সালাতুল ইশার সাথে নির্দিষ্ট সুন্নাত
১। সালাতুল ইশার সুন্নাত ক্বিরাত
“হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় মুয়ায বিন জাবাল রা. রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে নামায পড়লেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সা. (এশার ইমামতিতে লম্বা ক্বিরাত পড়তে নিষেধ করে বলেন) হে মুয়ায ! তুমি কী লোকদেরকে ফিতনায় ফেলতে চাও? তুমি যখন ইমামতি করবে (এশার নামাযে) তখন ‘আশামসি অযুহা-হা’ ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা’ ইত্যাদি পড়বে ৷”( আল বুখারী, হাদীস নং: ৫৭৫৫ )
সুতরাং বুঝা গেল এশার নামাযের সুন্নাত ক্বিরাত হলো: সূরা শামস, সূরা আ’লা ইত্যাদি পড়া ।
২। ইশার সালাত বিলম্বে পড়া সুন্নাত
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: أَخَرَ النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلاةَ العِشَاءِ إِلَى نِصْفِ اللَّيْلِ، ثُمَّ صَلَّى، ثُمَّ قَالَ: قَد صَلَّى النَّاسُ وَنَامُوا . أَمَا إِنَّكُمْ فِي صَلَاةٍ مَا انْتَظَرْتُمُوهَا .
“হযরত আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক রাতে রাসূলুল্লাহ সা.-এর ইশার সালাত রাতের অর্ধেক বা অর্ধেকের নিকটবর্তী সময়ে পড়লেন। অতঃপর তিনি বলেন, মানুষ সালাত পড়ে এবং ঘুমায় তোমরা যতক্ষণ সালাতের প্রতীক্ষায় থাকবে ততক্ষণ সালাতের মধ্যে রত থাকার মতই রইলে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৭২)
বিশেষত দুর্বল, অসুস্থ ও অত্যন্ত প্রয়োজনগ্রস্ত ব্যক্তির কষ্ট না হলে অবশ্যই তিনি তাদেরকে নিয়ে বিলম্বে ইশা পড়তেন। কেননা, ইশার ওয়াক্ত মূলত ঐ সময়ই যে সময়ের কথা নবীজী সা. ইরশাদ করেছেন।
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: أَعْتَمَ النَّبِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ لَيْلَةٍ حَتَّى ذَهَبَ عَامَّةُ اللَّيْلِ، وَحَتَّى نَامَ أَهْلُ الْمَسْجِدِ، ثُمَّ خَرَجَ فَصَلَّى، فَقَالَ: نَّهُ لَوَقْتُهَا لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي.
“হযরত আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক রাতে রাসূলুল্লাহ সা. রাতের বিরাট অংশ কাটিয়ে দিলেন। এমনকি রাত গভীর হয়ে গেল। মসজিদের লোকজন ঘুমিয়ে পড়েছে। অতঃপর তিনি বের হলেন, অতঃপর সালাত পড়লেন। এউপর বললেন এটাই হচ্ছে ইশার সময়। যদি উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ৬৩৯ ৷
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা. এর অন্য হাদীস-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: مَكَثْنَا ذَاتَ لَيْلَةٍ نَنْتَظِرُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِصَلَاةِ الْعِشَاءِ الْآخِرَةِ، فَخَرَجَ إِلَيْنَا حِينَ ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ، أَوْ بَعْدَهُ …… فَقَالَ حِينَ خَرَجَ : إِنَّكُمْ لَتَنْتَظِرُونَ صَلَاةً مَا يَنتَظِرُهَا أَهْلُ دِينٍ غَيْرُكُمْ، وَلَوْلَا أَنْ يَثْقُلَ عَلَى أُمَّتِي لَصَلَّيْتُ بِهِمْ هَذِهِ السَّاعَةَ.
“হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ সা. কে দেরিতে নামায পড়তে দেখলাম, অতপর যখন তিনি আমাদের নিকট আসলেন তখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ অথবা তার চেয়েও বেশি অতিবাহিত হয়েছে. . . .অতঃপর যখন তিনি নামায শেষ করে আমাদের কাছে এলেন, তখন বললেন, নিশ্চয় তোমরা সালাতের জন্য অপেক্ষা কর, তোমাদের ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের অনুসারীরা এর জন্য অপেক্ষা করে না। আমার উম্মতের উপর বোঝা না হলে তাদেরকে নিয়ে আমি এ সময়েই সালাত পড়তাম।
৩। ইশার সালাতের পূর্বে ৪ রাকা’আত সুন্নাত সালাত
হাদীসে এসেছে: عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَلٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : بَيْنَ كُلِ أَذَا نَيْنِ صَلَاةٌ، بَيْنَ كُلِ أَذَانَيْنِ صَلاةٌ ، ثُمَّ قَالَ فِي الثَّالِثَةِ : لِمَنْ
“হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুগাফ্ফল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন: প্রত্যেক দুই সালাতের মধ্যে সালাত রয়েছে’, প্রত্যেক দুই সালাতের মধ্যে সালাত রয়েছে’ তৃতীয়বার বললেন, তার জন্য যে ইচ্ছা করে।
ইমাম নববী রহ. বলেন, প্রত্যেক দুই সালাতের মাঝে অর্থাৎ আযান ও ইকামাতের মাঝে ।
তথ্যসূত্র :
বই: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ১০০০ সুন্নাত
লেখক: শাইখ খালীল আল হোসেনান
অনুবাদক: মাওলানা ডক্টর শাহ্ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম