পাঁচ ওয়াক্ত নামায নির্দিষ্ট হওয়ার কারণ
ফজরের নামায ফরয হওয়ার কারণ
যখন আদম আ. দুনিয়ায় আগমন করেন তখন ছিল রাতের অন্ধকার। তিনি বেহেশতে কখনো রাত বা অন্ধকার দেখেননি, ফলে তিনি সারারাত ভীত সন্ত্রস্তভাবে কাটিয়ে দেন। সোবহে সাদিক উদিত হলে তাঁর ভয় দূর হয়। এ কারণে তিনি দুই রাকাত শোকরানা নামায আদায় করেন। আল্লাহ তাআলা রাসূল সা. এর মাধ্যমে উক্ত নামাযকে আমাদের ওপর ফরয করে দিয়েছেন; যাতে বান্দা এ কথা স্মরণ করতে পারেন যে, হযরত আদম আ. রাতের অন্ধকার হতে মুক্তি লাভ করে শুকরিয়া আদায় করেছিলেন। আর আমরা নামায পড়ছি কবর এবং হাশরের অন্ধকার হতে নাজাত পাওয়ার জন্য। প্রাতঃকালে অলস দুনিয়াদারদের জন্য আরামের সময়, এ কারণে ফজরের নামায আদায় তাদের বেশী কষ্ট হয়ে পড়ে।
যোহরের ওয়াক্ত নির্দিষ্ট হওয়ার কারণ
যোহরের ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করণের মধ্যে রহস্য হচ্ছে, এ সময় আসমানে ফেরেশতারা তাসবীহ পাঠ করেন। আসমানের সব দরজা খুলে দেয়া হয় এবং যাবতীয় দোয়া কবুল হয়। এ কারণে আল্লাহ তাআলা এ সময়ে নামায ফরয করে দিয়েছেন যাতে নামাযীগণ ফেরেশতাদের সঙ্গী হতে পারেন। তাদের দোয়া কবুল হয় এবং তাদের আমল শীঘ্রই আসমানে পৌঁছে যায়।
আসরের ওয়াক্ত নির্দিষ্ট হওয়ার কারণ
১। হযরত আদম আ. আল্লাহ তাআলার নিষিদ্ধফল ভক্ষণ করেন, ফলে তিনি বস্ত্রহীন হয়ে পড়েন এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করার দরুন বেহেশত হতে স্থানান্তরিত হয়ে দুনিয়া প্রেরিত হন। এ সকল ঘটনা আসরের সময়েই ঘটেছিল, তাই এ সময়ে উম্মতে মুহাম্মদীকে পানাহার হতে বিরত থেকে নামাযে মশগুল থেকে কিছুক্ষণ রোযাদারের মত থাকতে আদেশ করা হয়েছে। যাতে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং রহমত লাভ করার যোগ্য হতে পারে।
২। হযরত ইউনুস আ. কে আল্লাহ তাআলা চারটি অন্ধকার জায়গায় বন্দি করে রেখেছিলেন। ১. সাগরের অন্ধকার । ২. মাছের পেটের অন্ধকার । ৩. হযরত ইউনুস আ. কে ভক্ষণকারী মৎস্যটিকে অন্য একটি মৎস্য ভক্ষণ করেছিল এ মৎস্য দুটির পেটের অন্ধকার। ৪. রাতের অন্ধকার । হযরত ইউনুস আ. আল্লাহ তাআলার দেয়া এ চারটি অন্ধকারের মধ্যে আবদ্ধ থেকে ভীত সন্ত্রস্তভাবে নিম্নের দোয়াটি পড়েছিলেন : لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ –
যখন ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে বের হলেন তখন ছিল আসরে ওয়াক্ত।
হযরত ইউনুস আ. মুক্তি লাভ করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার জন্য চার রাকাত নামায পড়েন। তাই আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর এই চার রাকাত নামায ফরয করে দিয়েছেন যাতে তারা ইউনুস আ. এর মহা বিপদের কথা স্মরণ করে এবং নামাযের বরকতে হযরত ইউনুস আ. এর ন্যায় যাবতীয় অন্ধকার এবং মুসিবত হতে বেঁচে থাকতে পারে।
মাগরিবের নামায নির্ধারণ করার কারণ
১। মাগেিবর সময়ে হযরত আদম আ. এর সেজদা ও দোয়া কবুল হয়েছিল; তাই এ সময় তিনি শোকরানা নামায পড়েছিলেন। যেহেতু আদম আ. এর দোয়া কবুল হওয়া তাঁর আওলাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার অপরিসীম অনুগ্রহ তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য তাঁর আওলাদের ওপর এ সময়ের নামায ফরয করে দেয়া হয়েছে।
২। হযরত ইয়াকুব আ. এর পুত্র হযরত ইউসুফ আ. এর বিচ্ছেদে ৪০বছর পর্যন্ত শোকাহত অবস্থায় কাটিয়ে দেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি সদয় হন। হযরত ইউসুফ আ. এর দূত তাঁর জামা নিয়ে হযরত ইয়াকুব আ. এর দরবারে উপস্থিত হলেন। এ জামা তাঁর চেহারায় লাগানো মাত্র তার যাবতীয় দুঃখ দূরিভূত হয়ে গেল। হযরত ইয়াকুব আ. তখন আল্লহর দরবারে শুকরিয়া আদায়ের জন্য তিন রাকাত নামায পড়েন। এ ক্ষেত্রে হযরত ইয়াকুব আ. কে অনুসরণ করার জন্যই অমাদের ওপর এ নামায ফরয করে দিয়েছেন।
এশার নামায নির্ধারণ করার কারন
নীল নদ পার হওয়ার দিন হযরত মূসা আ. চার প্রকার চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। ১. নিজে নীল দরিয়া পার হওয়ার চিন্তা।
২. নিজের সঙ্গীদের নীল দরিয়া পার হওয়ার চিন্তা।
৩. ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার চিন্তা ।
৪. ফেরাউন ও তার লোকদের ধ্বংসের চিন্তা ।
আল্লাহ তাআলা এশার সময় ফেরাউন ও তার লোকদের নীল নদে ডুবিয়ে মৃত্যু দিয়েছিলেন। কুরআনে বর্ণিত আছে; وَأَغْرَقْنَا آلَ فِرْعَوْنَ وَأَنْتُمْ تَنْظُرُونَ ) এবং আমি ফেরাউনদের লোকদেরকে ডুবিয়েছি আর তোমরা তা দেখছিলে ।
উপরে বর্ণিত চার প্রকার চিন্তা হতে মুক্তি পেয়ে মূসা আ. এশার সময় চার রাকাত নামায শুকরিয়া স্বরূপ আদায় করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা ঐ চার রাকাত নামায উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর ফরয করে দিয়েছেন। যাতে হক- বাতিলের মোকাবিলায় হকের চিরন্তন বিজয়ের জন্য তারা কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে থাকে। কেননা যাবতীয় সফলতা একমাত্র আল্লাহর পক্ষ হতে আসে। কোন মানুষ নিজ শক্তিতে তা অর্জন করতে পারে।
তথ্যসূত্র :
বই: নামায পড়ি বেহেশতের পথে চলি
লিখক: মাওলানা মুমিনুল হক জাদিদ
মুহতামিম: ফেনী জামিয়া ইসলামিয়া