ইবাদত

তাকওয়ার মাহাত্ম্য: কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে

তাকওয়া শব্দটি وَقَى (ওয়াকা) মূলধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ রক্ষা করা, বাঁচিয়ে রাখা বা বেষ্টনী তৈরি করা। ইসলামি পরিভাষায় তাকওয়া হলো আল্লাহর ভয় ও সচেতনতা নিয়ে জীবন যাপন করা, তাঁর আদেশ পালন করা এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে বেঁচে থাকা

তাকওয়ার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে কোরআনের আয়াতসমূহ

১. তাকওয়াই শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড

اللَّهُ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

অর্থ: “হে মানুষ! আমি তোমাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পারো। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর দৃষ্টিতে সর্বাধিক সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যে সর্বাধিক পরহেজগার (তাকওয়াবান)। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।”📖 (সূরা আল-হুজরাত: ১৩)

এই আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, কোনো জাতি, বংশ বা গোষ্ঠীর কারণে মানুষ মর্যাদাবান হয় না; বরং তাকওয়াই একমাত্র মানদণ্ড।


২. তাকওয়া দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার চাবিকাঠি

وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ অর্থ: “এবং সফল পরিণাম তাকওয়াবানদের জন্যই নির্ধারিত।”📖 (সূরা আল-আ’রাফ: ১২৮)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, প্রকৃত বিজয় এবং পরকালীন সফলতা একমাত্র তাকওয়াবানদের জন্যই নির্ধারিত।


৩. তাকওয়াবানদের জন্য রহমত ও পথনির্দেশ রয়েছে

ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ

অর্থ: “এটি সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি তাকওয়াবানদের জন্য পথনির্দেশ।” 📖 (সূরা আল-বাকারা: ২)

যারা তাকওয়াবান, তাদের জন্যই কুরআন সঠিক পথ দেখায়। যারা আল্লাহর ভয় রাখে, তারা কুরআনের শিক্ষা অনুসরণ করে এবং সফলতা লাভ করে।


৪. তাকওয়া জীবনের সংকটে মুক্তির উপায় ও রিজিক বৃদ্ধির কারণ

وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا ‎﴿٢﴾‏ وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ

অর্থ: “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে (তাকওয়া অবলম্বন করে), আল্লাহ তার জন্য মুক্তির পথ বের করে দেবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।” 📖 (সূরা আত-তালাক: ২-৩)

যদি কেউ সত্যিকারভাবে তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার সব সংকট দূর করেন এবং অপ্রত্যাশিত উপায়ে রিজিকের ব্যবস্থা করেন।


৫. তাকওয়াবানদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত করা হয়েছে

وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ

অর্থ: “তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও, যার প্রশস্ততা আসমানসমূহ ও পৃথিবীর সমান; যা তাকওয়াবানদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।”📖 (সূরা আলে-ইমরান: ১৩৩)

এই আয়াত থেকে জানা যায়, জান্নাত তাকওয়াবানদের জন্য নির্ধারিত। তারা দুনিয়ায় আল্লাহর ভয় রেখে জীবন যাপন করে এবং আখিরাতে পুরস্কারস্বরূপ জান্নাত লাভ করে।


তাকওয়ার মাহাত্ম্য নিয়ে হাদিসসমূহ

১. তাকওয়া হৃদয়ে অবস্থান করে

النَّبِيُّ ﷺ قَالَ: التَّقْوَىٰ هَا هُنَا وَيُشِيرُ إِلَىٰ صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ

অর্থ: নবী ﷺ বলেছেন, “তাকওয়া এখানে (হৃদয়ে) অবস্থান করে।” তিনি তিনবার নিজের বুকে ইশারা করেন। 📖 (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৪)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, প্রকৃত তাকওয়া অন্তরের গুণ, যা বাহ্যিক আচরণে প্রকাশ পায়।


২. তাকওয়া সর্বোত্তম পাথেয়

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ، وَإِنَّ اللَّهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا، فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ، فَاتَّقُوا الدُّنْيَا، وَاتَّقُوا النِّسَاءَ

অর্থ: আবু সাঈদ আল-খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেছেন: “নিশ্চয়ই দুনিয়া মিষ্টি ও সবুজ (আকর্ষণীয়), আর আল্লাহ তোমাদের সেখানে খলিফা করেছেন এবং দেখছেন তোমরা কী করো। অতএব, তোমরা দুনিয়ার বিষয়ে তাকওয়া অবলম্বন করো এবং নারীদের বিষয়ে সাবধান হও।” 📖 (সহিহ মুসলিম: ২৭৪২)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, দুনিয়ার ফিতনায় পড়া থেকে বাঁচতে তাকওয়া অপরিহার্য।


সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *