ইসলাম

গান বাজনা সম্পর্কে প্রখ্যাত ফিক্‌হবিদদের অভিমত

হানাফী ফিকহবিদদের অভিমত

ইমাম আবু হানিফা (রহ)-এর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে গিয়ে আবু তাইয়িব আত তাবারী (রহ) বলেছেন- كان أبو حنيفة يكره الغناء مع إباحته شرب النبيذ و يجعل سماع الغناء من الشعبي، الذنوب ـ قال : وكذلك مذهب سائر أهل الكوفة : إبراهيم، و اختلاف بينهم في ذلك و حماد و سفيان الثوري و غيرهم : لا اختلاف

আবু হানিফা (রা) গান শোনাকে অপছন্দ করতেন।নাবীয‍ পান করাকে মুবাহ্ম নে করা সত্ত্বেও গান শোনাকে গুনাহ্ মনে করতেন। আত তাবারী (রহ) বলেন, কুফাবাসী সকল (আলিম)-এর মাযহাবও তাই। যেমন-ইবরাহীম (নখঈ), শা’বী, হাম্মাদ ও সুফিয়ান ছাওরী (রহ) প্রমুখ এদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ ছিলো না।

কারাহিয়াতুল খুলাসা গ্রন্থের বরাত দিয়ে আহকামুল কুরআনে বলা হয়েছে- وفى الفتاوى : استماع صوت الملاهى كالقصب وغيره حرام، لأنه من الملاهي، وقال عليه الصلوة والسلام : “استماع الملاهي معصية، الجلوس عليها فسق والتلذذ بها من الكفر” – وهذا على وجه التهديد ولكن وجب عليه أن يجتهد حتى لا يسمع (خلاصة ٤ : ٣٤٥)

ফাতওয়ার কিতাবসমূহে রয়েছে- বিনোদনের শব্দ যেমন বাঁশের বাঁশী ইত্যাদি শোনা হারাম। অবশ্যই তা বিনোদন বা ক্রীড়া কৌতুকের মধ্যে পড়ে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘(অশ্লীল) বিনোদন (মূলক গান ) শোনা গুনাহের কাজ। সেখানে বসা ফাসিকী। সেখান থেকে স্বাদ আস্বাদন করা কুফরী।’ একথাটি হুমকি স্বরূপ বলা হয়েছে। কেননা তা না শোনার জন্য চেষ্টা করা তার জন্য ওয়াজিব (অবশ্য কর্তব্য), খুলাসা-৪ : ৩৪৫।

মুফতী মুহাম্মাদ শফী (রহ) তাঁর রচিত আহকামুল কুরআন-এ হানাফী মাযহাবের বিভিন্ন ফকীহ ও মনীষীদের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনার পর সেগুলোর সারসংক্ষেপ লিখেছেন এভাবে-

১. যদি একাকী নির্জনে কেউ সময় কাটানোর জন্য গান গায়, হানাফী সকল ফকীহর দৃষ্টিতে তা মুবাহ্। তবে আপত্তিকর কথা যদি গানে থাকে তাহলে জায়েয নয়।

২. অনুষঙ্গ হিসেবে গানের সাথে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করলে সর্বসম্মতিক্রমে তা হারাম।

৩. বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র যদি গানের সাথে অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার না করে শুধু বিনোদনের জন্য স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহার করা হয় তাও হারাম। খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য, ঘোষণা কিংবা তথ্য প্রদান বা বিবৃতির জন্যও তা ব্যবহার করা যাবে না। তবে বিয়েতে এবং পরস্পর আনন্দ প্রকাশার্থে ব্যবহার করা জায়েয।

৪. মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য গান গাওয়া কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। বাহরুর রায়িক গ্রন্থে বলা হয়েছে— যে ব্যক্তি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য গান করে বেড়ায় তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।

শাফেয়ী ফিকহবিদদের অভিমত-

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ইদরীস আশ শাফেয়ী (রহ) বলেছেন-

الغناء لهو مكروه يشبه الباطل – ومن استكثر منه فهو سفيه ترد شهادته.

‘গান বাতিল বিষয়গুলোর মতো একটি অপছন্দনীয় বিনোদন বা ক্রীড়া। যে বেশি গান করে সে বোকা । তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় । তিনি আরও বলেছেন- وصاحب الجارية إذا جمع الناس لسماعها فهو سفيه ترد شهادته ‘বাঁদীর মালিক যদি বাঁদীর গান শোনাবার জন্য লোকজনকে একত্রিত করে, তাকে মূর্খ বলা হবে এবং তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না।

ইমাম শাফেয়ী এর শিষ্যদের মতে- ‘যে মহিলা মাহরাম নয়, তার গান শোনা কোনো অবস্থাতেই জায়েয নয়, সে প্রকাশ্যে থাকুক কিংবা পর্দার অন্তরালে। স্বাধীন মহিলা হোক কিংবা বাঁদী।

ইবনু হাজার আল মাক্কী আশ শাফেয়ী বলেন- ‘স্বাধীন মহিলা কিংবা অপরিচিত দাসীর কণ্ঠে গান শোনা এ জন্য আমাদের কাছে হারাম যে, নারীর কণ্ঠস্বরও সতর (গোপনীয় রাখার জিনিস)। ফিতনা সৃষ্টির আশংকা থাক চাই না থাক। واتفقوا أيضا على تحريم كل غناء يوصل إلى ترك واجب، أو انضم معه حرام –

এ সম্পর্কে সকল শাফেয়ী আলিম একমত হয়েছেন যে, ওয়াজিব পরিত্যাগ করার পর্যায়ে পৌছে অথবা তার সাথে কোনো হারাম জিনিস যুক্ত হয় তাহলে এমন সকল প্রকার গান-ই হারাম।

মালিকী ফিকহবিদদের অভিমত

ইসহাক ইবনু ঈসা (রহ) বলেছেন, আমি ইমাম মালিক ইবনু আনাস (রহ) কে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘মদীনাবাসী কী শর্তে গান করার অনুমোদন দিয়েছে?’ জবাবে তিনি বললেন-

إنما يفعله الفساق – فهو مذهب سائر أهل المدينة، إلا إبراهيم بن سعد وحده، فإنه لم ير به بأسا ـ وهو أيضا مذهب أبي حنيفة رضى الله تعالى عنه، و سائر أهل الكوفة، إبراهيم النخعي، و الشعبي، و حماد، وسفیان لثورى ــــ لا خلاف بينهم فيه ـ

এমনটি কেবল ফাসিক লোকরাই করে থাকে। এটি সকল মদীনাবাসীর মাযহাব শুধু ইবরাহীম ইবনু সা’দ ছাড়া। কারণ তিনি এর মধ্যে ক্ষতিকর কিছু দেখেননি।’ আবু হানিফা (রা)-এর মাযহাবও (মদীনাবাসীর মত) এরূপ। সেই সাথে সকল কূফাবাসীরও। যেমন- ইবরাহীম নখঈ, শা’বী, হাম্মাদ, সুফিয়ান ছাওরী (রহ) প্রমুখ। এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই।

একবার ইমাম মালিক (রহ) সম্পর্কে তাঁর এক শিষ্যকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, ‘তিনি কি গান অপছন্দ করতেন?’ জবাবে তিনি বললেন- كره مالك قرأة القران بالألحان فكيف لا يكره الغناء – ‘সুললিত কণ্ঠে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করাও মালিক (রহ) পছন্দ করতেন না, তাহলে গান অপছন্দ না করেন কিভাবে এমন কি তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানের গান বাজনাও পছন্দ করতেন না।

আল মুদাওয়ানায় বলা হয়েছে- كان مالك يكره الدفاف والمعازف كلها في العرس ـ ‘মালিক (রহ) বিয়ের অনুষ্ঠানেও দফ এবং বাদ্যযন্ত্র বাজানো অপছন্দ করতেন ৷

ইমাম মালিক (রহ) ফাতওয়া দিয়েছেন— اذا اشترى جارية و وجدها مغنية كان له ردها بالعيب ـ و هو مذهب سائر أهل المدينة إلا إبراهيم بن سعد

বাঁদী কেনার পর যদি জানা যায় সে গায়িকা, তাহলে তাকে এই দোষের জন্য ফেরত দেয়া ক্রেতার জন্য জায়েয। সকল মদীনাবাসী (আলিম)-এর মাযহাব এটি। কেবল ইবরাহীম ইবনু সা’দ ছাড়া।*

হাম্বলী ফিকহবিদদের অভিমত

ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহ)-এর সময়েও গীতি কবিতা সুর করে গাওয়া হতো। তিনি এর ফলাফল প্রত্যক্ষ করতেন। তাই এ সম্পর্কে তাঁর ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায়। মুফতী মুহাম্মাদ শফী (রহ) লিখেছেন : وروى عن أحمد روايات مختلفة في كراهة الغناء وإباحته، ووجه الجمع أن إنشاد الأشعار المرغبة في الأخرة جائز، والغناء بغيرها على الوجه المعتاد الآن غير جائز –

ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহ) থেকে গান পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলা হয়েছে, এর সামঞ্জস্য এভাবে করা যায় যে, আখিরাতের ব্যাপারে উৎসাহমূলক কোনো কবিতা যদি সুর তুলে গাওয়া হয়, তবে তা জায়েয। আর অন্য কোনো গান, যেমন বর্তমান সময়ের প্রচলিত গান, জায়েয নয়।

ইবনু কুদামাহ্ তাঁর আল মুগনীতে হাম্বলী মাসলাকের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে গিয়ে লিখেছেন- الملاهي نوعان : محرم : وهو الآلات المطربة كالمزمار والطنبور ونحوه، والنوع الثانى مباح : وهو الدف في النكاح

‘বিনোদন দু’প্রকার। এক প্রকার হারাম। তার মধ্যে গায়িকার বাদ্যযন্ত্র অন্যতম । যেমন বাঁশী, ঢোল ইত্যাদি। দ্বিতীয় প্রকার মুবাহ। যেমন- বিয়ে অনুষ্ঠানের দফ (খঞ্জরী)।№

ইসমাইল ইবনে ইসহাক আস্সাকাফি (রহ,) বলেন, গীতি কবিতা (সুর দিয়ে গাওয়া হলে তা) শোনা সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো। জবাবে তিনি বলেছিলেন- ‘আমি তা অপছন্দ করি। তা বিদআত। তাই তারা তাদের সাথে উঠাবসা করতেন না।

ইমাম আহমাদ (রহ)-এর ছেলে তাঁকে গান শোনা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন, জবাবে তিনি বলেছিলেন, الغناء ينبت النفاق فى القلب لا يعجبني – “গান অন্তৱে নিফাক (মুনাফিকী)-এর জন্ম দেয় তাই আমি তা পছন্দ করি না।

গান বাজনা সম্পর্কে ইমাম সারাখসী-র (রহ) অভিমত-

মুফতী মুহাম্মাদ শফী (রহ) তাঁর তাফসীর আহকামুল কুরআনে সুফীদের সামা (গান)-এর বৈধতা অবৈধতা সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে শামসুল আয়িম্মা আল্লামা সারাখসী (রহ)-এর একটি অভিমত এনেছেন, সেখানে বলা হয়েছে- السماع والقول والرقص الذى يفعله المتصوفة في زماننا حرام. لا يجوز القصد إليه والجلوس عليه وهو الغناء والمزامير سواء.

‘আমাদের সময়ের সুফীদের সামা (গান), সামার কথা এবং নৃত্য যা তারা করে থাকে, হারাম। সেদিকে (অর্থাৎ সেই অনুষ্ঠানে) যাওয়ার ইচ্ছা করা এবং সেখানে গিয়ে বসা জায়েয নয়। সেখানকার গান এবং বাজনা (দুটোই) সমান।

ইমাম আবু ইউসুফের (রহ) অভিমত- وسئل أبو يوسف رحمه الله عن الدف أتكرهه في غير ـ العرس بأن تضرب المرأة في غير فسق للصبي؟ قال : لا أكرهه، وأما الذى يجئ منه اللعب الفاحش للغناء فإنه أكره ـ

আবু ইউসুফ (রহ)কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো দফ সম্পর্কে- ‘আপনি কি বিয়ের অনুষ্ঠান ছাড়া দফ বাজানো অপছন্দ করেন, যেমন মহিলারা- খারাপ উদ্দেশ্য ছাড়া শিশুদের জন্য বাজিয়ে থাকে? তিনি বলেন, ‘আমি এটি অপছন্দ করি না। তবে যার থেকে গানে অশ্লীল ক্রীড়া কৌতূক হবে আমি তাকেই অপছন্দ করবো।

