অমুসলিমদের সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক রাখতে হবে? এবং তাদের হক
অমুসলিমদের সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক রাখতে হবে?
মানুষে মানুষে পারস্পরিক সম্পর্ক চার ধরনের হতে পারে; এর মধ্যে অমুসলিম তথা কাফেরদের সাথে শর্ত সাপেক্ষে তিন ধরনের সম্পর্ক রাখা যায়। এক ধরনের সম্পর্ক কোন অবস্থাতেই রাখা যায় না। যথাঃ
- বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতার সম্পর্কঃ এ পর্যায়ের সম্পর্ক একমাত্র মুসলমানদের সাথেই হবে কোন কাফেরের সাথে কোন মুসলমানের বন্ধুত্ বা আন্তরিকতার সম্পর্ক হতে পারে না।
- সহানুভূতি ও সমবেদনার সম্পর্কঃ এ পর্যায়ের সম্পর্ক অমুসলিমদের সাথেও থাকবে । অমুসলিমদের প্রতিও সহানুভূতি প্রদর্শন করা, সমবেদনা জ্ঞাপন করা এবং তাদের উপকার করার শিক্ষা ইসলাম দিয়েছে। তবে যুদ্ধরত অমুসলিমদের সাথে এ পর্যায়ের সম্পর্ক রাখা জায়েয নয়।
- সৌজন্য ও আতিথেয়তার সম্পর্কঃ ধর্মীয় কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে অথবা আররক্ষার স্বার্থে অমুসলিমদের সাথেও এ পর্যায়ের সম্পর্ক রাখা যাবে। অর্থাৎ, যদি অমুসলিমদেরকে ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করা, ইসলামের শিক্ষা সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করা, তাদেরকে হেদায়াত করা বা এ ধরনের কোন ধর্মীয় উপকারিতা লাভের উদ্দেশ্যে কিংবা তাদের অনিষ্ট থেকে আৰরক্ষার উদ্দেশ্যে তাদের সাথে বাহ্যিক বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার ও সৌহার্দরমূলক আচরণ করা হয় এবং তাদের আতিথেয়তা করা হয় তবে তা জায়েয, অন্য কোন উদ্দেশ্যে তাদের সাথে এরূপ সম্পর্ক রাখা জায়েয নয়।
- লেন-দেনের সম্পর্কঃ অর্থাৎ, ব্যবসা-বাণিজ্য, ইজারা, চাকুরী, শিল্প ও কারিগরী ক্ষেত্রে সম্পর্ক স্থাপন করা! এ ধরনের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা অমুসলমানদের সাথে জায়েয, তবে এতে যদি মুসলমানদের ক্ষতি হয় তাহলে জায়েষ নয়। এ কারণে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধরত কাফেরদের হাতে সামরিক অস্ত্র-শস্ত্র বিক্রয় করা নিষিদ্ধ। এরপ মুহূর্তে তাদের সাথে শুধু মাত্র স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুমতি রয়েছে।
অমুসলিমদের সাথে একত্রে পানাহার এবং তাদের হাতের তৈরী ও তাদের রান্না করা খাদ্য-খাবারের মাসায়েল
- অমুসলিমদের জবেহ করা প্রাণীর গোশত খাওয়া জায়েয নয়।
- অমুসলিমদের তৈরী ও রান্না করা খাদ্য খাবার, মিষ্টি ইত্যাদি ক্রয় করা এবং খাওয়া জায়েয, যদি বাহ্যিকভাবে তাতে কোন নাপাক বস্তুর মিশ্রণ বোঝা না যায়। তবে মুসলমান ভাইয়ের উপকারের উদ্দেশ্যে মুসলমানের দোকান থেকে ক্রয় করলে উত্তম হবে।
- অমুসলিমদের সাথে একত্রে বসে বা তাদের বরতনে খাওয়া মাকরূহ, তবে ঠেকা বশতঃ হলে জায়েয । আর যদি জানা থাকে যে, তাদের বরতন নাপাক তাহলে জায়েয নয়।
অমুসলমানের হক বা অধিকার
হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদী, খৃষ্টান প্রভৃতি অমুসলমানগণ ইসলাম ধর্মের অনুসারী না হলেও তারাও মানুষ এবং মানুষ হিসেবে তাদের কিছু হক রয়েছে। যেমনঃ
১. অন্যায় ভাবে কারও জানে কষ্ট না দেয়া । ২. কারও সম্পদের ক্ষতি না করা। ৩. অন্যায় ভাবে কারও মন্দ না বলা, গালি-গালাজ না করা । ৪. সমালোচনার ক্ষেত্রে ভারসাম্যতা রক্ষা করা।
৫. তাদের জীবন বিপন্ন হতে দেখলে তা থেকে রক্ষা করা। ৬. অভাব-অনটন, রোগ-শোক ও বিপদ আপদে সহযোগিতা করা । ৭. শরী’আতের আইন অনুসারে কেউ শাস্তির উপযুক্ত হলে ন্যায্য বিচার করা ।
তথ্যসূত্রঃ কিতাবঃ আহকামে যিন্দেগী লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দিন শায়খুল হাদিস, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, তাঁতিবাজার, ঢাকা - ১১০০। মুহাদ্দিছ, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া, ৩৩২, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা ১২৩৬।
এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
খুশি
1
আরও উন্নত হতে পারে
0