ইসলাম

গীবতের বৈধ পন্থা

যেসব ক্ষেত্রে গীবত করা বৈধ, বরং কোন কোন ক্ষেত্রে পুণ্যের কাজ এবং যেসব ক্ষেত্রে ইসলামী শরীআত গীবত করার অনুমতি দিয়েছে এখানে সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আল্লামা ইমাম নববী (রঃ) সহীহ মুসলিমের ভাষ্যগ্রন্থে, ইমাম গাযালী (রঃ) ইহয়া উলূমিদ-দীন ও কীমিয়া সাআদাত গ্রন্থদ্বয়ে, সাফূরী (রঃ) নুযহাতুল মাজালিস গ্রন্থে, ফাকিহী (রঃ) মাতালিবুল মুমিনীন গ্রন্থে এবং বালখী আইনুল ইলম গ্রন্থে গীবতের ছয়টি পন্থা বৈধ বলেছেন। আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী (রঃ) রদ্দুল মুহতার গ্রন্থে আরও চারটি পন্থা বৈধ বলে অনুমোদিত গীবতের সংখ্যা দশে উন্নীত করেছেন। আমি তার সাথে আরও তিনটি পন্থা যোগ করে বৈধ গীবতের সংখ্যা তের-এ উন্নীত করেছি এবং প্রতিটি পন্থা বৈধ হওয়ার কারণও বর্ণনা করেছি।

(এক) কোন ব্যক্তি বিচারক, মুফতী, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী বা পদস্থ কোন কর্মকর্তার জুলুমের শিকার হলে সে রাজ-দরবারে তার প্রতিকার প্রার্থনা করতে পারবে।

কারণ রাজ-দরবারে জালেমের গীবত না করলে সে প্রতিকার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে। উপরন্তু নালিশের কারণে শাসনকর্তা জালেম কর্মকর্তাকে অপসারণ করে তদস্থলে ন্যায়পরায়ণ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারবেন এবং ফলে নিরীহ লোকেরা জুলুমের হাত থেকে রেহাই পাবে। অতএব এই উপকারিতার কারণে উপরোক্ত প্রকারের গীবত বৈধ।

শোবা (রঃ) বলেন, জালেমের বিরুদ্ধে নালিশ করা অথবা কোন পাপাচারী সম্পর্কে লোকদের সতর্ক করার উদ্দেশে তার গীবত করা বৈধ, বরং জালেম ও পাপাচারীর সংসর্গ থেকে লোকদের দূরে রাখার জন্য তাদের দোষত্রুটি বর্ণনা করা গীবত নয় (বায়হাকীর বরাতে আদ-দুররুল মানছুর)।

উপরোক্ত বিষয়ে ইমাম গাযালী, সারী, বালখী ও ফাকিহী ঐক্যমত পোষণ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন :

لاَ يُحِبُّ الله الجهرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ الأَ مَنْ ظُلِمَ “মানুষ খারাপ ব্যাপারটি বলুক তা আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে যার উপর জুলুম করা হয়েছে তার ব্যাপারটি স্বতন্ত্র” (সূরা নিসা : ১৪৮)। আল্লাহ তাআলার বাণী ‘লা ইউহিব্বু’-এর তাৎপর্য এই যে, কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কোন পাপের কথা জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিলে আল্লাহ তাআলা তা প্রকাশকারী কে শাস্তি দিবেন। ‘আল-জাহরা বিস-সূ’ অর্থ বদদোয়াও হতে পারে। যেমন ইমাম রাযী (রঃ) তাফসীরে কবীরে ইবনে আব্বাস (রাঃ)-র বরাতে লিখেছেন। তখন আয়াতের অর্থ হবে, কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপর ব্যক্তির বদদোয়া আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে যে ব্যক্তি জুলুমের শিকার হয়েছে সে জালেমকে বদদোয়া করলে তা বৈধ হবে। অথবা শব্দটির অর্থ দোষ বর্ণনা করাও হতে পারে। যেমন আল্লামা বাগাবী (রঃ) মুজাহিদ (রঃ)-এর বরাতে নকল করেছেন। অথবা উভয় অর্থই হতে পারে, যেমন তাফসীরে জালালায়ইনে গ্রহণ করা হয়েছে। তখন আয়াতের তাৎপর্য হবে ঃ কোন ব্যক্তি জনসমক্ষে অপর ব্যক্তির দোষক্রটি প্রকাশ করলে অথবা তাকে বদদোয়া করলে আল্লাহ তাআলা নাম চর্চাকারী ও বদদোয়াকারীকে শাস্তি দিবেন। কিন্তু যে ব্যক্তি জুলুমের শিকার হয়েছে সে জালেমকে বদদোয়া করলে বা তার গীবত করলে সেটা বৈধ হবে।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এক ব্যক্তি কতক লোকের মেহমান হতে চাইলে তারা তাকে মেহমান হিসাবে স্বাগত জানায়নি। সে প্রকাশ্যে তাদের বদনাম করলো। তার এই আচরণে সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) অসন্তুষ্ট হলেন এবং তার প্রতি ক্ষেপে গেলেন। তখন উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয় এবং আল্লাহ তাআলা অত্যাচারিত ব্যক্তিকে গীবত করার অনুমতি দান করেন। এই ঘটনা মুসনাদে আবদুর রাযযাকে মুজাহিদ (রঃ)- এর সূত্রে বর্ণিত আছে এবং কাযী ছানাউল্লাহ পানিপতিও তাফসীরে মাযহারীতে তা নকল করেছেন।

হাদরামাওতের এক ব্যক্তি কিন্দা গোত্রের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এই মর্মে অভিযোগ করলো যে, শেষোক্ত ব্যক্তির পিতা প্রথমোক্ত ব্যক্তির এক খণ্ড জমি জবরদখল করে নিয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে শরীআতের বিধান অনুযায়ী তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেন (আবু দাউদ)।

(দুই) কোন ব্যক্তি কোন দোষের কাজে বা পাপাচারে লিপ্ত থাকলে সেই সম্পর্কে এমন ব্যক্তিকে অবহিত করা গীবত হবে না, যে তাকে বারণ করতে পারবে, উপদেশ দিতে পারবে বা তার উপর প্রভাব খাটিয়ে তার সংশোধন করতে পারবে।

কারণ এই ধরনের গীবতের দ্বারা অভিযুক্ত ব্যক্তিরই উপকার হয়। গীবতের এই পন্থা মাতালিবুল মুমিনীন, আইনুল ইলম, সীরাতে আহমাদিয়া, রদ্দুল মুহতার, তানবীরুল আবসার, ইহয়া উলূমিদ-দীন, নুযহাতুল মাজালিস, শারহু সহীহ মুসলিম ও মুনতাখাবুল আনফাস প্রভৃতি গ্রন্থে বৈধ বলা হয়েছে।

কুফার গভর্নর হযরত সাদ (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে অনেক ব্যাপারে জনগণ খলীফা হযরত উমার (রাঃ)-এর নিকট নালিশ করলো। একটি অভিযোগ এই ছিল যে, তিনি উত্তমরূপে নামায পড়েন না এবং নামাযের কিরাআত ঠিকমত পড়েন না। খলীফা তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে গভর্নরের পদ থেকে বরখাস্ত করে হযরত আম্মার (রাঃ)-কে তদস্থলে গভর্নর নিয়োগ করেন (বুখারী, বাব কিরাআতিল ইমাম ওয়াল-মামুম)।

এ ঘটনা থেকে জানা গেল যে, মানুষকে দোষ-ত্রুটিমুক্ত করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করা বৈধ। তা না হলে হযরত উমার (রাঃ) কুফাবাসীদের নালিশ শুনতে প্রস্তুত হতেন না। কারণ গীবত শোনাও গীবত করার সমতুল্য। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : الْمُسْتَمِعُ شَرِيكَ الْمُغْتَابِينَ . “গীবত শ্রবণকারী গীবতকারীদের পাপে অংশীদার।”

সিরিয়ার গভর্নর হযরত উমার (রাঃ)-এর নিকট লিখে পাঠালেন, এখানে আবু জানদাল নামে এক ব্যক্তি মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তিনি এই উদ্দেশ্যে চিঠি লিখেছিলেন যে, হযরত উমার (রাঃ) তাকে উপদেশ দিলে হয়ত সে সংশোধন হয়ে যাবে। উমার (রাঃ) নিম্নোক্ত আয়াত উল্লেখপূর্বক উক্ত ব্যক্তিকে সতর্ক করে একটি পত্র পাঠান : حم . تَنْزِيلُ الْكِتَابِ مِنَ اللهِ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ غَافِرِ الذَّنْبِ قَابِلِ التَّوْبِ شَدِيدِ الْعِقَابِ ذِى الطول لا إلهَ إِلا هُوَ الَيْه الْمَصِير “হা মীম। এই কিতাব (কুরআন) মহা পরাক্রম শালী সর্বজ্ঞানী আল্লাহর তরফ থেকে নাযিল হয়েছে। তিনি পাপ ক্ষমাকারী, তওবা কবুলকারী, কঠোর শাস্তিদাতা, প্রাচুর্যময়। তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তাঁর নিকটই প্রত্যাবর্তন” (সূরা মুমিন : ১-৪)। আবু জানদাল পত্রান্তরে উপরোক্ত আয়াত পাঠ করে অত্যন্ত লজ্জিত ও অনুতপ্ত হন এবং মদ্যপান পরিহার করে তওবা করেন (ইমাম গাযালীর ইহয়া উলূমিদ-দীন, অধ্যায় গীবত।

(তিন) লজ্জা দিয়ে পাপ থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে গীবত করা জায়েয।

কোন ব্যক্তি কোন দোষের কাজে লিপ্ত থাকলে এই উদ্দেশ্যে তার গীবত করা বৈধ।যে, তার দোষের কথা অপর ব্যক্তি জেনে ফেলেছে এ কথা জানতে পেরে সে লজ্জিত হয়ে দোষের কাজ পরিহার করবে। এক ব্যক্তি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়ে তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে নালিশ করলো। তিনি (সাঃ) তাকে ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিলেন। পুনরায় সে নালিশ করলে এবারও তিনি তাকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেন। তৃতীয়বার সে তার প্রতিবেশীর গীবত করলে তিনি (সাঃ) বলেন : তোমার ঘরের জিনিসপত্র বাইরে রাস্তায় ফেলে দাও। তোমার প্রতিবেশী তা দেখে লজ্জিত হয়ে তোমাকে কষ্ট দেয়া ত্যাগ করবে। সত্যিই সে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথামত নিজের ঘরের মালপত্র রাস্তায় ফেলে দিল। লোকেরা রাস্তা অতিক্রমকালে তাকে মালপত্র রাস্তায় নিক্ষেপের কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলে যে, তার প্রতিবেশী তাকে কষ্ট দিচ্ছে। প্রতিবেশীর কানে এ খবর পৌঁছলে সে লজ্জিত হয় এবং প্রতিবেশীর নিকট উপস্থিত হয়ে ক্ষমা চেয়ে নেয় (ইহয়া উলুমিদ দীন, হুকূকুল জাওয়ার অধ্যায়)।

(চার)কোন আলেম বা মুফতীর নিকট মাসআলা জানার উদ্দেশ্যে তার প্লট তৈরি করার জন্য কোন ব্যক্তির দোষ বর্ণনা করলে তাতে কোন দোষ নেই।

যেমন কোন ব্যক্তি বললো যে, তার পিতা মারা গেছে এবং তার পিতার নিযুক্ত ওসী তাকে ঠিকমত খরচপাতি দিচ্ছে না। এই অবস্থায় আমাকে ফতোয়া দান করুন। (ইহয়া উলূমিদ্দীন, নুযহাতুল মাজালিস, শারহু সহীহ মুসলিম, রদ্দুল মুহতার প্রভৃতি গ্রন্থে গীবতের এই পন্থা অনুমোদন করা হয়েছে।)

আবু সুফিয়ান (রাঃ)-র স্ত্রী হিন্দ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে গীবত করলো যে, তিনি খুব কৃপণ এবং স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণ ঠিকমত দেন না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি তার অজান্তে তার মাল থেকে প্রয়োজন পরিমাণ ভরণপোষণ নিয়ে নাও (সহীহ বুখারী, কিতাবুন নাফাকা)।

(পাঁচ) কোন আলেম, মুফতী বা সাধকের নিকট কোন ব্যক্তির দোষত্রুটি এই উদ্দেশে বর্ণনা করা যে, তিনি তাকে উপদেশ দান করবেন। ফলে সে সংশোধন হয়ে যাবে। গীবতের এই পন্থাও বৈধ।

সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে লোকদের দোষত্রুটি বর্ণনা করতেন কিন্তু তার দ্বারা মুসলমানদের অপমান করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। বরং তাদের উদ্দেশ্য এটা বর্ণনা করা যে, তিনি তাকে উপদেশ দান করবেন। ফলে সে সংশোধন হয়ে যাবে। গীবতের এই পন্থাও বৈধ।

(ছয়) কোন ব্যক্তি প্রকাশ্যে পাপাচারে লিপ্ত থাকলে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে তাঁর গীবত করা বৈধ।

যেমন কোন ব্যক্তি নামায পড়ে না অথবা লোকদের উপর জুলুম করে অথবা মদ পান করে ইত্যাদি। এজন্যই সাধক ও আলেমগণ স্বৈরাচারী শাসকের গীবত করেন। নুযহাতুল মাজালিস, রদ্দুল মুহতার,শারহু সহীহ মুসলিম প্রভৃতি গ্রন্থে এই প্রকারের গীবত বৈধ বলা হয়েছে।

সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (রঃ) বলেন, তিন ব্যক্তির গীবত করা বৈধ : জালেম শাসক, প্রকাশ্যে পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তি, বিদআতী কার্যকলাপে লিপ্ত ব্যক্তি যে অন্যদেরও বিদআত শিখায় (বায়হাকী থেকে দুররুল মানছুর গ্রন্থে)। হাসান বসরী (রঃ)-ও অনুরূপ কথা বলেছেন (ইহয়া উলূমিদ্দীন)।

ফকীহ আবুল লাইস সামারকান্দী (র) বলেন, গীবত চার প্রকার :

(১) এক ব্যক্তিকে গীবত করতে দেখে অপর ব্যক্তি তাকে বললো, গীবত করো না। সে বললো, এটা গীবত নয়, আমি তার যথার্থ দোষত্রুটি বর্ণনা করছি। এই অবস্থায় গীবতকারী কাফের হয়ে যায়। কারণ হারামকে হালাল বলা কুফর।

(২) কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নামোল্লেখ না করে এমন ভাষায় তার গীবত করলো যাতে শ্রোতারা বুঝে ফেললো যে, সে কার গীবত করেছে। এই পন্থায় গীবতকারী মোনাফিক। কারণ বাহ্যত সে গীবত পরিহার করলেও মূলত গীবতে লিপ্ত রয়েছে।

(৩) কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নামোল্লেখ করে তার গীবত করলো এবং সে জানে যে, গীবত করা খারাপ। এই অবস্থায় সে গুনাহগার হবে।

(৪) কোন পাপাচারী ফাসেকের গীবত করা সওয়াবের কাজ। কারণ লোকেরা ফাসেকের এই বদনামি শুনে তার সম্পর্কে সতর্ক হতে পারবে।

গ্রন্থকার বলেন, ফাসেক ব্যক্তির গীবত করা দুইটি কারণে বৈধ :

(১) সে লোকমুখে তার দুর্নামের কথা শুনতে পেয়ে লজ্জিত হয়ে হয়তো পাপাচার থেকে বিরত হবে। যে ব্যক্তি ফাসেক তাকে সালাম করা মাকরূহ।

(২) আল্লাহর দৃষ্টিতে ফাসেকের কোন মর্যাদা নেই। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :اذا مُدحَ الْفَاسِقُ غَضَبَ الرَّبُّ تَعَالَى . “যখন পাপাচারী ফাসেকের প্রশংসা করা হয় তখন মহান প্রভু অসন্তুষ্ট হন” (বায়হাকীর সূত্রে মিশকাতুল মাসাবীহ, বাব হিফজুল-লিসান)

(সাত) এক ব্যক্তির দ্বারা অপর ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিন্তু সে অবহিত নয় যে, তার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় তার গীবত করা বৈধ, যাতে সে অন্য লোকের ক্ষতির কারণ না হয়

ইহয়া উলূমিদ্দীন, নুযহাতুল মাজালিস, মাতালিবুল মুমিনীন, রদ্দুল মুহতার, শারহু সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য গ্রন্থে গীবতের এই শ্রেণীকে অনুমোদন করা হয়েছে। যেমন কোন ব্যক্তি গোপনে পাপাচারে লিপ্ত আছে এবং কোন আলেম ব্যক্তি তার সাথে উঠাবসা করছে। এই অবস্থায় তার সাথে উঠাবসা করার কারণে হয়ত কখনও আলেম ব্যক্তি পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়তে পারে। সুতরাং লোকদের সতর্ক করার জন্য তার দোষত্রুটি প্রকাশ করে দেওয়া বৈধ।

অথবা কোন ব্যক্তি এর কথা ওর কানে এবং ওর কথা এর কানে দিয়ে মানুষের মধ্যে বিবাদ বাধায়। এই অবস্থায় তার গীবত করা বৈধ। অথবা বিচারকের আদালতে কেউ মোকদ্দমা দায়ের করলো। বিবাদী সাক্ষীগণের মিথ্যাচার, দোষত্রুটি ও অযোগ্যতা সম্পর্কে অবহিত। এই অবস্থায় আদালতের সামনে তাদের স্বরূপ প্রকাশ করে দেওয়া বিবাদীর জন্য বৈধ।

তবে মনে রাখতে হবে, কোন ব্যক্তি গোপনে কোন খারাপ কাজে লিপ্ত থাকলে এবং তার দ্বারা অপরের কোন ক্ষতি না হলে তার গীবত করা বৈধ নয়। এ জাতীয় দোষ ত্রুটি প্রকাশ করে দিলে আল্লাহ তাআলাও মানুষের সামনে দোষ প্রকাশকারীকে অপমানি করবেন (ইহয়া উলূমিদ্দীন)।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : مَنْ سَتَرَ عَوْرَةَ أَخِيْهِ الْمُسْلِمِ سَتَرَ اللهُ عَوْرَتَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ كَشَفَ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُؤْمِنِ كَشَفَ اللهُ عَوْرَتَهُ حَتَّى يَفْتَضِحَ بِهَا فِي بَيْتِهِ “যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের দোষত্রুটি গোপন রাখে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন। যে ব্যক্তি তার মুমিন ভাইয়ের দোষক্রটি প্রকাশ করে দেয় আল্লাহ তাআলা তার দোষত্রুটি প্রকাশ করে দিবেন, এমনকি তার ঘরেও তার দোষ চর্চা হতে থাকবে” (নুযহাতুল মাজালিস, বাবুল ইহসান ইলাল ইয়াতীম)। يَسْتُرُ عَبْد عَبْداً في الدُّنْيَا الأَسَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَة “কোন বান্দা পৃথিবীতে অপর বান্দার দোষ ত্রুটি আড়াল করে রাখলে আল্লাহ পাক কিয়ামতের দিন তার দোষত্রুটি আড়াল করে রাখবেন” (সহীহ মুসলিম)।

(আট) যে ব্যক্তি নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্যে পাপ কাজ করে বেড়ায় এবং কেউ সমালোচনা করলে বা সতর্ক করলে তার কোন প্রভাব তার উপর পতিত হয় না এই ধরনের লোকের গীবত করা বৈধ

এ কারণে সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নয়নমণি হযরত হুসায়েন (রাঃ)-এর হত্যাকারীদের গীবত করতেন এবং তাদের ভর্ৎসনা করতেন। কারণ তারা ছিল নির্লজ্জ এবং তারা নিজেদের দোষকে পরিপক্ক বুদ্ধির কাজ মনে করতো। গীবতের এই পন্থাকে ইহয়া উলূমিদ-দীন, আইনুল ইলম, দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, মাতালিবুল মুমিনীন ও সীরাতে আহমাদিয়া গ্রন্থে অনুমোদন করা হয়েছে । مَنْ الْقَى جِلْبَابَ الْحَيَاء فَلَا غَيْبَةَ لَهُ “যে ব্যক্তি লজ্জার আবরণ ছিন্ন করলো তার দোষচর্চা গীবত নয়” (মোল্লা আলী আল-কারীর শারহু আইনুল ইলম)।

শেখ সাদী (রঃ) বলেন, তিন ব্যক্তির গীবত করা বৈধ :বেহায়া, স্বৈরাচারী শাসক এবং যার গোপন পাপাচার অন্যদের ক্ষতির কারণ হয়।

ইমাম হুসায়েন (রাঃ)-এর শাহাদাত লাভের পর ইরাকের এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-র নিকট জিজ্ঞাসা করলো, পরিধেয় বস্ত্রে মশা-মাছির রক্ত লেগে গেলে সেই বস্ত্রে নামায হবে কি না। ইবনে উমার (রা) হুসায়েন (রাঃ)-এর হত্যাকারীদের অভিসম্পাৎ করে বলেন, আল্লাহু আকবার। এই ইরাকীরা এতটা খোদাভীরু হয়ে গেল যে, মশা-মাছির রক্ত সম্পর্কেও সতর্কতা অবলম্বন করছে। অথচ তারাই ইমামকে হত্যা করে তাঁর রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি : “হাসান ও হুসায়েন এই পৃথিবীতে আমার দু’টি ফুল” (জামে আত-তিরমিযী, বাবুু মানাকিবিল হাসান ওয়াল হুসায়েন)।

(নয়) দুঃখ ও আক্ষেপের আকারে গীবত করা বৈধ

খিযানাতুর রিওয়ায়াত,তানবীরুল বাসাইর, রদ্দুল মুহতার ও সীরাতে আহমাদিয়া গ্রন্থে এই প্রকারের গীবত অনুমোদন করা হয়েছে। যেমন আফসোস! অমুক ব্যক্তি নামায পড়ে না,রোযা রাখে না, যাকাত দেয় না।

কারো কোন খারাপ কাজে আক্ষেপ করা উত্তম। কোন মুসলমানকে শয়তানের নিকট পরাজিত হয়ে গুনাহের কাজে লিপ্ত দেখে তার অবস্থার প্রতি করুণা প্রকাশ করা উচিত। কোন কোন কালাম শাস্ত্রবিদ বলেন, কোন ব্যক্তির দোষক্রটি চর্চা করে তাকে অপমানিত করার উদ্দেশে তা গীবত হিসাবে গণ্য হবে, তবে আফসোস প্রকাশ করা হলে তা গীবত হবে না (খিযানাতুর রিওয়ায়াত)।

(দশ) কোন ব্যক্তির নামোল্লেখ না করে তার গীবত করা বৈধ

বাযযাযিয়া,সীরাতে আহমাদিয়া, দুররুল মুখতার, খিযানাতুর রিওয়ায়াত ও তামবীহুল গাফিলীন গ্রন্থে এই পন্থা অনুমোদন করা হয়েছে।

(এগার) কোন ব্যক্তি বিশেষ কোন উপাধিতে প্রসিদ্ধ হলে এবং তাতে তার কোন দোষের প্রতি ইঙ্গিত থাকলে তাকে সেই উপাধিতে স্মরণ করায় কোন দোষ নাই।

কারণ ঐ উপাধিতে তার পরিচয় না দিলে লোকেরা তাকে চিনতে পারবে না। যেমন এক ব্যক্তি ‘আরাজ'(বিকলাঙ্গ)উপাধিতে পরিচিত। মুহাদ্দিসগণ এই উপাধির একজন রাবীর হাদীস উক্ত উপাধিসহ বর্ণনা করেছেন। তবে যতটা সম্ভব উক্তরূপ উপাধিতে স্মরণ পরিহার করাই উত্তম। ইহয়া উলূমিদ্দীন, নুযহাতুল মাজালিস, রদ্দুল মুহতার, মাতালিবুল মুমিনীন ও শারহু সহীস মুসলিম গ্রন্থে এই পন্থা অনুমোদন করা হয়েছে।

(বার) রদ্দুল মুহতার (শামী) গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, দীন ইসলামকে

শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে গীবত করা বৈধ।

যেমন মুহাদ্দিসগণ হাদীসের রাবীদের বিশ্বস্ততা ও সত্যবাদিতা সম্পর্কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে কোন রাবী সম্পর্কে বলেছেন, সে ডাহা মিথ্যাবাদী, তার স্মরণশক্তি দুর্বল, সে মনগড়া হাদীস বর্ণনা করে, সে প্রত্যাখ্যাত (মুনকার) রাবী। অতএব তার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়।

অনুরূপভাবে ফকীহগণ কোন কোন গ্রন্থ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে, তা নির্ভরযোগ্য নয়। কারণ তার রচনাকারী ফকীহ নন অথবা অমুক গ্রন্থের রচয়িতা মুতাযিলা, তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় অথবা অমুক ব্যক্তি তার গ্রন্থে দুর্বল মাসআলাও বর্ণনা করেছেন অথবা অমুক ব্যক্তি তার কিতাবে মাওদূ (মনগড়া রিওয়ায়াত লিপিবদ্ধ করে নিজের গ্রন্থকে অনির্ভরযোগ্য করেছেন ইত্যাদি।

(তের) মানুষকে পাপাচার বা তার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য কোন জীবিত ব্যক্তির বা মৃত ব্যক্তির গীবত করা এবং এর সাথে তার শাস্তির কথা উল্লেখ করা বৈধ

যেমন অমুক ব্যক্তি দোযখের উপযোগী, কারণ সে হাড়কিপ্টা কৃপণ। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে লোকদেরকে কৃপণতা পরিহারে উদ্বুদ্ধ করা। অথবা অমুক ব্যক্তি জীবদ্দশায় সর্বদা পাপাচারে লিপ্ত থাকতো, মরার পর সে কবরে শাস্তি ভোগ করছে অথবা অমুক ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার মুখমণ্ডল কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেছে, কারণ সে এই গুনাহ করেছিল। অথবা আমি স্বপ্নে অমুক ব্যক্তিকে এই শাস্তিতে নিমজ্জিত দেখেছি। এখানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অপমান করা উদ্দেশ্য নয়, বরং মানুষকে পাপাচারের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করাই উদ্দেশ্য।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গীদের বলেন : কবরে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। একজন চোগলখোরি করার কারণে শাস্তি ভোগ করছে এবং অপরজন বেহায়ার মত জনসমক্ষে পেশাব করতো (তিরমিযী)।

শরীআতে যে গীবত নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা হলো ঃ যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে পাপাচারে লিপ্ত নয়, তার পাপাচারের দ্বারা লোকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এবং সে নির্লজ্জও নয়, তার গীবত করা এবং এর দ্বারা তাকে হেয় প্রতিপন্ন করাই উদ্দেশ্য, কোন দীনি ফায়দা অর্জন উদ্দেশ্য নয়। নামোল্লেখ না করে অনুপস্থিত ব্যক্তির গীবত করা বৈধ। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে পাপাচারে লিপ্ত, যে নির্লজ্জ, যে গোপনে পাপাচারে লিপ্ত এবং তার দ্বারা অপরের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা আছে এদের গীবত করাও বৈধ

গীবত চূড়ান্তভাবেই হারাম এবং সরাসরি কুরআনের আয়াত দ্বারা তা প্রমাণিত। গীবত হারাম, তা কেউ অস্বীকার করলে সে কাফের হয়ে যাবে। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি বলে, গীবত করা বৈধ তবে সে কাফের হয়ে যাবে এবং সৎপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে। মহান আল্লাহ বলেন : “তোমরা একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? তা তোমরা ঘৃণাই করবে” (সূরা হুজুরাত : ১২)। কোন একটি ব্যাপারে দুই ব্যক্তি হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) ও সালমান ফারসী (রাঃ) এর গীবত করার পর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হলে তিনি বলেনঃ তোমাদের উভয়ের দাঁতে আমি গোশতের রং দেখতে পাচ্ছি। তারা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আজ সারা দিন আমরা গোশত খাইনি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ঃ তোমরা আজ উসামা ও সালমানের গোশত খেয়েছ। কারণ তোমরা তাদের গীবত করেছ। তখন উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয়।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ঃ গীবত যেনার চেয়েও মারাত্মক” (ইবনে আবিদ দুনয়ার সীরাতে আমাদিয়া) । الْغَيْبَةُ أَشَدُّ مِنْ تَلْثِينَ زِنَةٍ فِي الْإِسْلَامِ .‘ইসলামে গীবত তিরিশ বার যেনার চেয়েও মারাত্মক’ (আইনুল ইলম) । যেনা যেমন ঘৃণিত বিষয়, গীবতও তদ্রূপ ঘৃণিত বিষয়। যেনায় লিপ্ত ব্যক্তি আল্লাহ্র অধিকার খর্ব করে তাঁর বিধান লংঘনের মাধ্যমে। অপরাধী তওবা করলে আল্লাহ তার অপরাধ ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু গীবতকারী আল্লাহ্ বিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর বান্দা দুইজনের অধিকার খর্ব করে। এ ক্ষেত্রে গীবতের দ্বারা যার সম্মানে আঘাত হানা হয়েছে সে অপরাধীকে ক্ষমা না করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করবেন না। এক কালের বলখের বিলাসপ্রিয় সামন্তরাজ ইবরাহীম ইবনে আদহাম (রঃ) কিছু সংখ্যক লোককে নিজ বাড়িতে দাওয়াত করেন। তারা আহার করতে বসে এক ব্যক্তির গীবত শুরু করে দিল। ইবরাহীম ইবনে আদহাম (রঃ) বললেন, আগেকার লোকেরা প্রথমে মুখে রুটি ভরতো, অতঃপর গোশত খেত। আর একালে আমি দেখছি তোমরা প্রথমে মুখে মানুষের গোশত ভরছো, অতঃপর রুটিখাচ্ছ (তাযকিরাতুল আওলিয়া)।

ইবনুল মুবারক (রঃ)-এর নিকট এক যুবক উপস্থিত হয়ে বললো,আমি এমন এক মারাত্মক গুনাহ করে ফেলেছি যা ব্যক্ত করা যায় না। তিনি বলেন, বলো তুমি কি গুনাহ করেছ? যুবক বললো, আমি যেনা করেছি। আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রঃ) বললেন, আলহামদু লিল্লাহ? যাক তুমি গীবত করোনি। কারণ গীবত যেনার চেয়েও মারাত্মক (তাযকিরাতুল আওলিয়া)।

কাব ইবনে আহবার (রাঃ) বলেন, আমি আগেকার নবীগণের কিতাবে গীবত সম্পর্কে নিম্নোক্ত বর্ণনা পড়েছি : “গীবত এমন একটি নিকৃষ্ট কাজ, যে ব্যক্তি বরাবর তার চর্চা করে এবং তা থেকে তওবা করে না সে সর্বপ্রথম দোযখে যাবে। আর যে ব্যক্তি গীবত করে তওবা করেছে সে বেহেশতে যাবে কিন্তু সবশেষে।(ইমাম গাযালীর কীমিয়ায়ে সাআদাত)। অতএব যে ব্যক্তি গীবত করে সে নিজেরই ক্ষতি করে। উমার ফারূক (রাঃ) বলেন, ‘তুমি গীবত পরিহার করো এবং মানুষের বদনাম করো না, কারণ তা রোগবিশেষ (ইহয়া উলূমিদ্দীন)। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি পার্থিব জগতে নিজের ভাইয়ের গোশত খেয়েছে (গীবত করেছে) কিয়ামতের দিন তাকে মানুষের গোশত খেতে বাধ্য করা হবে এবং এভাবে সে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে (তারগীব তারহীব)।

কাতাদা (রঃ) বলেন, মানুষ যেভাবে তার মরা ভাইয়ের গোশত খাওয়াকে ঘৃণা করে তদ্রূপ গীবত করা থেকেও নিজেকে বিরত রাখবে এবং নিজেকে যেন দোযখে নিক্ষেপ না করে (জালালাইন-এর টীকায়)। ইমাম যয়নুল আবিদীন (রঃ) বলেন, ‘গীবত হলো সেইসব লোকের তরকারি যারা কুকুর’ (কীমিয়ায়ে সাআদাত)।

ইমাম সাহেব গীবতকারীদের কুকুরের সাথে এজন্য তুলনা করেছেন যে, কুরআন মজীদে গীবতকে মৃতের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। আর কুকুর সাধারণত মৃত জীবের গোশত খায়। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, ‘গীবত হচ্ছে পাপাচারীদের ভোজসভা’ (নুযহাতুল মাজালিস)।

গীবত ও চোগলখোরির মধ্যে পার্থক্য

গীবত ও চোগলখোরির মধ্যে পার্থক্য এই যে, “দুই ব্যক্তির মাঝে সংঘাত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের নামে মিথ্যা কথা বানিয়ে অপরজনের নিকট বলাকে ”চোগলখোরি বলে এবং কোন ব্যক্তির দোষ তার অনুপস্থিতিতে গেয়ে বেড়ানোকে গীবত বলে। অতএব যেখানে চোগলখোরি হয় সেখানে গীবতও বিদ্যমান আছে। ইমাম নববী (রঃ) সহীহ মুসলিমের ভাষ্যগ্রন্থে এই সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। কোন কোন বিশেষজ্ঞের মতে গীবত ও চোগলখোরির মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। যাকে গীবত বলা হয়, তাই চোগলখোরি। কোন কোন মনীষীর মতে অজ্ঞাত দোষত্রুটি ফাস করে দেওয়াকে চোগলখোরি বলে। ইমাম গাযালী (রঃ) ইহয়া উলূমিদ্দীন গ্রন্থে উপরোক্ত কথাই পছন্দ করেছেন। কিন্তু হাদীসসমূহের আলোকে চিন্তা করলে প্রথমোক্ত মতই সঠিক মনে হয় । আল্লাহই অধিক জ্ঞাত ।

সূত্রঃ বই- গীবত

লিখক :মাওলানা আবদুল হাই লাখনাভী (রহঃ)

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *