ইসলাম

ইমাম আযমের শিক্ষা জীবন

ইমাম আবু হানীফা রহ. ১৩/১৪ বছর বয়সেই কুরআন, হাদীস ও ফিকহসহ দীনী ইলমের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের যাবতীয় ইলম অর্জন করেন। চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি রীতিমতো বাতিল আকীদাপন্থী তথা খারেজী, মু’তাযিলা ও দর্শন শাস্ত্রবিধদের বিরুদ্ধে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের পক্ষ নিয়ে বিতর্কও করেছেন।

তাঁর পৈত্রিক পেশা ছিলো কাপড় ব্যবসা। পিতা ইরান থেকে শুরু করে ইরাক, সিরিয়া ও হিজায পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলব্যাপী বিপুল পরিমাণ মূল্যবান রেশমী কাপড়ের আমদানী ও রফতানী করতেন। পৈত্রিক এই ব্যবসার সুবাদেই তিনি প্রচুর বিত্তের মালিক ছিলেন। বিশিষ্ট আলেমদের মধ্যে সম্ভবত তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বা বিত্তবানদের হাদীয়া-তোহফা প্রাপ্তির পরোয়া না করে নিজ উপার্জনের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন ।

কিশোর বয়স থেকেই ইমাম সাহেব পিতার ব্যবসার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। ব্যবসায়িক কাজেই তাঁকে বিভিন্ন বাজার এবং বাণিজ্য কেন্দ্রে যাতায়াত করতে হতো। ঘটনাচক্রে একদিন ইমাম শা’বীর সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। প্রথম দর্শনেই ইমাম শা’বী আবু হনীফার নিষ্পাপ চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, বৎস! তোমার মধ্যে প্রতিভার স্ফুরণ লক্ষ করছি, তুমি কী করো?

এ পথে তোমাকে সব সময যাতায়াত করতে দেখি, তুমি কোথায় যাতায়াত করো?

ইমাম সাহেব বললেন, আমি ব্যবসা করি। ব্যবসার দায়িত্ব পালনার্থেই ব্যবসায়ীদের দোকানে দোকানে আমাকে আসা-যাওয়া করতে হয়।

ইমাম শা’বী পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, এটা তো তোমার পড়ালেখার বয়স। কোনো আলিমের শিক্ষালয়েও কি তোমার যাতায়াত আছে?

আবু হানীফা রহ. সরলভাবেই জবাব দিলেন, হ্যাঁ, যাতায়াত আছে, তবে একনিষ্ঠভাবে এখনো ইলম অর্জনে আত্মনিয়োগ করিনি।কিছুক্ষণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই ইমাম শা’বী আবু হানীফাকে জ্ঞানার্জনে মনোযোগী হওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তুললেন ।ৎ

ইমাম আযম বলেন, ইমাম শা’বীর সেই আন্তরিকতাপূর্ণ উপদেশবাণী আমার অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করলো। এরপর থেকেই আমি বিপনীকেন্দ্রগুলোতে আসা-যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা কেন্দ্রেও যাতায়াত শুরু করলাম।

এ সময় আবু হানীফার রহ. বয়স ছিলো উনিশ কি বিশ বছর। ইমাম হাম্মাদ ইবনে আবু সুলাইমানের দরসে যাতায়েত শুরু করেন। তিনি একাধারে দীর্ঘ আঠারো বছর ইমাম হাম্মাদের একান্ত সান্নিধ্যে থেকে জ্ঞানার্জন করেন। ইমাম হাম্মাদের যখন ইন্তিকাল হয়, তখন আবু হানীফা রহ. এর বয়স ছিলো চল্লিশ বছর। এ সময় তিনি উস্তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে তাঁর শিক্ষাকেন্দ্রের পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ‘কূফার মাদরাসাতুর রায়’ এর কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন।

সেই সাথে ইরাক এর অনন্য ইমাম বলে বিবেচিত হন ও অসাধারণ খ্যাতি লাভ করেন এবং বসরা, মক্কা, মাদীনা ও বাগদাদ এর তৎকালীন সকল প্রসিদ্ধ ও শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কিরামের সাথে সাক্ষাত ও মতবিনিময় করেন এবং একে অপর থেকে উপকৃত হতে থাকেন।

তথ্যসূত্র:

বই : ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. এর ঈমানদীপ্ত গল্প

লেখক : মুফতি মাহফুজ মোসলেহ

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *