ইসলাম

ঈসালে সওয়াব কি? কুরআন ও হাদিস থেকে ঈসালে সওয়াবের প্রমাণ

ঈসালে সওয়াবের সংজ্ঞা

শাব্দিক অর্থ:

“ঈসাল” (إيصال) শব্দের অর্থ পৌঁছানো, আর “সওয়াব” (ثواب) শব্দের অর্থ পুণ্য বা প্রতিদান। সুতরাং, ঈসালে সওয়াব শব্দের অর্থ হলো— সওয়াব বা নেকির প্রতিদান অন্যের জন্য পৌঁছানো

পারিভাষিক অর্থ:

ঈসালে সওয়াব বলতে বোঝায়— একজন ব্যক্তি নিজের কোনো নেক আমলের সওয়াব মৃত বা জীবিত অন্য ব্যক্তির জন্য দান করা, যাতে সেই ব্যক্তি এর ফল লাভ করে

ঈসালে সওয়াবের প্রমাণ কুরআন থেকে

১. দোয়া ও মাগফিরাত কামনা মৃতদের জন্য উপকারী

وَٱلَّذِينَ جَآءُوا۟ مِنۢ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلْإِيمَٰنِ

“যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে: হে আমাদের রব! আমাদেরকে এবং আমাদের পূর্ববর্তী ঈমানদার ভাইদের ক্ষমা করো।” (সূরা আল-হাশর: ১০)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, জীবিতদের দোয়া মৃতদের উপকারে আসে।

২. হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া

رَبِّ ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ ٱلْحِسَابُ

“হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং সমস্ত মুমিনকে ক্ষমা করো সেই দিনে, যখন হিসাব নেওয়া হবে।” (সূরা ইবরাহিম: ৪১)

এখানে দোয়ার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কল্যাণ কামনা করা হয়েছে, যা ঈসালে সওয়াবের অন্যতম অংশ।

৩. সদকাহ ও নেক আমল মৃতদের উপকারে আসে

وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَـٰنِ إِلَّا مَا سَعَىٰ ۝ وَأَنَّ سَعْيَهُۥ سَوْفَ يُرَىٰ ۝

“মানুষের জন্য কেবল তার নিজের চেষ্টা-সাধনাই রয়েছে। এবং সে তার সাধনার ফল দেখতে পাবে।” (সূরা আন-নাজম: ৩৯-৪০)

এই আয়াতের সাধারণ অর্থ হলো, মানুষ তার নিজের আমল দ্বারা উপকৃত হবে। তবে অন্যান্য আয়াত ও হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, জীবিতদের আমল থেকেও মৃতদের জন্য সওয়াব পৌঁছানো সম্ভব।

ঈসালে সওয়াবের প্রমাণ হাদিস থেকে

১. সদকার সওয়াব মৃতদের পৌঁছায়

হযরত সাদ ইবনে উবাদাহ (রা.) বলেন: “আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে, আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তাহলে কি তার সওয়াব তাকে পৌঁছাবে?”

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: “হ্যাঁ, পৌঁছাবে।”_ (বুখারি: ২৭৬১, মুসলিম: ১০০৪)

এটি স্পষ্ট প্রমাণ যে, দান-সদকার সওয়াব মৃতদের জন্য পৌঁছে।

২. মৃতদের জন্য রোযার সওয়াব পৌঁছায়

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন:“যদি কোনো ব্যক্তি মারা যায় এবং তার রোযা কাজা থেকে যায়, তাহলে তার ওয়ারিশ (উত্তরাধিকারী) তার পক্ষ থেকে রোযা রাখবে।”(বুখারি: ১৯৫২, মুসলিম: ১৯৩৫)

এটি প্রমাণ করে যে, জীবিতদের ইবাদতের সওয়াব মৃতদের উপকারে আসে।

৩. মৃতদের জন্য হজের সওয়াব পৌঁছায়

এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলেন:“আমার মা হজের মানত করেছিলেন, কিন্তু তিনি তা আদায় করতে পারেননি। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করতে পারি?”

তিনি বললেন: “হ্যাঁ, করো।”_ (বুখারি: ১৮৫২, মুসলিম: ১৩৪৪)

এটি প্রমাণ করে যে, একজনের ইবাদত অন্যের জন্য উপকারী হতে পারে।

৪. দোয়া ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে মৃতরা উপকৃত হয়

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন:“যখন কোনো মানুষ মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি আমল চলতে থাকে— (১) সদকায়ে জারিয়া, (২) এমন জ্ঞান যা থেকে মানুষ উপকৃত হয়, (৩) নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।”_ (মুসলিম: ১৬৩১)

এটি প্রমাণ করে যে, মৃতদের জন্য দোয়া করলে তারা উপকৃত হয়।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *