মহান আল্লাহ অনুগ্রহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা
১। সর্বদা আল্লাহর অনুগ্রহরাশি ও নিয়ামত নিয়ে চিন্তা করা সুন্নাত
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. এর বাণী: عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : تَفَكَّرُوا فِي آلاءِ اللهِ، وَلَا تَتَفَكَّرُوا فِي اللهِ.
“হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহর নিয়ামত নিয়ে চিন্তা করো এবং আল্লাহর ব্যাপারে চিন্তা করো না ।”আল তাবারানী, আল আওসাত, হাদীস নং: ৬৩১৯, আল বায়হাক্বী শুওয়াবুল ঈমান, হাদীস ১১৯, আলবানী হদীসটিকে হাসান বলেছেন।
২। পছন্দনীয় কিছু দেখলে আল্লাহর প্রশংসা করা
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীস
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَأَى مَا يُحِبُّ قَالَ: «الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي بِنِعْمَتِهِ تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ.
“হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) পছন্দনীয় কিছু দেখলে বলতেন, “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যার নিয়ামতে সৎকর্মসমূহ পূর্ণতা লাভ করেছে। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং: ৩৮০৩।
একজন মু’মিন-মুসলমান বান্দা দিন ও রাতে এমন কী কী কাজ করতে পারে, যা দ্বারা সে আল্লাহর অনুগ্রহের স্বীকৃতি দিতে পারে। এমন কাজগুলো কী কী এবং কোনো কোনো অবস্থায় হতে পারে। দিন ও রাতে এমন কী কী কাজ আছে যা শুনে ও অনুধাবন করে আল্লাহর প্রশংসা ও প্রার্থনা করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে?
আপনি কি অনুধাবন করতে পারছেন কীভাবে আপনার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হচ্ছে! যেখানে আপনার চারপাশের অনেক লোক আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়ে মসজিদে আসছে, না সেখানে আপনি মসজিদে আসছেন। বিশেষ করে ফজরের নামাযের সময় যখন সকল মানুষ গভীর ঘুমে মৃতের মতো শুয়ে আছে সেখানে আপনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করতে মসজিদে আসছেন।
আপনি কি অনুধাবন করতে পারছেন! যখন আপনি রাস্তায় হাঁটছেন তখন কীভাবে আপনার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হচ্ছে! আপনি রাস্তায় হেঁটে বিভিন্ন দৃশ্য দেখে আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষী দিচ্ছেন। অথচ সেখানে একটি বিপদগামী গাড়ি উচ্চৈঃস্বরে গান বাজিয়ে চলমান অবস্থায় দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে, এটি কি শয়তানের প্ররোচনা নয়?
আপনি কি অনুধাবন করেন না যে, যখন আপনি পৃথিবীব্যাপী দুর্ভিক্ষ, ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প, বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব, যুদ্ধ, বিগ্রহের খবর শুনছেন, তখন আপনি শান্তিতে বসবাস করছেন, এটা কি আপনার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ নয়? আর যে আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্বীকার করে তাঁর ইবাদাত, প্রার্থনা এবং প্রশংসা করে সর্বাবস্থায় ও সকল প্রতিকূলতায় সার্বক্ষণিকভাবে সেই তো প্রকৃত মু’মিন-মুসলিম বান্দা। একজন প্রকৃত মু’মিন-মুসলিম বান্দা সদা-সর্বদা আল্লাহর প্রশংসা, ইবাদাত এবং তাঁর আদেশ নিষেধ মেনে চলে।
মহান আল্লাহ বলেছেন: أَوَعَجِبْتُمْ أَن جَاءَكُمْ ذِكْرٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَى رَجُلٍ مِّنكُمْ لِيُنذِرَكُمْ وَاذْكُرُوا إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَاءَ مِن بَعْدِ قَوْمِ نُوحٍ وَزَادَكُمْ فِي الْخَلْقِ بَسْطَةً فَاذْكُرُوا الاءَ اللهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ.
“তোমরা কি আশ্চর্যবোধ করছ যে, তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্য থেকেই একজনের বাচনিক উপদেশ এসেছে যাতে সে তোমাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে। তোমরা স্মরণ কর, যখন আল্লাহ্ তোমাদেরকে কাওমে নূহের পর সর্দার করেছেন এবং তোমাদের দেহের বিস্তৃতি বেশি করেছেন। তোমরা আল্লাহ্ নিয়ামতসমূহ স্মরণ কর- যাতে তোমাদের মঙ্গল হয়। আল কুর’আন, সূরা আ’রাফ ৭:৬৯
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীস: عَنْ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ رَأَى صَاحِبَ
“হযরত ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যদি কেউ কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখে অতঃপর বলে: اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي عَافَانِي مِمَّا ابْتَلَاكَ بِهِ، وَفَضَّلَنِي عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيلاً،
‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে ঐ বিপদ থেকে নিরাপদ রেখেছেন, যে বিপদে তোমাকে নিপতিত করেছেন এবং তাঁর সৃষ্টজীবের অনেকের উপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, মর্যাদাবান করেছেন।’ إِلَّا عُونِي مِنْ ذَلِكَ البَلَاءِ كَائِنَا مَا كَانَ مَا عَاشَ.তবে তাকে যেন আজীবন ঐ বিপদ থেকে নিরাপদ রাখা হয় এই প্ৰাৰ্থন করছি।
তথ্যসূত্র :
বই: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ১০০০ সুন্নাত
লেখক: শাইখ খালীল আল হোসেনান
অনুবাদক: মাওলানা ডক্টর শাহ্ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম