রাগ নিয়ন্ত্রণ এর ফজিলত
রাগ, ক্রোধ মানুষের স্বভাবজাত একটি ত্রুটি। তবে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ ও সংযত করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রাগের সময় মানুষ স্বাভাবিক হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তখন নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এ সময় এমন কিছু করে বসে যে কারণে পরবর্তীতে আফসোস করতে হয়। এজন্য একাধিক হাদিসে রাগের সময় সংযত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সা.-কে বলল, ‘আমাকে উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘রাগ কোরো না।’ সে ব্যক্তি কয়েকবার এ কথা বলল, রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, ‘রাগ কোরো না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস, ৬১১৬)
ক্রোধ দমনের জন্য হাদিসে অজু করার নির্দেশ দিয়েছেন রাসূল সা.। বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে। আর শয়তান আগুনের তৈরি। নিশ্চয় পানির দ্বারা আগুন নির্বাপিত হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয় সে যেন অজু করে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস, ৪৭৮৬)
রাগ দমনকারীদের কোরআনে মুত্তাকী বলা হয়েছে। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘(মুত্তাকি) যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুত আল্লাহ তায়ালা সৎকর্মশীল দেরকেই ভালোবাসেন। (সূরা আল ইমরান, আয়াত, ১৩৪)
রাগ দমনের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যের দোষ চর্চা থেকে নিজের জাবানকে হেফাজত করবে আল্লাহ তায়ালা তার দোষ গোপন রাখবেন। যে ব্যক্তি নিজের রাগকে হজম করবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার আজাব মওকুফ করে দেবেন। কোনো ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ওজর পেশ করলে, আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করবেন (তাকে মাফ করে দেবেন)। (বায়হাকি, শুয়াবুল ইমান)
আল্লাহর রাসূল সা. আরেক হাদিসে বলেছেন, ‘রাগ করবে না তাহলে জান্নাত পেয়ে যাবে’। (মেরকাত শরহে মেশকাত, খণ্ড-৯. পৃষ্ঠা-২৯২)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিআল্লাহু আনহু এর সূত্রে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, বান্দা যা হজম করে কোনটিই ফজিলতের দিক থেকে এত ওপরের নয়, যতটুকু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাগ হজম করা হয়। (মুসনাদে আহমদ)
নবীজি সা. আরও বলেন, ‘সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে তার রাগ দমন করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার গোটা সৃষ্টির সামনে তাকে ডাকবেন এবং তাকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী হুর নির্বাচন করতে দেবেন।’(আবু দাউদ, হাদিস, ৪৭৭৭)
আইউব রহ. বলেন, এক মুহুর্ত সহ্য করা অনেক অনিষ্ট দূর করে দেয়।
একবার সুফিয়ান সওরি, আবু খুযায়মা ও ফোজায়েল ইবনে আয়ায রহ. এক জায়গায় একত্রিত হন এবং সংসার নির্লিপ্ততা সম্পর্কে আলোচনা করতে থাকেন। অবশেষে সবাই এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেন যে, সর্বোত্তম আমল হচ্ছে ক্রোধের সময় সহ্য করা এবং লোভের সময় ধৈর্য ধারণ করা।
একবার এক ব্যক্তি হজরত ওমর রা.-কে বলল, আপনি ইনসাফ সহকারে বিচার করেন না এবং বেশী দান করেন না। এতে তিনি এত ক্রুদ্ধ হলেন যে, মুখমন্ডলে তার প্রভাব ফুটে উঠল। তখন এক ব্যক্তি আরজ করল, আমীরুল মুমিনীন, আপনি কি করতে চান? এ ব্যক্তি মূর্খ, যার সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন, ক্ষমা অবলম্বন কর, সৎকাজের আদেশ কর্ এবং মূর্খদের থেকে বিরত থাক।
হযরত ওমর রা. বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ। এরপর যেন একটি অগ্নি দফ করে নিভে গেল।
মুহাম্মদ ইবনে কাব বলেন, তিনটি বিষয় কারও মধ্যে একত্রিত হলে তার ঈমান পূর্ণাঙ্গ হয়ে যায়। ১. যখন খুশির অবস্থায় থাকে, তখন যেন বাতিল বিষয়াদিতে প্রবেশ না করে। ২. যখন ক্রুদ্ধ হয়, তখন যেন সত্যের সীমা ডিঙ্গিয়ে না যায়। ৩. যখন ক্ষমতা থাকে, তখন যে বস্তু নিজের নয় তা দখন করে না।
(এহইয়াউ উলুমিদ্দীন, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২)