ইসলাম

তাকলীদ পরিহারে বিশৃংখলা

তাকলীদ পরিহার করলে বিভিন্ন ধরণের বিশৃংখলা দেখা দিতে পারে। যেমন

১. কোন সুনির্দিষ্ট ইমামের অনুসরণ বা তাকলীদ না করায় ব্যক্তি বা সমষ্টির ধর্মের উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ে তা নিত্যদিনের অভিজ্ঞতায় বাস্তব ও চাক্ষুস ব্যাপার। বর্তমানকার যুগ কু-প্রবৃত্তি এবং স্বেচ্ছাচারিতার জয় জয়কারের যুগ তা বলাই বাহুল্য। যা কিয়ামতের পূর্বক্ষণে প্রকাশিত বহুমুখী ‘ফিৎনা ফাসাদ’ অধ্যায়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক বিবৃত হয়েছে। উক্ত বাস্তবতা শরীয়তের চিন্তাশীল বিজ্ঞজনদের কাছে সুস্পষ্ট। বর্তমান যামানার প্রেক্ষাপটে নতুন করে ইজতিহাদের দ্বার উম্মুক্ত করার ফলাফল দাঁড়াবে, যে কেউ কোন মতে পবিত্র কুরআনের এবং মিশকাত নামক হাদীসগ্রন্থের তরজমা পাঠ করেই দাবী করতে শুরু করবে, অন্যদের ইজতিহাদকৃত মতামত যখন গ্রহণযোগ্য হয় তবে আমার মতামত কেন গ্রহণযোগ্য হবে না। যখন শরীয়ত সংক্রান্ত ইজতিহাদ বা গবেষণা এতো পাইকারী হারে চলতে থাকবে; তখন তার ফলশ্রুতিতে কুরআন সুন্নাহর বিধি-বিধানের বিকৃতি, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন শুরু হবে। যা গাইরি মুকাল্লিদ বা মাযাহাব অমান্যকারী ভাইয়েরাও অস্বীকার করতে পারবে না। সুতরাং উক্ত পাইকারী হারের হস্তক্ষেপের দ্বারা কুরআন হাদীসকে শিশুদের খেলনায় পরিণত করা থেকে অবশ্যই বাঁচাতে হবে। কোন সুনির্দিষ্ট ইমামের অনুসরণ পরিহার করায় কি কি সর্বনাশা ফিৎনা-ফাসাদ এবং নাস্তিকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে তা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। কেউ কেউ তাকলীদ ছেড়ে খোদায়ী দাবী করছে। কেউ ইমাম মাহদী হওয়ার দাবী করছে। আবার কেউ তাকলীদ অস্বীকার করতে গিয়ে হাদীসশাস্ত্রও অস্বীকার করে বসেছে। আবার কেউ কেউ মুজাদ্দিদ সেজে পুরো মুসলিম উম্মাহকে ভ্রষ্টতার কাতারে ফেলে খোদ ইসলামের ভিত্তিকেই নড়বড়ে করে দেবার চেষ্টা করছে আল্লাহ পাকের অগণিত শুকরিয়া যে, আজ পর্যন্ত কোন মুকাল্লিদ তথা বিশেষ কোন মাযহাবের সাথে জড়িত সত্যিকারের অনুসারী ব্যক্তি উক্তরূপ ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হয়নি।

২. সুনির্দিষ্ট কোন মাযহাব অনুসরণ করা জরুরী না হয়ে যদি যে কোন সময় যে কোন মাযহাব অনুসরণের ব্যাপক স্বাধীনতা দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে কু-প্রবৃত্তি প্রবণতাজনিত কারণে মনমত যখন যে ইমামের যে মাসআলা বা সমাধান স্বীয় উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যশীল হবে অথবা যেখানে যেটা সবচেয়ে বেশী সহজ হবে সেটা অনুযায়ী আমল করা হবে। যেমন, কেউ স্বীয় স্ত্রীকে স্পর্শ করল তখন বলবে, আমি এ ক্ষেত্রে (অযূ ভঙ্গ হওয়া না হওয়া) হানাফী মাযহাবের অনুসারী। কেননা, হাদীসের আলোকে হানাফী মাযহাবের গবেষণা অনুসারে স্ত্রীকে বা কোন মহিলাকে শুধু স্পর্শ করলে অযূ ভঙ্গ হয় না। বরং তা শর্তসাপেক্ষে হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে শাফিয়ী মাযহাবের গবেষণা অনুসারে যে কোনভাবে স্ত্রী বা কোন মহিলা স্পর্শ করলে অযূ ভঙ্গ হয়ে যায়।

৩. সুনির্দিষ্ট কোন মাযহাব মেনে চলা ব্যতীত সাধরণ্যে বেপরোয়া ঔদাসীন্যতা, পরস্পরের মধ্যে সংঘাত, অনৈক্য, ঝগড়া-বিবাদ ও হিংসা সৃষ্টি হয়। হাকীমুল উম্মাহ হযরত শাহ আশরাফ আলী থানভী (রহ.) বলেন, তাকলীদ বা নির্দিষ্ট যে কোন একটি মাযহাব মেনে চলা পরিহার করলে নিম্নে বর্ণিত পাঁচটি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। যথা- ১. দীনি ইলম ও আমলে নিষ্ঠার্জন থাকেনা ।

২. মনের চাহিদার বিপরীতে ধর্মকে প্রাধান্য দেওয়া হয়না। নিয়ম তো হল, মনের ইচ্ছাকে ধর্মের বাধ্যগত করে নেওয়া। ধর্মকে ইচ্ছার অনুগত বা দাসে পরিণত না করা ।

৩. তাকলীদের মাধ্যমে এমন কাজ থেকে বেঁচে থাকা যায় যাতে স্বীয় ধর্মের ক্ষতির প্রবল আশংকা থাকে।

৪. তাকলীদের মাধ্যমে সত্যবাদী হক পন্থীদের ঐক্যমত তথা اجماع امة এর উপর থাকা সম্ভব হয়।

৫. তাকলীদের মাধ্যমে ইসলামের গণ্ডির ভিতর থাকা সহজতর হয়।

তথসূত্র:

তাকলীদ ও মাযহাব প্রসঙ্গ

মুফতি হিফজুর রহমান

প্রধান মুফতি,জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া,সাতমসজিদ,মুহাম্মদপুর,ঢাকা।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *