চিত্রিত করা হয়। কেউ কেউ ছন্দাকারে বলেন:<br>وإنْ مُدَّتِ الأيدي إلى الزادِ لم أكنْ<br>بِأعجلِهم ، إذْ أَجْشَعُ القومِ أعْجَلُ<br>(আর যদি খাবারের দিকে হাতগুলো প্রসারিত হয়েই যায়, তখন হব না আমি<br>তাদের সকলের অগ্রগামী; কারণ, কাওমের মাঝে সেই সবচেয়ে লোভী, যে তড়িৎ প্রিয় বেশি)।(<em><strong>উদ্ধৃত, আবূ বকর আল-জাযায়েরী, মিনহাজুল মুসলিম, পৃ. ১৬৮)</strong></em><br><br>✅ তার বন্ধু বা মেযবান কর্তৃক যেন তাকে বলতে না হয়: ‘তুমি খাও’ এবং যাতে খাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে না হয়, বরং তার জন্য উচিৎ হল কোনো প্রকার লাজ্জাবোধ না করে প্রয়োজন মত খাবার খেয়ে নেওয়া; কেননা, এর মধ্যে তার বন্ধু বা মেযবানের জন্য অসুবিধা আছে, যেমনিভাবে তাতে রয়েছে এক ধরনের লৌকিকতা; আর ইসলামে লৌকিকতা বা প্রদর্শনী করা হারাম।<br><br>✅ খাওয়ার ক্ষেত্রে বন্ধুর প্রতি সদয় হওয়া; সুতরাং সে তার থেকে বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবে না, বিশেষ করে যখন খাবারের পরিমাণ কম হয়; কেননা, এ ক্ষেত্রে সে অন্যের হক ভক্ষণকারী বলে গণ্য হবে**।**<br><br>✅ খাওয়ার মাঝখানে সাথীদের দিকে না তাকানো এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষণ না করা; কেননা, এ রকম করলে তারা লজ্জা পাবে, বরং তার জন্য উচিৎ হলো তার চারি পাশের খাবার গ্রহণকারীদের থেকে তার দৃষ্টিকে অবনমিত করে রাখা এবং তাদেরকে অবলোকন না করা; কেননা, এটা তাদেরকে কষ্ট দিবে; যেমনিভাবে এ কারণে সে কখনও কখনও তাদের কারো কারো ঘৃণার পাত্র হবে; ফলে এ কারণে সে গুনাহগার হবে।<br><br>✅ এমন কাজ না করা, যাকে মানুষ স্বভাবগতভাবে অপছন্দ করে; সুতরাং সে পাত্রের মধ্যে তার হাতকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিবে না এবং খাবার গ্রহণের সময় তার মাথাকে পাত্রের নিকটবর্তী করবে না, যাতে তার মুখ থেকে কোনো কিছু তাতে না পড়ে; যেমন— সে যখন রুটি থেকে তার দাঁত দ্বারা কিছু অংশ গ্রহণ করে, তখন পাত্রের মধ্যে তার বাকি অংশ ডুবিয়ে দিবে না; ঠিক অনুরূপভাবে তার কর্তব্য হল এমন শব্দ চয়নে কথা না বলা, যা ময়লা ও আবর্জনার কথা মনে করিয়ে দেয়; কারণ, কোনো কোনো সময় এর দ্বারা সাথীদের কেউ কেউ কষ্ট অনুভব করে; আর মুসলিম ভাইকে কষ্ট দেয়া হারাম।<br><br>✅ ফকীরের সাথে তার খাওয়া হবে পরার্থপরতা বা প্রেম-ভালবাসার ভিত্তিতে, ভাই-বন্ধুদের সাথে খাওয়া হবে আনন্দ ও নির্মল রসিকতার ভিত্তিতে এবং পদস্থ ও মর্যাদাবান ব্যক্তিবর্গের সাথে খাওয়া হবে আদব-লেহাজ ও শ্রদ্ধার সাথে**।**

খাওয়ার পরের আদবসমূহ

<br>✅ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে পেট ভরে খাওয়ার পূর্বেই সে খাবার গ্রহণ বন্ধ করে দেবে, যাতে সে মারাত্মক ধরনের বদহজমের শিকার না হয় এবং শিকার না হয় মেধা ও বুদ্ধি বিনষ্টকারী অজীর্ণের।<br>✅ হাত চেটে খাওয়া, তারপর তা মুছে ফেলা, অথবা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা; তবে ধুয়ে ফেলাটাই সবচেয়ে ভালো ও সুন্দর।<br>✅ খাওয়ার মাঝখানে যেসব খাবার পড়ে যায়, তা কুড়িয়ে নেয়া; কেননা, এ ব্যাপারে হাদিসে গুরুত্ব ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে; তাছাড়া এটা নি‘য়ামতের এক প্রকার শুকরিয়াও বটে।<br>✅ মুখ পরিষ্কার করার জন্য দাঁত খিলাল করা এবং ভালোভাবে কুলি করা; কেননা, মুখ দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার যিকির করা হয় এবং বন্ধু-বান্ধবগণের সাথে কথা বলতে হয়; তাছাড়া মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দাঁতের সুস্থতাকে বহাল রাখে।