জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধৈর্যের প্রয়োজন
প্রতিটি পদক্ষেপে মুমিনের ধৈর্যের প্রয়োজন। আল্লাহর নির্দেশের সামনে ধৈর্যের প্রয়োজন। আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে ধৈর্যের প্রয়োজন। কারণ, এ পথে নামলে নানা ধরণের কষ্ট ও বিপদের মুখোমুখি হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “তোমার প্রভুর পথে আহবান কর হেকমত এবং ভাল কথার মাধ্যমে। আর সর্বোত্তম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। তোমার প্রভু তো সব চেয়ে বেশি জানেন, কে তাঁর পথ থেকে বিপথে গেছে আর তিনিই সব চেয়ে বেশি জানেন কারা সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন।…আর ধৈর্য ধর। ধৈর্য ধর কেবল আল্লাহর উপর।” [সূরা নাহল: ১২৫-১২৭]
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে গেলেও চরম ধৈর্যের পরিচয় দেয়া প্রয়োজন। কারণ, এ পথে মানুষের পক্ষ থেকে নান ধরণের যাতনার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন আল্লাহ তায়ালা লোকমান সম্পর্কে বলেন, (তিনি তার সন্তানকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন): “হে বৎস, নামায প্রতিষ্ঠা কর, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ কর। আর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধারণ কর। বিপদে ধৈর্য ধরণ করা তো বিশাল সংকল্পের ব্যাপার।” [সূরা লোকমান: ১৭]
মুমিনের ধৈর্যের প্রয়োজন জীবনের নানান বিপদ-মুসিবত, কষ্ট ও জটিলতার সামনে। সে বিশ্বাস করে যত সংকটই আসুক না কেন সব আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। ফলে সে তা হালকা ভাবে মেনে নেয়। বিপদে পড়েও খুশি থাকে। এ ক্ষেত্রে ক্ষোভ, হতাশা ও অস্থিরতা প্রকাশ করে না। নিজের ভাষা ও আচরণকে সংযত রাখে। কারণ, সে আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে বিশ্বাসী। সে তকদীরকে বিশ্বাস করে। তকদীরকে বিশ্বাস করা ঈমানের ছয়টি রোকনের একটি।
তাকীরের উপর ঈমান রাখলে তার অনেক সুফল পাওয়া যায়। তন্মধ্যে একটি হল, বিপদে ধৈর্য ধারণ। সুতরাং কোন ব্যক্তি বিপদে সবর না করলে তার অর্থ হল, তার কাছে ঈমানের এই গুরুত্বপূর্ণ খুঁটিটি অনুপস্থিত। অথবা থাকলেও তা খুব নড়বড়ে। ফলে সে বিপদ মূহুর্তে রাগে-ক্ষোভে ধৈর্যহীন হয়ে পড়ে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খবর দিয়েছেন যে, এটা এমন এক কুফুরী মূলক কাজ যা আকীদার মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে।
বিপদ-আপদের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মোচন হয়:
আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে বিভিন্ন বালা-মুসিবত দেন এক মহান উদ্দেশ্যে। তা হল এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহ মোচন করে থাকেন। যেমন আনাস রা. বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আল্লাহ যখন কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন দুনিয়াতেই তাকে শাস্তি দেন। কিন্তু বান্দার অকল্যাণ চাইলে তিনি তার গুনাহের শাস্তি থেকে বিরত রেখে কিয়ামতের দিন তার যথার্থ প্রাপ্য দেন।“
ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন: “বিপদ-মুসিবত হল নেয়ামত। কারণ এতে গুনাহ মাফ হয়। বিপদে ধৈর্য ধারণ করলে তার প্রতিদান পাওয়া যায়। বিপদে পড়লে আল্লাহর কাছে আরও বেশি রোনাজারি করতে হয়। তার নিকট আরও বেশি ধর্না দিতে হয়। আল্লাহর নিকট নিজের অভাব ও অসাহয়ত্তের কথা তুলে ধরার প্রয়োজন হয়। সৃষ্টি জীব থেকে বিমুখ হয়ে এক আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হয়।…বিপদের মধ্যে এ রকম অনেক বড় বড় কল্যাণ নিহিত রয়েছে।“
বিপদে পড়লে যদি গুনাহ মোচন হয়, পাপরাশী ঝরে যায় তবে এটা তো বিশাল এক নেয়ামত। সাধারণভাবে বালা-মসিবত আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত লাভের মাধ্যম। তবে কোন ব্যক্তি যদি এ বিপদের কারণে এর থেকে আগের থেকে আরও বড় গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে তবে তা দ্বীনের ক্ষেত্রে তার জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, কিছু মানুষ আছে যারা দারিদ্রতায় পড়লে বা অসুস্থ হলে তাদের মধ্যে মুনাফেকি, ধৈর্য হীনতা, মনোরোগ, স্পষ্ট কুফুরী ইত্যাদি নানান সমস্যা সৃষ্টি হয়। এমনকি অনেকে কিছু ফরয কাজ ছেড়ে দেয়। অনেকে বিভিন্ন হারাম কাজে লিপ্ত হয়। ফলে দ্বীনের ক্ষেত্রে তার বড় ক্ষতি হয়ে যায়। সুতরাং এ রকম ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিপদ না হওয়াই কল্যাণকর। মুসীবতের কারণে নয় বরং মুসীবতে পড়ে তার মধ্যে যে সমস্যা সৃষ্টি তার কারণে বিপদ না আসাই তার জন্য কল্যাণকর।
পক্ষান্তরে বিপদ-মুসীবত যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে ধৈর্য ও আনুগত্য সৃষ্টি করে তবে এই মুসীবত তার জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে বিশাল নেয়ামতে পরিণত হয়….।”
বিপদ-আপদ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বান্দার ধৈর্যের পরীক্ষা নেন:
বিপদ দিয়ে আল্লাহ পরীক্ষা করেন কে ধৈর্যের পরিচয় দেয় এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকে পক্ষান্তরে কে ধৈর্য হীনতার পরিচয় দেয় ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বিপদ যত কঠিন হয় পুরস্কারও তত বড় হয়। আল্লাহ কোন জাতিকে ভালবাসলে তাদেরকে পরীক্ষা করেন। সুতরাং যে তাতে সন্তুষ্ট থাকে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান আর যে তাতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান।”
অত্র হাদীসে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় দিক রয়েছে। যেমন:
১) বান্দা যেমন আমল করবে তেমনই প্রতিদান পাবে। “যেমন কর্ম তেমন ফল।”
২) এখানে আল্লাহর একটি গুনের পরিচয় পাওয়া যায়। তা হল ‘সন্তুষ্ট হওয়া’। আল্লাহ তায়ালার অন্যান্য গুনের মতই এটি একটি গুন। অন্য সব গুনের মতই এটিও আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য হবে যেমনটি তার জন্য উপযুক্ত হয়।
৩) অত্র হাদীসে জানা গেল যে, আল্লাহ তায়ালা এক বিশাল উদ্দেশ্যে বান্দা উপর বিপদ-মসিবত দিয়ে থাকেন। তা হল তিনি এর মাধ্যমে তার প্রিয়পাত্রদেরকে পরীক্ষা করেন।
৪) এখানে তকদীরের প্রমাণ পাওয়া যায়।
৫) মানব জীবনে যত বিপদাপদই আসুক না কেন সব আসে আল্লাহর তকদীর তথা পূর্ব নির্ধারিত ফয়সালা অনুযায়ী।
৬) এখান থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় যে, বিপদ নেমে আসলে ধৈর্যের সাথে তা মোকাবেলা করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি মূহুর্তে প্রতিটি বিপদের মুখে আল্লাহর নিকটই ধর্না দিতে হবে এবং তার উপরই ভরসা রেখে পথ চলতে হবে।
ধৈর্যের পরিণতি প্রশংসনীয়:
জীবনের সকল কষ্ট ও বিপদাপদে আল্লাহ তায়ালা নামায ও সবরের মাধ্যমে তাঁর নিকট সাহায্য চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, এতেই মানুষের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। ধৈর্যের পরিণতি প্রশংসনীয়। আল্লাহ তায়ালা খবর দিয়েছেন যে, তিনি ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকেন। অর্থাৎ তাদেরকে তিনি তাদের সাহায্য করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “হে ঈমানদারগণ, তোমরা নামায ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য অনুসন্ধান কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে থাকেন।” [সূরা বাকরা: ১৫৩]
এখান থেকে ধৈর্য ধারণ করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা যায়। মুমিন ব্যক্তির জন্য জীবনের প্রতিটি পদে পদে ধৈর্যের পরিচয় দেয়া দরকার। এই সবরের মাধ্যমে আকীদা ও বিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফীক দান করুন।
সর্বাবস্থায় সবরের প্রয়োজনীয়তা :
মানুষ জীবনে যেসকল অবস্থার সম্মুখীন হয়, সেগুলো হয় তার ইচ্ছা ও বাসনার অনুকূলে, না হয় প্রতিকূলে হয়ে থাকে। বলা বাহুল্য, অনুকূল ও প্রতিকূল উভয় অবস্থাতে সবরের প্রয়োজন রয়েছে । যে সকল অবস্থা মানুষের খাহেশের অনুকূল হয়ে থাকে, সেগুলো হচ্ছে স্বাস্থ্য, সুস্থতা, ধন-সম্পদ, জাঁকজমক, জনবল, ধনবল, বেশী সংখ্যক চাকর-নওকর ও বিলাস-ব্যসনের সামগ্রী মওজুদ থাকা। এ সকল অবস্থায় সবর করার প্রয়োজন অত্যধিক। কেননা, মানুষ যদি পার্থিব আনন্দ-উল্লাসে মেতে নিজেকে সংযত না করে এবং এগুলোতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থাকে, তবে সে আনন্দ-উল্লাস বৈধ হলেও অবশেষে সে নাফরমানী ও ধৃষ্টতার পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। কারণ, সাধারণ রীতি অনুযায়ী মানুষ যখন ঐশ্বর্যশালী ও অমুখাপেক্ষী হয়ে যায়, তখনই ঔদ্ধত্য প্ৰদৰ্শন করতে থাকে ।
কোরআন পাকে বলা হয়েছে— অর্থাৎ, মানুষ সীমালংঘন করেই থাকে। কারণ, সে নিজেকে অভাবমুক্ত ও অমুখাপেক্ষী মনে করে ।
জনৈক সাধক বলেন : বালা-মুসীবতে ঈমানদার সবর করে; কিন্তু নিরাপত্তায় সবর করা কেবল সিদ্দীকের কাজ।
হযরত সাহল তস্তরী (রহঃ) বলেন ঃ বালা-মুসীবতে সবর করার তুলনায় সচ্ছলতায় সবর করা অত্যন্ত কঠিন। যখন দুনিয়ার ধনসম্পদ সাহাবায়ে কেরামের হাতে আসতে থাকে, তখন তারা বললেন : বিপদাপদ ও দারিদ্র্যে আমাদের পরীক্ষা নেয়া হলে আমরা সবর করলাম, কিন্তু যখন আমরা সচ্ছলতা ও নিরাপত্তার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হলাম, তখন আমরা সবর করতে পারলাম না।
আল্লাহ তা’আলা কোরআন পাকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির ফেতনা সম্পর্কে আমাদেরকে হুশিয়ার করেছেন— অর্থাৎ,হে মুমিনগণ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে ৷
আরও বলা হয়েছে—অর্থাৎ, তোমাদের কিছু কিছু স্ত্রী-পুত্র-পরিজন তোমাদের দুশমন । অতএব তাদের ব্যাপারে সাবধান থাক ।
রসূলে করীম (সাঃ) বলেন :সন্তান মানুষকে কৃপণতা, ভীরুতা ও দুঃখ-দুর্দশায় লিপ্ত করে
একবার তিনি নিজের কলিজার টুকরা হযরত ইমাম হাসানকে যখন জামায় জড়িয়ে গিয়ে পড়ে যেতে দেখলেন, তখন মিম্বর থেকে নেমে তাকে কোলে তুলে নিলেন এবং বললেন : আল্লাহ ঠিকই বলেছেন :অর্থাৎ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি ফেতনা স্বরূপ। আমি আমার সন্তানকে টলমল করতে দেখে স্থির থাকতে পারলাম না এবং তাকে তুলে নিলাম। হে বুদ্ধিমানগণ! এর ফলাফল চিন্তা করুন ।
অতএব, জানা গেল, নিরাপত্তা ও সচ্ছলতায় সবর করা সত্যিকার সাহসিকতার কাজ। সচ্ছলতায় সবর করার অর্থ হচ্ছে তৎপ্রতি আগ্রহ না করা এবং মনে করা যে, এটা ক্ষণস্থায়ী আমানত মাত্র, যা অচিরেই হাতছাড়া হয়ে যাবে। ধনৈশ্বর্যে তুষ্ট হওয়া এবং বিলাস-ব্যসনে ডুবে থাকা কিছুতেই উচিত নয়। বরং আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের দ্বারা আল্লাহর হক আদায় করা দরকার। উদাহরণতঃ ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে,
অপরের দৈহিক সাহায্য করে এবং মুখে সত্য কথা বলে তাঁর হক আদায় করতে হবে। এ ধরনের সবর শোকরের সাথে সংলগ্ন। শোকরে সুদৃঢ় না হওয়া পর্যন্ত এই সবর পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। নিরাপত্তা ও সচ্ছলতায় সবর করা যে অধিক কঠিন, তার অন্যতম কারণ এই যে, এতে ক্ষমতা থাকে। নতুবা যার ক্ষমতাই নেই, সে সবর না করে কি করবে? উদাহরণত : যদি ক্ষুধার্ত ব্যক্তির সামনে খাদ্য না থাকে, তবে সে সহজেই সবর করতে পারে। কিন্তু যদি উৎকৃষ্ট ও সুস্বাদু আহার্য উপস্থিত থাকে, তবে সবর করা নিঃসন্দেহে কঠিন।
পক্ষান্তরে যে সব অবস্থা মানুষের খাহেশের প্রতিকূল হয়ে থাকে, সেগুলো তিন প্রকার ।
প্রথম, যে সব অবস্থা মানুষের এখতিয়ারাধীন; যেমন এবাদত ও নাফরমানী।
দ্বিতীয়, যা এখতিয়ারাধীন নয়; যেমন বিপদাপদ ও দুর্ঘটনা।
তৃতীয়, শুরুতে এখতিয়ারাধীন নয়; কিন্তু তা দূর করা এখতিয়ারাধীন; যেমন পীড়নকারীর কাছ থেকে প্রতিশোধ নেয়া । বলাবাহুল্য, এই তিন অবস্থাতেই সবর করা প্রয়োজন ।
প্রথম প্রকার :
অর্থাৎ, এবাদতে সবর করা কঠিন। কেননা, মানুষ স্বভাবগতভাবে দাসত্বকে ঘৃণা করে এবং প্রভুত্বের অভিলাষ পোষণ করে। জনৈক সাধু ব্যক্তি বলেন : প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে সে অভিলাষ আত্মগোপন করে আছে, যা ফেরাউন ‘আমি তোমাদের সুমহান প্রভু’ বলে প্রকাশ করেছিল। কিন্তু ফেরাউন তা প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছিল। কারণ,তার সম্প্রদায় তার কথা মেনে নিয়েছিল। অন্যরা এই অভিলাষ প্রকাশ করার সুযোগ না পেলেও অন্তরে গোপন রাখে। তাই চাকর-বাকর ও অনুগতরা কাজে ত্রুটি করলে মানুষ রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে যায় এবং তাদের ত্রুটিকে অসম্ভব মনে করে। এর কারণ অভ্যন্তরীণ অহংকার এবং প্রভুত্বের দাবী ছাড়া আর কি হতে পারে?
এ থেকে জানা যায়, দাসত্ব সর্বাবস্থায় কঠিন। এছাড়া কতক এবাদত অলসতার কারণে অপ্রিয় মনে হয়. যেমন নামায। কতক কৃপণতার কারণে দুঃসাধ্য মনে হয়, যেমন যাকাত । কতক এবাদত অলসতা ও কৃপণতা উভয়ের কারণে দুরূহ ঠেকে; যেমন হজ্জ ও জেহাদ। সুতরাং এবাদতে সবর করার মানে অনেকগুলো কঠিন কাজে সবর করা ।
দ্বিতীয় প্রকার
অর্থাৎ, গোনাহেও সবর করতে হবে। আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতে সকল প্রকার গোনাহ একত্রিত করেছেন- অর্থাৎ, নির্লজ্জতা, মন্দকাজ ও অবাধ্যতার কাজ করতে নিষেধ করে । রসূলে করীম (সাঃ) এরশাদ করেন : মোহাজির সে ব্যক্তি, যে মন্দকাজ পরিহার করে এবং মোজাহিদ তাকে বলা হয়, যে আপন খেয়াল-খুশীর সাথে জেহাদ করে ।
যেসব গোনাহে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে যায়, সেগুলো তে সবর করা অধিক কঠিন হয়ে থাকে । কেননা, মনের খাহেশের সাথে যখন অভ্যাস যোগ হয়, তখন শয়তানের দুটি বাহিনী পরস্পরে মিলেমিশে একে অপরকে সাহায্য করে এবং ধর্মীয় প্রেরণার মোকাবিলা করে। এরপর যদি সে গোনাহ সহজসাধ্য হয়, তবে তাতে সবর করা মুশকিল । উদাহরণতঃ গীবত, মিথ্যা,কলহ- বিবাদ, আত্মপ্রশংসা ইত্যাদিতে সবর করা খুবই কঠিন।
তৃতীয় প্রকার
অর্থাৎ, যে সকল অবস্থা শুরুতে এখতিয়ারাধীন নয়; কিন্তু তা দূর করা এখতিয়ারাধীন; যেমন কেউ কাউকে কথা অথবা কাজের মাধ্যমে পীড়ন করল। এতে সবর করা এবং প্রতিশোধ না নেয়া কখনও ওয়াজিব এবং কখনও মোস্তাহাব। জনৈক সাহাবী বলেন : পীড়নে সবর না করা পর্যন্ত আমরা কারও ঈমান সম্পর্কে জানতাম না। কোরআন পাকে পয়গম্বরগণের পক্ষ থেকে বিরুদ্ধবাদীদের জওয়াবে উল্লেখ করা হয়েছে : অর্থাৎ, তোমরা আমাদেরকে যে পীড়ন কর, তাতে আমরা সবর করব । ভরসাকারীদের আল্লাহর উপর ভরসা করা উচিত । রসূলুল্লাহ (সাঃ) একবার কিছু অর্থ বণ্টন করলে কিছু সংখ্যক বেদুইন মুসলমান বলাবলি করল : এ বণ্টনে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি। এ সংবাদ রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কানে পৌঁছলে তাঁর মুখমন্ডল বিবর্ণ হয়ে গেল । তিনি বললেন : আল্লাহ আমার ভাই মূসা (আঃ)-এর প্রতি রহম করুন। তাঁকে এর চেয়েও বেশী পীড়ন করা হয়েছে । কিন্তু তিনি সবর করেছেন।
মহান আল্লাহ আমাদের সর্বাবস্থায় সবর করার তাওফিক দান করুন (আমিন)