ঐ সকল লোক যাদেরকে জাহান্নামের ভয় নিদ্রা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে
হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউসের ঘটনা
হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস (রহঃ) যখন বিছানায় গমন করতেন, তখন তার অবস্থা হত হাড়িতে টগবগ করা পানির মত। অতঃপর তিনি বলতেন, হে আল্লাহ্! জাহান্নামের স্মরণ আমাকে ঘুমাতে দেয় না। এরপরই তিনি আপন এবাদতগাহে গিয়ে নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন ।
হযরত তাউসের ঘটনা
হযরত সুলায়মান দারানী (রহঃ) বলেন, প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত তাউস (রহঃ) রাতে শয়নের সময় এমনভাবে প্রকম্পিত হয়ে উঠতেন যে, মনে হত কোন হাড়িতে শস্য সিদ্ধ হচ্ছে। এরপর তিনি বিছানা গুটিয়ে ফেলতেন ও কেবলামুখী হয়ে সকাল পর্যন্ত কাটিয়ে দিতেন এবং বলতেন, জাহান্নামের স্মরণ আবেদগণের উপর ঘুমকে হারাম করে দিয়েছে।
হযরত রবী ইবনে খাইছাম (রহঃ)-এর ঘটনা
হযরত মালেক ইবনে দ্বীনার (রহঃ) বলেন, হযরত রবী ইবনে খাইছামকে তার কন্যা জিজ্ঞাসা করল, হে আব্বাজান! লোকেরা তো ঘুমিয়ে পড়ে। আপনি কেন ঘুমান না । তিনি বলতেন, জাহান্নাম তোমার আব্বাকে ঘুমাতে দেয় না ।
হযরত সফওয়ান ইবনে মুহরিযের ঘটনা
রাত যখন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যেত, তখন হযরত সফওয়ান ইবনে মুহার (রহঃ) অধিক চিন্তার কারণে এভাবে আওয়াজ নির্গত করতেন, যেমন ষাড়-গরু থেকে আওয়াজ বের হতে থাকে। তিনি বলতেন, জাহান্নামের ভয় আমাকে ঘুম থেকে বাধা দিয়ে রেখেছে ।
হযরত আমের ইবনে আবদুল্লাহ (রহঃ)-এর ঘটনা
হযরত আমের (রহঃ) বলতেন, আমি কোন জান্নাত প্রত্যাশী এমন দেখিনি যে ঘুমিয়ে পড়েছে এবং কোন জাহান্নামে ভীত এমন লোক দেখিনি যে, ঘুমিয়ে পড়েছে। রাত নেমে আসলে তিনি বলতেন, হায়! জাহান্নামের উত্তপ্ততা আমার নিদ্রা উড়িয়ে দিয়েছে। এভাবেই তিনি রাত কাটাতেন, সকাল পর্যন্ত ঘুমাতেন না । আবার সকাল হলে বলতেন, হায়! জাহান্নামের উত্তপ্ততা আমার নিদ্রা উড়িয়ে দিয়েছে। এভাবে তিনি দিনেও ঘুমাতেন না, সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবেই কাটিয়ে দিতেন। তার ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, তিনি আখেরাতের অধিক চিন্তার কারণে এভাবে থর থর করে কাঁপতেন যে, কেমন যেন হাড়ির মধ্যে কোন কিছু সিদ্ধ হচ্ছে। অনন্তর তিনি দাড়িয়ে যেতেন এবং এ দোয়া করতেন — اللَّهُمَّ إِنَّ النَّارَ قَدْ مَنَعَتْنِيْ مِنَ النَّوْمِ فَاغْفِرْلِيْ
‘হে আল্লাহ্! জাহান্নামের আগুন আমাকে ঘুমাতে দেয়নি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন।
বর্ণিত আছে যে, কেউ তাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি ঘুমান না কেন? তিনি উত্তরে বললেন, জাহান্নামের স্মরণ আমাকে ঘুমাতে দেয় না ।
শায়েখ বনী ফাযারাহ
হূর ইবনে হুসাইন (রহঃ) বলেন, আমি ফাযারাহ গোত্রের জনৈক বৃদ্ধকে দেখেছি, যাকে এক লক্ষ দেরহাম দেয়ার জন্য খালেদ ইবনে আবদুল্লাহ ফরমায়েশ করেছিলেন। তার সামনে এ দেরহামগুলো পেশ করা হলে তিনি এ বলে ফিরিয়ে দিলেন যে, জাহান্নামের স্মরণ আমার অন্তর থেকে দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এবং আরাম-আয়েশ দূর করে দিয়েছে। লোকেরা যখন রাতে ঘুমিয়ে পড়ত, তখন তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকতেন, আগুন, আগুন, আগুন। (অর্থাৎ, হে লোক সকল! তোমরা আগুন থেকে বাঁচ। জাহান্নাম থেকে গাফেল থেকো না।
জনৈক গোলামের ঘটনা
সুহায়েব নামক এক গোলাম ছিল, যে রাতে কাঁদত এবং রাতভর জেগে থাকত । তার মনিব তাকে নিন্দা করে বলত, তুমি নিজেকে বরবাদ করে দিচ্ছ। উত্তরে সুহায়েব বলত, জনাব! যখন জান্নাতের কথা স্মরণ হয়, তখন তার প্রতি আসক্তি খুব বেড়ে যায় । আর যখন জাহান্নামের কথা স্মরণ হয়, তখন নিদ্ৰা উড়ে যায় ৷
ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রহঃ)-এর ঘটনা
ইমাম ইবনে মাহদী (রহঃ) বলেন, হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) রাতের অগ্রভাগ ছাড়া আর কোন সময় ঘুমাতেন না। অতঃপর তিনি ঘাবড়ে গিয়ে উঠে যেতেন এবং অস্থির হয়ে বলতেন, ‘আননার, আননার’ অর্থাৎ, আগুন আগুন ৷ জাহান্নামের স্মরণ আমার ঘুমকে ও খাহেশাতকে উড়িয়ে দিয়েছে। অতঃপর তিনি ওযূ করে এ দোয়া করতেন- اللّهُمَّ إِنَّكَ عَالِمُ بِحَاجَتِي غَيْرَ مُعَلَّمٍ وَ مَا أَطْلُبُ إِلَّا فِكَاكَ رَقَبَتِي مِنَ النَّارِ –
হে আল্লাহ্! আপনি আমার প্রয়োজনকে খুব ভাল করে জানেন, আপনাকে অবগত করানোর কোন প্রয়োজন নেই। জাহান্নাম থেকে মুক্তি ছাড়া আমি আর কিছু প্রত্যাশা করি না।
তথ্যসূত্র:
বই :জাহান্নামের বর্ণনা মূল :আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ এমদাদুল্লাহ আনওয়ার অনুবাদ :মাওলানা নাজমুল হুদা মিরপুরী