<br>✅ পানাহারের পরে ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ (الحمد لله) বলে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করা; আর যখন দুধ পান করবে, তখন বলবে:<br>« اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيمَا رَزَقْتَنَا , و زِدْنا منهُ »<br>(অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি যে রিযিক দান করেছ, তাতে তুমি বরকত দান কর এবং আমাদেরকে তা আরও বাড়িয়ে দাও)। আর যদি কোনো সম্প্রদায়ের নিকট ইফতার করে, তাহলে বলবে:<br>« أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ ، وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الأَبْرَارُ ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ »<br>(অর্থাৎ, তোমার কাছে সাওম পালনকারীগণ ইফতার করল, সজ্জনরা তোমার খাবার খেলো, আর ফেরেশ্তাগণ তোমার জন্য ‘ইস্তিগফার’ তথা ক্ষমা প্রার্থনা করল)। (<em>ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ১৭৪৭; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩৮৫৬; আর আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। )</em> আর যদি বলে<br>« اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيمَا رَزَقْتَهُمْ ، وَاغْفِرْ لَهُمْ ، وَارْحَمْهُمْ » .(অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তাদেরকে তুমি যে রিযিক দান করেছ, তাতে তুমি বরকত দান কর; তাদেরকে ক্ষমা করে দাও এবং তাদের প্রতি রহম কর)(<em>তিরমিযী, হাদিস নং- ৩৫৭৬; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩৭৩১; আর আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন</em> তাহলে সে সঠিকভাবে সুন্নাহ পালন করল**।)

খাওয়ার সময় সালাম আদান-প্রদানে ইসলাম কি বলে?

সালাম ইসলামের অভিবাদন ও শান্তির প্রতীক। সালামের মাধ্যমে নিরাপত্তা ও শান্তির বার্তা ছড়ানো হয়। এক মুসলিম অপর মুসলিমকে সালাম দেওয়া সুন্নত। আর উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। সালাম দেওয়া-নেওয়া জান্নাতি মানুষের অভ্যাস। ইসলামে সালামের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক।<br><br><strong>মুসলিমরা জান্নাতে যাওয়ার সময় ফেরেশতারা বলবে, ‘তোমাদের প্রতি সালাম’, তোমরা সুখী হও।’</strong> -(সুরা জুমার, আয়াত : ৭৩)<br>আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,<strong> ‘আর যখন তোমাদেরকে <a href=”https://www.dhakapost.com/religion/131485″>সালাম দেয়া হবে</a> তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে’।</strong> -(সূরা নিসা, আয়াত: ৮৬)<br><br>সালামের বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘<strong>তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ না তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা গড়ে উঠবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলে দেব না, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসতে লাগবে? (তা হচ্ছে) তোমরা আপোসের মধ্যে সালাম প্রচার কর।</strong>’ <em>-(মুসলিম, হাদিস : ৫৪; তিরমিজি, হাদিস : ২৬৮৮; আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৩; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৩৬৯২; আহমাদ, হাদিস : ৮৮৪১)</em><br><br>সালামের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে সৌর্হাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। ইসলামী শরীয়তে সালাম দেওয়া সুন্নত। সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। আমাদের সমাজে একটি ধারণা প্রচলিত আছে, কেউ খেতে বসলে তাকে সালাম দেওয়া যাবে না, এবং সালামের উত্তর নেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে অনেকেই আলেমদের মতামত ও ইসলামী বিধান জানতে চান।<br>এই মাসআলার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত হলো, খাবারের সময় সালাম দেওয়া যাবে এবং নেওয়া যাবে। প্রচলিত যে ধারণা রয়েছে যে, ‘খাদ্য গ্রহণকারীকে সালাম দেয়া যাবে না’ এর কোন অস্তিত্ব নেই। তবে যদি কারো মুখের ভেতরে খাবার থাকে, তাহলে তাকে সালাম না দেওয়া ভাল। এ অবস্থায় কেউ সালাম দিলে উত্তর প্রদান ওয়াজিব নয়। (সাখাবী, আল মাকাসিদ, পৃ. ৪৬০, মোল্লা আলী কারী, আল-আসরার, পৃ. ২৬৫)<br><br>এ সম্পর্কে (কাশফুল খুফা) কিতাবে বলা হয়েছে (لا سلام على أكل) ليس بحديث) অর্থাৎ খাবার চলাকালীন সময়ে সালাম দেওয়া যাবে না, এটা কোন হাদিস নয়।<br><br>ইমাম নববী রহ. তাঁর আযকার কিতাবে বলেন, খাবার চলাকালীন মুখে খাবার থাকা অবস্থায় সালাম দিলে জবাব দেওয়া জরুরি নয়। তবে যদি মুখে লোকমা না থাকা অবস্থায় সালাম দেয় তাতে কোন সমস্যা নেই এবং উত্তর প্রদান জরুরি।<br>শায়খ আব্দুর রহমান আস সাহিম বলেন, সমাজে প্রচলিত খাবার সময় সালাম দেওয়া যায় না বলে যে কথাটি রয়েছে তা সালামের ব্যাপারে নয়, মোসাফাহার ব্যাপারে। সুতরাং সালাম দেওয়া ও নেওয়াতে কোন সমস্যা নেই। -(সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ. ৪৬০, মোল্লা কারী, আল আসরার, পৃ. ২৬৫, আল-আজলূনী, কাশফুল খাফা ২/৪৮৮, যারকানী, মুখতাসারুল মাকাসিদ, পৃ. ২০৩, দেওবন্দ ফতোয়া, ১০১৬৬ )<br><br>উত্তর দিয়েছেন : <strong>শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী</strong>

খাবার সময় বসার নিয়ম

<br>রাসুলের (সা.) প্রতিটি কথা, কাজ ও আচরণ আমাদের জন্য আদর্শ। <br><br>কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,<br><strong>لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا<br>তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।</strong> <em>(সুরা আহজাব: ২১)</em><br><br>খাওয়া আমাদের জীবনের নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি কাজ। খাওয়ার সময় কতটুকু খাওয়া উচিত, কীভাবে খাওয়া উচিত, কোন হাতে খেতে হবে, কীভাবে বসতে হবে, কীভাবে বসা যাবে না এসব ব্যাপারেও রাসুলের (সা.) দিক-নির্দেশনা রয়েছে, তিনি নিজে কীভাবে খেতেন তাও সাহাবিদের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসের আলোকে জানা যায় যে, খানার সময় নম্রতা এবং রব্বে কারীমের গোলামিত্ব প্রকাশ করে বসা উচিত।<br>হাদীসের মাঝে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাটু উঠিয়ে খেজুর খেয়েছেন এবং বকরীর গোশত খেয়েছেন মর্মে  বিশুদ্ধ সূত্রে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ কারণে ফুক্বাহায়ে কেরাম লিখেছেন যে, দুই হাটু উঠিয়ে বা ডান হাটু উঠিয়ে এবং বাম পা বিছিয়ে খানা খাওয়া মুস্তাহাব।<br>কেননা, এভাবে বসার মাঝে আবদিয়্যাত ও নম্রতা প্রকাশ পায়।<br><br><strong>قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ‌آكُلُ ‌كَمَا ‌يَأْكُلُ ‌الْعَبْدُ، وَأَجْلِسُ كما يَجْلِسُ الْعَبْدُ (المسند لأبى يعلى للموصلى-8/318، رقم-4920)</strong><br><strong>হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি খানা খাই সেভাবে, যেভাবে দাস-দাসীরা খানা খায়। এবং এমনভাবে বসি, যেভাবে দাস-দাসীরা বসে।</strong> [মুসনাদে আবূ ইয়ালা মুসিলী, হাদীস নং-৪৯২০]<br><br><strong>قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ‌آكُلُ ‌كَمَا ‌يَأْكُلُ ‌الْعَبْدُ، وَأَجْلِسُ كَمَا يَجْلِسُ الْعَبْدُ، فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدٌ (شعب الإيمان للبيهقى-</strong><br><strong>5/107، رقم-5975)</strong><br>রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি এভাবে খানা খাই, যেভাবে দাস-দাসীরা খানা খায়। এবং এমনভাবে বসি, যেভাবে দাস-দাসীরা বসে। কারণ, আমি আমিতো গোলাম। (আমার রবের) [শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫৯৭৫]<br><br>তবে যেখানে দুই হাটু উঠিয়ে খাওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে, সেই হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসীনে কেরাম লিখেছেন যে, অতিরিক্ত ক্ষুধার কারণে নবীজী এমনটি করেছেন। নম্রতা ও আবদিয়্যাত প্রকাশ পায়, এমন তরীকায়ই বসে খানা খাওয়া উচিত। মা’জুর হলে যে কোন সূরতেই খানা খেতে পারে। শুধু দুই হাটু উঠিয়ে খানা খাওয়াকে ‘খানা খাওয়ার একমাত্র সুন্নাত তরীকা’ না বলে উত্তম তরীকা বলাই অধিক নিরাপদ।<br><br>একাধিক বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) অনেক সময় দুই হাঁটুর ওপর ভর করে বসে খাবার খেয়েছেন।<br><strong>أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم مُقْعِيًا يَأْكُلُ تَمْرًا ‏</strong><br>আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুই পা (গোছা) খাড়া করে উপরি বসে খেজুর খেতে দেখেছি। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫১৫৮, হাদীস নং-২০৪৪]<br><br><strong>عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُسْرٍ، قَالَ: أَهْدَيْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاةً، فَجَثَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى رُكْبَتَيْهِ، يَأْكُلُ، فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ: مَا هَذِهِ الْجِلْسَةُ؟ فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ جَعَلَنِي عَبْدًا كَرِيمًا، ‌وَلَمْ ‌يَجْعَلْنِي ‌جَبَّارًا عَنِيدًا</strong><br>আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একটি বকরী হাদিয়া দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উভয় হাঁটু উঁচু করে বসে আহার করছিলেন। এক বেদুঈন বললো, এটা কী ধরনের বসা! তিনি বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে অনুগ্রহপরায়ণ ও বিনয়ী বান্দা বানিয়েছেন, হিংসুক ও অহংকারী বানাননি। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩২৬৩] <br><br>এ দুটি বর্ণনা থেকে বোঝা যায় মাঝে মাঝে নবিজি (সা.) বিনয় প্রকাশ করার জন্য বা সময় কম থাকায় এভাবে বসে খেয়েছেন।<br>আলেমরা বলেন, খাওয়ার সময় বসার সাধারণ সুন্নত পদ্ধতি হলো, দুই হাঁটু বিছিয়ে এক পায়ের ওপর বসে আরেক পা দাঁড় করিয়ে রাখা। যেভাবে আমরা নামাজের সময় বসি। সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাকার বদরুদ্দীন আইনি (রহ.), ইবনে কায়্যিমসহ (রহ.) অনেক আলেমরা এভাবে বসে খাওয়াকে সুন্নত বলেছেন। এ ছাড়া হেলান দিয়ে বা উপুড় হয়ে শুয়ে খাওয়ার ব্যাপারে নবিজির (সা.) স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবু জুহাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি কখনও হেলান দিয়ে খাবার খাইনা। (সহিহ বুখারি) সালেম (রহ.) তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুল (সাী.) উপুড় হয়ে শুয়ে খেতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ)

খাবারের পর মিষ্টি ও ফল খাওয়া কি সুন্নাত?

<br>একজন প্রশ্ন করেছেন, আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত যে, খানা খাওয়ার পর মিষ্টি খাওয়া এবং ফল খাওয়া সুন্নত। আসলে একথাটি কতটুকু সত্য? দয়া করে জানালে কৃতার্থ হবো।<br><br><strong>উত্তরঃ</strong> সুন্নত বলতে হলে, তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়মিত আমল বা অভ্যাস হওয়া কিংবা করতে উৎসাহ দেয়া প্রমাণিত হওয়া জরুরী।<br><br>যেখানে দিনের পর দিন পেট ভরে খানা খাওয়ার সুযোগই হতো না। কয়েক মাস যাবত খানা পাকানোর জন্য চুলায় আগুন ধরতো না, সেখানে খানা ভক্ষণ করার পর মিষ্টি ও ফল খাওয়ার মতো বিলাসিতা নবীজীর সুন্নাত বলা বা নিয়মিত আমল বলার কোন সুযোগই নেই। তবে হ্যাঁ, একথা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিষ্টি পছন্দ করতেন। এক হাদীসে খানা খাওয়ার পর খেজুর খাওয়ার কথাও প্রমাণিত। সম্ভবত উক্ত হাদীসকে কেন্দ্র করেই একথা বলা হয় যে, খানা খাওয়ার পর মিষ্টি ও ফল খাওয়া সুন্নত। যেহেতু খেজুর মিষ্টি জাতীয় বস্তু সেই সাথে তা ফলও বটে। কিন্তু এর উপর ভিত্তি করে খানার পর মিষ্টি খাওয়া ও ফল খাওয়া সুন্নত বলাটা উচিত হবে না।<br><br>তবে কেউ খেতে চাইলে নিষেধ করাও যাবে না বা অনুৎসাহিত করা যাবে না। বাকি সুন্নাত বলা পরিহার করা উচিত।<br>عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ الحَلْوَاءَ وَالعَسَلَ<br><strong>হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালওয়া এবং মধু পছন্দ করতেন।</strong> [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৪৩১]<br><br>عِكْرَاشِ بْنِ ذُؤَيْبٍ قَالَ: بَعَثَنِي بَنُو مُرَّةَ بْنِ عُبَيْدٍ بِصَدَقَاتِ أَمْوَالِهِمْ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَدِمْتُ عَلَيْهِ الْمَدِينَةَ فَوَجَدْتُهُ جَالِسًا بَيْنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنْصَارِ، قَالَ: ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي فَانْطَلَقَ بِي إِلَى بَيْتِ أُمِّ سَلَمَةَ فَقَالَ: هَلْ مِنْ طَعَامٍ؟ فَأُتِينَا بِجَفْنَةٍ كَثِيرَةِ الثَّرِيدِ وَالوَذْرِ، وَأَقْبَلْنَا نَأْكُلُ مِنْهَا، فَخَبَطْتُ بِيَدِي مِنْ نَوَاحِيهَا وَأَكَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ، فَقَبَضَ بِيَدِهِ اليُسْرَى عَلَى يَدِي اليُمْنَى ثُمَّ قَالَ: يَا عِكْرَاشُ، كُلْ مِنْ مَوْضِعٍ وَاحِدٍ فَإِنَّهُ طَعَامٌ وَاحِدٌ، ثُمَّ أُتِينَا بِطَبَقٍ فِيهِ أَلْوَانُ التَّمْرِ، أَوْ مِنْ أَلْوَانِ الرُّطَبِ، عُبَيْدُ اللهِ شَكَّ، قَالَ: فَجَعَلْتُ آكُلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ، وَجَالَتْ يَدُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الطَّبَقِ وَقَالَ: يَا عِكْرَاشُ، كُلْ مِنْ حَيْثُ شِئْتَ فَإِنَّهُ غَيْرُ لَوْنٍ وَاحِدٍ، ثُمَّ أُتِينَا بِمَاءٍ فَغَسَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ، وَمَسَحَ بِبَلَلِ كَفَّيْهِ وَجْهَهُ وَذِرَاعَيْهِ وَرَأْسَهُ وَقَالَ: يَا عِكْرَاشُ، هَذَا الوُضُوءُ مِمَّا غَيَّرَتِ **النَّارُ<br>ইকরাশ ইবনু যুয়াইব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, মুররা ইবনু উবাইদ গোত্রের লোকেরা তাদের ধন-সম্পদের যাকাতসহ আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে পাঠায়। আমি মদীনায় গিয়ে তার নিকটে হাযির হলাম। তখন আমি তাকে মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে বসা অবস্থায় পেলাম। তিনি আমার হাত ধরে উম্মু সালামা (রাঃ)-এর ঘরে নিয়ে যান। তিনি প্রশ্ন করেনঃ কোন খাবার আছে কি? আমাদের সামনে একটি বড় পিয়ালা আনা হল। এর মধ্যে গোশতের টুকরা ও সারদ (ঝোলে ভিজানো রুটি) ভর্তি ছিল। আমরা তা থেকে খেতে লাগলাম। আমি পাত্রের এদিক-সেদিক থেকে নিয়ে খাচ্ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সামনে থেকে নিয়ে খাচ্ছিলেন। তিনি তার বাঁ হাত দিয়ে আমার ডান হাত ধরে বললেনঃ হে ইকরাশ! এক জায়গা হতে খাও। কেননা সম্পূর্ণটাই একই খাদ্য। তারপর আমাদের সামনে আরেকটি পিয়ালা আনা হল। এর মধ্যে বিভিন্ন রকমের কাঁচা-পাকা খেজুর ছিল। আমি আমার সামনে থেকেই খেতে থাকলাম। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রের এদিক-সেদিক থেকে নিয়ে খাচ্ছিলেন। তিনি বললেনঃ হে ইকরাশ! তুমি পাত্রের যে কোন জায়গা হতে খেতে পার। কেননা সব খেজুর এক রকম নয়। তারপর আমাদের জন্য পানি দেয়া হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উভয় হাত ধুলেন এবং ভিজা হাত দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল, দুই হাত ও মাথা মুছলেন। তারপর তিনি বললেনঃ হে ইকরাশ! আগুন যে জিনিস পরিবর্তন করে দিয়েছে (তা খাওয়ার পর) এটাই হল ওযু। [জামে তিরমিজী, হাদীস নং-১৮৪৮]<br><br>সূত্রঃ আহলে হক মিডিয়া

প্রচলিত দস্তরখান কি সুন্নত?

<br><strong>প্রচলিত দস্তরখান কি সুন্নত? আল্লামা মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন<br></strong>গতকাল এক মসজিদে ইফতারের দাওয়াত ছিলো। তাই ওখানে ইফতার করলাম। ঘটলো এক অপ্রীতিকর কাণ্ড। কয়েকজন লোক দস্তরখান ছাড়া ইফতারে বসে যাওয়ায় এক বয়োবৃদ্ধ চাচা তাদের খুব তিরস্কার করলেন। একপর্যায়ে এ কথাও বললেন, ‘এই রোযা আর ইফতারে কী ফায়দা হবে? ইফতারে বসে নবীর সুন্নত নাই, বেকার, সব বেকার…।’<br>আসলেই কি দস্তরখান বিছানো সুন্নত? আর এই বাড়াবাড়ি কি ঠিক হলো? বিশিষ্ট ফিকহবিদ আল্লামা মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন বলেন, ‘হ্যা, দস্তরখান ব্যবহার সুন্নত, তবে দস্তরখান কোনটা? যে পাত্রে খাবার রেখে আহার করা হয়, মূলত তাই দস্তরখান, খাবারের পাত্র যার উপর রাখা হয় তা দস্তরখান নয়। পাত্রের নিচে বিছানো চামড়া, প্লাষ্টিক বা কাপড়কে যে দস্তরখান বলা হয়, তা আসলে দস্তরখান নয়। কেননা খাবার এগুলোর উপর রেখে খাওয়া হয় না, বরং পাত্রে রেখে খাওয়া হয়। বিধায় ঐ পাত্রই দস্তরখান এবং সুন্নত এটাই। তবে তা নবিজির অভ্যাসগত প্রয়োজনীয়অভ্যাসগত প্রয়োজনীয় সুন্নত (সুন্নতে আদিয়া লিলহাজাহ)।<br>অতএব খাবারের সময় প্রচলিত দস্তরখান বিছানো সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে যে কথা প্রসিদ্ধ আছে তা ঠিক নয়, বরং খানা খাওয়ার উপযোগী যে কোন বস্তুর উপর খানা রেখে খেলেই এ সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। চাই তা কাচের পাত্র হোক কিংবা মাটির বাসন, মেলামাইনের প্লেট হোক বা কাঁসার বাটি অথবা অন্য কিছু। তথাপিও প্লাষ্টিক, চামড়া বা কাপড় ইত্যাদি বিছিয়ে তার উপর খাওয়া নিষেধ নয় এবং এতে দোষের কিছু নেই। বরং বিছিয়ে নেয়াই ভালো। কারণ এতে খাবারের শান প্রকাশ পায়। কিন্তু একে ‘সুন্নতে হুদা’ মনে করা এবং এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয়।’ .<br>(প্রমাণাদি ও রেফারেন্সসহ বিস্তারিত জানতে দেখুন হযরতের লিখিত-‘ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা’ পৃঃ৬৮-৭৬, সুনানে গায়রে হুদার বহস) . ইমাম গাযযালী রহ.ও এ কথা বলেছেন। তিনি লিখেন- . ﺇﻥ ﻣﻦ ﺁﺩﺍﺏ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﺃﻥ ﻳﻮﺿﻊ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺴﻔﺮﺓ ﺍﻟﻤﻔﺮﻭﺷﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺭﺽ … ﺃﻥ ﻫﻨﺎﻙ ﺃﺭﺑﻌﺔ ﺃﺷﻴﺎﺀ ﺣﺪﺛﺖ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻌﻢ ﻭ ﻫﻰ ﺍﻟﻤﻮﺍﺋﺪ ﻭ ﺍﻟﻤﻨﺎﺧﻞ ﻭ ﺍﻷﺷﻨﺎﻥ ﻣﺜﻞ ﺍﻟﺼﺎﺑﻮﻥ ﻭ ﺍﻟﺸﺒﻊ … ‏) ﺍﺣﻴﺎﺀ ﻋﻠﻮﻡ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻟﻠﻐﺰﺍﻟﻰ ٢ / ١٨ ﺁﺩﺍﺏ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ )<br><br><br><strong>প্রচলিত ‘দস্তরখান’ আদতে সুন্নাত নয়!</strong><br><strong>ফাহিম সিদ্দীকি</strong><br>দস্তরখানে খানা খাওয়া সুন্নাতে দরুরীয়া বা প্রয়োজনীয় সুন্নত। সুন্নাতে হুদা তথা ইবাদতের বা সওয়াবের সুন্নত নয়। আমাদের দেশে পাত্রের নিচে যে কাপড়, প্লাস্টিক বা রেকসিন বিছানো হয়, তা বাস্তবে দস্তরখান নয়। কারণ এগুলোর উপর খানা রাখা হয় না। বরং খাবারের পাত্র রাখা হয়।<br>মূলতঃ খানা যে বস্তুর উপর রেখে খাওয়া হয় তাকেই দস্তরখান বলে। সুতরাং আমরা যে পাত্রে বা প্লেটে খানা খাই, সেটাই মূল দস্তরখান।নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দস্তরখান ব্যবহার করতেন। তবে তা’ ব্যবহার করার নির্দেশ বা উৎসাহ তার কাছ থেকে ছহীহ সনদে বর্ণিত হয়নি। দস্তরখান ছাড়া খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে তাঁর তরফ থেকে কোন আপত্তি সাব্যস্ত হয়নি। অনেক সময় আমরা দস্তরখান ছাড়াও খেতে বাধ্য হই। খাবার হোটেলগুলোতে আবর্জনা ফেলার জন্য ছোট্ট একটি বোন প্লেট রাখা হয় মাত্র। অনেক সময় এনিয়ে অযথা তিরস্কার করতে দেখা যায়, যা অনুচিত।হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কারো লোকমা পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে নেয়। তারপর তাতে যে আবর্জনা স্পর্শ করেছে তা যেন দূরীভূত করে এবং খাদ্যটুকু খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য সেটি ফেলে না রাখে। আর তার আঙ্গুল চেটে না খাওয়া পর্যন্ত সে যেন তার হাত রুমাল দিয়ে মুছে না ফেলে। কেননা সে জানে না খাদ্যের কোন অংশে বারাকাত রয়েছে। মুসলিম।উক্ত হাদীস পাঠে বোঝা যায়, যদি কোনো দস্তরখানা বিছানো থাকত তবে লোকমা পড়ে গেলে পরিষ্কারের কথা বলতেন না।হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও ‘সুকুরুজা’ অর্থাৎ ছোট ছোট পাত্রে আহার করেছেন, তার জন্য কখনও নরম রুটি বানানো হয়েছে কিংবা তিনি কখনো টেবিলের উপর আহার করেছেন বলে আমি জানি না। ক্বাতাদাহকে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে তাঁরা কিসের উপর আহার করতেন। তিনি বললেন: (সুফরা) দস্তরখানের উপর। বুখারী।প্রিয় পাঠক! দস্তরখান বিছিয়ে খানা খাওয়া আদব-শৃংখলার অংশ হবে কোন সন্দেহ নেই। বিষয়টি উত্থাপনের উদ্দেশ্য, একে সুনানে হুদার অন্তর্ভুক্ত মনে করে বাড়াবাড়ি পরিত্যাজ্য। দস্তরখানের সবচেয়ে বড় ফায়দা হল, এতে খাবার পড়ে নোংরা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না, পড়লে তুলে খাওয়া যায়। খাবার পড়ে গেলে উঠিয়ে খাওয়ার সুন্নাত আদায় করা যায়।<br>কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আমরা দস্তরখান বিছিয়ে খাবার খাই ঠিকই; কিন্তু দস্তরখানটি পরিষ্কার রাখি না। ফলে তাতে খাবার পড়লে তুলে খেতে রুচি হয় না। দস্তরখানকে কাটা, হাড্ডি ইত্যাদি রাখার পাত্র বানালে একসময় তা এমন অপরিষ্কার হয়ে যায় যে, তাতে খাবার পড়ে গেলে তুলে খেতে আর রুচি হয় না। আল্লাহ আমাদের সঠিক জেনে আমল করার তাওফীক দান করুন।<br>প্রমান:১।<br>ابْنُ أَبِي مَرْيَمَ أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ أَخْبَرَنِي حُمَيْدٌ أَنَّه“ سَمِعَ أَنَسًا يَقُوْلُ قَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَبْنِي بِصَفِيَّةَ فَدَعَوْتُ الْمُسْلِمِينَ إِلٰى وَلِيمَتِه„ أَمَرَ بِالأَنْطَاعِ فَبُسِطَتْ فَأُلْقِيَ عَلَيْهَا التَّمْرُ وَالأَقِطُ وَالسَّمْنُ وَقَالَ عَمْرٌو عَنْ أَنَسٍ بَنٰى بِهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ صَنَعَ حَيْسًا فِي نِطَعٍ.<br>সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৩৮৭<br>২।<br>حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِذَا وَقَعَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيَأْخُذْهَا فَلْيُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أَذًى وَلْيَأْكُلْهَا وَلاَ يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ وَلاَ يَمْسَحْ يَدَهُ بِالْمِنْدِيلِ حَتَّى يَلْعَقَ أَصَابِعَهُ فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِي فِي أَىِّ طَعَامِهِ الْبَرَكَةُ ‏”‏ ‏.‏<br>সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫১৯৬<br>৩।<br>عَنْ أَنَسٍ قَالَ مَا عَلِمْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَكَلَ عَلٰى سُكْرُجَةٍ قَطُّ وَلاَ خُبِزَ لَه“ مُرَقَّقٌ قَطُّ وَلاَ أَكَلَ عَلٰى خِوَانٍ قَطُّ قِيلَ لِقَتَادَةَ فَعَلاَمَ كَانُوا يَأْكُلُونَ قَالَ عَلٰى السُّفَرِ.<br>সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৩৮৬<br>৪।<br>ﻭاﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ﺗﻄﻠﻖ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﻣﺎ ﻳﻮﺿﻊ ﻋﻠﻴﻪ اﻟﻄﻌﺎﻡ ﻷﻧﻬﺎ ﺇﻣﺎ ﻣﻦ ﻣﺎﺩ ﻳﻤﻴﺪ ﺇﺫا ﺗﺤﺮﻙ ﺃﻭ ﺃﻃﻌﻢ ﻭﻻ ﻳﺨﺘﺺ ﺫﻟﻚ ﺑﺼﻔﺔ ﻣﺨﺼﻮﺻﺔ ﻭﻗﺪ ﺗﻄﻠﻖ اﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ﻭﻳﺮاﺩ ﺑﻬﺎ ﻧﻔﺲ اﻟﻄﻌﺎﻡ ﺃﻭ ﺑﻘﻴﺘﻪ ﺃﻭ ﺇﻧﺎﺅﻩ ﻭﻗﺪ ﻧﻘﻞ ﻋﻦ اﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﺇﺫا ﺃﻛﻞ اﻟﻄﻌﺎﻡ ﻋﻠﻰ ﺷﻲء ﺛﻢ ﺭﻓﻊ ﻗﻴﻞ ﺭﻓﻌﺖ اﻟﻤﺎﺋﺪﺓ<br>(ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী খ:৯,পৃ:৫৮০,মিরকাত)<br>৫।<br>ﻗﻠﺖ ﻭاﻟﺘﺤﻘﻴﻖ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺃﻥ اﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ﻫﻲ ﻣﺎ ﻳﺒﺴﻂ ﻟﻠﻄﻌﺎﻡ ﺳﻮاء ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺛﻮﺏ ﺃﻭ ﺟﻠﺪ ﺃﻭ ﺣﺼﻴﺮ ﺃﻭ ﺧﺸﺐ ﺃﻭ ﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ ﻓﺎﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ﻋﺎﻡ ﻟﻬﺎ ﺃﻧﻮاﻉ ﻣﻨﻬﺎ اﻟﺴﻔﺮﺓ ﻭﻣﻨﻬﺎ اﻟﺨﻮاﻥ ﻭﻏﻴﺮﻩ ﻓﺎﻟﺨﻮاﻥ ﺑﻀﻢ اﻟﺨﺎء ﻳﻜﻮﻥ ﻣﻦ ﺧﺸﺐ ﻭﺗﻜﻮﻥ ﺗﺤﺘﻪ ﻗﻮاﺋﻢ ﻣﻦ ﻛﻞ ﺟﺎﻧﺐ<br>(“আওনুল মা’বূদ শরহে আবু দাঊদ”

চেয়ার টেবিলে খানা খাওয়ার বিধান

<br>চেয়ার টেবিলে খানা খাওয়া উত্তম নয়। তবে অহংকারী মনোভাব না হলে হারাম বা নাজায়েজও নয়। তাই যেখানে চেয়ার টেবিল ছাড়া অন্য কোন ব্যবস্থা না থাকে, বা নিচে বসতে কোন ওজর থাকে, তাহলে চেয়ার টেবিলে বসে খানা খাওয়াতে কোন সমস্যা নেই।<br><br>তবে স্বাভাবিক অবস্থায় দস্তরখান বিছিয়ে খানা খাওয়াই উচিত। এটাই সুন্নত তরীকা।<br>عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «مَا عَلِمْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكَلَ عَلَى سُكْرُجَةٍ قَطُّ، وَلاَ خُبِزَ لَهُ مُرَقَّقٌ قَطُّ، وَلاَ أَكَلَ عَلَى خِوَانٍ قَطُّ» قِيلَ لِقَتَادَةَ: فَعَلاَمَ كَانُوا يَأْكُلُونَ؟ قَالَ: «عَلَى السُّفَرِ»<br>আনাস রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকখনও ‘সুকুর্জা’ অর্থাৎ ছোট ছোট পাত্রে আহার করেছেন, তার জন্য কখনও নরম রুটি বানানো হয়েছে কিংবা তিনি কখনো টেবিলের উপর আহার করেছেন বলে আমি জানি না। ক্বাতাদাহকে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে তাঁরা কিসের উপর আহার করতেন। তিনি বললেনঃ দস্তরখানের উপর। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৩৮৬, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩২৯২, সুনানে তিরমিজী হাদীস নং-১৭৮৮] والحاصل أن الأكل عليه (أى الخوان) بحسب نفس ذاته لا يربو على ترك الأولوية، فأما إذا لزم فيه التشبه باليهود أو النصارى- كما هو فى ديارنا- كان مكروها تحريما، وأما إذا لم يكن على دأبهم، فلا يخلو أيضا عن تفويت منافع…. الخ، قال محشى: قال المناوى: يعتاد المتكبرون من العجم الأكل عليه، لئلا تنخفض رؤوسهم، فالأكل عليه بدعة، لكنه جائز إن خلا عن قصد التكبر الخ (الكوكب الدرى مع الحاشية، كتاب الأطعمة-1\2**<br><br>সূত্রঃ আহলে হক মিডিয়া

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
1
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *