কোরআন, হাদিসের দৃষ্টিতে অধিক সন্তান গ্রহণের ফজিলত
ভূমিকা
সন্তান-সন্ততি মানুষের জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। তারা শুধু পার্থিব জীবনের শোভা নয়, বরং আখিরাতের জন্যও কল্যাণের বাহক। ইসলাম ধর্মে সন্তান জন্মদানে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে এবং অধিক সন্তান গ্রহণকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়েছে। কারণ, একটি জাতির ভবিষ্যৎ তার জনসংখ্যার ওপর নির্ভর করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ শক্তিশালী হয়, যা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মুসলমানদের অবস্থান সুদৃঢ় করে।
বর্তমান সময়ে পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং ভোগবাদী মনোভাবের কারণে অনেক মুসলিম পরিবার সন্তান সীমিতকরণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কেউ আর্থিক সংকটের অজুহাতে, কেউ জীবনযাত্রার মানের অজুহাতে, আবার কেউ পারিবারিক পরিকল্পনার নামে সন্তানসংখ্যা কমাতে চায়। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে অধিক সন্তান গ্রহণ শুধু বৈধই নয়, বরং তা মুসলমানদের জন্য একটি সৌভাগ্যের বিষয়। রাসুলুল্লাহ ﷺ নিজেই উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য উৎসাহ দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, কিয়ামতের দিন তিনি উম্মতের সংখ্যাধিক্যে গর্ব করবেন।
বেশি সন্তান গ্রহণের ফজিলত শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। একটি বৃহৎ ও শক্তিশালী মুসলিম জনসংখ্যা থাকলে তারা ইসলাম প্রচার, প্রতিরক্ষা, জ্ঞানচর্চা এবং সমাজ বিনির্মাণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া, বার্ধক্যে বাবা-মায়ের জন্য অবলম্বন হওয়ার পাশাপাশি নেককার সন্তান দোয়ার মাধ্যমে পিতা-মাতার জন্য আখিরাতে মুক্তির কারণও হতে পারে।
এই প্রবন্ধে কোরআন ও হাদিসের আলোকে অধিক সন্তান গ্রহণের ফজিলত আলোচনা করা হবে, পাশাপাশি যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হবে।
ক) কোরআনের আলোকে
১. সন্তান আল্লাহর দান ও রহমত
আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَهَبُ لِمَن يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَن يَشَاءُ الذُّكُورَ أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَن يَشَاءُ عَقِيمًا
“তিনি যাকে ইচ্ছা কেবল কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা কেবল পুত্র সন্তান দান করেন, অথবা যাকে ইচ্ছা উভয়ই (পুত্র ও কন্যা) দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন।”(সূরা আশ-শূরা: ৪৯-৫০)
এ আয়াতে বোঝা যায়, সন্তান গ্রহণ আল্লাহর কৃপা ও বিশেষ অনুগ্রহ।
২. সন্তান থাকা দুনিয়ার সৌন্দর্যের অংশ
আল্লাহ বলেন: ٱلْمَالُ وَٱلْبَنُونَ زِينَةُ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا
“ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা।” (সূরা আল-কাহফ: ৪৬)
অর্থাৎ সন্তান বেশি থাকা দুনিয়ার শোভা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
খ) হাদিসের আলোকে
১. বেশি সন্তান নেওয়ার তাগিদ
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: تَزَوَّجُوا الْوَدُودَ الْوَلُودَ فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأُمَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“তোমরা সেই নারীকে বিয়ে করো, যে অধিক সন্তান জন্ম দেবে এবং স্বামীকে অধিক ভালোবাসবে। কেননা কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্যে গর্ব করব।” (আবু দাউদ: ২০৫০, নাসায়ি: ৩২২৭)
এ হাদিসে রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদের উৎসাহিত করেছেন অধিক সন্তান জন্ম দিতে, যাতে উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
২. সন্তান মৃত্যুর পর জান্নাতে বাবা-মার জন্য সুফারিশ করবে
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:“যে মুসলমানের তিনটি সন্তান মারা যায়, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন সন্তানদের প্রতি দয়া করার কারণে।”(বুখারি: ১১৮৩, মুসলিম: ২৬৩২)
এ থেকে বোঝা যায়, বেশি সন্তান থাকলে জান্নাতে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৩. নেককার সন্তান সদকায়ে জারিয়া
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন: “মানুষ মারা গেলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি আমল চলতে থাকে: সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান এবং নেককার সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।” (মুসলিম: ১৬৩১)
অর্থাৎ বেশি সন্তান থাকলে তাদের মাধ্যমে দোয়া ও নেক আমলের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
উপসংহার
কোরআন ও হাদিসে সুস্পষ্টভাবে অধিক সন্তান গ্রহণের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ ﷺ নিজে বেশি সন্তান নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে কিয়ামতের দিন উম্মতের সংখ্যায় গৌরব করা যায়। একই সঙ্গে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আত্মিক দিক থেকে এটি কল্যাণকর। সুতরাং, মুসলমানদের উচিত সন্তান জন্মগ্রহণের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা এবং আল্লাহর দেওয়া এই নিয়ামতকে গ্রহণ করা।
সংকলক:
মুফতি রাশেদুল ইসলাম
ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স