ইমাম শাফেয়ী-র শিষ্যদের অভিমত-

শাইখুল ইসলাম আহমাদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু মুহাম্মাদ আল হাফীদ আল হারাভী আশ শাফেয়ী (মৃতু-৯০৬ হিঃ) বলেছেন إن أصحاب الشافعي رحمه الله ذكروا أن الغناء و سماعه مكروهان وليسا لمحرمين – لكن السماع من محل الفتنة كلأجنبية و الصبى حرام بالإجماع، ويحرم استعمال آلات الغناء مما هو من شعار الخمارين كالطنبور والصنح والعود والرباب والمزمار العراقي و سائر الملاعب، ولأوتار ـ واختلفوا في الدف فى غير العرس والختان فالأصح أنه مباح وإن كان فيه جلاجل –

শাফিঈ (রহ.)-এর শিষ্যগণ বলেন, গান গাওয়া এবং শোনা উভয়ই মাকরূহ্ (অপছন্দনীয় কাজ)। হারাম নয়। কিন্তু ফিতনার আশংকার স্থান থেকে শ্রবণ করার যেমন বেগানা মহিলা ও কিশোরদের থেকে গান শ্রবণ করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। তেমনিভাবে গানের অনুষঙ্গ হিসেবে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করাও হারাম। কেননা তা (সেসব বাদ্যযন্ত্র) মদ বিক্রেতাদের নিদর্শন যেমন— ঢোল, গীটার, তারের তৈরী (অন্যান্য) বাদ্যযন্ত্র, রাবাব এবং ইরাকী বাঁশী সহ যাবতীয় (বাদ্যযন্ত্রের) বিনোদন। বিয়ে এবং খাতনার অনুষ্ঠান ছাড়া অন্য কোন অনুষ্ঠানে দফ বাজানো সম্পর্কে একাধিক অভিমত রয়েছে। তবে সঠিক অভিমত হচ্ছে- মুবাহ্ । যদি তাতে (অর্থাৎ দফ বাদ্যযন্ত্রে) ঝুনঝুনি লাগানো থাকে তবুও।

আবু তাইয়িব আত্‌ তাবারীর (রহ) অভিমত

আবু তাইয়িব আত্‌ তাবারী (রহ) বলেছেন- فقد أجمع علماء الأمصار على كراهة الغناء والمنع সকল দেশের আলিমগণ গান অপছন্দনীয় বিষয় বলে একমত হয়েছেন এবং তা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।

ইয়াযীদ ইবনু ওয়ালীদের (রহ) অভিমত-

ইয়াযীদ ইবনু ওয়ালিদ (রহ) বলেছেন— ‘তোমরা গান থেকে দূরে থাকবে। কারণ এটি যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি করে, মনুষ্যত্ব ধুলিসাৎ করে, মদের বিকল্প এবং নেশার মত প্রভাব বিস্তার করে। তারপরও যদি তুমি শোনো তাহলে কোনো মহিলার (কণ্ঠে) গান শুনবে না। কেননা এটি ব্যভিচার দাবী করে।

ইমাম শাফেয়ী (রহ)-এর (প্রধান প্রধান) শিষ্যগণ সামা’ (গান) (বৈধ হওয়ার ব্যাপার) অস্বীকার করতেন। এবং পরবর্তী আকাবিরগণও একে অস্বীকার করেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম আবু তাইয়িব আত তাবারী। গানকে নিন্দা ও নিষেধ করে তিনি একটি গ্রন্থও রচনা করেছিলেন।

আবু তাইয়িব আত্‌ তাবারী বলেছেন— ‘গান গাওয়া, শোনা এবং কাঠি দিয়ে আঘাত করে কিছু (বাদ্যযন্ত্র) বাজানো জায়েয নয়।

আবদুর রহমান ইবনুল জাওযীর (রহ) অভিমত

আবদুর রহমান ইবনুল জাওযী বলেছেন— ‘আমাদের ফকীহগণ বলেছেন- যারা সগান গায় এবং যারা নৃত্য করে- তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় । ১০৫

ইমাম আহমাদ ইবনু তাইমিয়ার (রহ) অভিমত

فإن المغنى إذا غنى بذلك حرك القلوب المريضة إلى محبة الفواحش، فعندها يهيج مرضه و يقوى ،بلاؤه وان كان القلب فى عافيه من ذلك جعل فيه مرضا كما قال بعض السلف! الغناء رقية الزنى –

অবশ্য গায়ক (বা গায়িকা) যখন গান গায় তখন রোগগ্রস্ত অন্তর অশ্লীল মহব্বতের দিকে ধাবিত হয়। সেই সময় তার মনের অসুখ বৃদ্ধি পেয়ে তাকে বিপদগ্রস্ত করে তোলে। যদি তা থেকে মন পবিত্রও থাকে তবু (গান বাজনা) মনকে অসুস্থ করে দেয়। এজন্যই পূর্ববর্তী অনেক আলিম বলতেন— ‘গান ব্যভিচারের মন্ত্র।

আরেক জায়গায় তিনি বলেছেন- والمعازف هي خمر النفوس …. فاذا سكروا بالأصوات حل فيهم الشرك ـ

(গান) বাজনা হচ্ছে আত্মার মদ।….. যখন তা সুরের নেশায় মত্ত হয়ে যায় তখন তাদের জন্য শিরকের দরজাও উন্মুক্ত হয়ে যায়।

তিনি সামা (গান) সম্পর্কে আরও বলেন- فلا نزاع بين أئمة الدين أنه ليس من جنس القرب والطاعات والعبادات ولم يكن أحد من الصحابة والتابعين و أئمة الدين وغيرهم من مشائخ الدين يحضرون مثل هذا السماع لا بالحجاز و لامصر ولاشام، و لا العراق، و لا خراسان ولا في زمن الصحابة والتابعين و لا تابعيهم ـ

এ ব্যাপারে আয়িম্মায়ি দীন (প্রসিদ্ধ ইমামগণ) এর মধ্যে কোনো বিতর্ক নেই যে, গান বাজনা আল্লাহর আনুগত্য ও নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম নয়, এমনকি তা ইবাদাতও নয়। সাহাবীদের মধ্যে, তাবিঈদের মধ্যে, দীন ইসলামের ইমামদের মধ্যে এবং বিজ্ঞ আলিমদের মধ্যে কেউ সামার অনুষ্ঠানের মত এমন কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। না হিজাযে, না মিশরে, না শামে (সিরিয়ায়), না ইরাকে, না খোরাসানে, না সাহাবীদের সময়ে না তাবিঈদের সময়ে না তাবে তাবিঈদের সময়ে।

একবার শাইখ নিজামউদ্দিন (রহ)-এর মজলিসে দফ বাজিয়ে (সামা) গান গাওয়া হচ্ছিলো। শাইখ নাসীর উদ্দিন মাহমুদ সেখানে ছিলেন। তিনি মজলিস থেকে চলে যাওয়ার জন্য ওঠে দাঁড়ালেন। তাঁর সঙ্গী সাথীরা আপত্তি করলেন। তখন তিনি উত্তর দিলেন, এটি সুন্নাতের পরিপন্থি। তাঁরা তাঁকে বললেন, আপনি সামা অপছন্দ করছেন এবং মুরশীদের তরিকা পরিত্যাগ করছেন? তিনি বললেন, মুরশিদ শরী’আতের দলিল হতে পারেন না, একমাত্র আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহই দলিল। কতিপয় মুরীদ নিজামউদ্দিন (রহ)-এর কাছে মুরীদ নাসীর উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন। শাইখ বুঝলেন তিনি ঠিকই বলেছেন, তখন বললেন, সে যা বলেছে ঠিক আছে।

জুনাইদ আল বাগদাদীকে সামা (গান) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, যারা পীর মুরিদী লাইনে নতুন তাদের জন্য এটি ভ্রষ্টতার কারণ, আর যারা এ লাইনে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছেন তাদের জন্য সামা নিষ্প্রয়োজন।

শাহ ওয়ালি উল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ)-এর অভিমত

فالملاهي نوعان محرم وهي الآلآت المطربة كالمزامير ومباح وهو الدف والغناء فى الوليمة ونحوها من حادث سرور

‘বিনোদন দুই প্রকার, একটি হারাম- যেমন বাঁশী বা অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র সহকারে গান। অন্যটি মুবাহ- যেমন ওয়ালিমা (বিবাহ ভোজ) বা এই রকম আনন্দ প্রকাশের অনুষ্ঠানে দফ বাজিয়ে গান।

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *