তাওবার উপকারিতা
তাওবা (توبة) ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা মানুষের আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। তাওবা শুধু পাপ মোচনের জন্য নয়, বরং এটি মানুষের জীবনকে বরকতময় ও সফল করার মাধ্যমও। কুরআন ও হাদিসে তাওবার অনেক উপকারিতা ও ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে।
১. তাওবা করলে পাপ মোচন হয়
মানুষ স্বভাবগতভাবে ভুল করে এবং গুনাহে লিপ্ত হয়। কিন্তু আল্লাহর রহমত এত বিশাল যে, তিনি তাঁর বান্দাদের তাওবা করার সুযোগ দিয়েছেন এবং তাদের পাপ মাফ করে দেন।
আল-কুরআনে বর্ণিত:
قُلْ يَا عِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسْرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُواْ مِن رَّحْمَةِ ٱللَّهِ إِنَّ ٱللَّهَ يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
“হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের উপর অন্যায় করেছ! তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করেন। তিনিই পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সুরা আজ-জুমার: ৫৩)
হাদিসে বর্ণিত:
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,“যে ব্যক্তি সত্যিকারের তাওবা করে, সে এমন যেন কখনো গুনাহই করেনি।” (ইবনু মাজাহ: ৪২৫০)
২. তাওবা করলে গুনাহ নেকিতে পরিণত হয়
আল্লাহর অনুগ্রহ এত মহান যে, তিনি শুধুমাত্র বান্দার গুনাহ মাফ করেন না, বরং গুনাহগুলোকেও নেকিতে পরিণত করে দেন।
আল-কুরআনে বর্ণিত:
إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُوْلَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ
“কিন্তু যারা তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহগুলোকে নেকিতে পরিণত করে দেন।” (সুরা আল-ফুরকান: ৭০)
৩. তাওবা করলে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জিত হয়
তাওবা শুধুমাত্র পাপ মোচনের জন্য নয়, বরং এটি বান্দাকে আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত করে।
আল-কুরআনে বর্ণিত:
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلْمُتَطَهِّرِينَ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কারীদের ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন।” (সুরা আল-বাকারাহ: ২২২)
৪. তাওবা করলে জান্নাতের পথ সুগম হয়
তাওবা করা ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাতের দরজা খুলে দেন এবং তার জীবনকে কল্যাণময় করেন।
আল-কুরআনে বর্ণিত:
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পারো।” (সুরা আন-নূর: ৩১)
৫. তাওবা করলে দুনিয়ার শান্তি ও বরকত লাভ হয়
যে ব্যক্তি নিয়মিত তাওবা করে, আল্লাহ তার জীবনের সংকট দূর করেন এবং তার জন্য দুনিয়ার পথ সহজ করে দেন।
হাদিসে বর্ণিত:
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি নিয়মিত তাওবা করে, আল্লাহ তাকে সকল সংকট থেকে মুক্তি দেবেন, তার সব দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন এবং এমন উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করবেন যা সে কল্পনাও করেনি।” (ইবনু মাজাহ: ৩৮১৯)
৬. তাওবা করলে কঠিন আজাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
যেসব জাতি আল্লাহর নাফরমানি করেছে, তাদের ওপর কঠিন শাস্তি এসেছে। কিন্তু যারা তাওবা করেছে, তারা শাস্তি থেকে বেঁচে গেছে।
আল-কুরআনে বর্ণিত:
فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ ءَامَنَتْ فَنَفَعَهَآ إِيمَٰنُهَآ إِلَّا قَوْمَ يُونُسَ ۚ لَمَّآ ءَامَنُوا۟ كَشَفْنَا عَنْهُمْ عَذَابَ ٱلْخِزْىِ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَمَتَّعْنَٰهُمْ إِلَىٰ حِينٍ
“ইউনুসের জাতি ব্যতীত এমন কোনো জনপদ ছিল না, যারা ঈমান এনে উপকৃত হয়েছে। যখন তারা ঈমান আনল, তখন আমি তাদের দুনিয়ার লাঞ্ছনামূলক শাস্তি তুলে নিলাম এবং নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তাদের ভোগ করতে দিলাম।” (সুরা ইউনুস: ৯৮)
৭. মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাওবার সুযোগ রয়েছে
আল্লাহ তাওবার দরজা খোলা রেখেছেন, যতক্ষণ না মৃত্যুর সময় আসে।
হাদিসে বর্ণিত:
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দার তাওবা কবুল করেন, যতক্ষণ না তার গলগণ্ড পৌঁছে যায়।” (তিরমিজি: ৩৫৩৭)
৮. তাওবা করলে দোয়া কবুল হয়
তাওবা করা ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ কবুল করেন এবং তার জীবনকে কল্যাণময় করেন।
আল-কুরআনে বর্ণিত:
فَقُلْتُ ٱسْتَغْفِرُوا۟ رَبَّكُمْ إِنَّهُۥ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ ٱلسَّمَآءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيُمْدِدْكُم بِأَمْوَٰلٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّٰتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَٰرًا
“তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান সৃষ্টি করবেন এবং নদী প্রবাহিত করবেন।” (সুরা নূহ: ১০-১২)
সংকলক:
মুফতি রাশেদুল ইসলাম
ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স