ইবাদত

বিয়ে: রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম

বিয়ে শুধুমাত্র দুটি মানুষের মিলন বা পারিবারিক বন্ধন গড়ে তোলার মাধ্যম নয়, বরং এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। বিয়ের মাধ্যমে নৈতিকতা সংরক্ষিত হয়, পারিবারিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং সমাজে সুস্থ সম্পর্কের পরিবেশ তৈরি হয়। তবে অনেকেই জানেন না, বিয়ে শুধু ব্যক্তিগত সুখের জন্যই নয়, বরং এটি দুনিয়ার রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম কারণও। কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, যারা বিয়ে করে, আল্লাহ তাদের রিজিক বৃদ্ধি করে দেন এবং দারিদ্র্য দূর করেন।

কুরআনের আলোকে বিয়ে ও রিজিক বৃদ্ধি

১. আল্লাহ দরিদ্রদের জন্য রিজিকের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন

আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَأَنكِحُوا ٱلْأَيَـٰمَىٰ مِنكُمْ وَٱلصَّـٰلِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَآئِكُمْ ۚ إِن يَكُونُوا فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ ٱللَّهُ مِن فَضْلِهِۦ ۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ

“তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল, তাদেরও। যদি তারা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের স্বচ্ছলতা দান করবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।”(সূরা আন-নূর: ৩২)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, কেউ যদি দারিদ্র্যের ভয়ে বিয়ে করতে ভয় পায়, তবে তার জন্য আশার বাণী হলো— আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাকে রিজিকের সমৃদ্ধি দান করবেন।

২. আল্লাহ জীবিকা বৃদ্ধির মালিক

আল্লাহ বলেন:

نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ

“আমরা তোমাদের এবং তাদের (সন্তানদের) রিজিক দিয়ে থাকি।” (সূরা আল-ইসরা: ৩১)

অনেকে মনে করেন, বিয়ে করলে খরচ বেড়ে যাবে, সংসার চালানো কঠিন হবে। কিন্তু আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনি সবাইকে রিজিক প্রদান করেন।

হাদিসের আলোকে বিয়ে ও রিজিক বৃদ্ধি

১. বিয়ে করলে আল্লাহ সাহায্য করেন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:“তিন শ্রেণির লোকদের সাহায্য করা আল্লাহর জন্য দায়িত্ব, তাদের একজন হলো সেই ব্যক্তি, যে বিয়ে করে নিজের চরিত্র পবিত্র রাখতে চায়।” (সুনান আন-নাসাই: ৩২১৮, তিরমিজি: ১৬৫৫, সহিহ)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, যারা সৎ উদ্দেশ্যে বিয়ে করে, আল্লাহ তাদের সহায়তা করেন এবং তাদের জীবনে বরকত দেন, যা রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম।

২. বিয়ে দারিদ্র্য দূর করে

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “তোমরা গরিব হলে বিবাহ করো, কেননা বিয়ে তোমাদের জন্য সম্পদশালী হওয়ার উপায়।” (ইবনে মাজাহ: ১৮৪৭, হাসান)

রাসূল ﷺ এখানে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, বিয়ে করা দারিদ্র্য দূর করার অন্যতম উপায়। কারণ, বিয়ের মাধ্যমে রিজিকে বরকত আসে এবং নতুন সুযোগের দরজা খুলে যায়।

৩. পরিবার পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে আল্লাহ রিজিক বাড়িয়ে দেন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “প্রত্যেক ব্যক্তিই অভিভাবক এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের অভিভাবক এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (সহিহ বুখারি: ৮৯৩, সহিহ মুসলিম: ১৮২৯)

বিয়ের মাধ্যমে একজন পুরুষ যখন পরিবারের দায়িত্ব নেয়, তখন আল্লাহ তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন, কারণ তিনি তার পরিবারের জন্য চেষ্টা করেন।

বিয়ে কীভাবে রিজিক বৃদ্ধি করে?

আল্লাহর সাহায্য লাভ: যারা আল্লাহর জন্য বিয়ে করে, তিনি তাদের জীবনে বরকত দান করেন।

পরিবারিক স্থিতিশীলতা: বিয়ে মানুষকে দায়িত্ববান করে, ফলে রিজিক বৃদ্ধির নতুন পথ সৃষ্টি হয়।

হালাল উপার্জনের প্রেরণা: পরিবার চালানোর দায়িত্ব মানুষকে আরও পরিশ্রমী ও সচেতন করে তোলে।

দোয়ার কবুল হওয়া: বিবাহিত ব্যক্তির দোয়া বেশি কবুল হয়, যা রিজিক বৃদ্ধির মাধ্যম হতে পারে।

মানসিক প্রশান্তি: বিয়ে মানুষকে মানসিক প্রশান্তি দেয়, ফলে সে কর্মক্ষেত্রে আরও মনোযোগী হয়, যা তার আয় বৃদ্ধির কারণ হয়।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *