প্রস্রাব-পায়খানা করার পর ঢিলা নেয়ার বিধি-বিধান
ক. বিজোড় সংখ্যক এবং তিনটির বেশি ঢিলা দিয়ে ইস্তিনজা করা সুন্নাত عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنِ اكْتَحَلَ فَلْيُوتِرُ
“হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পাথর দিয়ে শৌচ করবে, সে যেন বেজোড় সংখ্যায় পাথর ব্যবহার করে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং : ৩৫, (হাদীসটি আবু দাউদ সংকলন করেছেন। ইবনে হিব্বান, হাকিম ও নববী হাদীসটি সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন। হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী ফাতহুল বারী গ্রন্থে হাদীসটি হাসান বলে উল্লেখ করেছেন।)
অন্য হাদীসের আলোকে সর্বনিম্ন তিনটি ঢিলা দিয়ে ইসতিন্জা করতে বলা হয়েছে, عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : لَقَدْ نَهَانَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَمَ ، أَنْ نَسْتَقِيلَ القَبْلَةً بِغَائِطِ أَو بُولٍ, أَو أَن نَسْتَنْجِي بِالْيَمِينِ, أو أَنْ نَسْتَنْجِي بِأَقَلِ مِنْ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ أَو أَنْ نَسْتَنْجِي بَرجيع أَو عِظِمٍ
“হযরত সালমান রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা. আমাদেরকে নিষেধ করেছেন যেন আমরা পায়খানা বা প্রস্রাব করার সময় কিবলামুখী না হই, ডান হাতে শৌচ না করি, তিনখানা পাথরের কমে যেন ইসতিজা না করি, আর গোবর ও হাড় যেন ইসতিজা কাজে ব্যবহার না করি। (পায়খানা ও প্রস্রাব করার পর পবিত্রতা অর্জন করাকে ইসতিজা বলে। আরবে সাধারণভাবে পায়খানা করার পর পাথর টুকরো দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা হতো। এর অর্থ খুব বিশিষ্ট জন্তুর মল (লিদ বা গোবর)। মুসলিম, হাদীস নং : ২৬২ )
খ. ডান হাতে ইসতিজা করা নিষেধ
গ. হাড় দিয়ে ইসতিন্জা করা নিষেধ
ঘ. গোবর দিয়ে ইসতিব্জা করা নিষেধ
আলোচ্য তিনটি সুন্নাত নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত عَنْ سَلْمَانَ، قَالَ: قَالَ لَنَا الْمُشْرِكُونَ إِنِّي أَرَى صَاحِبَكُمْ يُعَلِّمُكُمْ حَتَّى يُعَلِّمَكُمُ الْخِرَاءَةَ، فَقَالَ: أَجَلْ إِنَّهُ نَهَانَا أَنْ يَسْتَنْجِيَ أَحَدُنَا أَوْ يَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ، وَنَهَى عَنِ الرَّوْثِ وَالْعِظَامِ وَقَالَ: لَا بِيَمِينِهِ ، يَسْتَنْجِي أَحَدُكُمْ بِدُونِ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ
হযরত সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার মুশরিকরা আমাকে বলল: এটা কেমন কথা, তোমাদের নবী তোমাদেরকে সকল কিছুই শিক্ষা দেন এমনকি মল-মূত্র ত্যাগ করাও। তখন তিনি (সালমান ফারসী) বলেন: হ্যাঁ, তিনি আমাদেরকে মল-মূত্র ত্যাগ করাও শিক্ষা দেন, এতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে? অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সা. আমাদেরকে কিবলামুখী হয়ে মল-মূত্র ত্যাগ, ডান হাতে ইসতিজা, তিন চিলার কম ইসতিনজা এবং গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইসতিজা করতে নিষেধ করেছেন। ”মুসলিম, হাদীস ২৬২
অন্য হাদীস থেকে জানা যায়, হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী করীম (স) হাড় ও গোবর দ্বারা ইসতিনজা করতে নিষেধ করেছেন। এবং বলেছেন, এ দুটি বস্তু পবিত্র করতে পারে না। দারাকুতনি, ৯/৫৬/১, তিনি সহীহ বলেছেন
ঙ. কয়লা দ্বারা ইসতিন্জা করা নিষেধ
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা.-এর হাদীস, عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: قَدِمَ وَقُدُ الْجِنِ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى ال عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا : يَا مُحَمَّدُ: انْهَ أُمَتَكَ أَنْ يَسْتَنْجُوا بِعَظْمٍ أَوْ رَوْثَةٍ حُمَمَةٍ ، فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى جَعَلَ لَنَا فِيهَا رِزْقًا. قَالَ: «فَنَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذَلِكَ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছে, একদা জিনদের একটি প্রতিনিধি নবী করীম সা.-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বলল, হে মুহাম্মাদ সা.! আপনি আপনার উম্মতদের হাড়, গোবর ও কয়লা দ্বারা ইসতিনজা করতে নিষেধ করুন। কেননা মহান আল্লাহ এগুলোর মধ্যে আমাদের জীবিকা রেখেছেন। রাবী বললেন অতঃপর নবী করীম সা. এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং : ৩৯ )
চ. ডান হাত দ্বারা লিঙ্গ স্পর্শ না করা عَنْ أَبِي قَتَادَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَكم لا يُمْسِكُنَّ أَحَدُكُمْ ذَكَرَهُ بِيَمِينِهِ, وَهُوَ يَبُولُ, وَلَا يَتَمَسَّحُ مِنَ الْخَلَاءِ بِيَمِينِهِ, وَلَا يَتَنفُسُ فِي الْإِنَاءِ
“হযরত আবু কাতাদা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যেন প্রস্রাব করাকালীন তার লিঙ্গ কখনও ডান হাতে স্পর্শ না করে। আর পানি পান করার সময় পানির পাত্রে নিঃশ্বাস না ছাড়ে।(বুখারী ১৫৩, মুসলিম ২৬৭)
তথ্যসূত্র :
বই: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ১০০০ সুন্নাত
লেখক: শাইখ খালীল আল হোসেনান
অনুবাদক: মাওলানা ডক্টর শাহ্ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম