অসিয়ত লিখে যাওয়া

অসিয়তের আভিধানিক অর্থ আদেশ করা, ভার অর্পণ করা। শরীয়তের পরিভাষায় অসিয়ত বলতে বুঝায়; কোনও ব্যক্তি তার মৃত্যু ও পরবর্তীকালের জন্য কাউকে কোনও কিছুর মালিকানা প্রদানের নির্দেশ করা। যেমন- কেউ তার মৃত্যুর আগে বললো, আমার মৃত্যুর পর অমুক ব্যক্তি, দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা এতিমখানায় সম্পদের এই পরিমাণ দান করবে, তাহলে একে অসিয়ত বলে।

অসিয়তের গুরুত্ব

অসিয়ত মৃত ব্যক্তি সদিচ্ছায় করতে হবে। এর জন্য তাকে জবরদস্তি করার সুযোগ নেই। অসিয়ত হতে হবে ব্যক্তির পার্থিব উপার্জন থেকে। কোরআন ও হাদিসের ভাষ্যমতে অসিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাত। কাউকে ঠকানোর জন্য কখনও অসিয়ত করা যাবে না। ওয়ারিশদের হক কম দেওয়ার জন্য, তাদের বঞ্চিত করার জন্য অসিয়ত করা চরম অন্যায়। কবিরা গুনাহ। যা জুলুমের শামিল।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘কোনও মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয় যে, তার অসিয়তযোগ্য কিছু রয়েছে আর সে দু’রাত কাটাবে অথচ তার কাছে তার অসিয়ত লিখিত থাকবে না।’-(বুখারী, ২৫৮৭; মুসলিম, ১৬২৭; তিরমিজি, ৯৭৪; নাসাঈ, ৩৬১৬; আবু দাউদ, ২৮৬২; ইবন মাজাহ, ২৬৯৯)

আারেক হাদিসে ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে মুসলিমের অসিয়ত করার মতো কোনও বিষয় রয়েছে, তার জন্য উচিত নয় অসিয়ত অলিখিত অবস্থায় দুটি রাত অতিবাহিত করা।’ – (বুখারি, হাদিস : ২৭৩৮)

অসিয়তের জন্য সাক্ষী

অসিয়ত করার সময় দুইজন সাক্ষী থাকা আবশ্যক। যেন পরে এ নিয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও মতানৈক্য সৃষ্টি না হয়। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,  ‘হে মুমিনগণ, যখন তোমাদের কারো নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন অসিয়তকালে তোমাদের মাঝে তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন (ন্যায়পরায়ণ) ব্যক্তি সাক্ষী হবে।’(সূরা মায়েদা, আয়াত, ১০৬)

হজরত সাদ রা. বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আমার সমুদয় সম্পদের অসিয়ত করে যাব? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে এক তৃতীয়াংশ। তিনি বললেন, আর এক তৃতীয়াংশও অনেক।

যেসব বিষয়ে অসিয়ত

অসিয়ত শুধু সম্পত্তির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নয়। অসিয়ত হতে পারে- মৃত্যুর পর ঋণ পরিশোধ, দাফন-কাফন, জানাজা নামাজ পড়ানো, সম্পত্তির বাটোয়ারা, বিয়েশাদি, ছোটদের পড়াশুনা, মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ ও জনকল্যাণমূলক যেকোনো কাজের বিষয়ে।

যেভাবে অসিয়ত করবে

অসিয়ত সরাসরি মুখে বলে করতে পারে। অসুস্থতা বা অন্য কোনও কারণে মুখে বলতে না পারলে লিখে অসিয়ত করা যায়। আবার কোনও ব্যক্তি বোবা হলে কিংবা লিখতে না পারলে ইশারা ঈঙ্গিতে করতে পারবে।

অসিয়তের প্রকারভেদ

ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, অসিয়ত চার প্রকার। এক. ওয়াজিব : যার ওপর নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজসহ আল্লাহ ও বান্দার হক যেমন ঋণ, আমানত ও অঙ্গিকার রয়েছে তাকে এসব কিছু স্পষ্টভাবে অসিয়ত করা ওয়াজিব যাতে নগদ ও বাকি সব দেনা-পাওয়ানা নির্দিষ্ট করা থাকে।

দুই. মুবাহ : ধনী ব্যক্তির সম্পদ সম্পর্কে অসিয়ত করা মুবাহ বা বৈধ।

তিন. মাকরুহ : পাপাচারীর জন্য অসিয়ত করা মাকরুহ।

চার. মুস্তাহাব : এ ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে মুস্তাহাব। (দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার : ৫/৩১৫)

কতটুকু সম্পদে অসিয়ত বৈধ

সম্পদে অসিয়ত জায়েজ হলেও নিজের ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে পুরো সম্পদে অসিয়ত বৈধ নয় বরং সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ অসিয়ত করা জায়েজ। এর চেয়ে বেশি অসিয়ত করা জায়েজ নয়। তবে যদি অসিয়তকারীর মৃত্যুর পর ওয়ারিশরা এক-তৃতীয়াংশের বেশি সম্পদেও অসিয়ত অনুমোদন করে, তাহলে সে অসিয়ত বৈধ হবে। তবে শর্ত হচ্ছে ওয়ারিশরা প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। **(বুখারি, হাদিস : ৫৬৬৮)

হজরত সাদ রা. বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আমার সমুদয় সম্পদের অসিয়ত করে যাব? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে এক তৃতীয়াংশ। তিনি বললেন, আর এক তৃতীয়াংশও অনেক। **(বুখারী,২৫৯১; মুসলিম, ১৬২৮; তিরমিজি, ২১১৬; নাসাঈ, ৩৬২৮)

মৃত ব্যক্তির অসিয়ত পালনের ক্ষেত্রে উত্তরাধীকারীদের যত্নবান হতে হয়। মৃত ব্যক্তির বৈধ অসিয়ত পালনে কোনো প্রকার গড়িমসি কাম্য নয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *