ইবাদত

**সবর (**ধৈর্য ) লাভ করার উপায় :

কথায় বলে, সবুরে মেওয়া ফলে। ধৈর্য ধরে কাজ করলে অবশ্যই আপনি সফলতা পাবেন।কিন্তু কিছু কিছু সময়ে ধৈর্য ধারণ করা বেশ কঠিন হয়ে যায়। কেউ কেউ জন্মগতভাবেই ধৈর্যশীল হয়ে থাকে, আবার কারোর কারোর ধৈর্য একদম কম থাকে! অল্পতেই ধৈর্য হারিয়ে যায় আপনারও? জীবনে প্রতিকূলতা আসবে, তাই বলে অধৈর্য হলে চলবে না। চলুন জেনে নেই ধৈর্য বাড়ানোর কিছু কৌশল যেগুলো আপনার জীবনকে অনেকটাই সহজ করবে।

১) আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন

আত্মবিশ্বাস শুধু ধৈর্য বাড়ায় তা নয়, সফলতা অর্জনেও সাহায্য করে। তাই নিজে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন। আত্মবিশ্বাস আপনার সফলতা চাবিকাঠি।

২) ভালো শ্রোতা হওয়ার চেষ্টা করুন

আপনি কি আরেকজনের কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন? আমরা অনেকেই আরেকজনের কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায় না, নিজেরটা আগে বলতে চাই বা কথার মাঝে ব্যাঘাত ঘটায়। এখানে কিন্তু আপনি ধৈর্যশীলের পরিচয় দিচ্ছেন না! অন্যের কথা শোনার চেষ্টা করুন; বিষয় যা-ই হোক না কেন, সে কী বলছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। ভালো শ্রোতা হয়ে উঠুন। ধৈর্য বৃদ্ধি করার আরেকটি সহজ উপায় হলো ভালো শ্রোতা হওয়া।

৩) অল্পতেই ধৈর্য না হারিয়ে মেনে নিতে শিখুন

যে পরিস্থিতি আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না, আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে; সেটি মেনে নিতে পারা একটি বড় গুণ। এই কৌশলটি আপনার ধৈর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে প্রতিদিনের বিভিন্ন ঝামেলা সহজে এড়াতে পারবেন।কোনো অন্যায় মেনে নেওয়ার কথা বলছি না। আপনার স্কিল কাজে লাগিয়ে সিচুয়েশন সামাল দেওয়ার ট্রাই করুন। অধিকাংশ সময় আমরা অধৈর্য হয়ে পড়ি, কারণ আমরা পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন করতে চাই, সবকিছু নিজের মতো করে পেতে চাই। কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে কম্প্রোমাইজ করতে হবে। সব পরিস্থিতি আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না, বরং সেগুলো গ্রহণ করতে শিখুন।

৪) বই পড়ুন

ধৈর্যশক্তি বাড়ানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে বই পড়া। তাই ধৈর্যশক্তি বাড়ানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে বই পড়া। বই পড়া মানসিক চাপ কমায়। মনকে ধীর স্থির করে তোলে।

৫) নোট রাখুন বা ডায়েরি লিখুন

লিস্ট বা নোট রাখার অভ্যাস বেশ কাজে দেয়, কেননা এটি আপনাকে কাজে ফোকাস বাড়াতে হেল্প করবে। আপনাকে আরো স্থির করে তুলবে। প্ল্যানিং করে ফেলুন আগেই। আপনি নিয়মিত ডায়েরি লিখতে পারেন, যেখানে সারাদিনে কাজের কথা থাকতে পারে, আবার ছোট গল্প লিখতে পারেন। এগুলো আপনার ধৈর্য বাড়াতে সাহায্য করবে।

৬) সহানুভূতিশীল হোন

কোনো বিষয় নিয়ে অধৈর্য না হয়ে নিজেই আরেকবার ভাবুন। অন্যদের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে নিজে একবার চিন্তা করুন তার জায়গায় আপনি থাকলে কী করতেন। এভাবে ভাবলে কিন্তু অনেক সময় জটিল সমস্যারও সমাধান হয়ে  যায় খুব সহজে। মনে রাখবেন, সহানুভূতিশীলতা বড় একটি গুণ। তাই সহানুভূতিশীল হোন, এতে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন।

৭) একসাথে একের অধিক কাজ করা থেকে বিরত থাকুন

আপনি যখন একসাথে অনেকগুলো টাস্ক নিয়ে বিজি থাকবেন, তখনই অধৈর্য হয়ে পড়বেন। একের অধিক কাজে মনোযোগ দিলে আপনি কোনো কাজই ঠিকভাবে শেষ করতে পারবেন না। অন্য কাজের চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়বেন! তাই একসাথে একের অধিক কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। একটি কাজ শেষ হলে আরেকটি কাজে মনোযোগ  দিন।

৮) টাইম ম্যানেজমেন্টে মনোযোগী হোন

মানুষ সবচেয়ে বেশি অধৈর্য হয়ে পড়ে যখন কাজ অনেক বেশি পরিমাণে জমা হয়, কিন্তু হাতে সময় কম থাকে। এটি মূলত হয় টাইম ম্যানেজমেন্ট ঠিকভাবে করতে না পারলে। তাই আপনাকে এই বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে। তাহলে ধৈর্য ধরে রাখা সম্ভব। প্রায়োরিটি অনুযায়ী কাজ ভাগ করে নিন, কোনো কাজ অযথা ফেলে রাখবেন না, সময় একবার চলে গেলে সেটা তো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব না। তাই সময়কে প্রোপারলি ইউটিলাইজ করুন।

৯) সবরের ফজিলতগুলো চিন্তা করুন:

মুমিন এ কথা বিশ্বাস করবে, আল্লাহ তাআলা আমাকে বিভিন্ন জিনিসের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে বানিয়েছে। তিনি আমাদের কাছে এগুলো আমানত রেখেছেন। যদি তিনি তাঁর জিনিস নিয়ে যান, এতে আমার আপত্তির কী আছে! উপরন্তু আমি এর ওপর ধৈর্য ধারণ করি তাহলে আমাকে এর বিনিময় দান করবেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘ধৈর্য ঈমানের অর্ধেক।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩১৮০) বিপদাপদ সবার কাছে প্রকাশ করবে না : অধৈর্য হয়ে অনেক সময় আমরা সব জায়গায় নিজের বিপদের কথা বলেই ঘুরে বেড়াই। এটি সবরের পরিপন্থী। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) রাসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের বিপদাপদ সবার কাছে বলে বেড়ায় সে ধৈর্য ধারণকারী নয়।’ (দুররে মানসুর : ৮/৩১১)

আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখছেন :

বিপদাপদে আক্রান্ত ব্যক্তি মনে মনে এ কথা ভাবা এবং বিশ্বাস করা, আমার প্রভু আমার সৃষ্টিকর্তা প্রতিমুহূর্তে আমাকে দেখছেন। আমি ন্যায়ের পথে থাকলে তিনি আমার জন্য ভালোটাই করবেন। এভাবে যখন কোনো ব্যক্তি ভাববে তার কষ্ট কিছু হলেও কমতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আপনি ধৈর্যধারণ করুন আপনার রবের সিদ্ধান্তের ওপর, নিশ্চয়ই আপনি আমাদের চক্ষুর সামনেই আছেন। আপনি আপনার রবের প্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন, যখন আপনি দণ্ডায়মান হন।’ (সুরা তুর, আয়াত : ৫২)

আমরা সবাই ধৈর্যশীল হওয়ার কথা বলি, কিন্তু অধৈর্যের কারণ নিয়ে কথা বলি না। কী কী কারণে আপনি সহজে অধৈর্য হয়ে যাচ্ছেন, সেগুলো খুঁজে বের করুন। ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য ইচ্ছাশক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিজের ইচ্ছা আর চেষ্টা-ই আপনাকে ধৈর্যশীল করে তুলতে পারবে। চাইলেই আপনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, এটাই স্বাভাবিক।

সংকলক:

মুফতি রাশেদুল ইসলাম

ইফতা: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকা,মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স

এই ব্লগটি পড়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

খুশি
0
আরও উন্নত হতে পারে
0

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *