ইবাদত

কুরআন ও হাদীসের আলোকে শোকরের গুরুত্ব ও ফজিলত

কুরআনের আলোকে শোকরের গুরুত্ব ও ফজিলত

১.আল্লাহকে স্মরণ করলে আল্লাহও তাকে স্মরণ করেন:

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : ্فاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ * “কাজেই তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং আমার শোকর করতে থাকো, না-শোকরি কোরো না। সূরা আল-বাকারাহ, ২:১৫২

২.কৃতজ্ঞ বান্দারাই সত্যিকার ইবাদাতকারী :

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : … وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ “আল্লাহর উদ্দেশ্যে শোকর করতে থাকো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাকো।” সূরা আল-বাকারাহ্, ২:১৭২

৩. কৃতজ্ঞতার মর্যাদা ও শাস্তি থেকে মুক্তি :

আল্লাহ ঈমানের পাশেই কৃতজ্ঞতাকে স্থান দিয়েছেন এবং পরিষ্কার করেছেন—যে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হয় এবং ঈমান আনে, তাকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কোনো লাভ নেই। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : مَّا يَفْعَلُ اللَّهُ بِعَذَابِكُمْ إِن شَكَرْتُمْ وَآمَنتُمْ… “তোমরা যদি শোকর গুজারি করো আর ঈমান আনো, তাহলে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহ কী করবেন?… -সূরা আন নিসা, ৪: ১৪৭

অন্য অর্থে আপনাকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে আপনি যদি তা পূরণ করেন, অর্থাৎ আপনার মধ্যে যদি ঈমান ও কৃতজ্ঞতা থাকে তবে আল্লাহ আপনাকে কেন শাস্তি দেবেন?

৪. আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞ ও অকৃতজ্ঞ ব্যক্তির অবস্থান :

কৃতজ্ঞ ও অকৃতজ্ঞ। তিনি অকৃতজ্ঞতা ও অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করেন। আর কৃতজ্ঞতা ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে সবেচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا ) “আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।” সূরা আল-ইনসান, ৭৬:৩

৫. কৃতজ্ঞতা আমাদের নিজেদের জন্যই :

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : هَذَا مِن فَضْلِ رَبِّي لِيَبْلُوَنِي أَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيٌّ كَرِيمٌ * “এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, আমাকে পরীক্ষা করার জন্য—আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞ হই। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের কল্যাণেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর যে অকৃতজ্ঞ হয় (সে জেনে রাখুক), নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ। “সূরা আন-নামল, ২৭:৪০

আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন : وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَبِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَبِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ * “স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন—যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য (আমার নিআমাত) বৃদ্ধি করে দেবো, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও (তবে জেনে রেখো, অকৃতজ্ঞদের জন্য) আমার শাস্তি অবশ্যই কঠিন। ”[সূরা ইবরাহীম, ১৪:৭

আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন : إِن تَكْفُرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنكُمْ وَلَا يَرْضَى لِعِبَادِهِ الْكُفْرَ وَإِن تَشْكُرُوا يَرْضَهُ لَكُمْ “তোমরা যদি কুফুরি করো তবে (জেনে রেখো), আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন৷ তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফুরি আচরণ পছন্দ করেন না। তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, তবে তোমাদের জন্য তিনি তা পছন্দ করেন। ”সূরা আয-যুমার, ৩৯:৭

৬. কুরআনে কৃতজ্ঞ-অকৃতজ্ঞের মাঝে তুলনা :

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ * “মুহাম্মাদ হচ্ছে একজন রাসূলমাত্র, তাঁর পূর্বে আরও অনেক রাসূল গত হয়েছে; কাজেই সে যদি মারা যায় কিংবা নিহত হয়, তবে কি তোমরা উল্টোদিকে ঘুরে দাঁড়াবে? এবং যে ব্যক্তি উল্টোদিকে ফিরে দাঁড়ায় সে আল্লাহর কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না এবং আল্লাহ কৃতজ্ঞদের অতিশীঘ্রই বিনিময় প্রদান করবেন।” সূরা আল ইমরান, ৩: ১৪৪

৭. কৃতজ্ঞতার পুরস্কার অফুরন্ত :

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : لَبِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَبِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ “যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য (আমার নিআমাত)বৃদ্ধি করে দেবো।”সূরা ইবরাহীম,১৪ :৭

আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন : … وَسَيَجْزِى الله الشَّاكِرِينَ * “এবং আল্লাহ কৃতজ্ঞদের অতিশীঘ্রই বিনিময় প্রদান করবেন।” সূরা আল ইমরান, ৩: ১৪৪

৮. মানুষকে অকৃতজ্ঞ করা ইবলিসের লক্ষ্য :

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ثُمَّ لَآتِيَنَّهُم مِّن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَابِلِهِمْ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شاكِرِينَ “তারপর আমি তাদের সামনে দিয়ে, তাদের পেছন দিয়ে, তাদের ডান দিয়ে, তাদের বাম দিয়ে, তাদের কাছে অবশ্যই আসব। তুমি তাদের অধিকাংশকেই শোকর আদায়কারী পাবে না।” [সূরা আল-আ’রাফ, ৭:১৭]

৯. আর খুব কম লোকই কৃতজ্ঞ :

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন … وَقَلِيلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ ) “আমার বান্দাদের অল্প‍ই কৃতজ্ঞ। ” [ সূরা সাবা, ৩৪:১৩]

১০. কৃতজ্ঞতা নিষ্ঠার পরিচায়ক

আল্লাহ কুরআনে বলেন, একমাত্র কৃতজ্ঞ বান্দারাই সত্যিকার ইবাদাত করে। সুতরাং যারা কৃতজ্ঞ বান্দা নয়, তারা প্রকৃত অর্থে ইবাদাতকারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন . … وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ * “এবং আল্লাহর উদ্দেশে শোকর করতে থাকো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাকো।”[সূরা আল-বাকারাহ, ২:১৭২]

১১. অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের নির্দেশঃ

আল্লাহ মূসা -কে কৃতজ্ঞতার সাথে তাঁর অনুগ্রহ গ্রহণের নির্দেশ দিচ্ছেন : قَالَ يَا مُوسَى إِنِّي اصْطَفَيْتُكَ عَلَى النَّاسِ بِرِسَالَاتِي وَبِكَلَامِي فَخُذْ مَا آتَيْتُكَ وَكُن مِّنَ الشَّاكِرِينَ “তিনি বললেন, হে মূসা, আমি আমার রিসালাত (যা তোমাকে দিয়েছি) ও আমার বাক্য (যা তোমার সঙ্গে বলেছিলাম তার) দ্বারা সকল লোকের মধ্য থেকে তোমাকে নির্বাচিত করেছি। কাজেই যা তোমাকে দিয়েছি তা গ্রহণ করো আর শোকর আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।”[সূরা আল-আ’রাফ, ৭:১৪৪]

১২. কৃতজ্ঞতা : আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম :

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন وان تشكروا يرضه لكم”তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, তবে তোমাদের জন্য তা তিনি পছন্দ করেন।”[১১]

১৩. কৃতজ্ঞ হওয়ার জন্যে ইবরাহীম -এর প্রশংসা :

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتَا لِلَّهِ حَنِيفًا وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِينَ * شَاكِرًا لِأَنْعُمِهِ اجْتَبَاهُ وَهَدَاهُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ * “ইবরাহীম ছিল আল্লাহর প্রতি বিনয়াবনত একনিষ্ঠ এক উম্মাত। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সে ছিল আল্লাহর নিআমাতরাজির জন্য শোকর গুজার। আল্লাহ তাকে বেছে নিয়েছিলেন আর তাকে সরল-সঠিক পথ দেখিয়েছি (সূরা আন-নাহ্ল, ১৬ : ১২০-১২১)

১৪ কৃতজ্ঞতা : মানুষ সৃষ্টির একটি উদ্দেশ্য :

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন وَاللَّهُ أَخْرَجَكُم مِّن بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَنْبِدَةً لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

“আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের পেট থেকে বের করেন, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে শোনার শক্তি, দেখার শক্তি আর অন্তর দান করেছেন যাতে তোমরা শোকর আদায় করতে পারো।” সূরা আন-নাহল, ১৬:৭৮

১৫. কৃতজ্ঞতা : সাহায্য ও বিজয়ের শর্ত :

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّهُ بِبَدْرٍ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ فَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ * “এবং আল্লাহ তোমাদের হীন অবস্থায় বাদর যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের সাহায্য করেছেন, সুতরাং আল্লাহকে ভয় করে চলো, যেন তোমরা শোকরগুজার হতে পারো।” সূরা আল ইমরান, ৩: ১২৩]

১৬. কৃতজ্ঞতা : নবি পাঠানোর উদ্দেশ্য :

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ ) “কাজেই তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং আমার শোকর করতে থাকো, না-শোকরি কোরো না।”[সূরা আল বাকারাহ্, ২:১৫২]

হাদীসের আলোকে শোকরের গুরুত্ব ও ফজিলত

১. নবিজি -এর অনুপম কৃতজ্ঞতাবোধ :

বর্ণিত আছে, রাসূল সারারাত জেগে ইবাদাত করতেন। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তাঁর পা ফুলে যেত। যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হতো “আপনি কেন এত কষ্ট করছেন? অথচ আল্লাহ আপনার আগের ও পরের সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দিয়েছেন!” জবাবে তিনি বলতেন: “আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?”[আস-সহীহ, বুখারি : ১১৩০;]

২. কৃতজ্ঞতা জানাবার তাওফিক চেয়ে দুআ করার নির্দেশ :

রাসূল মুআয এ-কে বললেন : والله انى لأحبك فلا تنسى أن تقول دبر كل صلاة للَّهُمَّ أَعِنِّى عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ ”আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে ভালোবাসি, সুতরাং প্রত্যেক সালাতের পর বলতে ভুলে যেয়ো না : হে আল্লাহ, আমাকে সাহায্য করো তোমাকে স্মরণ করতে, তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে এবং তোমার ইবাদাত করতে।”[আল-মুসনাদ, আহমাদ : ২২১১৬, শাইখ শু’আইব আরনাউত্ব ও তাঁর সঙ্গীদের মতে সহীহ; আলআদাবুল মুফরাদ, বুখারি : ৬৯০; শাইখ আলবানি এর মতে সহীহ; আস সুনানুল কুবরা, নাসাঈ :৯৮৫৭ আস-সুনান, আবূ দাউদ : ১৫২২; ইমাম নববি সহীহ বলেছেন— তাহযিবুল আসমা ওয়াল লুগাত : ২/৯৯; আস-সহীহ, ইবন হিব্বান : ২০২০; আস-সহীহ, ইবন খুযাইমাহ : ৭৫১, শা‍ইখ হাবিবুর রহমান আযমি -এর মতে সহীহ।]

৩. কৃতজ্ঞতা জানাবার তাওফিক চেয়ে দুআ

হিশাম ইবনু উরওয়াহ বলেন, “রাসূল -এর দুআসমূহের একটি হচ্ছে, اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ ‘হে আল্লাহ, আমাকে সাহায্য করো তোমাকে স্মরণ করতে, তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে এবং তোমার ইবাদাত করতে। ‘ .( এটা মূলত পূর্বের দুআই। তবে সেখানে মুআয (রা.) কে রাসূলুল্লাহ (সা.) ওয়াসিয়্যাত করেছিলেন আর এখানে তাঁর অভ্যাস বর্ণিত হচ্ছে। এটা হিশাম ইবন উরওয়াহ বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ ইবন মুনকাদির এর থেকে। তিনি মুরসালভাবে হাদীসটি রেওয়ায়েত করেছেন। দেখুন— আল মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ : ২৯৪০০; আদ দা’ওয়াতুল কাবীর, তাবারানি : ২৭৪; আশ শুকর, ইবন আবিদ দুনইয়া : ৪]

৪. কৃতজ্ঞতাবোধ চারটি সেরা নিআমাতের একটি

ইবনু আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, “রাসূল (সা.) বলেন, أَرْبَعُ مَنْ أُعْطِيَهُنَّ فَقَدْ أُعْطِيَ خَيْرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ‘চারটি এমন নিআমাত আছে, যাকে তা দেওয়া হয়েছে তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দেওয়া হয়েছে : قَلْبًا شَاكِرًا ، وَلِسَانًا ذَاكِرًا ، وَبَدَنا عَلَى الْبَلاءِ صَابِرًا ، وَزَوْجَةٌ لَا تَبْغِيهِ خَوْنًا فِي نَفْسِهَا ولا ماله

১. কৃতজ্ঞ অন্তর (যা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে),

২. যিকরকারী জবান (যা সব সময় আল্লাহর যিকরে লিপ্ত থাকে),

৩. এমন শরীর, যা বিপদ-আপদে সবর করে এবং

৪. বিশ্বস্ত স্ত্রী, যে তার দেহ এবং স্বামীর সম্পদ দিয়ে অন্যায় করে না। আল মু’জামুল আওসাত, তাবারানি : ৭২১২; আহাদীসুল মুখতারাহ, যিয়া মাকদিসি : ৬৩, ইমাম হাইসামি-এর মতে আল আওসাতের রাবিগণ সহীহ — মাজমাউয যাওয়াইদ : ৭৪৩৭

৫. কৃতজ্ঞতার তাৎক্ষণিক পুরস্কার :

আল-কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ আয়িশা (রা.) এ থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন : ما أنعم الله على عبد نعمة فعلم أنها من عند الله الا كتب الله له شكرها وما علم الله من عبد ندامة على ذنب إلا غفر الله له قبل أن يستغفره وإن الرجل يشترى الثوب بالدينار فيلبسه فيحمد الله فما يبلغ ركبتيه حتى يغفر له “যখন আল্লাহ বান্দাকে কোনো নিআমাত দেওয়ার পর বান্দা বুঝতে পারে যে এটা আল্লাহর তরফ থেকেই এসেছে, তখন আল্লাহ তাকে শোকরগুজারদের মাঝে লিখে দেন (শামিল করে নেন)। আল্লাহ যখন গুনাহের কারণে বান্দার অনুশোচনা দেখেন, তখন সে ক্ষমা চাওয়ার আগেই তাকে ক্ষমা করে দেন। আর যখন কোনো ব্যক্তি দিনারের বিনিময়ে কোনো কাপড় কিনে তা পরিধান করে এবং (এ জন্য) আল্লাহর প্রশংসা করে, তখন সে কাপড় তার দু-হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছানো মাত্রই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। [আল-মুসতাদরাক, হাকিম : ১৮৯৪, ইমাম হাকিম বলেন, এই হাদীসের সনদে এমন কোনো রাবি নেই, যার ওপর জারহ (সমালোচনা) করা হয়েছে বলে তিনি জানেন। ইমাম যাহাবি কোনো মন্তব্য করেননি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই সনদে থাকা মুহাম্মাদ আল আত্তারের ওপর কঠিন জারহ রয়েছে। এমনকি ইমাম ইবন আবদিল বারর তাকে মাতরুকূল হাদীস বলেছেন। ইমাম ইবন আদি আবদিল বারর ও আবূ যুরআ -এর বিপরীতে ইমাম ইবন হিব্বান তাঁকে সিকাহ বলেছেন। এ জন্য শাইখ আলবানি এই হাদীসকে দ্বঈফুন জিদ্দান বলেছেন— সিলসিলাতুল আহাদীসিদ দ্বঈফাহ : ৫৩৪৭]

৬. কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কারণে আল্লাহ সন্তুষ্ট হোন :

রাসূল (সা.) বলেন, إن الله ليرضى عن العبد يأكل الأكله فيحمده عليها ويشرب الشربه فيحمده عليها “আল্লাহ বান্দার প্রতি খুশি হন, যখন বান্দা কিছু খায় আল্লাহর প্রশংসা করে এবং যখন কোনো কিছু পান করে আর সে জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে।”[আস-সহীহ, মুসলিম : ২৭৩৪]

৭. আল্লাহ বান্দার কৃতজ্ঞতা হিসেবে নিআমাতের প্রতিফলন দেখতে চান :

শু’বা বলেন, আল-ফাদল ইবনু ফুদালা বর্ণনা করেন, আবূ রাজা আল-উতারিদি বলেন, একবার আমরা ইমরান ইবনু আল-হুসাইনি -কে খুব সুন্দর কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখলাম, যা ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি। ইমরান আমাদের বললেন, রাসূল (সা.) এ বলেছেন : إذا أنعم الله على عبد نعمة يحب أن يرى أثر نعمته على عبده “আল্লাহ যখন বান্দাকে কোনো নিআমাত দান করেন, তো তার বান্দার মাঝে সেই নিআমাতের প্রতিফলন দেখতে চান।(আত তারগীব ওয়াত তারহীব, ইসমাঈল বিন মুহাম্মাদ আল আসবাহানি : ২৩৬৮; ইমাম হাইসামি এর মতে সহীহ— মাজমাউয যাওয়াইদ : ৫/১৩২)

৮. কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিআমাতের প্রতিফলনে লৌকিকতা না থাকা :

ইবনু শুআইব তাঁর পিতা এবং পিতামহের কাছ থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন : كلوا واشربوا وتصدقوا في غير مخيلة ولا سرف فإن الله يحب أن يرى أثر نعمته على عبده “খাও, পান করো, সাদাকাহ দাও, তবে অতিরঞ্জন কোরো না, অপব্যয় কোরো না। কারণ, আল্লাহ বান্দার মাঝে নিআমাতের প্রতিফলন দেখতে চান।” (শু’আবুল ঈমান, বাইহাকি : ৫৭৮৬; হাদীসটি শব্দ-পার্থক্যসহ বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবন মাজাহ, (আস-সুনান : ৩৬০৫), ইমাম নাসাঈ, (আস সুনানুস সুগরা : ২৫৫৮) ও ইমাম তিরমিযি (আস-সুনান : ২৮১৯)। ইমাম তিরমিযি এই সনদকে হাসান বলেছেন।)

৯. কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিআমাতের প্রতিফলন দেখানোর নির্দেশ :

আবুল আখওয়াছ বর্ণনা করেছেন, তাঁর পিতা বলেন, “আমি অবিন্যস্ত ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় রাসূল (সা.) -এর কাছে গেলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন : ‘তোমার কি কোনো সম্পদ আছে?’ আমি বললাম, “হ্যাঁ”। তিনি জানতে চাইলেন : কী ধরনের সম্পদ রয়েছে? আমি বললাম : ‘আমার সব ধরনের সম্পদ আছে—আল্লাহ আমাকে উট, ঘোড়া, গোলাম এবং মেষপাল দিয়েছেন’। রাসূল বললেন : فإذا آتاك الله مالا فليرى عليك “আল্লাহ যদি তোমাকে সম্পদ দিয়ে থাকেন তো তা যেন তোমার মাঝে দেখা যায় (অর্থাৎ সে সম্পদের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়)।”[আস সুনানুস সুগরা, নাসাঈ : ৫২২৩; আস-সুনান, ইমাম আবূ দাউদ : ৪০৬৩; আস-সুনান, তিরমিযি: ২০০৬, ইমাম তিরমিযি -এর মতে হাদীস হাসান সহীহ।]

১০. ছোটো নিআমাতের কৃতজ্ঞতা জানানো :

নোমান বিন বাশীর থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন : التحدث بالنعمة شكر وتركها كفر ومن لا يشكر القليل لا يشكر الكثير ومن لا يشكر الناس لا يشكر الله والجماعة بركة والفرقة عذاب “আল্লাহর নিআমাত সম্পর্কে বলা ‘কৃতজ্ঞতা’ এবং তা না বলা ‘কুফর’। যে ব্যক্তি আল্লাহর ক্ষুদ্র নিআমাতের শুকরিয়া আদায় করে না, সে বড় নিআমাতেরও শুকরিয়া আদায় করে না। যে ব্যক্তি বান্দার শুকরিয়া আদায় করে না, সে আল্লাহর শুকরিয়াও আদায় করে না। জামাআতবদ্ধ থাকা বরকত এবং বিভক্ত হওয়া আযাব।”[আশ শুকর, ইবন আবিদ দুনইয়া : ৬৪; শাইখ আলবানি এর মতে হাসান — সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা: ৬৬৭]

১১. অকৃতজ্ঞ আচরণের ফলে রিযক সংকুচিত হয়ে যায় :

ইবনু আবিদ-দুনইয়া আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) এ একদিন আয়িশা (রা.) -এর ঘরে প্রবেশ করে দেখলেন এক টুকরো রুটি মেঝেতে পড়ে আছে। রাসূল (সা.) এ রুটির টুকরোটি তুলে নিলেন, সেটাকে মুছলেন, এবং তাঁকে বললেন : يا عائشة أحسنى جوار نعم الله فإنها فلما نفرت عن أهل بيت فكادت أن ترجع اليهم “হে আয়িশা, আল্লাহর নিআমাতের সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করো; কারণ, কোনো ঘর থেকে যখন এটা বেরিয়ে যায়, সেখানে আর কখনো ফিরে আসে না । আশ শুকর, ইবন আবিদ দুনইয়া : ২, ইসলাহুল মাল : ৩৪৩; আস-সুনান, ইবন মাজাহ : ৩৩৫৩; শাইখ আলবানি দ্বঈফ বলেছেন, ইরওয়াউল গালীল : ১৯৬১; অপর সনদে ইমাম আবূ ইয়া’লা উল্লেখ করেছেন মুসনাদ-এ, তবে ইমাম হাইসামি দ্বঈফ বলেছেন – মাজমাউয যাওয়াইদ : ৮/১৯৫

১২. মৃত্যুর সময়ও মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে:

আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ বলেছেন : ان المؤمن عندى بمنزلة كل خير يحمدنى وأنا أنزع نفسه من بين جنبيه “মুমিনের সম্পর্ক আমার সাথে সবচেয়ে ভালো, সে তখনো আমার প্রশংসা করে যখন আমি তার দেহ থেকে আত্মা বের করে আনি।”[ আল-মুসনাদ, বাযযার : ৮৪৭১; ইমাম হাইসামি-এর মতে সহীহ — মাজমাউয যাওয়াইদ : ১০/৯৬]

১৩. আল্লাহর নিআমাতের যথাযথ মূল্যায়নের পদ্ধতি :

আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন : إذا أحب أحدكم أن يرى قدر نعمة الله عليه فلينظر إلى من تحته ولا ينظر إلى من فوقه “কোনো ব্যক্তি যদি তার ওপর আল্লাহর কতটা নিআমাত আছে তা দেখতে চায়, তাহলে সে যেন তারচেয়ে কম ভাগ্যবানদের দিকে তাকায়, তারচেয়ে বেশি ভাগ্যবানদের দিকে না তাকায়। ” [ আয যুহদ, ইবনুল মুবারাক : ১৪৩৩; আশ শুকর, ইবন আবিদ দুনইয়া : ১১, আবূ হুরাইরাহ ভিন্ন সনদে এই একই অর্থের হাদীস বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারি (আস-সহীহ :৬৪৯০)ও ইমাম মুসলিম (আস-সহীহ :২৯৬৩ )

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *