ইসলাম

সুদের ইহকালীন শাস্তি:

ইসলামে সুদ (রিবা) একটি বড় পাপ হিসেবে গণ্য। এটি ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে ধ্বংস ডেকে আনে। কুরআন ও হাদিসে সুদ গ্রহণকারীদের জন্য ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তির কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কুরআনে সুদের ইহকালীন শাস্তি

১. বারাকাহহীন জীবন:

আল্লাহ বলেন: “আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন এবং দান-সদকাকে বৃদ্ধি করেন।” (সুরা বাকারা: ২৭৬)

সুদ গ্রহণকারীর সম্পদে কোনো বারাকাহ থাকে না। ধনসম্পদ থাকলেও তা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

২. সমাজে অশান্তি:

আল্লাহ বলেন: “যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে, যেমন সে ব্যক্তি ওঠে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে।” (সুরা বাকারা: ২৭৫)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, সুদ সমাজে আর্থিক ও মানসিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

৩. আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ:

আল্লাহ বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমরা যদি সুদ ত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শোনো।” (সুরা বাকারা: ২৭৯)

সুদ গ্রহণকারী আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, যার ফল ইহকালে ধ্বংস।

হাদিসে সুদের ইহকালীন শাস্তি

১. সর্বনাশ ও অভিশাপ:

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “সুদগ্রহী, সুদদাতা, সুদের সাক্ষী এবং সুদের দলিল লেখক—তাদের সকলের ওপর অভিশাপ।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৫৯৮)

সুদগ্রহী ব্যক্তি ইহকালে আল্লাহর অভিশাপের কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

২. অশান্তি ও মানসিক যন্ত্রণা:

হাদিসে এসেছে: “যে ব্যক্তি সুদ খায়, সে এমনভাবে পাগল হয়ে যাবে, যেভাবে শয়তান দ্বারা আক্রান্ত একজন মানুষ হয়।” (তিরমিজি)

সুদগ্রহী ব্যক্তির জীবন দুশ্চিন্তা ও মানসিক অশান্তিতে পরিপূর্ণ হয়।

৩. দারিদ্র্যের দিকে পতন:

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “সুদ দ্বারা সম্পদ বৃদ্ধি করা হয় না, বরং তা ধ্বংসের দিকে যায়।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৭৯)

সুদভিত্তিক লেনদেনের মাধ্যমে ধনী হওয়ার চেষ্টা পরিণামে অর্থনৈতিক ধ্বংস ডেকে আনে।

সুদের ইহকালীন প্রভাব ও শাস্তি

১. অর্থনৈতিক সংকট:

সুদের কারণে সমাজে ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য বাড়ে। এতে অর্থনৈতিক শোষণ ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়।

২. ব্যক্তিগত শান্তির বিনাশ:

সুদগ্রহী ব্যক্তি মানসিক অস্থিরতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হয়।

৩. সমাজে বিশৃঙ্খলা:

সুদভিত্তিক লেনদেন সমাজে অন্যায়, অবিচার এবং শোষণ সৃষ্টি করে, যার ফলে সামাজিক শান্তি ধ্বংস হয়।

৪. স্বাস্থ্য ও সম্পর্কের অবনতি:

হালাল উপার্জন না থাকার কারণে ব্যক্তির শরীর ও জীবনে বারাকাহ থাকে না। এটি পরিবার ও সামাজিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

উপসংহার

সুদের ইহকালীন শাস্তি অত্যন্ত কঠিন এবং সমাজ ও ব্যক্তির জন্য ধ্বংসাত্মক। কুরআন ও হাদিসে সুদকে ত্যাগ করার জন্য কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একজন মুসলিমের উচিত হালাল উপার্জন নিশ্চিত করা এবং সুদভিত্তিক লেনদেন থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকা।

তথ্যসূত্র:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *